• মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩৭ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

লক্ষ্য সোনার বাংলাদেশ, আর চাওয়া-পাওয়ার কিছু নেই : শেখ হাসিনা  

  অধিকার ডেস্ক    ০৭ অক্টোবর ২০১৮, ০৯:৩১

শেখ হাসিনা
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা (ফাইল ছবি)

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘মাত্র কয়েক বছর আগেও বিশ্বে বাংলাদেশ একটি ক্ষুধা, দারিদ্র এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগপীড়িত দেশ হিসেবে পরিচিত থাকলেও আজ তা উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে।’

তিনি বলেন, গত ১০ বছরে আমরা বিশ্বে বাংলাদেশের হৃত মর্যাদাটা অন্তত ফিরিয়ে আনতে পেরেছি যেটা ১৯৭৫ সালে জাতির পিতাকে সপরিবারে হত্যার পর বাঙালি জাতি হারিয়ে ফেলেছিল।

শনিবার (৬ অক্টোবর) গণভবনে লায়ন এবং লিও ক্লাব আয়োজিত বিশাল সমাবেশে এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা ২০২০ সালে জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন করব। আমাদের লক্ষ্য ২০২১ সালে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ের দেশ এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত-সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা।’

সরকার শত বছরের ডেল্টা প্ল্যান বা বদ্বীপ পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘২১০০ সালের ডেল্টা প্ল্যান বাস্তবায়নের মাধ্যমে এক টেকসই উন্নত-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তোলা হবে।’

তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ এখন উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছে। আর্থ-সামাজিক সূচকে আমরা উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জন করেছি। মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি পেয়ে ১ হাজার ৭৫১ মার্কিন ডলারে উন্নীত। প্রবৃদ্ধি ৭ দশমিক ৮৬ শতাংশে উন্নীত হয়েছে।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছি। বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা এখন ২০ হাজার মেগাওয়াট। বর্তমানে প্রায় ৯০ ভাগ মানুষ বিদ্যুৎ সুবিধা পাচ্ছে। আমরা কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র ও পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ করছি। বিদ্যুৎ উৎপাদন বৃদ্ধি পাওয়ায় জনগণের আর্থ-সামাজিক ব্যবস্থায় উন্নতি হয়েছে।’

আমরা নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ করছি উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘মেট্রোরেল স্থাপন, এলএনজি টার্মিনাল এবং গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছি। কর্ণফুলি নদীর তলদেশে টানেল নির্মাণের কাজ চলছে।’

সরকার প্রধান বলেন, ‘বর্তমান সরকার সাড়ে ১৮ হাজার কমিউনিটি ক্লিনিকে ১৩ হাজার ৮৪২ জন স্বাস্থ্য-সেবা প্রদানকারী নিয়োগের মাধ্যমে গ্রামীণ ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জন্য স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করে যাচ্ছে। রোগীদের বিনামূল্যে ৩০ প্রকারের প্রয়োজনীয় ঔষধ প্রদান করা হচ্ছে। বিভিন্ন বিশেষায়িত হাসপাতাল স্থাপন করা হচ্ছে। সরকারি হাসপাতালগুলোতে শয্যাসংখ্যা বৃদ্ধি করা হচ্ছে।’

তিনি বলেন, ‘প্রতি হাজারে শিশুমৃত্যু হার ২৮ ও মাতৃমৃত্যুর হার ১ দশমিক ৭৬ -এ নামিয়ে আনা হয়েছে। মানুষের গড় আয়ু বর্তমানে ৭২ বছরের বেশি।’ বঙ্গবন্ধু কন্যা বলেন, ‘ভবিষ্যতে একটি সুশৃংখল যুব শক্তি গড়ে তোলার লক্ষ্যে সরকার সাধারণ শিক্ষার পাশাপাশি পেশাগত শিক্ষা, কারিগরি শিক্ষা ও তথ্য-প্রযুক্তি শিক্ষার উপর গুরুত্ব দিচ্ছে।’

বিভিন্ন ক্ষেত্রে দেশের অগ্রগতির চিত্র তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা বাজেট সাতগুণ বাড়িয়েছি। বাজেটের ৯০ ভাগ নিজস্ব অর্থায়নে আমরা করে থাকি। আগে আমাদের উন্নয়ন বাজেট যা হয়তো ২৫-৩০ হাজার কোটি টাকা ছিল, এখন সেখানে ১ লাখ ৭০ হাজার কোটি টাকার উন্নয়ন বাজেট আমরা বাস্তবায়ন করে যাচ্ছি।’

দেশের উন্নয়নে নেওয়া পরিকল্পনার কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের দেশকে আমরা সর্বক্ষেত্রে উন্নত করতে চাই, স্বয়ংসম্পূর্ণ করতে চাই। দেশের মানুষ যেন আরও উন্নত জীবন পায় সেদিকে লক্ষ্য রেখেই আমরা কাজ করে যাচ্ছি।’

বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গা নাগরিকদের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আজকে আমাদের ওপর একটা বোঝা এসেছে, মিয়ানমারের শরণার্থীরা। প্রায় ১১ লাখ শরণার্থী আজকে আমাদের দেশে আশ্রয় নিয়েছে। ১৯৭১ সালে ভারতে আশ্রয় নেওয়া আমাদের শরণার্থীদের কথা যখন স্মরণ করেছি তখন তাদের আশ্রয় না দিয়ে পারিনি।’

রোহিঙ্গা সংকটে কূটনৈতিক সফলতার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে ঝগড়া করিনি, তাদের সঙ্গে আলোচনা করেছি। আলোচনার মাধ্যমে চুক্তি সই করেছি। তারা রাজি হয়েছে নিয়ে যাবে, যদিও এখনো নিয়ে যাওয়া শুরু করেনি। তারপরও আমরা আলোচনা করে যাচ্ছি এদের ফিরিয়ে দিতে।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘অরাজনৈতিকভাবে আজকে যে সমর্থন বাংলাদেশ পেয়েছে এবং সেই সঙ্গে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ তাদের (মিয়ানমারকে) চাপ প্রয়োগ করছেন। আমরা আশা করি তাদের (রোহিঙ্গা) ফিরিয়ে দেয়ার কাজ শুরু করতে পারবো।’

বঙ্গবন্ধু কন্যা বলেন, ‘জাতির পিতা এদেশকে স্বাধীন করেছিলেন বলেই আমরা জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে দেশের প্রতিনিধিত্ব যেমন করতে পারছি, তেমনি বহি:বিশ্বের সঙ্গে বিভিন্ন প্রতিযোগিতাতেও অবতীর্ণ হতে পারছি এবং বাংলাদেশের ভাবমূর্তি বিশ্ব দরবারে বৃদ্ধি পেয়েছে। এই ধারবাহিকতা আমাদের অব্যাহত রাখতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘আমাদের দুর্ভাগ্য যে মহান মুক্তিযুদ্ধে বিজয় অর্জনের পর মাত্র সাড়ে ৩ বছর জাতির পিতা হাতে সময় পেয়েছিলেন মাত্র সাড়ে ৩ বছর একটি যুদ্ধ বিধ্বস্ত প্রদেশকে রাষ্ট্রে পরিণত করার। তিনি মাত্র ৯ মাসে আমাদেরকে একটি সংবিধান উপহার দিতে পেরেছিলেন। বাঙালি জাতিকে উন্নত সমৃদ্ধ করে গড়ে তোলার প্রতিটি কাজের তিনি সে সময়ই ভিত্তিমূল গড়ে দিয়ে যান।’

প্রধানমন্ত্রী এ সময় বিস্ময় প্রকাশ করে বলেন, ‘মাঝে মাঝে আমার ভাবলে অবাক লাগে এত অল্প সময়ে তিনি একটি স্বাধীন দেশের জন্য এত কাজ তিনি কিভাবে করলেন?’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘তিনি তাঁর জীবনকে বাংলাদেশের মানুষের জন্য উৎসর্গ করেছেন এবং বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের ক্ষুধা এবং দারিদ্র মুক্ত সোনার বাংলাদেশ গড়ে তোলাই তাঁর লক্ষ্য, তাঁর আর কোন কিছু চাওয়া পাওয়ার নেই।’

দেশে লায়ন্স-এর সেবামূলক কর্মসূচির প্রশংসা করে ভবিষ্যতেও দেশ ও মানবতার কল্যাণে তাঁদের সেবামূলক কর্মসূচি অব্যাহত রাখার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘আপনারা লায়ন এবং লিওরা যেভাবে সামাজিক ক্ষেত্রে অবদান রাখছেন, আপনাদেরকে আমি আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই। মানুষের জন্য সেবা করা মানুষের পাশে দাঁড়ানো। এর থেকে বড় কাজ আর কি হতে পারে।’

লায়ন্স ক্লাবস ইন্টারন্যাশনাল এর প্রশংসা করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘লায়ন্স ক্লাবস ইন্টারন্যাশনাল জাতিসংঘের কনসালটেটিভ স্ট্যাটাস প্রাপ্ত, বিশ্বের সর্ববৃহৎ মানবসেবামূলক সংগঠন। সমাজের দুস্থ ও সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠীর কল্যাণে নিবেদিত এই সংগঠন বিগত একশ বছরের বেশী সময় ধরে বিশ্বের ২০০টিরও অধিক দেশে মানব সেবায় কাজ করে যাচ্ছে।’

তিনি বলেন, ‘দেশের এই উন্নয়ন অভিযাত্রায় লায়ন এবং লিও সদস্যদেরও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। তাঁরা তাঁদের মানবসেবামূলক কার্যক্রমের পাশাপাশি বর্তমান সরকারের বিভিন্ন সেবামূলক কর্মকান্ডে সব রকমের সহায়তা প্রদান করে যাচ্ছে।’

তিনি বলেন, ‘আপনারা যে সেবা দিচ্ছেন সে সেবা আপনারা অব্যাহত রাখবেন। দেশকে আসুন সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় গড়ে তুলি।’

অনুষ্ঠানে লায়ন্স ক্লাব ইন্টারন্যাশনালের নবনির্বাচিত পরিচালক কাজী আকরাম উদ্দিন আহমেদ, সাবেক আন্তর্জাতিক পরিচালক শেখ কবির হোসেন, এরিয়া লিডার স্বদেশ রঞ্জন সাহা, চেয়ারম্যান অব মল্টিপল ডিষ্ট্রিক্ট ৩১৫ বি মমিনুল ইসলাম লিটন বক্তৃতা করেন। লিটন এরশাদ হোসেন রানা অনুষ্ঠানে শপথ বাক্য পাঠ করান।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড