যেভাবে সেন্ট মার্টিন দ্বীপ বাংলাদেশের অংশ হলো

বাংলাদেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ নারিকেল জিঞ্জিরা নামে খ্যাত সেন্ট মার্টিন দ্বীপ। যার অপরূপ সৌন্দর্যে মন কেড়ে নেয় আগত পর্যটকদের। সেন্ট মার্টিন দ্বীপটি দারু চিনির দ্বীপ নামেও পরিচিত। বাংলাদেশের সর্ব দক্ষিণে বঙ্গোপসাগরের উত্তর-পূর্বাংশে অবস্থিত এ দ্বীপটি অবস্থিত।

সম্প্রতি মিয়ানমার সরকারের জনসংখ্যা বিষয়ক বিভাগের ওয়েবসাইট সমপ্রতি তাদের দেশের যে মানচিত্র প্রকাশ করেছে, তাতে সেন্ট মার্টিন দ্বীপপুঞ্জকে তাদের ভূখণ্ডের অংশদেখানো হয়েছে। ওই মানচিত্রে মিয়ানমারের মূল ভূখণ্ড এবং বঙ্গোপসাগরে বাংলাদেশের অন্তর্গত সেন্ট মার্টিন দ্বীপকে একই রঙে চিহ্নিত করা হয়।

এমন প্রেক্ষাপটে ঢাকায় নিযুক্ত মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূতকে তলব করে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। বাংলাদেশের তরফ থেকে বিষয়টি নিয়ে প্রতিবাদ জানানো হয়েছে বলে বিভিন্ন গণমাধ্যমে খবর বেরিয়েছে।

সেন্ট মার্টিন দ্বীপ কিভাবে হলো?

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদ বিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক শেখ বখতিয়ার উদ্দিন এবং অধ্যাপক মোস্তফা কামাল পাশা সেন্ট মার্টিন দ্বীপ নিয়ে গবেষণা করেছেন। মি: পাশা বর্তমানে অবসরপ্রাপ্ত।

অধ্যাপক বখতিয়ার বলেন, ‘প্রায় ৫ হাজার বছর আগে টেকনাফের মূল ভূমির অংশ ছিল জায়গাটি। কিন্তু ধীরে ধীরে এটি সমুদ্রের নিচে চলে যায়। এরপর প্রায় ৪৫০ বছর আগে বর্তমান সেন্ট মার্টিন দ্বীপের দক্ষিণ পাড়া জেগে উঠে। এর শত বছর উত্তর পাড়া এবং পরবর্তী ১০০ বছরের মধ্যে বাকি অংশ জেগে উঠে।’

গবেষক মোস্তফা কামাল পাশা জানান, ২৫০ বছর আগে আরব বণিকদের নজরে আসে এ দ্বীপটি। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সাথে বাণিজ্যের সময় আরব বণিকরা এ দ্বীপটিতে বিশ্রাম নিত। তখন তারা এ দ্বীপের নামকরণ করেছিল 'জাজিরা'। পরবর্তীতে যেটি নারিকেল জিঞ্জিরা নামে পরিচিত হয়।

অধ্যাপক বখতিয়ার উদ্দিন বলেন, ‘প্রায় ৩৩ হাজার বছর আগে সে এলাকায় প্রাণের অস্তিত্ব ছিল। বিভিন্ন কার্বন ডেটিং-এ এর প্রমাণ মিলেছে।’

অধ্যাপক মোস্তফা কামাল পাশা আরও জানান, ১৯০০ সালে ব্রিটিশ শাসনামলে ভূমি জরিপের সময় এ দ্বীপটিকে ব্রিটিশ ভারতের অন্তর্ভুক্ত করে নেয়া হয়। যদিও সে সময়টিতে বার্মা ব্রিটিশ শাসনের আওতায় ছিল। কিন্তু তারপরেও সেন্ট মার্টিন দ্বীপকে বার্মার অন্তর্ভুক্ত না করে ব্রিটিশ-ভারতের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল।

বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশনে ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, খ্রিস্টান সাধু মার্টিনের নাম অনুসারে দ্বীপটির নামকরণ করা হয়।

তবে এ ব্যাপারে অধ্যাপক বখতিয়ার উদ্দিন বলেন, ‘দ্বীপটিকে যখন ব্রিটিশ ভারতের অন্তর্ভুক্ত করা হয়, তখন চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক মার্টিনের নাম অনুসারে দ্বীপটির নামকরণ করা হয়।’

বাংলাদেশ পর্যটন করপরেশনের ওয়েব সাইট থেকে জানা যায়, ১৮৯০ সালে কিছু মৎস্যজীবী এ দ্বীপে বসতি স্থাপন করে। এদের মধ্যে কিছু বাঙালি এবং কিছু রাখাইন সম্প্রদায়ের লোক ছিল। ধীরে-ধীরে এটি বাঙালী অধ্যুষিত এলাকা হয়ে উঠে।

পর্যায়ক্রমে এ দ্বীপটি হয়ে উঠে বাংলাদেশের পর্যটনের সবচেয়ে আকর্ষণীয় স্থানগুলোর মধ্যে একটি। গবেষকরা জানান, বর্তমানে সেন্ট মার্টিন দ্বীপে প্রায় দেড় লাখ নারকেল গাছ আছে।

সূত্র : বিবিসি