অধিকার ডেস্ক ২৬ এপ্রিল ২০১৯, ১০:৫৪
মিয়ানমারে জাতিগত নিধন ও নির্যাতনের শিকার হয়ে কক্সবাজার এলাকায় আশ্রয় নেওয়া ১০ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গাদের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে শরণার্থী ক্যাম্প পরিদর্শন করেছেন জাতিসংঘের ২০ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল। ইউএনএইচসিআর ও আইওএম সহ জাতিসংঘের তিন সংস্থার প্রধানের নেতৃত্বে তারা কক্সবাজারের উখিয়ার রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করেন।
২০ সদস্যের প্রতিনিধি দলে আছেন- জাতিসংঘের উদ্বাস্তু বিষয়ক সংস্থা-ইউএনএইচসিআর সদর দফতরের হাই-কমিশনার ফিলিপ্পো গ্রান্ডি, জাতিসংঘের আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল (হিউম্যান অ্যাফেয়ারস) মার্ক লোকক ও আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা-আইওএম এর মহাপরিচালক এন্তোনিও ভিতোরিনো।
শুক্রবার (২৬ এপ্রিল) সকাল সাড়ে ৮টার দিকে বালুখালী-২ এর ১১ নম্বর ক্যাম্প পরিদর্শন করেন তারা। এ সময় তারা বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি-ডাব্লিউএফপি’র বিভিন্ন খাদ্য বিতরণ কেন্দ্র পরিদর্শন করেন।
এছাড়া তারা ১১, ১৭ ও ১৮ নম্বর ক্যাম্প পরিদর্শন করেন এবং নারী ও শিশুদের সঙ্গে কথা বলেন। রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন শেষে বেলা ৩টার দিকে তাদের সংবাদ সম্মেলন করার কথা রয়েছে।
এর আগে বৃহস্পতিবার (২৫ এপ্রিল) বেলা ৩টার দিকে ২০ সদস্যের এই প্রতিনিধি দল ঢাকা থেকে কক্সবাজার পৌঁছান। বিকালে কক্সবাজার জেলা প্রশাসন এবং কক্সবাজার ত্রাণ ও রোহিঙ্গা শরণার্থী কমিশনারের সঙ্গে পৃথক বৈঠক করেন দলের সদস্যরা। বৈঠকের পর ফিলিপ্পো গ্রান্ডি সাংবাদিকদের বলেন, রোহিঙ্গাদের মানবিক সহায়তায় একযোগে কাজ করার জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে। এ সংকট সমাধানে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে সঙ্গে নিয়ে কাজ করছে জাতিসংঘ। দফায় দফায় আলোচনা করা হচ্ছে। মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের জন্য একটি ভালো পরিবেশ তৈরি করা হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘এটা পরিষ্কার যে, এর জন্য মিয়ানমারই দায়ী এবং এর সমাধানও মিয়ানমার থেকেই পাওয়া যাবে।’
এর আগে গত ২৪ এপ্রিল তিন দিনের সফরে বাংলাদেশে আসেন জাতিসংঘের উচ্চপদস্থ তিন কর্মকর্তা। তারা হলেন- জাতিসংঘ শরণার্থী সংস্থার হাই কমিশনার ফিলিপো গ্র্যান্ডি, আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার মহাপরিচালক অ্যান্টনিও ভিটোরিনো এবং জাতিসংঘ মানবিক বিষয়ক আন্ডার-সেক্রেটারি জেনারেল মার্ক লোকক।
তাদের এই সফরের মূল উদ্দেশ্য- রোহিঙ্গা সমস্যার স্থায়ী ও সুষ্ঠু সমাধানের জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করা। যাতে করে রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে মানবিক সহায়তার পাশাপাশি মিয়ানমারের রাখাইনে রোহিঙ্গাদের ফেরত যাওয়ার জন্য সহায়ক পরিবেশ তৈরি হয়।
এদিকে সফরে এসে বুধবার সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন জাতিসংঘের প্রতিনিধি দল।
এ সময় জাতিসংঘের তিন শীর্ষ কর্মকর্তা ১০ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গাকে বাংলাদেশে আশ্রয় দেয়ায় মানবিক দৃষ্টিভঙ্গির জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভূয়সী প্রশংসা করেন। তাদের মিয়ানমারের সফরের কথা উল্লেখ করে তারা প্রধানমন্ত্রীকে অবহিত করেন যে, রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন প্রশ্নে তারা মিয়ানমারে ইউএনডিপি ও ইউএনএইচসিআর-এর প্রবেশাধিকার চেয়েছেন।
তারা বলেন, ‘আমরা রোহিঙ্গা ইস্যুতে বিশেষ করে রোহিঙ্গা শিশুদের শিক্ষা দেয়ার ব্যাপারে বাংলাদেশকে সহায়তা অব্যাহত রাখার ব্যাপারে অঙ্গীকারাবদ্ধ।’ জাতিসংঘ কর্মকর্তারা বলেন, তারা রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের ব্যাপারে মিয়ানমারের কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করেছেন এবং কয়েকটি চুক্তি স্বাক্ষর করেছেন। তবে তারা ‘এক্ষেত্রে অগ্রগতি খুবই মন্থর’ বলে উল্লেখ করেন।
আলোচনায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতিসংঘের প্রতিনিধি দলকে বলেন, মিয়ানমার থেকে বিতাড়িত হয়ে কক্সবাজারে আশ্রয় নেওয়া ১০ লাখেরও বেশি সংখ্যক রোহিঙ্গা বাংলাদেশের জন্য বড় বোঝা। এই বোঝা কতদিন বহন করবে বাংলাদেশ? তাদেরকে অবশ্যই নিজ ভূমি মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে ফিরে যেতে হবে। রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনে জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোকে আরও জোরালো ভূমিকা রাখার আহ্বানও জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রীর জাতীয় সংসদ ভবনস্থ কার্যালয়ে জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক হাইকমিশনার ফিলিপ্পো গান্ধী, জাতিসংঘের আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল (হিউম্যান এ্যাফেয়ারস) মার্ক লোকক ও আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইওএম)-এর মহাপরিচালক এন্তোনিও ভিতোরিনোর সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এই আলোচনা হয়।
ওডি/এআর
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড