• বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩২ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

আজ ময়মনসিংহবাসীর দীর্ঘ অপেক্ষার অবসান ঘটাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী

  শফিয়েল আলম সুমন, ময়মনসিংহ

১১ মার্চ ২০২৩, ১২:০৫
আজ ময়মনসিংহবাসীর দীর্ঘ অপেক্ষার অবসান ঘটাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী
ময়মনসিংহে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আগমন উপলক্ষে তৈরি করা মঞ্চ (ছবি : অধিকার)

দীর্ঘ চার বছর পর আজ শনিবার (১১ মার্চ) যানজটের শহর খ্যাত ময়মনসিংহে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ময়মনসিংহ সার্কিট হাউজ মাঠে বিভাগীয় সম্মেলন প্রধান অতিথির বক্তব্য দিবেন বলে জেলা আওয়ামী লীগ নেতা এবং প্রশাসন থেকে জানানো হয়েছে।

এদিন দুপুর ১টায় প্রধানমন্ত্রীর হেলিকপ্টারে ময়মনসিংহ স্টেডিয়াম মাঠে নামার কথা রয়েছে।

শেখ হাসিনার আগমন ঘিরে ময়মনসিংহে উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে। আওয়ামী লীগ ও স্থানীয় প্রশাসন সকল আয়োজন ও প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে। নেওয়া হয়েছে নিচ্ছিদ্র নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা।

প্রধানমন্ত্রী বিকালে সার্কিট হাউজ মাঠে জনসভায় বক্তব্য রাখার সময় তিনি সেখান থেকে ১০৩টি বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন ও ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করবেন। এর মধ্যে ময়মনসিংহ বিভাগের ৭৩টি বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প উদ্বোধন ও ৩০টি উন্নয়ন প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করবেন।

প্রধানমন্ত্রী ময়মনসিংহ বিভাগ ঘোষণার পর থেকে গত ১৩ অক্টোবর, ২০১৫ সালে গেজেটে বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে ময়মনসিংহ, জামালপুর, শেরপুর এবং নেত্রকোনা জেলার সমন্বয়ে ময়মনসিংহ বিভাগ গঠন করা হলেও আজ অবধি স্থাপন করা হয়নি ময়মনসিংহ বিভাগীয় সদর দফতর।

বিভাগের বেশিরভাগ অফিস চলে ভাড়া বাসায়। আবার জেলা অফিসের নাম পরিবর্তন করে রাখা হয়েছে বিভাগীয় অফিস। এতে ময়মনসিংহ বাসীর মধ্যে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে। এ নিয়ে ময়মনসিংহ নাগরিক অন্দোলনের পক্ষ থেকে দ্রুত ব্রহ্মপুত্র খনন, দ্রুত ময়মনসিংহ বিভাগীয় শহর যানজট মুক্ত ময়মনসিংহ শহরসহ ২৩ দাবি নিয়ে বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসক জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি সাধারণ সম্পাদক ও ময়মনসিংহ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করা হয়েছে। এছাড়া হাজার হাজার লিফলেট বিতরণ করা হয়েছে।

দীর্ঘ ১৮৬ বছর পর ২০১৫ সালে ময়মনসিংহ, জামালপুর, শেরপুর ও নেত্রকোনা জেলা নিয়ে বিভাগ প্রতিষ্ঠিত হয়। কিন্তু ৮ বছর পেরলেও স্থাপন করা হয়নি ময়মনসিংহ বিভাগীয় সদর দফতর। তবে চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে আধুনিকায়ন প্রকল্প একনেকে অনুমোদন দেন প্রধানমন্ত্রী।

ময়মনসিংহের বিভাগীয় সদর দফতর স্থাপনে ভূমি অধিগ্রহণ, ক্ষতিপূরণ প্রদান ও পুনর্বাসন প্রকল্পে ১ হাজার ২২৪ কোটি টাকার প্রকল্প অনুমোদন পেয়ে ৯৪৫ একর ভূমি অধিগ্রহণ শুরু করেছে জেলা প্রশাসন।

ব্রহ্মপুত্রের ওপাড়ে গোবিন্দপুর, জেলখানার চর, চর সেহড়া, চর ইশ্বরদিয়াসহ ৫টি মৌজায় প্রকল্পের ৯৪৫ একর ভূমির ওপর ২২টি ব্লকে থাকবে বিভাগীয় প্রশাসনের অফিসসহ বিভিন্ন দফতর। এর মধ্যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, বাণিজ্যিক এলাকা, বনায়ন ও খালসহ থাকবে ১৫০ ফুটের প্রস্তাবিত সড়ক। এছাড়াও প্রকল্পে তৈরি করা হবে আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্র, মানসম্মত হোটেল, স্বাস্থ্যকেন্দ্র ও যাদুঘরসহ স্পোর্টস কমপ্লেক্স। এ প্রকল্প গুলো উদ্বোধন করবেন বলে রাজনৈতিকবীদরা মনে করেন।

২০১৮ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সবশেষ ময়মনসিংহে এসেছিলেন। সে সময় তিনি ১০৩টি প্রকল্প উদ্বোধন ও ৯৩টি প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছিলেন। এর মধ্যে অধিকাংশ কাজ সমাপ্ত হলেও কয়েকটি প্রকল্পের কাজ চলমান আবার কয়েকটি শুরু হয়নি।

ময়মনসিংহ জেলা নাগরিক আন্দোলন ও সংগ্রাম পরিষদের পক্ষ থেকে ময়মনসিংহের বিভিন্ন সমস্যা নিরসনকল্পে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বরাবরে বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসক জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি সাধারণ সম্পাদক ময়মনসিংহ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র মো. ইকরামুল হক টিটুর মাধ্যমে স্মারকলিপি প্রদান করা হয়েছে।

আগামী ১১ মার্চ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ময়মনসিংহে আগমন উপলক্ষে প্রাণঢালা শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারক লিপিতে নেতৃবৃন্দ বলেন, ময়মনসিংহকে বিভাগ করায় ময়মনসিংহবাসী চিরকৃতঞ্জ। ময়মনসিংহবাসীর ভুলের কারণে ত্রিশালে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর নির্মাণের সৌভাগ্যজনক সুযোগটি হারিয়ে ফেলা হয়েছে।

ভুলত্রুটি ক্ষমা করে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরটি ময়মনসিংহের যে কোনো সুবিধাজনক জায়গায় স্থাপন করার জোর দাবি জানান।

স্মারকলিপিতে বলা হয়, ব্রহ্মপুত্র উপমহাদেশের একটি বিখ্যাত নদ। এটি বহুকালপূর্বে এর নাব্যতা হারিয়ে ফেলেছে। সম্প্রতি ব্রহ্মপুত্র নদী খনন করে নাব্যতা ফিরিয়ে আনার পরিকল্পনা মন্ত্রিসভা ও একনেকে অনুমোদিত হওয়ায় এবং নদ খননের প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ করায় ময়মনসিংহ বিভাগের মানুষ আনন্দিত ও কৃতজ্ঞ। এক্ষেত্রে নদ খননের কার্যক্রম যথাযথভাবে দ্রুত মানসম্মত করার জন্য বিশেষ অনুরোধ জানান।

ইতিমধ্যে ময়মনসিংহ পৌরসভাকে সিটি কর্পোরেশনে উন্নীত করায় প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানান নেতৃবৃন্দ স্মারক লিপিতে আরও উল্লেখ করেন, অনতিবিলম্বে ময়মনসিংহ থেকে ঢাকাগামী সকাল ও বিকাল ২ জোড়া আন্ত: নগর ট্রেন চালু, ময়মনসিংহ রেল স্টেশনসহ শহরের মধ্যে দিয়ে স্থাপিত রেললাইনটি স্থানান্তরের অথবা বিকল্প ব্যবস্থা করে যানজট মুক্ত শহর গড়ে তোলা, ময়মনসিংহ শহরের তিন হাজার শয্যার জেনারেল হাসপাতাল নির্মাণ, প্রতিটি বিভাগে ইঞ্জিনিয়ারিং বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপিত হচ্ছে। ময়মনসিংহ ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয়ে উন্নীত করা, অনতিবিলম্বে ময়মনসিংহে একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করা, ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালকে বিশ্ববিদ্যালয়ে স্থাপন করা, অনতি বিলম্বে ময়মনসিংহে একটি টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন, ময়মনসিংহে একটি শিশু হাসপাতাল এর কাজ দ্রুত শুরু করার, ময়মনসিংহ হতে সিলেট পর্যন্ত আন্ত: নগর ট্রেন চালু, শেরপুরকে রেল যোগাযোগের আওতায় আনা, এসকে হাসপাতালকে ৫শত বেড বিশিষ্ট ইনফেকসিয়াস হাসপাতালে রূপান্তর, নারী উদ্যোক্তাদের জন্য ময়মনসিংহে একটি নারী উদ্যোক্তা পল্লী অথবা ব্যবসায়ী জোন গড়ে তোলা, ময়মনসিংহ বিভাগীয় শহর স্থাপনের প্রয়োজনীয় অবকাঠামোর কাজ অতিসত্বর শুরু করা এবং কাজের সমাপ্তির তারিখ ঘোষণা করা।

বীর মুক্তিযোদ্ধা রফিক উদ্দিন ভুঁইয়া স্টেডিয়ামকে আন্তর্জাতিক স্টেডিয়াম করা, ঢাকায় অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ প্রিমিয়ার ক্রিকেট লীগ (বিপিএল) এ ময়মনসিংহ বিভাগকে যুক্ত করা, ব্রহ্মপুত্র নদের উপর আরও একাধিক সেতু নির্মাণ করা, তীব্র যানজটের কবলে নিবেদিত ময়মনসিংহের নাগরিক জীবন সুরক্ষায় বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ, ময়মনসিংহ বিভাগীয় শহরসহ সকল জেলা শহরের অভ্যন্তরীণ সড়ক সমূহ প্রশস্ত করে বিভাগীয় শহরের সাথে জেলা শহরের মহাসড়ক সমূহ চার লেনে উন্নীত করা, ময়মনসিংহ বিভাগের স্থলবন্দর গুলোকে ইমিগ্রেশন সুবিধা দিয়ে পরিপূর্ণ স্থলবন্দরে উন্নীত করা, ময়মনসিংহ বিভাগীয় সদরে বিশেষ অর্থনৈতিক জোন স্থাপন, ময়মনসিংহে মহিলা পলিটেকনিকেল ইন্সটিটিউট এর অনুমোদন হয়েছে, জরুরি বাস্তবায়ন করা, ময়মনসিংহ শহরে আবাসিক তিতাস গ্যাসের সুযোগ চালু করা, ময়মনসিংহ শহরে একটি সাংস্কৃতিক পল্লী স্থাপন, ময়মনসিংহ থেকে চট্টগ্রামগামী আন্তঃনগর ট্রেন চালু, ময়মনসিংহ বিভাগীয় শহরে ফ্লাইওভার নির্মাণসহ বিভিন্ন দাবি বাস্তবায়নের জানান হয়।

ময়মনসিংহ জেলা নাগরিক আন্দোলন এর পক্ষে সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা প্রকৌশলী নুরুল আমিন কালাম বলেছেন, আমরা আমাদের দাবি নিয়ে গত আট বছর ধরে অন্দোলন করছি; এ দাবিগুলো আমাদের না ময়মনসিংহবাসীর যা প্রধানমন্ত্রীর কাছে পৌঁছে দেওয়ার জন্য আমরা আপ্রাণ চেষ্টা চালাচ্ছি।

এর আগে ২০১৮ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সবশেষ ময়মনসিংহে এসেছিলেন। সে সময় তিনি ১০৩টি প্রকল্প উদ্বোধন ও ৯৩টি প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছিলেন। এবারও ১০৩টি উন্নয়ন প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করবেন প্রধানমন্ত্রী।

আওয়ামী লীগ নেতা সাবেক সাংসদ অ্যাড. শামসুল হকের তনয় ও মো. তারেক বলেছেন, আমরা উচ্ছ্বসিত আনন্দিত আমরা অপেক্ষা আছি শত শত কর্মী নিয়ে মাঠে এসেছি কখন আসবেন প্রধানমন্ত্রী।

জেলা আ. লীগের সাধারণ সম্পাদক মোয়াজ্জেম হোসেন বাবুল জানান, প্রধানমন্ত্রী যা দিয়েছেন তা ময়মনসিংহবাসীর অকতরে স্মরণ রাখবেন।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড