• বৃহস্পতিবার, ০৯ মে ২০২৪, ২৬ বৈশাখ ১৪৩১  |   ২৬ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

অশান্ত বাংলাদেশ, নুসরাতের দুর্ভাগ্য বিশ্ব মিডিয়ায়

  আন্তর্জাতিক ডেস্ক

১৯ এপ্রিল ২০১৯, ১৬:৫৫
নুসরাত রাফি
এক শিক্ষার্থীর শ্লীলতাহানি করে তাকে জীবন্ত পুড়িয়ে মারা শিক্ষক ও তার সহযোগীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে বিক্ষোভে ফেটে পরে বাংলাদেশ। ছবি : সংগৃহীত

ফেনীর সোনাগাজিতে অধ্যক্ষের হাতে শ্লীলতাহানির শিকার হওয়া এবং তারই নির্দেশে জীবন্ত পোড়ানো ১৯ বছর বয়সী শিক্ষার্থী নুসরাত জাহান রাফির মৃত্যুতে বিক্ষোভে ফেটে পরে সমগ্র দেশ। দেশের গণ্ডি পার হয়ে শীর্ষ আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমেও নুসরাতের জীবনে ঘটে যাওয়া নির্মমতার দৃশ্য প্রকাশ পায়।

পুলিশের কাছে শ্লীলতাহানির অভিযোগ করায় ক্ষুব্ধ হয়ে যান মাদ্রাসার এই অধ্যক্ষ। মামলা তুলে নেয়ার জন্য হুমকি দিলেও নুসরাত তাতে অস্বীকৃতি জানায়।আর এরপরেই অধ্যক্ষের সহযোগীরা গত ৬ এপ্রিল সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসা পরীক্ষা কেন্দ্রে ওড়না দিয়ে হাত-পা বেঁধে নুসরাতের শরীরে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয়।

যৌন হয়রানি সম্পর্কে অভিযোগ করার জন্য নুসরাত গত মার্চ মাসে পুলিশের কাছে গিয়েছিল এবং একটি ফাঁস হওয়া ভিডিও স্থানীয় পুলিশ স্টেশনের প্রধানকে দেখায়। কিন্তু এটি 'বড় কোনো বিষয় নয়' বলে অভিযোগটি বাতিল করে দেন দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা। নুসরাত মামলার তদন্তে নেতৃত্ব দেওয়া সিনিয়র পুলিশ সুপার মো. ইকবাল ‘এএফপিকে’ বলেন, 'ওই শিক্ষক অভিযোগ প্রত্যাহারের জন্য রাফিকে চাপ প্রয়োগ করে। কিন্তু অভিযোগ প্রত্যাহার না করলে তার সহযোগীদের নুসরাতকে হত্যার জন্য নির্দেশ দেয়।'

ইকবাল আরও জানান, 'গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে নুসরাতের ৩ সহপাঠীসহ ৫ জন তাকে তার শরীরেই স্কার্ফ দিয়ে বেঁধে কেরোসিন ঢেলে আগুন জ্বালিয়ে জীবন্ত পুড়িয়ে দেয়। তাদের পরিকল্পনা ছিল ঘটনাটিকে আত্মহত্যার মতো দেখানো। কিন্তু, আগুনে তার হাত-পা বাঁধার স্কার্ফটি পুড়ে গেলে খুলে যায় এবং সে কোনওভাবে নিচে নেমে আসতে সক্ষম হয়।' তার শরীরের ৮০ শতাংশই পুড়ে যাওয়াতে ১০ এপ্রিল হাসপাতালেই মারা যায়।

কিন্তু, তিনি তার মৃত্যুর আগে একটি ভিডিও রেকর্ড করে যান যেখানে তিনি তার অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে তার অভিযোগের পুনরাবৃত্তি ধারণ করেন। তিনি সেখানে তার ওপর হামলাকারীদের চিহ্নিত করার কথাও জানান। নুসরাত বলেন, 'ওই অধ্যক্ষ আমাকে স্পর্শ করে, আমার শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত আমি এই অপরাধের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করব।'

নুসরাতের মৃত্যুর পরে সারাদেশ বিক্ষোভে ফেটে পরে, একটি স্বাধীন দেশের এক নারীকে এভাবে একজন শিক্ষকের লালসার শিকার হয়ে জীবন্ত পুড়িয়ে মারা যেন আদিম বর্বর যুগকেও হার মানায়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের পর বিভিন্নস্থানে বিক্ষোভ করে দুষ্কৃতিকারীদের দৃষ্টান্তমূলক দাবি জানায় শিক্ষার্থী, মানবাধিকার সংস্থার সদস্যসহ সাধারণ নাগরিকেরা।

অধ্যক্ষসহ এখন পর্যন্ত ১৭ জনকে আটক করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ‘এএফপিকে’ জানায়, 'কোনো অপরাধীকে ছাড় দেয়া হবে না। সবার বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে'। যে দেশের প্রধানমন্ত্রী একজন নারী সেদেশের এক ছাত্রীকে শিক্ষক যৌন নির্যাতন করে জীবন্ত পুড়িয়ে মারলে ন্যায়বিচার আর স্বাধীনতা উভয়েই এক সংকটে উপনীত হয়। এই নৃশংস অপরাধীদের যে শাস্তি দেয়া হবে তা ই ভবিষ্যত নুসরাতদের ভাগ্য নির্ধারণের সংবিধান হবে।

ওডি/এসএমএস

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড