• শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩৬ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

অবশেষে পুলিশের জালে ওসি মোয়াজ্জেম

  নিজস্ব প্রতিবেদক

১৬ জুন ২০১৯, ১৫:৪১
মোয়াজ্জেম হোসেন ও নুসরাত জাহান রাফি
সাবেক ওসি মোয়াজ্জেম হোসেন ও নুসরাত জাহান রাফি (ফাইল ফটো)

মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত হত্যাকাণ্ডে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের পরোয়ানাভুক্ত আসামি ফেনীর সোনাগাজী থানার সাবেক ওসি মোয়াজ্জেম হোসেন গ্রেফতার হয়েছেন।

রবিবার (১৬ জুন) রাজধানীর শাহবাগ থেকে তাকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

পুলিশ সদর দপ্তরের মিডিয়া শাখার সহকারী মহাপরিদর্শক (এআইজি) সোহেল রানা বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

দেশজুড়ে তুমুল আলোচনা-সমালোচনার মধ্যে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির ২০ দিন পর এ বিতর্কিত ওসি গ্রেফতার হলেন।

শনিবার (১৫ জুন) সাংবাদিকদের প্রশ্নে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছিলেন, ওসি মোয়াজ্জেম হোসেন আত্মগোপনে থাকায় তাকে গ্রেফতারে দেরি হচ্ছে। এতে পুলিশের কোনো গাফিলতি নেই। তিনি যেকোনো সময় গ্রেফতার হতে পারেন।

গত ২৯ মে হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় ওসি মোয়াজ্জেম হোসেনের পক্ষে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে করা মামলায় আগাম জামিনের আবেদন করা হয়। ১১ জুন ভারপ্রাপ্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মুরাদ রেজা জানান, এ আবেদনের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ অবস্থান নেবে।

রাফি হত্যাকাণ্ডে অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ার পর গত ২৭ মে ওসি মোয়াজ্জেমের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন আদালত। এরপর থেকেই তিনি লাপাত্তা ছিলেন। পরিবার ও পুলিশের ঊর্ধ্বতন কারো কাছে তার কোনও খোঁজ ছিল না।

রাফি হত্যাকাণ্ডে প্রত্যাহার হওয়া ওসি মোয়াজ্জেম হোসেনের বিরুদ্ধে সব অভিযোগের সত্যতা পেয়েছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।

গত ১৫ এপ্রিল ওসির বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করেন ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন। ব্যারিস্টার সুমনের মামলাটি প্রথমে অভিযোগ আকারে ছিল। পরে পিটিশন মামলা হিসেবে গ্রহণ করে তদন্তের জন্য পিবিআইকে নির্দেশ দেন আদালত। ওসির বিরুদ্ধে থানায় রাফির বক্তব্য ভিডিও করে ফেসবুকে ছেড়ে দেওয়াসহ প্রত্যেকটি অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে। তদন্তে প্রমাণিত সব তথ্য-উপাত্তসহ প্রতিবেদন আদালতকে দেওয়া হয়।

গত ২৭ মার্চ সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসার ছাত্রী রাফিকে মাদরাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদদৌলা শ্রেণিকক্ষে নিয়ে যৌন নিপীড়ন করেন। এ অভিযোগে দুজনকে থানায় নিয়ে যান ওসি মোয়াজ্জেম। ওসি নিয়ম ভেঙে জেরা করতে নুসরাতের বক্তব্য ভিডিও করেন। মৌখিক অভিযোগ নেওয়ার সময় দুই পুরুষের কণ্ঠ শোনা গেলেও সেখানে রাফি ছাড়া অন্য কোনও নারী বা তার আইনজীবী উপস্থিত ছিলেন না। ভিডিওটি প্রকাশ হলে অধ্যক্ষ ও তার সহযোগীদের সঙ্গে ওসির সখ্যতার ব্যাপারটি স্পষ্ট হয়।

ভিডিওতে দেখা যায়, ওসির সামনে অঝোরে কাঁদছেন রাফি। সেই কান্না ভিডিও করেন ওসি। রাফি তার মুখ দুই হাতে ঢেকে রেখেছেন। তাতেও ওসির আপত্তি। বারবার ‘মুখ থেকে হাত সরাও, কান্না থামাও’ বলার পাশাপাশি তিনি বলেন, ‘এমন কিছু হয়নি যে এখনও তোমাকে কাঁদতে হবে।’

মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে, ওসি মোয়াজ্জেম অনুমতি ছাড়া নিয়ম ভেঙে রাফিকে জেরা ও তা ভিডিও করেন। পরে ভিডিওটি ফেসবুক ও ইউটিউবসহ বিভিন্ন মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।

ভিডিওতে দেখা যায় ওসি মোয়াজ্জেম অপমানজনক ও আপত্তিকর ভাষায় একের পর প্রশ্ন করছেন রাফিকে। রাফির বুকে হাত দিয়ে শ্লীলতাহানি করা হয়েছে কি না এমন প্রশ্নও করেন ওসি।

গত ৬ এপ্রিল সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসা কেন্দ্রে আলিম পরীক্ষা দিতে যান ওই ছাত্রী। এরপর কৌশলে তাকে পাশের ভবনের ছাদে ডেকে নেওয়া হয়। সেখানে চার-পাঁচজন বোরকা পরিহিত ব্যক্তি ওই ছাত্রীর শরীরে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেন। এতে তার শরীরের ৮৫ শতাংশ পুড়ে যায়। পরে উদ্ধার করে স্বজনরা সোনাগাজী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা তাকে ফেনী সদর হাসপাতালে পাঠান। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়ার পর তাকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে পাঠানো হয়। বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাফি মারা যান। এ ঘটনাকে আত্মহত্যা বলে চালিয়ে দেওয়া ও মামলাকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা করেন সোনাগাজী মডেল থানার ওসি মোয়াজ্জেম হোসেন।

ওডি/এমআর

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড