করুণা নয়, ন্যায্য হিস্যা চাই : প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বিশ্বের সংকটময় পরিস্থিতিতে অনেক উন্নয়ন অংশীদার সুদের হার বাড়িয়ে দিচ্ছে, ব্যবসায়িক অংশীদাররা অপ্রয়োজনীয় বিধিনিষেধ আরোপ করছে, যা আমাদের অর্থনৈতিক ক্ষতির মুখে ঠেলে দিচ্ছে। সংকট উত্তরণ পর্যন্ত সহজ শর্তে অর্থায়ন করার মধ্যদিয়ে ন্যায্য হিস্যা প্রদানের দাবি করছি।

আজ মঙ্গলবার (১৪ মার্চ) ‘বাংলাদেশ ও এডিবির ৫০ বছর পূর্তি উদযাপন’ অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন। অনুষ্ঠানে এডিবির প্রেসিডেন্ট আসা কাওয়াসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, চলমান ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ ও অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা ও পাল্টা নিষেধাজ্ঞার কারণে বিশ্ব একাধিক চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন। আমরা এ ভূ-রাজনৈতিক সংকটের শিকার হলেও বাংলাদেশ মোটেও দায়ী নয়। বরং আমাদের কষ্টার্জিত অর্জনগুলোকে নস্যাৎ করছে। আমাদের একটি অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। আমরা এ সংকটের তাৎক্ষণিক সমাধানও দেখতে পারছি না। এটা শুধু বাংলাদেশের ক্ষেত্রে না, সারা বিশ্বব্যাপী এ সমস্যা দেখা দিয়েছে।

তিনি আরও বলেন, বিশেষ করে নিম্ন আয়ের মানুষ বেশি কষ্ট পাচ্ছে। বেশিরভাগ দেশই খাদ্য খাটতি, জ্বালানি এবং আর্থিক সংকটের সম্মুখীন হচ্ছে। যার ফলে মুদ্রার অবমূল্যায়ন, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের অবক্ষয় এবং মুদ্রাস্ফীতি আরও দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। একটা সংকট সৃষ্টি হচ্ছে। সবচেয়ে গুরুতর উদ্বেগের বিষয় হচ্ছে, এটি বৈশ্বিক সম্প্রদায়ের দরিদ্রতম অংশকে অসামঞ্জস্যপূর্ণভাবে প্রভাবিত করছে।

সরকারপ্রধান বলেছেন, এ সংকটময় সন্ধিক্ষণে আমরা হতাশার সঙ্গে লক্ষ্য করছি যে, অনেক উন্নয়ন অংশীদার সুদের হার বাড়িয়ে দিচ্ছে, যা বেশিরভাগ প্রকল্পের জন্য উন্নয়ন অর্থায়নকে অর্থনৈতিকভাবে অকার্যকর করে তুলছে। একাধিক অর্থনৈতিক ধাক্কার প্রভাব মোকাবিলায় আমাদের মধ্যে সমন্বয় গড়ে তোলা অত্যন্ত জরুরি।

প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, বৈশ্বিক অর্থনীতি স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে না আসা অবধি সহজ শর্তে অর্থায়ন অব্যাহত রাখা প্রয়োজন। আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো ও উন্নত দেশগুলোকে এ বিষয়ে বিশেষ নজর দিতে হবে। তাদের নজর আমরা চাই।

শেখ হাসিনা বলেছেন, আমরা কারও কাছে কোনো করুণা বা দয়া ভিক্ষা চাই না, আমরা ন্যায্য অধিকার চাই। বৈশ্বিক সম্প্রদায়ের অংশীদার হিসেবে আমরা আমাদের ন্যায্য হিস্যাই দাবি করছি। একইভাবে বৈশ্বিক ব্যবসায়ী অংশীদাররা অপ্রয়োজনীয় বাণিজ্য বিধি নিষেধ আরোপ করছে, যা সার্বিক সরবরাহ শৃঙ্খলকে আরও ক্ষতিগ্রস্ত করছে। আমাদের অর্থনৈতিক ক্ষতির মুখে ঠেলে দিচ্ছে।

সরকারপ্রধান মনে করেন, চলমান বৈশ্বিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতির প্রেক্ষিতে আমি দক্ষতা উন্নয়ন, স্বাস্থ্য, আইসিটি ভিত্তিক উদ্যোক্তা, মানসম্পন্ন অবকাঠামো, জলবায়ু পরিবর্তন, মানবসম্পদ উন্নয়নের ওপর কৌশলগত গুরুত্বারোপসহ অর্থায়নে নমনীয় পদ্ধতি এবং উদ্ভাবনী অর্থায়নের জন্য এডিবির প্রতি অনুরোধ জানাচ্ছি। টেকসই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির জন্য বেসরকারি খাতকে কাজে লাগানো একইভাবে গুরুত্বপূর্ণ। যা বিনিয়োগ বান্ধব ব্যবসার পরিবেশ তৈরিতে অবদান রাখবে বলে আমি বিশ্বাস করি।

প্রধানমন্ত্রী যোগ করেন, আমি আশা করি, এডিবির সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক আরও সুদৃঢ় হবে, শক্তিশালী হবে।