• শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩০ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

গ্রন্থাগার প্রাঙ্গণে চিরনিদ্রায় হাসান আজিজুল হক

  নিজস্ব প্রতিবেদক

১৬ নভেম্বর ২০২১, ১৮:১৮
হাসান আজিজুল হক
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার প্রাঙ্গণে সমাহিত করা হয় হাসান আজিজুল হককে (ছবি: সংগৃহীত)

উপমহাদেশের প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক হাসান আজিজুল হককে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার প্রাঙ্গণে সমাহিত করা হয়েছে।

মঙ্গলবার (১৬ নভেম্বর) দুপুর সোয়া দুইটার দিকে তাকে সমাহিত করা হয়।

এর আগে সোমবার রাত সোয়া ৯টার দিকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের হাউজিং সোসাইটিতে অবস্থিত নিজ বাসভবন উজানে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৮৩ বছর। মৃত্যুকালে তিনি এক পুত্র ও তিন কন্যা সন্তানসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন।

মঙ্গলবার বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে জোহর নামাজের পর তাঁর জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জানাজার আগে দুপুর ১২টার দিকে তাঁর মরদেহ বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে নেওয়া হয়। সেখানে তাঁকে শ্রদ্ধা জানাতে আসেন শত শত মানুষ। সেখানে শুরুতেই রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা জানানো হয়। পরে একে একে তার স্বজন, কবি, সাহিত্যিক, ভক্তনুরাগী, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।

সেখানে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন রাজশাহী জেলা প্রশাসক আব্দুল জলিল, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক গোলাম সাব্বির সাত্তার, উপ-উপাচার্য অধ্যাপক চৌধুরী মো. জাকারিয়া, উপ-উপাচার্য অধ্যাপক সুলতান-উল-ইসলাম, রাজশাহী-৩ (পবা ও মোহনপুর) আসনের সাংসদ আয়েন উদ্দিন, রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকারসহ মুক্তিযোদ্ধা, বিভিন্ন সাংস্কৃতিক, সামাজিক, রাজনৈতিক ব্যক্তিরা।

অধ্যাপক হাসান আজিজুল হক বেশ কিছুদিন ধরেই অসুস্থ ছিলেন। বার্ধক্যজনিত সমস্যা ছাড়াও তিনি হার্টের সমস্যা ও ডায়াবেটিস রোগে ভুগছিলেন। তাঁর শরীরে লবণের ঘাটতিও ছিল। করোনার কারণে চিকিৎসকের পরামর্শে নিজ বাসাতেই তাঁর চিকিৎসা চলছিল। এরই মধ্যে বাথরুমে পড়ে গিয়ে তিনি বেশি অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরে গত ২১ আগস্ট এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে তাঁকে ঢাকায় আনা হয়। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) দুই সপ্তাহের বেশি সময় চিকিৎসা নেন তিনি। তাঁর শারীরিক অবস্থার কিছুটা উন্নতি হলে ৯ সেপ্টেম্বর তাঁকে রাজশাহীতে ফিরিয়ে আনা হয়। এরপর থেকে নিজ বাসাতেই চিকিৎসাধীন ছিলেন এই কথাসাহিত্যিক। তবে প্রায় মাসখানেক থেকে তিনি তেমন খাওয়া-দাওয়া করতে পারছিলেন না।

রাজশাহীর সাংস্কৃতিক অঙ্গনের ব্যক্তিত্ব ও কবিকুঞ্জের সাধারণ সম্পাদক কবি আরিফুল হক কুমার শোক প্রকাশ করে বলেন, দেশের বিভিন্ন সংকটের সময়ে অধ্যাপক হাসান আজিজুল হক আমাদের পাশে ছিলেন। দেশে এখনো একটা ক্রান্তিকাল চলছে। এই সময়ে তাঁর মতো একজন মানুষের উপস্থিতি অত্যন্ত প্রয়োজন ছিল। তাঁর বিদায় আমাদের জন্য অপূরণীয় ক্ষতি ও চরম শূন্যতার সৃষ্টি করবে। তিনি ছিলেন বাংলা সাহিত্যের একজন নক্ষত্র। বাংলা সাহিত্য যতদিন থাকবে, তিনিও ততদিন থাকবেন।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক সাজ্জাদ বকুল বলেন, অধ্যাপক হাসান আজিজুল হক কেবল সমাজের একজন সচেতন একজন মানুষই ছিলেন না, তিনি ছিলেন আমাদের পথ নির্দেশক। তাঁর মৃত্যুতে আমরা একজন পথ নির্দেশক হারালাম। তাঁর মৃত্যু বাংলা সাহিত্যের জন্য অনেক বড় ক্ষতি।

১৯৭৩ সালে অধ্যাপক হাসান আজিজুল হক রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগে শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন। ২০০৪ তিনি অবসর নেন। এরপর থেকে তিনি বিহাস এলাকায় বসবাস করতেন। জীবদ্দশায় তিনি ছোটগল্প, উপন্যাস ও প্রবন্ধ লিখেছেন। বাংলা সাহিত্যে অবদানের জন্য তিনি ১৯৭০ সালে বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার লাভ করেন। ১৯৯৯ সালে একুশে পদক এবং ২০১৯ সালে স্বাধীনতা পুরস্কারও লাভ করেন এই লেখক।

আরও পড়ুন: সঞ্চয়পত্র কেনায় মিথ্যা তথ্য দিলে দণ্ড

অধ্যাপক হাসান আজিজুল হক ১৯৩৯ সালের ২ ফেব্রুয়ারি বর্তমান ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার যবগ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। জীবনের অধিকাংশ সময় তিনি রাজশাহীতে কাটিয়েছেন।

ওডি/আজীম

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড