• মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩৫ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

ধর্ষণ রুখতে কঠোর আইন প্রণয়নের আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর

  অধিকার ডেস্ক    ১২ জুলাই ২০১৯, ০০:৩৪

শেখ হাসিনা
প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা শেখ হাসিনা। (ছবি : সংগৃহীত)

ধর্ষণের বিরুদ্ধে কঠোর আইন প্রণয়ন করে অপরাধীদের কঠোর শাস্তি প্রদানের ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন প্রধানমন্ত্রী এবং সংসদ নেতা শেখ হাসিনা। বৃহস্পতিবার (১১ জুলাই) সন্ধ্যায় একাদশ সংসদের তৃতীয় অধিবেশনের (বাজেট অধিবেশন) সমাপনী বক্তব্যে তিনি বলেন, 'এ ধরনের জঘন্য কার্যকলাপ কখনো মেনে নেওয়া যায় না। আমাদের আইন আরও কঠোর করা দরকার; আরও কঠোরভাবে তাদের (এসব অপরাধীদের) শাস্তি দেওয়া প্রয়োজন। কারণ এই ধরনের জঘন্য কার্যকলাপ কখনো মেনে নেওয়া যায় না।'

প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'আমাদের কিছু সামাজিক অপরাধ প্রবণতা বেড়ে গেছে। শিশুদের ওপর পাশবিক অত্যাচার অথবা মানুষ খুন করা, ছোট শিশুদের খুন করার মতো ঘটনা যখন ঘটে এবং এরপর পত্রিকায় সংবাদ হয় (অবাধ তথ্য প্রবাহের এই যুগে) তারপরে যেন এর হারটা বেড়ে যায়।'

বিষয়টি নিয়ে তার সরকার যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করবে বলেও সংসদে দেওয়া ভাষণে প্রধানমন্ত্রী কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন। এ সময় তিনি ইলেকট্রনিক মিডিয়া বা চ্যানেলগুলোর উদ্দেশ্যে ধর্ষকদের চেহারাটা বার বার তুলে ধরার আহ্বান জানান। যাতে করে তাদের যেন লজ্জা হয়।

এসব সামাজিক অপরাধের বিরুদ্ধে পুরুষদেরকেও নারীদের পাশাপাশি প্রতিবাদ-প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, 'আমরা শুধু মেয়েরাই এর প্রতিবাদ করব কেন? এখানে পুরুষ সম্প্রদায়ের জন্য লজ্জার বিষয় যে তারা এই অপরাধটা করে যাচ্ছে। সে জন্য আমাদের পুরুষ সম্প্রদায়কেও আরও সোচ্চার হতে হবে বলে আমি মনে করি।'

সংসদ অধিবেশনে দেশে ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়ছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী সকলকে সচেতন থাকার পাশাপাশি বাসগৃহের চারপাশ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার আহ্বান জানান।

ডেঙ্গুর জন্য দায়ী এডিস মশাকে 'অ্যারিস্টোক্রাট' মশা আখ্যায়িত করে কৌতুকের ছলে শেখ হাসিনা বলেন, 'এরা বস্তিতে থাকে না, ময়লা জায়গায় থাকে না, তারা ভদ্র জায়গা খোঁজে এখানেই সমস্যা, ওষুধ দিলেও যায় না। মশারি টানিয়ে থাকার সঙ্গে সঙ্গে সকলকে বাড়ি-ঘর এবং এর আশপাশ পরিষ্কার রাখতে হবে। পাশাপাশি যে সব স্থানে পানি জমে থাকে, ফুলের টব, এয়ার কন্ডিশনের পানি যেন জমতে না পারে সে দিকেও সবাইকে লক্ষ্য রাখতে হবে। কেন না এই মশা পরিষ্কার জায়গায় ডিম দেয় ও বংশবৃদ্ধি করে।'

দেশে ডেঙ্গু রোগের চিকিৎসা ব্যবস্থার যথেষ্ট উন্নতি হয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'ডেঙ্গু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ধরা পড়ছে এবং চিকিৎসার ব্যবস্থা আমরা নিচ্ছি।'

বর্তমান সরকার বিরাট অঙ্কের ভর্তুকি দিয়ে দেশে গ্যাস ও বিদ্যুৎ সরবরাহ করছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী তার বক্তব্যে বলেন, 'যারা আন্দোলন করছেন তারা প্রকৃত অবস্থা চিন্তা করছেন না, এটা ভীষণ দুঃখজনক। গ্যাসের আমদানি খরচ যেটা, সেটা তো বিবেচনায় নিতে হবে।'

তিনি আরও বলেন, 'দেশে যে গ্যাস আছে তা দিয়ে চাহিদা পূরণ না হওয়ায় এবং ব্যাপক চাহিদার প্রেক্ষিতে এলএনজি আমদানির সিদ্ধান্ত নেওয়া হলো। যার জন্য ৩০ হাজার কোটি অতিরিক্ত টাকার প্রয়োজন দেখা দিয়েছে। পুরো টাকাই ভর্তুকি দিচ্ছি। আমরা গ্যাসের চাহিদা মেটাবার জন্য এলএনজি আমদানি করছি।'

লিখিত বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'এলএনজি আমদানি খুব ব্যয় সাপেক্ষ। বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন মূল্যায়ন করে দেখেছে বর্ধিত ব্যয় নির্বাহের জন্য কমপক্ষে ৭৫ শতাংশ দাম বাড়ানোর প্রয়োজন ছিল। সেখানে আমরা কতটুক দাম বাড়িয়েছি। গ্রাহকদের আর্থিক চাপ বিবেচনা করে কমিশন মাত্র ৩২.৮ শতাংশ দাম বাড়িয়েছে। অর্থাৎ ভোক্তা পর্যায়ে প্রাকৃতিক গ্যাসের মূল্যহার বর্তমানে প্রতি ঘনমিটার ৯.৮০ টাকা। ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প গ্রাহকদের জন্য কোনো দাম বাড়ানো হয়নি। গণপরিবহনের বিষয়টি বিবেচনায় করে সিএনজি খাতে শুধু প্রতি ঘনমিটারে ৩ টাকা বাড়ানো হয়েছে। বিভিন্ন শ্রেণীর গ্রাহকদের অভিযোগের ভিত্তিতে এখন থেকে মিনিমাম চার্জ প্রত্যাহার করা হয়েছে।'

সব শিল্প গ্রাহকদের ইবিসি মিটার দেওয়া হবে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা তার ভাষণে বলেন, 'গ্রাহকদের ওপর যেন আর্থিক চাপ বেশি না পড়ে সে জন্য প্রতি বছর ৭ হাজার ৯৯০ কোটি টাকা আর্থিক সহায়তা বা ভর্তুকি দেওয়া হবে। তাছাড়া জ্বালানি নিরাপত্তা তহবিল থেকে ২ হাজার ৪২০ কোটি টাকা দেওয়া হবে। আমদানিতে যে মূল্য পড়ছে তাতে আমরা সেখানে পাইপলাইন তৈরি করছি সংরক্ষণ করতে হচ্ছে। পাইপলাইনের মাধ্যমে সরবরাহ করছি। এরও একটা খরচ আছে।'

এলএনজি আমদানি ইস্যুতে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, 'আমরা যদি খরচটা ধরি তাতে এলএনজি আমদানির খরচ পড়ে ৬১.১২ টাকা। আমরা দাম ধরেছি খুব কম। এর দাম পড়ে প্রতি কিউবিক মিটার ৬১.১২ টাকা। আমরা নিচ্ছি মাত্র ৯.৮০ টাকা। যেখানে ৬১.১২ টাকা দাম পড়ে সেখানে ধরা হচ্ছে ৯.৮০ টাকা। অর্থাৎ ৫১.৩২ টাকা সহায়তা দেওয়া হচ্ছে।'

তিনি বলেন, 'দেশে গ্যাস সরবরাহ করতে না পারলে উৎপাদন বন্ধ হবে, রপ্তানি বন্ধ হবে, কর্মসংস্থান বন্ধ হবে। এ জন্য গ্যাস আমদানির খরচ যেটা, সেটা আমাদের বিবেচনা করতে হবে। জানি না যারা আন্দোলন করছেন তারা কি চায়। ভারতে গ্যাসের দাম কমের কথা বলা হচ্ছে কিন্তু সব খাতেই ভারতে গ্যাসের দাম বাংলাদেশ থেকে বেশি।'

এ সময় তিনি ভারত এবং বাংলাদেশের গ্যাস এবং এলএনজির বর্তমান মূল্যের একটি তুলনামূলক চিত্রও সংসদে উত্থাপন করেন।

যেখানে দেশে গ্যাসের প্রকৃত মজুদের পরিমাণ না জেনে যুক্তরাষ্ট্রের বহুবিধ চাপের পরও ভারতে গ্যাস রপ্তানি করতে রাজি না হওয়ায় আন্তর্জাতিক কূটনীতির শিকার হয়ে ভোট বেশি পাওয়ার পরেও ২০০১ সালে ক্ষমতায় আসতে পারেননি বলেও মন্তব্য করেন বর্তমান সরকারের এ প্রধানমন্ত্রী।

তিনি অভিযোগ করে বলেন, 'সে সময় এই পরাশক্তির কাছে গ্যাস বিক্রির মুচলেখা দিয়েই খালেদা জিয়া ও বিএনপি ক্ষমতায় এসেছিল কিন্তু আমি মুচলেকা দেইনি। বলেছিলাম আগে আমাদের চাহিদা পূরণ করে ৫০ বছরের রিজার্ভ রাখার পর চিন্তা করব। তখন নির্বাচনে আমরা বেশি ভোট পেয়েও ক্ষমতায় আসতে পারিনি।’

আরও পড়ুন :- পদ্মা সেতু নির্মাণে 'কল্লা লাগবে' : গুজব ছড়ানোয় কিশোর গ্রেফতার

তিনি আরও বলেন, 'আওয়ামী লীগ ক্ষমতার গত এক দশকে বাংলাদেশ উন্নয়নের মহাসোপানে যাত্রা শুরু করেছে। দেশের যে অগ্রযাত্রা শুরু হয়েছে, তা আরও এগিয়ে নিয়ে যাব। দেশকে আরও সমৃদ্ধশালী করব। ২০২০ সালে জাতির জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী, ২০২১ সালে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী আমরা পালন করব ভিক্ষুকমুক্ত, ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত দেশ হিসেবে। ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ হবে দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে সবচেয়ে উন্নত ও সমৃদ্ধশালী দেশ।'

ওডি/কেএইচআর

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড