• শুক্রবার, ১৭ মে ২০২৪, ৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১  |   ৩৬ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

স্বপ্নের ইতালি যাত্রা: ভূমধ্যসাগরে নৌকা ডুবে ২৭ বাংলাদেশি নিখোঁজ 

  মনিরুজ্জামান, নরসিংদী

২৪ জুন ২০২৩, ১১:৫৪
বাংলাদেশি নিখোঁজ

দালালের মাধ্যমে লিবিয়া হয়ে সমুদ্র পথে ইতালি যেতে গিয়ে ইতোমধ্যেই কয়েক হাজার বাংলাদেশির প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে। এতে করে পরিবারের উপার্জনক্ষম মানুষটিকে হারিয়ে হাজার হাজার পরিবার মানবেতর জীবন-যাপন করছেন। কিন্তু এরপরও থেমে নেই দালাল চক্র।

সম্প্রতি সাগর পথে ইতালি যাওয়ার সময় ট্রলার ডুবিতে আব্দুন নবী (৩০) নামে নরসিংদীর একজন নিহত হওয়া সহ ২৭ জন বাংলাদেশি নিখোঁজ রয়েছেন। নিখোঁজদের মধ‍্যে ১৩ জনের বাড়ি নরসিংদী ও পাশ্ববর্তী কিশোরগঞ্জ জেলায় বলে জানা গেছে।

বৃহস্পতিবার (২২ জুন) দিবাগত রাতে ট্রলার ডুবিতে আব্দুন নবী নিহত হওয়া সহ ২৭ বাংলাদেশি নিখোঁজ হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন নিহতের স্বজনরা।

নিহত আব্দুন নবী রায়পুরা উপজেলার উত্তর বাখরনগর ইউনিয়নের বড়চর গ্রামের মৃত হযরত আলীর ছোট ছেলে। সে আট ভাইবোনের মধ‍্যে সবার ছোট। এর আগে সে সৌদি প্রবাসী ছিল। নিখোঁজ যুবকদের মধ্যে ৬ জনের বাড়ি পার্শ্ববর্তী বেলাব উপজেলার টান লক্ষীপুর ও চর লক্ষীপুর গ্রামে এবং একজন কিশোরগঞ্জের কুলিয়ারচর উপজেলার। বাকিরা জেলার অন্যান্য উপজেলার বাসিন্দা বলে জানা গেছে।

পরিচয় পাওয়া নিখোঁজ ৬ যুবকেরা হলো, বেলাব উপজেলার টান লক্ষীপুর ও চর লক্ষীপুর এলাকার বিল্লাল মিয়ার ছেলে সৈকত (২০), রহিম মিয়ার ছেলে আবু তাহের (২৭), রতন মিয়ার ছেলে জহিরুল ইসলাম (১৯), আউয়াল মিয়ার ছেলে উজ্জল (১৮), ওবায়দুল্লাহর ছেলে রহমত উল্লাহ (২০), মোক্তার হোসেন এর ছেলে জিহাদ (১৯) এবং কুলিয়ারচর উপজেলার বড় ছয়সুতি এলাকার বাছেদ মিয়ার ছেলে স্বপন (২৭)। এসব যুবক ১০ থেকে ১২ লাখ টাকা খরচ করে দালাল চক্রের মাধ্যমে অবৈধভাবে ইতালি যাওয়ার উদ্দেশ্যে দেশ ছাড়ে।

শুক্রবার (২৩ জুন) নিহত আব্দুন নবীর বাড়িতে গেলে তার ভাই ও মা দৈনিক অধিকারকে জানায়, আব্দুন নবী এর আগে ৫ বছর সৌদী আরব প্রবাস জীবন কাটিয়েছেন । সৌদী থেকে দেশে ফিরে চার মাস আগে সে দালাল চক্রের মাধ্যমে লিবিয়া হয়ে ইতালি পাড়ি দেওয়ার উদ্দেশ্যে দেশ ছাড়ে। এক মাস আগে পরিবারের সাথে ফোনে শেষ কথা হয়েছিল তার। এরপর তার সাথে আর যোগাযোগ হয়নি। বৃহস্পতিবার ২২ জুন রাতে তার মরদেহ পাওয়া গেছে বলে খবর আসে।

একই চিত্র বেলাব উপজেলার টান লক্ষীপুর ও চর লক্ষীপুর গ্রামে। তবে ওই দুই গ্রামের কারোরই এখনও মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তারা সবাই নিখোঁজ রয়েছেন বলে তাদের স্বজনরা জানান। বেলাব উপজেলার টান লক্ষীপুর ও চর লক্ষীপুর গ্রামে গিয়ে নিখোঁজ যুবকদের পরিবারের সদস্যদের সাথে কথা বলে জানা যায়, নিখোঁজ যুবকের সাথে বাবা মায়ের শেষ কথা হয় প্রায় ১ মাস আগে। তখন তারা পরিবারকে জানিয়েছিলো লিবিয়া থেকে সমুদ্র পথে ইতালি যাওয়ার জন‍্য তাদেরকে গেম ঘরে নেওয়া হচ্ছে। এরপর অভিভাবকরা তাদের সন্তানদের সাথে কথা বলার চেষ্টা করেও কথা বলতে পারেনি। তাদের সন্তান জীবিত আছে নাকি মারা গেছে, এ নিয়ে বাবা মা দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। এদিকে লিবিয়া হয়ে ইতালি যাওয়ার পথে ভূমধ্যসাগরে নিখোঁজ হওয়ার খবরে বেলাব উপজেলার টান লক্ষীপুর গ্রামের মনা মিয়ার ছেলে দালাল আলমের বাড়িতে উপস্থিত হয়ে আহাজারি করতে দেখা যায় নিখোঁজ যুবকদের পরিবারের লোকজনদের। এ সময় ভিড় জমিয়েছেন আশপাশের লোকজনও।

নিহত আব্দুল নবীর বড় ভাই মাহ আলম বলেন, এর আগেও তারা ইতালি যাওয়ার পথে ৮/১০ কি:মি: যেতে না যেতেই বোট ফেটে যাওয়ায় তারা ভয়ে ফিরে আসে। পরে দালালের অভিভাবকদের সাথে গ্রাম্যসালিসে বসে আমাদের পাসপোর্ট ফেরত দিতে বলি, কিন্তু সে দেয়নি। জোড় করে সে লোকগুলোকে নিয়ে যায়।

উল্লেখ্য, ডুবে যাওয়া ট্রলারটিতে মোট ১১৫ জন যাত্রী ছিল তাদের মধ্যে ২৮ জন বাংলাদেশি। তারা বলেন, নিখোঁজদের মধ‍্যে ১৩ জনের বাড়ি নরসিংদী ও কিশোরগঞ্জ জেলায়।

এ ব‍্যাপারে পর্যায়ক্রমে নরসিংদীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) অনিবার্ণ চৌধুরী, রায়পুরা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আজিজুর রহমান ও বেলাব থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তানভীর আহমেদ’র সাথে যোগাযোগ করলে বিষয়টি তারা কেউ অবগত নন বলে জানান।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড