অধিকার ডেস্ক ১৩ ডিসেম্বর ২০১৮, ২০:২৭
আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আইন-শৃঙ্খলা স্বাভাবিক রাখতে পুলিশ, র্যাব ও অন্যান্য আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সমন্বয়ে তিন স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করতে যাচ্ছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এছাড়া ২৪ ডিসেম্বর থেকে ১ জানুয়ারি পর্যন্ত প্রতি জেলায় ছোট আকারে সেনাবাহিনীর একটি টিম পাঠানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (১৩ ডিসেম্বর) বৃহস্পতিবার আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে বৈঠকে করে নির্বাচন কমিশন। বৈঠকে উত্থাপিত কার্যবিবরণীতে এসব তথ্য জানা গেছে।
বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা, রিটার্নিং কর্মকর্তা ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতিবেদন অনুযায়ী ভোটের নিরাপত্তা পরিকল্পনা চূড়ান্ত করা হবে। এরপর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় পরিপত্রের মাধ্যমে তা জানিয়ে দেবে বলে বৈঠকে জানানো হয়।
বৈঠকের কার্যপত্রে উল্লেখ করা হয়, ভোট কেন্দ্রের বাইরে স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে থাকবেন সেনা ও নৌবাহিনীর সদস্যরা। র্যাব, বিজিবি, কোস্টগার্ড ও আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের সদস্যরা মোবাইল ও স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে টহল দেবেন। তারা ভোট কেন্দ্রের ভেতরে বা ভোট গণনা কক্ষে ঢুকতে পারবেন না। অবশ্য রিটার্নিং বা প্রিসাইডিং কর্মকর্তা চাইলে স্ট্রাইকিং ও মোবাইল টিমের সদস্যরা প্রয়োজনে ভোট কেন্দ্রের ভেতরে প্রবেশ করতে পারবেন।
ইসির পরিকল্পনা অনুযায়ী, ভোট কেন্দ্রের পাহারায় মেট্রোপলিটন এলাকার সাধারণ কেন্দ্রে পুলিশ, আনসার, গ্রাম পুলিশের মোট ১৬ জন সদস্য নিযুক্ত থাকবেন। এর মধ্যে অস্ত্রসহ পুলিশ ৩-৫ জন, অঙ্গীভূত আনসার ১১ জন ও গ্রাম পুলিশের একজন সদস্য নিযুক্ত থাকবেন। এসব এলাকার গুরুত্বপূর্ণ বা ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রে মোট ১৭ জন ও অস্ত্রসহ ৪-৬ সদস্য নিযুক্ত থাকবেন। এর মধ্যে অস্ত্রসহ পুলিশ থাকবে ন্যূনতম চারজন। অন্যদিকে র্যাব স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে কাজ করবে এবং নির্বাচনী এলাকায় শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষায় কাজ করবে।
এছাড়া মেট্রোপলিটন এলাকার বাইরে পুলিশ, আনসার, গ্রাম পুলিশের মোট ১৪ জন সদস্য নিযুক্ত থাকবেন। এর মধ্যে অস্ত্রসহ পুলিশ একজন, অঙ্গীভূত আনসার ১২ জন ও গ্রাম পুলিশের দু-একজন সদস্য নিযুক্ত থাকবেন। এসব এলাকার গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রে মোট ১৫ জন ও অস্ত্রসহ তিন-চারজন সদস্য নিযুক্ত থাকবেন; এর মধ্যে অস্ত্রসহ পুলিশ সদস্য থাকবেন ন্যূনতম দুজন।
আগামী ২৪ থেকে ২৬ ডিসেম্বরের মধ্যে যেকোনোদিন মাঠে নামবে সেনাবাহিনী। তবে এর আগে ১৫ ডিসেম্বর থেকে পরিস্থিতি অবলোকন (রেকি) করবেন তারা। সেনাবাহিনীর প্রতিটি টিমের সঙ্গে একজন করে ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ করা হবে। ইতোমধ্যে এ সংক্রান্ত নির্দেশনা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে বলে জানা গেছে।
অন্যদিকে পার্বত্য এলাকা, হাওর, দ্বীপাঞ্চলকে বিশেষ এলাকা চিহ্নিত করে সেসব এলাকায় পুলিশ, আনসার, গ্রাম পুলিশের মোট ১৫ জন সদস্য নিযুক্ত থাকবেন। এর মধ্যে অস্ত্রসহ পুলিশ দুজন, অঙ্গীভূত আনসার ১২ জন ও গ্রাম পুলিশের ১-২ জন সদস্য নিযুক্ত থাকবেন। এসব এলাকার গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রে মোট ১৬ জন ও অস্ত্রসহ ৪/৫ সদস্য নিযুক্ত থাকবেন; এর মধ্যে অস্ত্রসহ পুলিশ সদস্য থাকবেন ন্যূনতম তিনজন।
বিজিবি, কোস্টগার্ড ও আর্মড পুলিশের সদস্যরা জেলা, উপজেলা ও থানাসমূহে মোবাইল স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে কাজ করবেন। তারা রিটার্নিং অফিসার ও প্রিসাইডিং অফিসারের চাহিদার ভিত্তিতে ভোটকেন্দ্রের অভ্যন্তরে কিংবা ভোট গণনাকক্ষের শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষার্থে থাকবেন। এ ছাড়া ইভিএমের নিরাপত্তা বিধানের দায়িত্বেও থাকবেন। নির্বাচনে পুলিশের ১ লাখ ৮৪ হাজার ৬৫৭ জন সদস্য মোতায়েন থাকবেন।
আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ ও আচরণবিধি প্রতিপালনে এক হাজারের বেশি জুডিশিয়াল ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মাঠে থাকবেন। প্রার্থী ও সমর্থকদের আচরণবিধি প্রতিপালন নিশ্চিত করতে মাঠে থাকবেন ৬৫২ জন এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট, ৬৪০ জন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট।
সবমিলিয়ে ভোটের মাঠের পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রায় ছয় লাখের বেশি সদস্য মাঠে নামছেন যাদের জন্য প্রায় ৪শ` ১০ কোটি টাকা বাজেট বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এর মধ্যে ৫০ শতাংশ টাকা নির্বাচনের আগে অগ্রিম দেয়ার পরিকল্পনা রয়েছে বলে জানা গেছে।
বৈঠকে সিইসি বলেন, ‘২০১৪ সালের নির্বাচনের অবস্থা আমাদের ভুলে গেলে চলবে না। ওই নির্বাচনে ভয়ঙ্কর অবস্থা সৃষ্টি হয়েছিল। ওই নির্বাচনের কথা মাথায় রেখে এবারের নির্বাচনের প্রস্তুতি ও রূপরেখা তৈরি করে সে অনুযায়ী কৌশল অবলম্বন করা প্রয়োজন। যাতে এবার ওই রকম ভয়ঙ্কর অবস্থা বা তান্ডব না ঘটে।’
কে এম নুরুল হুদা বলেন, কমিশন ইতোমধ্যে নির্বাচনের ৯৫ শতাংশের বেশি কাজ শেষ করেছে। ভোটকেন্দ্র ও ভোটার সংখ্যা চূড়ান্ত করা হয়েছে। ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাদের প্যানেল করা হয়েছে, তাদের প্রশিক্ষণও চলছে।
তিনি বলেন, এখন ভোটের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ২০১৪ সালের নির্বাচনের আলোকে রূপরেখা প্রয়োজন। কারণ, তখন সশস্ত্র বাহিনীসহ সব বাহিনী ছিল। তবুও দেখেছি পুলিশ, ম্যাজিস্ট্রেট ও ভোটার নিহত হয়েছেন। এবারের নির্বাচনেও সব বাহিনী থাকবে। সে সময়ের পরিস্থিতি কেন নিয়ন্ত্রণ করতে পারিনি, সে পরিস্থিতির যেন সৃষ্টি না হয়, সেজন্য সতর্ক থাকতে হবে।
সিইসি’র সভাপতিত্বে বৈঠকে চার নির্বাচন কমিশনার, ইসি সচিবালয়ের সচিবসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা, জনপ্রশাসন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, পুলিশ, র্যাব, আনসার, গ্রাম পুলিশ, কোস্টগার্ড, আনসার বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর প্রতিনিধিরা অংশ নেন।
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড