• শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩৩ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

রানা প্লাজা ধসের ৬ বছর

সুবিচার পাননি শ্রমিকরা! 

  অধিকার ডেস্ক    ২৪ এপ্রিল ২০১৯, ১০:১১

রানা প্লাজা
রানা প্লাজা ভেঙে নিহত দুই শ্রমিক (ছবি : সংগৃহীত)

রানা প্লাজা ধসের ৬ বছর হলো আজ। ২০১৩ সালের এই দিনে ধসে পড়েছিল সাভার বাজার বাসস্ট্যান্ড এলাকার রানা প্লাজার আট তলা ভবন। এই দুর্ঘটনায় ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে নিহত হয় ১ হাজার ১৩৬ জন শ্রমিক। আহত হন আরও কয়েক হাজার শ্রমজীবী মানুষ। স্মরণকালের সবচেয়ে ভয়াবহ প্রাণঘাতী এই দুর্ঘটনায় এখন পর্যন্ত সুবিচার পাননি হতাহত শ্রমিক ও তাদের স্বজনরা। দায়ের করা চার মামলার মধ্যে নিষ্পত্তি হয়েছে কেবল একটির। বাকি তিন মামলার বিচারকাজ এখনো ঝুলছে।

২০১৫ সালের ১২ এপ্রিল দুদকের সহকারী পরিচালক মাহবুবুল আলম বাদী হয়ে রানা প্লাজার মালিক সোহেল রানা ও তার মা মর্জিনা বেগমের বিরুদ্ধে রমনা থানায় মামলা দায়ের করেন। মামলায় রানা প্লাজার নির্মাণের তথ্য গোপন করে দুদকে মিথ্যা ও ভিত্তিহীন তথ্য দিয়ে ছয় কোটি ৬৭ লাখ ৬৬ হাজার ৯০০ টাকা জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জন করার অভিযোগ করা হয়।

গত ২০১৭ সালের ২৯ আগস্ট এ মামলার রায় দেন ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৬-এর বিচারক কে এম ইমরুল কায়েস। দুদকের দায়ের করা এই মামলার রায়ে সোহেল রানাকে তিন বছরের কারাদণ্ড ও ৫০ হাজার টাকা জরিমানা ও অনাদায়ের আরও তিন মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। একই মামলায় তার মা মর্জিনা বেগমকেও তিন বছরের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়। একইসঙ্গে অবৈধভাবে অর্জিত সাভার বাজার রোডের ৬৯/১ বাড়িটির এক-তৃতীয়াংশ রাষ্ট্রের অনুকূলে বাজেয়াপ্ত করারও আদেশ দেন আদালত।

এদিকে ঝুলে থাকা তিন মামলার মধ্যে হত্যা মামলাটি বিচারাধীন রয়েছে ঢাকার জেলা ও দায়রা জজ আদালতে। আর ইমারত নির্মাণ আইনে দায়ের করা দুই মামলার মধ্যে রাজউকের মামলাটি ঢাকার অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত এবং ইমারত নির্মাণে দুর্নীতির অভিযোগে দায়ের করা মামলাটি ঢাকার বিভাগীয় বিশেষ জজ আদালতে বিচারাধীন। আরও ১১টি মামলা বিচারাধীন রয়েছে আন্তর্জাতিক শ্রম আদালতে।

রানা প্লাজা ধসের ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছিলেন এক হাজার ১৩৬ জন। আহত হয়েছিলেন আরও সহস্রাধিক শ্রমিক। এ ঘটনায় পরদিন সাভার থানার উপপরিদর্শক (এসআই) ওয়ালী আশরাফ ভবন নির্মাণে ‘অবহেলা ও ত্রুটিজনিত হত্যার অভিযোগে মামলাটি দায়ের করেন। ২০১৫ সালের ২৬ এপ্রিল সিআইডির সহকারী পুলিশ সুপার বিজয়কৃষ্ণ কর ভবন মালিক সোহেল রানাসহ ৪১ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। মামলায় অভিযোগ পত্রে ৫৯৪ জনকে সাক্ষী করা হয়।

আসামি ৪১ জনের মধ্যে আবু বক্কর সিদ্দিক ও আবুল হোসেন মারা যান। দুজনকে বাদে বর্তমানে আসামির সংখ্যা ৩৯ জন। ২০১৬ সালের ১৮ জুলাই ঢাকা জেলা ও দায়রা জজ এস এম কুদ্দুস জামান আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করলেও এখন পর্যন্ত একজনেরও সাক্ষ্যগ্রহণ করা হয়নি।

এদিকে আইন না মেনে ভবন নির্মাণ করায় রাজউকের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. হেলাল উদ্দিন ওইদিন ইমারত নির্মাণ আইনে সাভার থানায় আরেকটি মামলা করেন। ২০১৫ সালের ২৬ এপ্রিল সিআইডির সহকারী পুলিশ সুপার বিজয়কৃষ্ণ কর ভবনের মালিক সোহেল রানাসহ ১৮ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। ১৩০ জনকে মামলার সাক্ষী করা হয়।

২০১৬ সালের ১৪ জুন ঢাকার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোস্তাফিজুর রহমান আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন। তবে এখন পর্যন্ত একজনের সাক্ষ্যগ্রহণ হয়নি। এ বিষয়ে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী আনারুল কবির বাবুল বলেন, ‘কিছু আসামি অভিযোগ গঠনের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে রিভিশন মামলা করেন। রিভিশন মামলাটি ঢাকার দ্বিতীয় অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতে বিচারাধীন রয়েছে। রিভিশনের বিষয়টি নিষ্পত্তি হলে মামলাটির সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু করতে পারব।’

রানা প্লাজা ট্র্যাজেডির পরপরই ভবন নির্মাণে দুর্নীতির অনুসন্ধানে নামে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। অনুসন্ধানে দেখা যায়, ছয় তলার জন্য অনুমোদন নিয়ে ৮ তলা হিসেবে নির্মাণ করা হয়েছিল রানাপ্লাজাকে। এই দুর্নীতির কারণে ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারা ও দণ্ডবিধির ১০৯ ধারায় সাভার থানায় ২০১৩ সালের ১৫ জুন একটি মামলা দায়ের করে দুদক।

২০১৪ সালের ১৬ জুলাই রানাসহ ১৮ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও দুদকের উপপরিচালক মফিদুল ইসলাম। রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী মোশারফ হোসেন কাজল বলেন, ‘বর্তমানে মামলাটির একজন সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়েছে। আগামী ২ মে সাক্ষ্য গ্রহণের দিন ধার্য রয়েছে।

এদিকে দীর্ঘ ছয় বছর পার হয়ে গেলেও এ ঘটনায় হতাহত শ্রমিক ও তার স্বজনেরা সুবিচার পাননি। নিহত শ্রমিকদের স্বজনেরা যেমন যথাযথ ক্ষতিপূরণ পাননি, তেমনি যথাযথ সহায়তা না পাওয়ায় আহত অনেক শ্রমিকই প্রয়োজনীয় চিকিৎসা নিয়ে আজও ফিরতে পারেননি স্বাভাবিক জীবনে। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) বলছে, দুর্ঘটনা পরবর্তীতে ক্ষতিপূরণ একসঙ্গে না দেওয়ায় (যারা পেয়েছেন) এসব শ্রমিকের অর্থনৈতিক উন্নয়ন হয়নি। প্রায় ৫১ শতাংশ শ্রমিক এখনও বেকার।

এ ছাড়া ক্ষতিপূরণ নির্ধারণে গড়া হাইকোর্ট বেঞ্চ ভেঙে যাওয়ায় যথাযথ ক্ষতিপূরণ পেতে ঝুঁকির মধ্যে রয়েছেন হতাহত ও তাদের স্বজনেরা। তবে ওই দুর্ঘটনার পর ছয় বছরে সংশ্লিষ্টদের সমন্বিত উদ্যোগে কারখানা নিরাপত্তা, তদারকি, শ্রমিকের মজুরি, সরকারি প্রতিষ্ঠানের সক্ষমতার অগ্রগতি হয়েছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এখনও অনেক কারখানার মান উন্নয়নের কাজ বাকি রয়ে গেছে। এ ছাড়াও সরকারি উদ্যোগে কারখানাগুলোর পরিবেশ ও শ্রম অধিকার রক্ষায় প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতারও ঘাটতি রয়েছে। এসব ক্ষেত্রে কার্যকর উন্নতি না এলে তা ভবিষ্যতে তৈরি পোশাক খাতের ব্যবসায় আবারও ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে পারে।

জাতীয় গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশন সভাপতি আমিরুল হক আমিন বলেন, রানা প্লাজা ধসের ছয় বছর পার হলেও ক্ষতিগ্রস্ত অনেকেই এখনো কোনো ক্ষতিপূরণ পাননি। বছরের পর বছর ক্ষতিপূরণ পাওয়ার আশায় দুয়ারে দুয়ারে ঘুরেছেন।

ওডি/এআর

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড