• শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩৬ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

‘ভবিষ্যৎ বাংলাদেশ জানবে, ১৮’র প্রজন্ম তাদের দায় শোধ করেছিল’

  অধিকার ডেস্ক    ২৩ ডিসেম্বর ২০১৮, ২২:১০

পিনাকী ভট্টাচার্য
ছবি : সংগৃহীত

লেখক ব্লগার পিনাকী ভট্টাচার্য তার ফেসবুক আইডিতে ২০১৮ সালের প্রজন্ম নিয়ে যা বললেন…

তার ফেসবুক মন্তব্য হুবহু তুলে ধরা হলো,

"খেয়া" কাব্যগ্রন্থে রবীন্দ্রনাথের একটা যুগল কবিতা আছে। প্রথমটার নাম "শুভক্ষণ"। পরেরটার নাম "ত্যাগ" কবিতা দুটো যদি কারও পড়া না থাকে তাহলে পড়ে নিন প্লিজ। কবিতাটা যে কোন সময়ের রাজনৈতিক লড়াইয়ের জন্য খুব প্রাসঙ্গিক। প্রথম কবিতায় এক তরুণী তার মা'কে বলছে, আজকে রাজপুত্র আমার ঘরের সামনে দিয়ে যাবে, তুমি বলে দাও আমি কোন সাজে সেজে জানালায় দাঁড়াব, আজকে তো ঘরের কাজ করবার দিন নয়।

কবিতার এই "রাজপুত্র" কোনো মানুষ নয়, এ হচ্ছে সেই মহাক্ষণ যা কপালে থাকলে আমাদের কারও কারও জীবনে আসে। আবার মিলিয়ে যায়। সেই "বিশেষ সময়" আমাদের কাছে এক বিশেষ নিবেদন দাবি করে। সেই সময়টা ঘরের দৈনন্দিন কাজ নিয়ে ব্যস্ত থাকার সময় নয়। সেই তরুণীর মা অবাক নয়নে তরুণীর দিকে চেয়ে থাকলেও সেই তরুণী দৃঢ় প্রতিজ্ঞ যে সে জানালার পাশে দাঁড়াবার জন্য নিজেকে সাজাবে।

"শুভক্ষণ"

"ওগো মা, রাজার দুলাল যাবে আজি মোর ঘরের সমুখপথে, আজি এ প্রভাতে গৃহকাজ লয়ে রহিব বলো কী মতে। বলে দে আমায় কী করিব সাজ, কী ছাঁদে কবরী বেঁধে লব আজ, পরিব অঙ্গে কেমন ভঙ্গে কোন বরনের বাস।

মা গো, কী হলো তোমার, অবাক নয়নে মুখপানে কেন চাস। আমি দাঁড়াব যেথায় বাতায়নকোণে সে চাবে না সেথা জানি তাহা মনে— ফেলিতে নিমেষ দেখা হবে শেষ, যাবে সে সুদূর পুরে, শুধু সঙ্গের বাঁশি কোন মাঠ হতে বাজিবে ব্যাকুল সুরে।

তবু রাজার দুলাল যাবে আজি মোর ঘরের সমুখপথে, শুধু সে নিমেষ লাগি না করিয়া বেশ রহিব বলো কী মতে।"

এই সিরিজে এর পরের কবিতাটার নাম "ত্যাগ"। পরের কবিতাতে বলা হচ্ছে রাজপুত্র চলে যাবার পরের কথা। রাজপুত্র যখন এলো তখন সেই তরুণী তার গলার হার খুলে রাজপুত্রের রথের সামনে ছুড়ে দিয়েছিল , কিন্তু রাজপুত্র সেটা তুলেও নেয়নি, বরং রথের চাকায় গুড়িয়ে গিয়েছে হারটা। এবার কবিতাটা পড়ুন।

ওগো মা, রাজার দুলাল গেল চলি মোর ঘরের সমুখপথে, প্রভাতের আলো জ্বলিলো তাহার স্বর্ণশিখর রথে। ঘোমটা খসায়ে বাতায়নে থেকে নিমেষের লাগি নিয়েছি মা দেখে, ছিঁড়ি মণিহার ফেলেছি তাহার পথের ধুলার’ পরে।

মা গো, কী হলো তোমার, অবাক নয়নে চাহিস কিসের তরে! মোর হার - ছেঁড়া মণি নেয়নি কুড়ায়ে, রথের চাকায় গেছে সে গুঁড়ায়ে চাকার চিহ্ন ঘরের সমুখে পড়ে আছে শুধু আঁকা। আমি কী দিলেম কারে জানে না সে কেউ— ধুলায় রহিল ঢাকা।

তবু রাজার দুলাল গেল চলি মোর ঘরের সমুখপথে— মোর বক্ষের মণি না ফেলিয়া দিয়া রহিব বলো কী মতে।

আজকের সময়টাও সেই রাজার দুলাল, ইতিহাসের এক মহাসন্ধিক্ষণ। এই সময়ে আপনার কর্তব্য সেই কাজটা করা যা বাংলাদেশের সংখ্যা গরিষ্ঠ মানুষ চায়। সকাল সকাল গিয়ে ৩০ ডিসেম্বর ভোট দেওয়া সব ভয়ভীতি উপেক্ষা করে ভোট দেওয়া, সবাইকে ভোট দিতে নিয়ে যাওয়া। সব রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা করে ঝুঁকি নিয়ে ভোট দিতে যাওয়া। এটা ইতিহাসের চাওয়া। শুধু একটা দিন, ওইদিনই ঠিক করে দেবে বাংলাদেশের গতিপথ। বাংলাদেশ ঘুরে দাঁড়াবে নাকি ভয়ানক অতলে তলিয়ে যাবে।

আপনার সেই সাহস আর বীরত্বের কথা ইতিহাসে লেখা হয়তো থাকবে না। কিন্তু ভবিষ্যতের বাংলাদেশ জানবে, বাংলাদেশের ২০১৮ সালের প্রজন্ম তার ইতিহাসের দায় ঠিকভাবেই শোধ করেছিল। আপনি কি তৈরি আছেন?

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড