অধিকার ডেস্ক
সুইজারল্যান্ডের ব্যাংকগুলোতে বাংলাদেশিদের সঞ্চয়ের পরিমাণ চলতি বছর আবার বেড়েছে। ২০১৭ সালে কমলেও ২০১৮ সালে সুইজারল্যান্ডের ব্যাংকগুলোতে বাংলাদেশের বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নামে সঞ্চয় করার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে পাঁচ হাজার ৩শ ৪৩ কোটি টাকা। ২০১৭ সালে ছিল চার হাজার ৬৯ কোটি টাকা। অর্থাৎ এক বছরে এক হাজার ২৭৪ কোটি টাকা বেড়েছে।
বৃহস্পতিবার (২৭ জুন) প্রকাশ করা সুইজারল্যান্ডের কেন্দ্রীয় ব্যাংক সুইস ন্যাশনাল ব্যাংকের (এসএনবি) ‘ব্যাংকস ইন সুইজারল্যান্ড’ শীর্ষক প্রতিবেদনে বিষয়টি উঠে এসেছে।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ ফিন্যানশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিআইএফইউ) প্রধান আবু হেনা মোহা. রাজী হাসান বলেন, ‘এই অর্থের সবই যে অবৈধভাবে গেছে, তা বলা যাবে না। তবে কারো টাকা যদি সেখানে থাকে, সেটা নিয়ে এখানে তদন্ত হয়। আর তদন্তে কোনো তথ্য দরকার পড়লে এগমন্ট গ্রুপের সদস্য হিসেবে আমরা ওই দেশে চিঠি লিখি। তখন তারা দেখে, কার কী আছে না আছে।’
এ সংক্রান্ত তথ্য কখনো চাওয়া হয়েছে কি না- এমন প্রশ্নের জবাবে বিআইএফইউ প্রধান বলেন, ‘এর আগেও নিয়মিত লিখেছি। তবে নির্দিষ্ট ইস্যুতে কারও তথ্য অসম্পূর্ণ থাকলে তারা তা দিতে পারে না। আবার অনেক ক্ষেত্রে তারা তথ্য দিতে অপারগতাও প্রকাশ করে।’ এগমন্ট গ্রুপ হলো বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ফিন্যানশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (এফআইইউ) সমন্বয়ে গঠিত একটি আন্তর্জাতিক ফোরাম, যারা মানি লন্ডারিং ও সন্ত্রাসে অর্থায়নসংক্রান্ত তথ্য নিয়ে কাজ করে।
সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশিদের টাকা সঞ্চয়ের পরিমাণ বাড়ার প্রসঙ্গে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ড. এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, ‘বাংলাদেশ থেকে অর্থপাচারের মূল কারণ দুটি। প্রথমত, অনেকে দেশে অর্থ রাখা নিরাপদ মনে করেন না। দ্বিতীয়ত, বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ নেই।’
‘ব্যাংকস ইন সুইজারল্যান্ড’ শীর্ষক প্রতিবেদনের বিষয়ে জানতে চাইলে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের সম্মানিত ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, সাধারণভাবে বাংলাদেশে একটি অদ্ভুত পরিস্থিতি বিরাজ করছে। একদিকে ব্যক্তি খাতে বিনিয়োগ নেই; অপরদিকে তারাই হাজার হাজার কোটি টাকা বিদেশে নিয়ে যাচ্ছে। কী কারণে এটি হচ্ছে তা বোঝা দরকার।
দেশের টাকা পাচারের কারণ জানিয়ে ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, কয়েকটি কারণে এই টাকা পাচার হতে পারে। প্রথমত, দেশে তারা বিনিয়োগের পরিবেশ পাচ্ছে না। দ্বিতীয়ত, প্রতিযোগিতা সক্ষমতায় টিকে থাকতে পারছে না। অথবা বাংলাদেশের ভবিষ্যতের প্রতি তাদের আস্থা নেই।
সুইজারল্যান্ডের ব্যাংকগুলো গ্রাহকদের আমানতের বিষয়ের তথ্য সাধারণত গোপন রাখা হয়। তবে আন্তর্জাতিক চাপে বর্তমানে কিছু কিছু তথ্য এখন প্রকাশ করে দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তাদের প্রতিবেদনে উল্লেখ থাকে, কোন দেশের নাগরিকদের কত অর্থ সঞ্চয় আছে। কিন্তু আলাদা করে কোনো ব্যাংক হিসাবের তথ্য প্রকাশ করা হয় না। সুইজারল্যান্ডে ব্যাংক আছে ২৪৮টি।
বৃহস্পতিবার সুইস ন্যাশনাল ব্যাংকের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত প্রতিবেদনে দেখা যায়, বাংলাদেশিদের সঞ্চয়ের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৬১ কোটি ৭৭ লাখ সুইস ফ্রাঁ; বাংলাদেশি টাকায় প্রায় পাঁচ হাজার ৩শ ৪৩ কোটি টাকা।
সুইস কেন্দ্রীয় ব্যাংক সুইস ন্যাশনাল ব্যাংকের ঘোষণা অনুযায়ী, নাগরিকত্ব গোপন রেখেছে- এমন বাংলাদেশিদের আমানত রাখা অর্থ এই হিসাবের মধ্য রাখা হয়নি। গচ্ছিত সোনা কিংবা মূল্যবান সামগ্রীর আর্থিক মূল্যমানও প্রতিবেদনে হিসাবের বাইরে রাখা হয়েছে।
পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০১৬ সাল পর্যন্ত টানা ছয় বছর সুইস ব্যাংকগুলোতে বাংলাদেশিদের সঞ্চয়ের পরিমাণ বাড়ে। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগের বছর অর্থাৎ ২০১৭ সালে খানিকটা কমলেও এবার আবার বেড়েছে।
এদিকে অর্থপাচারের বিষয়ে ওয়াশিংটনভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান গ্লোবাল ফিন্যানশিয়াল ইন্টিগ্রিটির (জিএফআই) এক প্রতিবেদন উল্লেখ করা হয়, বাংলাদেশ থেকে ২০১৫ সালে ৫শ ৯১ কোটি ৮০ লাখ ডলার অর্থপাচার হয়েছে। আর ২০০৬ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত দশ বছরে অর্থপাচার হয়েছে ছয় হাজার ৩শ ২৮ কোটি ডলার।
ওডি/এএস
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড