• শুক্রবার, ১৭ মে ২০২৪, ৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১  |   ৩১ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

নিরাপদ সড়ক দিবস ২০২১

ঝরছে প্রাণ, চলছে অনিয়ম : রাজপথে মৃত্যুর মিছিল  

  নিশীতা মিতু

২২ অক্টোবর ২০২১, ০৯:৪১
ঝরছে প্রাণ, চলছে অনিয়ম : রাজপথে মৃত্যুর মিছিল
দুর্ঘটনা কবলিত বাস (ছবি : অধিকার)

পথে বের হলে সুস্থ শরীরে ঘরে ফেরা যেন এখন কল্পনার মতো হয়ে দাঁড়িয়েছে। ছোট গন্তব্য পেরিয়েও মানুষ স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলছে বেঁচে আছে বলে। দেশের রাজপথ হয়ে উঠেছে মৃত্যুকূপ।

নিরাপদ সড়ক চাই (নিসচা) এর আন্দোলনের ফল স্বরূপ ২০১৭ সালের ৫ জুন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে মন্ত্রীসভার বৈঠকে ২২ অক্টোবরকে জাতীয় নিরাপদ সড়ক দিবস হিসেবে ঘোষণা করা হয়। ওই বছর থেকেই বাংলাদেশে জাতীয় নিরাপদ সড়ক দিবস পালিত হয়ে আসছে। এরই ধারাবাহিকতায় আজ পঞ্চমবারের মতো পালিত হচ্ছে দিবসটি।

অনুষ্ঠানিকতায় নিরাপদ সড়কের জন্য দিবস থাকলেও বাস্তবতা বলে ভিন্ন কথা। পরিসংখ্যার হিসাব বাড়ায় উদ্বেগ। নিরাপদ সড়ক দিবস ২০২১ উপলক্ষে গতকাল গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী জানান, ছয় বছরে সারা দেশে ৩১ হাজার ৭৯৩টি সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে। এতে ৪৩ হাজার ৮৫৬ জন নিহত হয়েছেন, এছাড়াও আহত হয়েছেন ৯১ হাজার ৩৫৮ জন। ২০১৫ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত সংঘটিত দুর্ঘটনায় এ হতাহতের ঘটনা ঘটে।

বিবৃতিতে বলা হয়, টানা তিনবারের ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ সরকারের নির্বাচনি নানা প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন হলেও তৃতীয় মেয়াদের নির্বাচনি প্রতিশ্রুতিতে নিরাপদ সড়কের অঙ্গীকার বাস্তবায়নে গাফিলতি লক্ষ করা যাচ্ছে। সরকারের স্বাস্থ্য অধিদফতরের হিসাব মতে, সারা দেশে প্রতিদিন গড়ে ৬৪ জন মানুষ সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারাচ্ছে, ১৫০ জনের বেশি মানুষ আহত হচ্ছে।

বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির হিসাব অনুযায়ী ২০১৫ সালে ৬ হাজার ৫৮১টি সড়ক দুর্ঘটনায় আট হাজার ৬৪২ জন নিহত, ২১ হাজার ৮৫৫ জন আহত; ২০১৬ সালে চার হাজার ৩১২টি সড়ক দুর্ঘটনায় ছয় হাজার ৫৫ জন নিহত, ১৫ হাজার ৯১৪ জন আহত; ২০১৭ সালে চার হাজার ৯৭৯টি সড়ক দুর্ঘটনায় সাত হাজার ৩৯৭ জন নিহত, ১৬ হাজার ১৯৩ জন আহত; ২০১৮ সালে পাঁচ হাজার ৫১৪টি সড়ক দুর্ঘটনায় সাত হাজার ২২১ জন নিহত, ১৫ হাজার ৪৬৬ জন আহত; ২০১৯ সালে পাঁচ হাজার ৫১৬টি সড়ক দুর্ঘটনায় সাত হাজার ৮৫৫ জন নিহত এবং ১৩ হাজার ৩৩০ জন আহত হয়েছে।

এ ছাড়া ২০২০ সালে করোনা সংক্রমণে বছরব্যাপী লকডাউনে পরিবহন বন্ধ থাকা অবস্থায় ৪ হাজার ৮৯১টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৬ হাজার ৬৮৬ জন নিহত ও ৮ হাজার ৬০০ জন আহত হয়েছে বলেও উল্লেখ করা হয় বিবৃতিতে।

বুয়েটের অধ্যাপক ও সড়ক পরিবহন বিশেষজ্ঞ শামসুল হকের মতে, সড়ক নিরাপদ করতে হলে বিশৃঙ্খল অবস্থা থেকে সুশৃঙ্খল করতে হবে। মহাসড়কের পাশাপাশি শহরের ভেতরেও বিশৃঙ্খল অবস্থা। বিশৃঙ্খল অবস্থা থেকে তৈরি হয় সাংঘর্ষিক অবস্থা। আর সেখানে থেকে সৃষ্টি হয় দুর্ঘটনা ও যানজট।

তিনি বলেন, সরকার অবকাঠামো উন্নয়ন করছে, চালকদের প্রশিক্ষণ দিচ্ছে। কিন্তু এটার সঙ্গে সঙ্গে আরও করণীয় আছে। রাস্তা ফিট হতে হয়, রেগুলার সেফটি অডিট করতে হয়, গাড়িটাও ফিট হতে হয়। এখন যে ফিটনেস প্রক্রিয়া বাংলাদেশে রয়েছে তাতে টাকা জমা দিলেই যেকোনো গাড়ি ফিটনেস পেয়ে যায়। এত স্বল্পসংখ্যক পরিদর্শক দিয়ে বিশালসংখ্যক গাড়ির সার্ভিস দেওয়া যায় না। এটা সরকারও জানে। ফলে একটা তামাশা হচ্ছে। গাড়ি না আনলেও ফিটনেস পাওয়া যায়। এই ফিটনেস প্রক্রিয়ায় বড় গলদ রয়ে গেছে।

চরম বিশৃঙ্খল একটা সিস্টেম দিয়ে সড়ক নিরাপদ করা সম্ভব নয় মনে করেন বুয়েটের এ অধ্যাপক। এ জন্য করণীয় হিসাবে তিনি বলেন, পথচারীবান্ধব ফুটপাত, বিজ্ঞানভিত্তিক ও কন্ট্রাকলেস ফিটনেস দেওয়া, চালক তৈরি করার প্রাতিষ্ঠানিক প্রক্রিয়া করা, রাস্তার পাশের হাটবাজারে প্রবেশ নিয়ন্ত্রণ করতে পারলে সড়কে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যাবে। সিস্টেমে গলদ রেখে ওপরে কিছু কসমেটিক কাজ করে সড়ক নিরাপদ করা যাবে না।

নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলনের চেয়ারম্যান চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চন বলেন, এখনো সড়ক নিরাপদ হয়নি। বরং অনিরাপদ হয়েছে বেশি। গত ২৮ বছরে যত সরকার এসেছে প্রত্যেকেই আমরা জানিয়েছি কী কারণে দুর্ঘটনা ঘটে, কী করলে দুর্ঘটনা কমানো যেতে পারে। অসুখ ধরেছি, ডায়াগনোসিস করেছি, কী ওষুধ লাগবে সেটিও বলেছি। কিন্তু এ সড়কের অসুখ সারানোর দায়িত্ব যিনি নেবেন বা যারা ওষুধ দেবেন, খাওয়াবেন, তারা কাজটা করছেন না।

২৮ বছর আন্দোলন করার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ২০১৭ সাল থেকে সরকার দিবস পালন করছে। কিন্তু সড়ক দুর্ঘটনা রোধের জন্য যে সাজেশন আমরা দিয়ে আসছি, সেগুলো যতক্ষণ পর্যন্ত বাস্তবায়ন না হবে, ততক্ষণ পর্যন্ত আমরা সুফল পাবো না।

সড়ক দুর্ঘটনা বাড়ার কারণ হিসেবে ইলিয়াস কাঞ্চন বলেন, আগের যে সমস্যা ছিল, সেগুলো তো সমাধান হচ্ছেই না, বরং নতুন নতুন সমস্যা সৃষ্টি করা হচ্ছে। যেমন- নসিমন-করিমন ভটভটি আসছে, ব্যাটারিচালিত গাড়ি আসছে। আগের গাড়িগুলোই যেন সঠিক ফিটনেস নিয়ে চলে, চালকরা যেন উপযুক্ত প্রশিক্ষণ নিয়ে গাড়ি চালান এবং জনগণও যেন নিয়ম মেনে রাস্তায় চলেন, পারাপারে নিয়ম মেনে পার হন- এসব সমস্যা তো সমাধান হচ্ছেই না, নতুন সমস্যা সৃষ্টি করা হয়েছে। যে কারণে প্রতিদিনই বাড়ছে সড়ক দুর্ঘটনা।

সড়ক পরিবহন মালিক শ্রমিক ঐক্য পরিষদের মহাসচিব খোন্দকার এনায়ত উল্লাহর মতে, সড়ক পুরোপুরি নিরাপদ করা সম্ভব নয়। বিশ্বের কোথাও সড়ক পুরোপুরি নিরাপদ করতে পারে না। তবে সড়কে দুর্ঘটনার ব্যাপারে শুধু মালিক শ্রমিকরাই দায়ী নন। অনেক কিছু এটার সঙ্গে সম্পৃক্ত। রোডের ব্যাপার থাকে, আরও বহু কিছু আছে। সবাই চেষ্টা করছে, নিরাপদ সড়ক করতে। সরকারি পর্যায়েও কাজ চলছে। অনেকগুলো ব্ল্যাক স্পটের মেরামত করা হয়েছে। অনেক রাস্তায় ডিভাইডার হচ্ছে। এতে দুর্ঘটনা কমছে।

বিআরটিএর পরিচালক (সড়ক নিরাপত্তা) শেখ মাহবুবে রাব্বানী বলেন, নিরাপদ সড়ক নিশ্চিত করতে সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। সরকার প্রতিটি সেক্টরে ইন্জিনিয়ারিং, এনফোর্সমেন্ট এডুকেশনের ওপর কাজ করছে।

তার মতে কেবল সংখ্যা নয়, রেশিও হিসাবও বিবেচনা করতে হবে। তিনি বলেন, শুধু সংখ্যা হিসেবে বিবেচনা করলে হবে না, রেশিও হিসেবে বিবেচনা করতে হবে। যেভাবে রাস্তাঘাট, গাড়ি ও জনসংখ্যা বেড়েছে, সেভাবে রেশিও হিসেবে চিন্তা করলে অবশ্যই সড়ক নিরাপত্তা উন্নতি করেছে।

সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এ বিষ্যয়ে একাধিক বার গণমাধ্যমে বলেছেন, আমাদের অবকাঠামোগত উন্নয়নের কমতি নেই। চ্যালেঞ্জ হলো- সড়কের শৃঙ্খলা ফেরানো। এজন্য আমরা সড়ক পরিবহন আইন কার্যকর করেছি।

কেন হচ্ছে এত সড়ক দুর্ঘটনা? এর দায় কার? বুয়েটের ছাত্রদের করা গবেষণায়, এক্সিডেন্ট রিসার্চ ইন্সটিটিউট (এআরআই) এর মতে সড়ক দুর্ঘটনার মূল কারণ হল ১০টি। এগুলো হলো-

১) অপ্রশিক্ষিত ও লাইসেন্স বিহীন ড্রাইভার।

২) ফিটনেসবিহীন গাড়ি এবং নসিমন, করিমন,ভটভটি, অটো হাইওয়েতে চলা। (বর্তমানে এই যানবাহনের ফলেই বেশি দুর্ঘটনা ঘটছে)।

৩) সড়কের অপ্রতুলতা ও খানা-খন্দ।

৪) ড্রাইভারদের মধ্যে অসম প্রতিযোগিতা।

৫) বিরতিহীন বাসের ট্রিপ।

৬) পথচারীর অসতর্কতা।

৭) আইন প্রয়োগে ব্যর্থতা অর্থাৎ মৃত্যুদণ্ডের বিধান না থাকা।

৮) ট্রান্সপোর্টেশন ইঞ্জিনিয়ার হল রাস্তার ডাক্তার, যা বাংলাদেশের আরএইচডি শাখায় খুবই কম।

৯) সরকারের আমলাতান্ত্রিক মনোভাব এবং অসহযোগীতা।

১০) সড়কের পাশে ২ কিলোমিটার ফাঁকা থাকার কথা থাকলেও না বাস্তবে না থাকা। (সব জায়গায় হাট-বাজার বসে থাকে)

এখানের প্রতিটি কারণ নিয়ে লিখতে গেলে অনেক কিছুই লেখার থাকে। বাস্তবিক পক্ষে সত্যিই এই কারণগুলোই দায়ী লাগামহীন সড়ক দুর্ঘটনার জন্য। প্রশ্ন থাকতে পারে, সড়ক পরিবহণের জন্য কি কোনো আইন নেই? অবশ্যই আছে। বাংলাদেশে চালক ও পথচারী উভয়ের জন্য কঠোর বিধান যুক্ত করে ২০১৯ সালের ১ নভেম্বর থেকে কার্যকর করা হয়েছে ‘সড়ক পরিবহন আইন, ২০১৮’। নতুন আইনের কিছু বিধান অনুযায়ী-

 সড়কে গাড়ি চালিয়ে উদ্দেশ্য প্রনোদিতভাবে হত্যা করলে ৩০২ ধারা অনুযায়ী মৃত্যুদণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে।

 সড়কে বেপরোয়াভাবে গাড়ি চালালে বা প্রতিযোগিতা করার ফলে দুর্ঘটনা ঘটলে তিন বছরের কারাদণ্ড অথবা তিন লাখ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত করা হবে। আদালত অর্থদণ্ডের সম্পূর্ণ বা অংশবিশেষ ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিকে দেয়ার নির্দেশ দিতে পারবে।

 মোটরযান দুর্ঘটনায় কোন ব্যক্তি গুরুতর আহত বা প্রাণহানি হলে চালকের শাস্তি দেয়া হয়েছে সর্বোচ্চ পাঁচ বছরের জেল ও সর্বোচ্চ পাঁচ লাখ টাকা জরিমানা।

 ড্রাইভিং লাইসেন্স ছাড়া মোটরযান বা গণপরিবহন চালানোর দায়ে ছয় মাসের জেল বা ২৫ হাজার টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ড দেয়া হয়েছে।

 নিবন্ধন ছাড়া মোটরযান চালালে ছয় মাসের কারাদণ্ড এবং পঞ্চাশ হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানার বিধান রয়েছে।

 ভুয়া রেজিস্ট্রেশন নম্বর ব্যবহার এবং প্রদর্শন করলে ছয় মাস থেকে দুই বছরের কারাদণ্ড অথবা এক লাখ থেকে পাঁচ লাখ টাকা অর্থদণ্ড দেয়া হয়েছে।

 ফিটনেসবিহীন ঝুঁকিপূর্ণ মোটরযান চালালে ছয় মাসের কারাদণ্ড বা ২৫ হাজার টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ড দেয়া হয়েছে।

 ট্রাফিক সংকেত মেনে না চললে এক মাসের কারাদণ্ড বা ১০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ড দণ্ডিত করা হবে।

 সঠিক স্থানে মোটর যান পার্কিং না করলে বা নির্ধারিত স্থানে যাত্রী বা পণ্য ওঠানামা না করলে পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা করা হবে।

 গাড়ি চালানোর সময় মোবাইল ফোনে কথা বললে এক মাসের কারাদণ্ড এবং ২৫ হাজার টাকা জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে।

 একজন চালক প্রতিবার আইন অমান্য করলে তার পয়েন্ট বিয়োগ হবে এবং এক পর্যায়ে লাইসেন্স বাতিল হয়ে যাবে।

 গণ পরিবহনে নির্ধারিত ভাড়ার চাইতে অতিরিক্ত ভাড়া, দাবী বা আদায় করলে এক মাসের কারাদণ্ড বা ১০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ড দণ্ডিত করা হবে।

 আইন অনুযায়ী ড্রাইভিং লাইসেন্সে পেতে হলে চালককে অষ্টম শ্রেণি পাস এবং চালকের সহকারীকে পঞ্চম শ্রেণি পাস হতে হবে হবে। আগে শিক্ষাগত যোগ্যতার কোন প্রয়োজন ছিল না।

 গাড়ি চালানোর জন্য বয়স অন্তত ১৮ বছর হতে হবে। এই বিধান আগেও ছিল।

 এছাড়া সংরক্ষিত আসনে অন্য কোনও যাত্রী বসলে এক মাসের কারাদণ্ড, অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে।

আইন ঠিকই রয়েছে তবে ব্যবহার নেই তার। ফুটপাথে চলছে মোটর সাইকেল, পথে ঝুঁকিপূর্ণ যানবাহন, লেগুনা নামের যানবাহন চালাচ্ছে লাইসেন্সবিহীন ১৮ বছরের কম বয়সী হেলপার, চলছে পুরোদমে প্রতিযোগিতা— আর ফলাফল হিসেবে ঘটছে দুর্ঘটনা, মরছে মানুষ।

সমস্যা থাকলে তার সমাধানও থাকে, তেমনটাই থাকা উচিত। কী করে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব এই সড়ক দুর্ঘটনার মাত্রা? এআরআই এর মতে সড়ক দুর্ঘটনার মাত্রা কমানোর জন্য যা করতে হবে তা হলো-

১) যথাযথ আইন প্রয়োগ।

২) ড্রাইভার, জনগণকে সতর্ক করা এবং প্রশিক্ষণ দেওয়া।

৩) ‘নিরাপদ সড়ক চাই’- আন্দোলন আরও জোরদার করা।

৪) ফিটনেসবিহীন গাড়ি এবং নসিমন, করিমন সড়কে বাজেয়াপ্ত করা।

৫) বিরতিহীন ট্রিপ বন্ধ করা অর্থাৎ ড্রাইভারের বিশ্রামের সুযোগ দেওয়া।

৬) সড়কের পাশে হাট বাজার উচ্ছেদ।

৭) সকল মহাসড়ক ৪ লেইনে উন্নীত করা, সড়কের পাশে স্থানীয় যানবাহন চলার জন্য দুই পাশে সার্ভিস লেইন করা, যেমন করা আছে সিরাজগঞ্জ এর হাটিকামরুল মহাসড়কে এবং পদ্মা সেতুর জন্য তৈরিকৃত এশিয়ান হাইওয়েতে। অন্য কোথাও আর নেই।

৮) মানুষকে ফুট ওভার ব্রীজ ব্যবহারে বাধ্য করা।

৯) সকল সড়কের বিপদজনক বাঁক ট্রিটমেন্ট করা। (যেমন করা হয় ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে মিশুক মনির মারা যাওয়ার পরবর্তী সময়ে)

১০) নিয়ম মেনে যথার্থ স্পিডে গাড়ি চালানো।

সমস্যা আমাদের আবার সমাধানও আমাদের কাছেই রয়েছে। অর্থাৎ প্রত্যেকটি মানুষই নিজের অবস্থান থেকে সচেতন থাকলেই কেবল কমানো সম্ভব এই দুর্ঘটনার হার। কেন হচ্ছে এত দুর্ঘটনা? কে দায়ী তার জন্য?– জানতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকের কিছু গ্রুপে ছোট্ট জনমত জরিপ করা হয়। যাতে অংশগ্রহণ করেন বিভিন্ন পেশার, বিভিন্ন বয়সী মানুষ।

ফলাফলে দেখা যায়, সড়ক দুর্ঘটনার কারণ হিসেবে বেশিরভাগ মানুষই দায়ী করেন ড্রাইভারদের অসাবধানতা এবং নিজেদের অসচেতনাকে। একদিকে ড্রাইভারদের অনেকেই বেপরোয়া ও মদ্যপান হয়ে গাড়ি চালাচ্ছে, আইনকে বুড়ো আঙুল দেখাচ্ছে আর অন্যদিকে পথচারীরা মানছে না ট্রাফিক আইন, ব্যবহার করছে না ওভার ব্রিজ।

অনেকে আবার মনে করেন, ড্রাইভারের মালিক পক্ষের দেওয়া দিনের টার্গেট পরিমাণ টাকা তোলা ও নিজেদের দৈনিক মুজুরি তোলা, এছাড়া তীব্র যানজট, পুলিশের চাঁদা-হয়রানি, কাঙ্ক্ষিত ট্রিপ দিতে না পারা— সর্বপোরি ড্রাইভারের বিশ্রামের অভাব আর মানসিক চাপের কারণেই ঘটছে দুর্ঘটনা।

কথায় কথা বাড়ে। পক্ষে বিপক্ষে অনেক যুক্তি-তর্ক চালানো সম্ভব। কিন্তু সমাধানের উপায় আসলে কী? ২০১৮ সালের ২৫ জুন মন্ত্রিপরিষদের বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দূরপাল্লার যানে বিকল্প চালক রাখার নির্দেশ দিয়েছেন। এ ছাড়া অন্য সব নির্দেশের মধ্যে রয়েছে, রাস্তার মাঝে চালকদের বিশ্রামের ব্যবস্থা রাখা, পরিবহনের চালক ও সহকারীদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা, সিগন্যাল দিয়ে পারাপার করা, অনিয়মতান্ত্রিকভাবে রাস্তা পারাপার বন্ধ করা, সিট বেল্ট পরানো নিশ্চিত করা।

তবে প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া এসব নির্দেশ পালন হচ্ছে কি না কিংবা আদৌ পুরোপুরি বাস্তবায়ন হবে কি না সে বিষয়ে জনমনে সংশয় থেকেই যায়।

ওডি/কেএইচআর

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড