অধিকার ডেস্ক
বরগুনায় প্রকাশ্যে রিফাত শরীফকে (২৫) কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় অপরাধীদের গ্রেফতার এবং দ্রুত বিচারের দাবি জানিয়েছেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ শাহরিয়ার আলম।
বৃহস্পতিবার (২৭ জুন) দুপুর ১২টার দিকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে নিজের অ্যাকাউন্টে একটি স্ট্যাটাস দিয়ে তিনি এ দাবি জানান।
দৈনিক অধিকারের পাঠকদের উদ্দেশে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর স্ট্যাটাসটি তুলে ধরা হলো-
‘বরগুনার হত্যার গ্রেফতার এবং বিচার হবে, হতেই হবে। ভিডিও করে সামাজিক মাধ্যমে দেয়া হয়েছে বলে সবাই এটা নিয়ে কথা বলছেন। অবশ্যই ভালো।
কিন্তু অন্য সবকিছু বাদ দিলাম। গতকাল মোটামুটি একই সময়ে রাজশাহীর তানোরে বাজারে আম বিক্রি করতে গিয়ে একইভাবে নিহত হয়েছে আরেকজন তরুণ, প্রকাশ্য দিবালোকেই হত্যা করেছে পাশের আরেক দোকানদারের ছেলে। নিহতের একটা রাজনৈতিক পরিচয়ও আছে, সে সেখানকার একটি ওয়ার্ডের ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক। না কোনো টেন্ডার নিয়ে বা বান্ধবী নিয়ে ফেসাদ নয়। সংসার চালাতে নিজেই বাগানের আম বিক্রি করতে গিয়েছিল সেই হতভাগা তরুণ।
সব মৃত্যুই আমাকে নাড়া দেয়। তরুণ-তরুণীর মৃত্যু একটু বেশি নাড়া দেয়। শিশুর মৃত্যু আরও বেশি নাড়া দেয়।
আমরা বরগুনার মতো সবগুলোর ভিডিও দেখতে পাই না। গতকাল হয়তো এই দুইয়ের বাইরেও মানুষ খুন হয়েছে বা অপমৃত্যু হয়েছে। আমরা সবগুলোর খোঁজ রাখি না। তবে সচেতনতা সামাজিক সমস্যাগুলোকে কমিয়ে আনবে।
দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে যারা দেখছিলেন তারা মনে হয় না সাধারণ পথচারী বা ছাত্র। অবশ্যই তাদেরকেও আইনের আওতায় আনতে হবে।
আমরা নিশ্চিত করবো প্রথমে গ্রেফতার তারপর ন্যায় বিচার। এ ব্যাপারে কোন সন্দেহের অবকাশ নেই।’
এক ঘণ্টা আগে দেওয়া পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর এই স্ট্যাটাসে প্রায় আড়াই হাজার লাইক, সাড়ে চারশ মন্তব্য এবং ১৪৪ জন শেয়ার করেছেন। সেখানে বরগুনার এই ঘটনায় প্রতিমন্ত্রীর দেওয়া স্ট্যাটাসের বিপরীতে অনেকেই রাগ, ক্ষোভ ও সমালোচনা করেছেন।
প্রসঙ্গত, বুধবার (২৬ জুন) সকাল সাড়ে ১০টার দিকে বরগুনার সরকারি কলেজের সামনে নয়ন ও তার সহযোগী সন্ত্রাসীরা প্রকাশ্যে রামদা দিয়ে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে গুরুতর আহত করে রিফাত শরীফকে (২৫)। এরপর অস্ত্র উঁচিয়ে বীরদর্পে এলাকা ত্যাগ করে তারা। পরে গুরুতর আহত অবস্থায় রিফাতকে প্রথমে বরগুনা সদর হাসপাতালে নেওয়া হয় এবং পরে বরিশাল শেরে বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান রিফাত।
রিফাত বরগুনা সদর উপজেলার ৬ নম্বর বুড়িরচর ইউনিয়নের মাইঠা লবনগোলা এলাকার দুলাল শরীফের ছেলে।
এদিকে ঘটনাটির ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে। পুলিশ বলছে, ঘটনাস্থলে থাকা সিসি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করে সন্ত্রাসীদের শনাক্ত করা গেছে। এদের মধ্যে নয়ন বন্ড, তার বন্ধু নিশান ফরাজি ও রাব্বি আকনের নাম জানা গেছে।
অভিযুক্ত নয়ন বন্ডের মা সাহেদা বেগম জানান, ৭ মাস আগে স্থানীয় কাজী অফিসে পাঁচ লাখ টাকা দেনমোহরে তার ছেলে নয়নের সঙ্গে মিন্নির বিয়ে হয়। পরে মিন্নির সঙ্গে রিফাতের সম্পর্কের বিষয়টি জানতে পারেন নয়ন। এ নিয়ে তাদের দাম্পত্য কলহ শুরু হয়। একপর্যায়ে বিচ্ছেদে রূপ নেয় তাদের বৈবাহিক সম্পর্ক। মাস দুয়েক আগে মিন্নি নয়নকে ডিভোর্স দেন। এর কিছুদিন পরই রিফাতকে বিয়ে করেন মিন্নি।
নিহত রিফাতের বাবা দুলাল শরীফ জানান, দুই মাস আগে রিফাত পুলিশ লাইন এলাকার কিশোরের মেয়ে আয়শা আক্তার মিন্নিকে বিয়ে করে। নিজের সাবেক স্ত্রী দাবি করে পশ্চিম কলেজ সড়কের নয়ন নামে এক যুবককে প্রায়ই মিন্নিকে উত্ত্যক্ত করতে থাকে।
এক পর্যায়ে ফেসবুকে আপত্তিকর ছবিও পোস্ট করে সে। এ নিয়ে রিফাতের সঙ্গে নয়নের বিরোধিতা তৈরি হয়। এর জেরে সকালে রিফাতকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে জখম করে ফেলে রেখে যায়। এ সময় নয়নের সঙ্গে নিশান ফরাজি ও রাব্বি আকন নামে তার দুই সহযোগীও ছিলো।
ওডি/এআর
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড