• বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১  |   ২৮ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

নির্বাচনে সোশ্যাল মিডিয়ায় অপপ্রচার ঠেকাতে ‘ক্রাফের’ পরামর্শ

  তারিন ফাহিমা

১২ ডিসেম্বর ২০১৮, ১৬:৫৬
সোশ্যাল মিডিয়ায় অপপ্রচার
ক্রাফের প্রেসিডেন্ট জেনিফার আলম

একাদশ জাতীয় নির্বাচন উপলক্ষে সারাদেশে শুরু হয়েছে নির্বাচনী প্রচারণা। সেখানে প্রচারণার কৌশল হিসেবে অনেক প্রার্থীই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমকে ব্যবহার করছেন। এর যেমন ইতিবাচক দিক আছে, ঠিক নেতিবাচক দিকটিও অস্বীকার করা সম্ভব নয়। এটি যেন ঠিক একটি মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ।

এর কারণ হলো অনেকেই প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে এই সামাজিক মাধ্যমগুলো ব্যবহার করে রাষ্ট্রবিরোধী গুজব, বিদ্বেষ ও বিভ্রান্তিমূলক তথ্য ছড়াতে পারেন। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেকেই ইচ্ছাকৃতভাবে নানা অপপ্রচার এবং ব্যক্তি বিশেষের বিরুদ্ধেও কুৎসা রটনা হয়। আর নির্বাচন যতই ঘনিয়ে আসছে, এই অপপ্রচার আরও বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে।

এই ধরনের অপপ্রচারের ফাঁদে পড়তে পারেন আপনি, আমিসহ যেকোনো সাধারণ মানুষ। আর জীবনে নেমে আসতে পারে অন্ধকারের ঘনকালো ছায়া।

নির্বাচনে এ ধরনের অপপ্রচার ঠেকাতে বা গুজবের ফাঁদে পা না দিতে কিছু পরামর্শ প্রদান করেছেন সাধারণ জনগণের জন্য কাজ করা আইটি প্রতিষ্ঠান ‘ক্রাফের’ কর্ণধার জেনিফার আলম। দৈনিক অধিকারের সাথে একান্ত এক সাক্ষাৎকারে এ বিষয়গুলো বিশদভাবে তিনি তুলে ধরেন।

প্রশ্ন: সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সাধারণ মানুষ কীভাবে হয়রানির শিকার হতে পারে?

জেনিফার আলম: অনলাইনে সধারণত মানুষ না বুঝেই ঝামেলায় পড়ে। তারা কোনো কিছু ক্রস চেক বা যাচাই বাছাই না করে শেয়ার করে। কোটা আন্দোলন বা সম্প্রতি ঘটে যাওয়া শিক্ষার্থীদের আন্দোলন এর সবচেয়ে বড় উদাহরণ। কেউ কিছু না জেনে বা বুঝে যা কিছু পেয়েছে, সেটিই শেয়ার করেছে। তাই ব্যক্তি নিজে এর থেকে মুক্তি না চাইলে এই ধরনের বিপদের ফাঁদে সে বার বার পা দেবে। তাই পরোক্ষভাবে ব্যক্তি নিজেই হয়রানির শিকার হয়। তবে হ্যাঁ, অনেক সময় কেউ প্রতিশোধ নিতে কাউকে এধরনের ঝামেলায় ফেলতে পারে।

প্রশ্ন: নির্বাচনকে কেন্দ্র করে কোনো ধরনের বিপত্তি আসতে পারে?

জেনিফার আলম: নির্বাচনকে কেন্দ্র করেও নানা ধরনের গুজব, অপপ্রচার চালানো হতে পারে। যেমন যে কেউ কারও বিরুদ্ধে ভুয়া পেজ খুলতে পারে। কিংবা কারও নামে ফেক আইডি খুলে মুহূর্তের মধ্যে কারও বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাতে পারে। আরেকটি বিষয় হলো মিথ্যা সংবাদ ছড়ানো। বর্তমানে বাংলাদেশে ব্যাঙের ছাতার মতো অনেক অনলাইন পোর্টাল রয়েছে। কিছু সেই পোর্টাল ইচ্ছাকৃতভাবে ভুয়া নিউজ করে ব্যক্তিবিশেষে অপপ্রচার চালাতে পারে। তারা বিভিন্ন ফেসবুক গ্রুপ এবং ম্যাসেঞ্জারে এই নিউজ ছড়িয়ে দেয়। ফলশ্রুতিতে না জেনে অনেকেই এই নিউজ শেয়ার করেন এবং ফাঁদে পড়ে যেতে পারেন।

প্রশ্ন: এধরনের বিপত্তি থেকে মুক্তির উপাকী?

জেনিফার আলম: সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে বিতর্কিত পোস্ট, ঘৃণাসূচক বক্তব্য প্রচার ও কদর্য ভিডিওবার্তা প্রচার করে কেউ যেন কোনো ধরনের ধ্বংসাত্মক কার্যক্রম চালাতে না পারে সেজন্য সবার আগে নিজেকে সচেতন হতে হবে। না জেনে না বুঝে কোনো গুজবে কান দেওয়া যাবে না। মনে রাখতে হবে, ‘কান নিয়ে গেল চিলে’ অর্থাৎ আগে চিলের পেছনে না গিয়ে কান ঠিক আছে কি না সেটি দেখতে হবে।

দ্বিতীয়ত, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কোনো কিছু শেয়ার করার আগে সেটি বার বার ক্রস চেক করতে হবে। বিশেষ করে কোনো সংবাদ। কোন পোর্টাল থেকে সংবাদটি প্রকাশিত হয়েছে, সেই পোর্টালটি ভুয়া কি না তা খতিয়ে দেখতে হবে।

আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো ফেসবুকে নানা স্ট্যাটাস। বিতর্ক সৃষ্টিকারী নানা স্ট্যাটাস না বুঝেই অনেকে ফেসবুকে শেয়ার করে থাকে। সেগুলো থেকে বিরত থাকতে হবে। অথবা মিথ্যা কোনো তথ্য শেয়ার করা যাবে না।

একইসাথে অন্য কোনো পক্ষকে হেয় প্রতিপন্ন করে কোনো ভিডিও বা তথ্য শেয়ার করা যাবে না।

প্রশ্ন: কেউ যদি বুঝতে পারেন যে তার বিরুদ্ধে মিথ্যা প্রচারণা চালানো হচ্ছে, তাহলে কী করবেন?

জেনিফার আলম: কেউ যদি মনে করেন যে তার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালালো হচ্ছে বা তার বিরুদ্ধে ভুয়া আইডি খুলে কেউ বিদ্বেষমূলক কোনো কিছু ছড়াচ্ছে, তাহলে দেরি না করে সাথে সাথে তাকে স্থানীয় থানায় সাধারণ ডায়েরি বা জিডি করতে হবে। এছাড়াও সিআইডি, র‍্যাব এবং পুলিশের আলাদা বিভাগ রয়েছে যারা এই সাইবার ক্রাইম নিয়ে কাজ করে তাদেরকে অবগত করতে হবে।

প্রশ্ন: বর্তমান সময়ে বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নানা ধরনের ‘ট্রল’ করা হয়। এটি কি কোনো অপরাধ?

জেনিফার আলম: বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বর্তমানে নানা ধরনের ট্রলের মাধ্যমে বিভিন্ন ব্যক্তিকে হয়রানি করা হয়। এমনকি নানা রাজনৈতিক ব্যক্তিরাও এর হাত থেকে রেহাই পান না। এটি অবশ্যই শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এবং কেউ চাইলে সাইবার ক্রাইম ও মানহানি মামলাও করতে পারে।

প্রশ্ন: কারও বিরুদ্ধে যদি উল্লিখিত অপরাধগুলো প্রমাণিত হয়, তাহলে তার শাস্তি কী?

জেনিফার আলম: এ ধরনের অপরাধ মূলত সাইবার ক্রাইমের আওতায় পড়ে। এই অপরাধগুলোর মাঝে রয়েছে গণমাধ্যম, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বা অনলাইনে মানহানিকর ও বিভ্রান্তিমূলক পোস্ট ছড়ানো, অনৈতিক ছবি বা ভিডিও আপলোড করা, বিনা অনুমতিতে কারও ব্যক্তিগত ছবি, ফোন নম্বর, ব্যক্তিগত মেসেজের স্ক্রীন শট শেয়ার, ফটোশপ ব্যবহার করে বিকৃত ছবি বা ভিডিও প্রকাশ করা ইত্যাদি।

এই সব অপরাধের বিরুদ্ধে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইন , ২০০৬ (সংশোধিত আইন ২০১৩), ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন (২০১৮)’র আওতায় এই সব অপরাধে লিপ্ত হওয়া ব্যক্তি বর্গের বিরুদ্ধে আইনগত শাস্তির বিধান রয়েছে।

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন (২০১৮) অনুসারে- ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ১৭ ধারায় বলা হয়েছে ডিজিটাল মাধ্যম ব্যবহার করে কেউ যদি জনগণকে ভয় ভীতি দেখায় এবং রাষ্ট্রের ক্ষতি করে তবে ১৪ বছরের জেল বা ১ কোটি টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হতে পারে।

একই আইনের ২৫ ধারায় বলা হয়েছে কেউ যদি ওয়েবসাইট বা ডিজিটাল মাধ্যমে আক্রমণাত্মক ভয়-ভীতি দেখায় তাহলে তাকে ৩ লাখ টাকা জরিমানা বা ৩ বছরের জেল বা উভয়দণ্ডে দণ্ডিত করার বিধান রয়েছে।

একই আইনের ৩১ ধারায় বলা হয়েছে ডিজিটাল মাধ্যম ব্যবহার করে কেউ অরাজকতা সৃষ্টি করলে ৭ বছরের জেল বা ৫ লাখ টাকা জরিমানা অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হতে পারে।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড