• মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১  |   ২৭ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

আজ আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস, শহীদ মিনারে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর শ্রদ্ধা নিবেদন

  নিজস্ব প্রতিবেদক

২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ০০:৩৬
শহীদ মিনার

শোক আর গৌরবে গাঁথা অমর একুশে ফেব্রুয়ারি আজ; আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। ১৯৫২ সালের এ দিনে সালাম, বরকত, রফিক, জব্বার, শফিউরসহ অনেকে আত্মাহুতি দিয়ে বাংলা ভাষার মর্যাদা প্রতিষ্ঠা করে গেছেন। বাংলাকে পথ চলার সম্বল করে বাধা পেরোনোর শপথের দিন আজ। কেবল বাঙালির নয়, দিবসটি বিশ্বের সব ভাষাভাষী মানুষের। তাই বাঙালিসহ বিশ্বের কোটি কোটি মানুষ সেই শহীদদের আজ শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছে।

কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ফুল দেওয়ার পর দলীয় নেতাদের নিয়ে শহীদ বেদিতে ফুল দেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।

রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর শ্রদ্ধা নিবেদনের পর শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান জাতীয় সংসদের স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী, প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী, জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকার শামসুল হক টুকু।

এরপর তিন বাহিনীর প্রধানদের মধ্যে সেনাবাহিনী প্রধান সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ, নৌবাহিনী প্রধান অ্যাডমিরাল এম শাহীন ইকবাল, বিমানবাহিনী প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল শেখ আব্দুল হান্নান শহীদ বেদীতে ফুল দেন।

ঢাকার বিভিন্ন মিশনের কূটনীতিকরাও ফুল নিয়ে হাজির হয়েছেন শহীদ মিনারে। শ্রদ্ধা জানাচ্ছেন মন্ত্রিপরিষদের সদস্য, ভাষাসৈনিক, মুক্তিযুদ্ধের সেক্টর কমান্ডার এবং মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিলের নেতারা।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস, ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম প্রথম প্রহরে শ্রদ্ধা জানান।

সহকর্মীদের নিয়ে ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. আখতারুজ্জামান।

একুশ বাঙালির চেতনায় সদা জাগ্রত। আজ তাই সব পথ মিশে গেছে শহীদ মিনারের বেদিতে। শুধু কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার নয়, দেশের আনাচে-কানাচে ছড়িয়ে থাকা সব শহীদ মিনারে ফুলেল ভালোবাসা জানিয়ে শ্রদ্ধা জানানো হচ্ছে ভাষা শহীদদের। জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি বিষয়ক সংস্থা (ইউনেস্কো) ১৯৯৯ সালে মহান একুশের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের স্বীকৃতি দেওয়ার পর থেকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে দিবসটি পালিত হচ্ছে।

অমর একুশে পালন উপলক্ষে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার, আজিমপুর কবরস্থানসহ একুশের প্রভাতফেরি প্রদক্ষিণের এলাকায় বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। তৈরি করা হয়েছে শহীদ মিনারে প্রবেশের রোডম্যাপ।

আজ জাতীয় ছুটির দিন। সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে সব সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও বেসরকারি ভবনগুলোতে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখা হবে। ২১ ফেব্রুয়ারি উপলক্ষে সংবাদপত্রগুলো বিশেষ ক্রোড়পত্র এবং বাংলাদেশ বেতার, বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বেসরকারি স্যাটেলাইট চ্যানেলগুলো একুশের বিশেষ অনুষ্ঠান সম্প্রচার করবে।

দিবসটি উপলক্ষে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল নানা কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। এছাড়াও দিবসটি যথাযোগ্য মর্যাদায় উদযাপন উপলক্ষে বাংলা একাডেমি, বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি, নজরুল ইনস্টিটিউট, জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্র, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, জাতীয় জাদুঘর, গণগ্রন্থাগার অধিদপ্তর, শিশু একাডেমিসহ অন্য প্রতিষ্ঠান বিস্তারিত কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।

১৯৪৭ সালের ব্রিটিশ-ভারত বিভক্তির পর পাকিস্তান রাষ্ট্রে রাষ্ট্রভাষার প্রশ্নে বিরোধ জন্ম নেয়। পশ্চিম পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠী রাষ্ট্রের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের মুখের ভাষা বাংলাকে অস্বীকার করে কৃত্রিম ভাষা উর্দুকে চাপিয়ে দেওয়ার ষড়যন্ত্র শুরু করে। প্রতিবাদে বাংলার বুদ্ধিজীবীরা সোচ্চার হন। ১৯৪৮ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এক অনুষ্ঠানে মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ ঘোষণা দেন, ‘উর্দু এবং উর্দুই হবে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা। সঙ্গে সঙ্গে ছাত্ররা ‘না ‘না ধ্বনি তুলে প্রতিবাদ জানান। ১৯৫২ সালের ২৭ জানুয়ারি পল্টন ময়দানে পূর্ববঙ্গের প্রধানমন্ত্রী নুরুল আমিনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত জনসভায় পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী খাজা নাজিমুদ্দিন ঘোষণা করেন, ‘উর্দুই হবে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা। পাকিস্তানি শাসকদের রাষ্ট্রভাষা নিয়ে এ ধরনের গতিবিধি ও কর্মকাণ্ড আন্দোলনের দাবানল সৃষ্টি করে। জিন্নাহর ঘোষণার পর থেকেই তমদ্দুন মজলিসের নেতৃত্বে বাংলা রাষ্ট্রভাষার জন্য আন্দোলন শুরু হয়।

১৯৫২ সালের ৩১ জানুয়ারি মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর সভাপতিত্বে সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা পরিষদ গঠিত হয়। ৪ ফেব্রুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও ঢাকা শহরের সব স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা উর্দুকে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা করা এবং আরবি হরফে বাংলা ভাষার প্রচলনের চেষ্টার প্রতিবাদে ধর্মঘট পালন করেন। আর একুশে ফেব্রুয়ারিতে প্রদেশব্যাপী ধর্মঘট করার সিদ্ধান্ত হয়।

২১ ফেব্রুয়ারি ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করা হয়। ছাত্রদের বিক্ষোভ মিছিলের ওপর গুলি চালায় পুলিশ। শহীদ হন সালাম, বরকত, রফিক, শফিউর, জব্বারসহ নাম না জানা অনেকে। এরপর সারা দেশে আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে। পাকিস্তানি সরকার রক্তক্ষয়ী আন্দোলনের কাছে নতি স্বীকার করে। বাংলাকে রাষ্ট্রীয় ভাষার স্বীকৃতি দিতে বাধ্য হয়। ১৯৫৬ সালে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে যুক্তফ্রন্ট সরকার ক্ষমতায় এলে একুশে ফেব্রুয়ারিকে শোক দিবস হিসেবে রাষ্ট্রীয়ভাবে পালনের রীতি চালু হয়। একুশের পথ ধরে শুরু হয় বাঙালির স্বাধিকার সংগ্রাম।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড