এসডিজি অর্জনে বৈশ্বিক রোডম্যাপের আহ্বান

টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনে অনেক দেশ পিছিয়ে পড়েছে। তাই এসডিজি অর্জনে বৈশ্বিক রোডম্যাপের আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

তিনি বলেন, এসডিজি অর্জনে একটি সাহসী ও উচ্চাভিলাসী রূপরেখা তৈরি করতে হবে।

সোমবার নিউ ইর্য়কে টেকসই উন্নয়ন বিষয়ে নবম বার্ষিক আন্তর্জাতিক কনফারেন্সে (ভার্চুয়াল) এসব কথা বলেন তিনি।

শেখ হাসিনা বলেন, কোভিড-১৯ মহামারির আগেই অনেক দেশ এসডিজি অর্জনের পথ থেকে ছিটকে পড়ে। এই মহামারি তাদের আরও পেছনে ফেলে দিয়েছে। এসডিজি লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে পিছিয়ে পড়া দেশগুলোকে ফিরিয়ে আনতে আমাদের একটি সাহসী ও উচ্চাভিলাসী বৈশ্বিক রোডম্যাপ তৈরি করতে হবে- যাতে কেউ পেছনে পড়ে না থাকে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, কোনো দেশ একা এসডিজি অর্জন করতে পারে না। এই এজেন্ডাকে এগিয়ে নিতে আমাদের বৈশ্বিক সহযোগিতা ও সংহতি প্রয়োজন। এসডিজি অর্জনের পথে পিছিয়ে থাকা দেশগুলোকে সামনে আনতে শেখ হাসিনা ৫টি প্রস্তাব পেশ করেন।

প্রথম প্রস্তাবে শেখ হাসিনা বলেন, এসডিজি অর্জনের সফলতা নির্ভর করছে মহামারি থেকে টেকসই উত্তরণ। এই সময়ে সত্যিকারের জরুরি বিষয় হলো সবার জন্য টিকা নিশ্চিত করা।

দ্বিতীয় প্রস্তাবে ২০৩০ এজেন্ডা বাস্তবায়নে সম্পদের বিশাল ব্যবধান কমিয়ে আনার কথা বলেন তিনি।

তৃতীয় প্রস্তাবে শেখ হাসিনা বলেন, চলমান বৈশ্বিক মহামারির আঘাতে ১৯৯৮ সালের পর এই প্রথম ক্রমবর্ধমান বৈশ্বিক দারিদ্র নিয়ে আমরা উদ্বিগ্ন। এই পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসতে কর্মসংস্থান সৃষ্টি, সামাজিক সুরক্ষা ও নারীর ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করা, বিজ্ঞান, প্রযুক্তি ও উদ্ভাবনের ওপর গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন।

চতুর্থ প্রস্তাবনায় প্রধানমন্ত্রী বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন পরিস্থিতি মোকাবিলায় পদক্ষেপগুলোর সঙ্গে সমন্বয় করে কোভিড-১৯ থেকে পুনরুদ্ধারে পদক্ষেপ নেওয়া উচিত যাতে ভবিষ্যতে যেকোন দুযোর্গ-দুর্বিপাকে শক্তিশালী প্রতিরোধ গড়ে তোলা যায়।

পঞ্চম প্রস্তাবে প্রধানমন্ত্রী এসডিজি বাস্তবায়নে মনিটরিং এবং সহায়তা বাড়ানোর কথা বলেন। এসজিডি বাস্তবায়নে জাতিসংঘকে সমন্বয় বাড়ানোর আহ্বান জানান তিনি।

২০৩০ এজেন্ডাকে একটি বৈশ্বিক চুক্তি হিসেবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এসডিজি টেকসই বৈশ্বিক উন্নয়নের একটি ব্লুপ্রিন্ট। কোন দেশ একা এই এজেন্ডা অর্জন করতে পারবে না। এই এজেন্ডা অর্জনে আমাদের বৈশ্বিক সহযোগিতা ও সংহতি বাড়াতে হবে।

শেখ হাসিনা বলেন, আমরা সবুজ উন্নয়নের মাধ্যমে সমৃদ্ধি অর্জন, লবণাক্ততা সহিষ্ণুতা ও নবায়নযোগ্য জ্বালানিকে প্রাধান্য দিয়ে ‘মুজিব ক্লাইমেট প্রোসপারিটি প্ল্যান’ গ্রহণ করেছি।

ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় প্রকাশিত সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট রিপোর্ট ২০২১ এর বরাত দিয়ে তিনি আরও বলেন, ২০১৫ সাল থেকে এসডিজি সূচকে বাংলাদেশ সবচেয়ে বেশি অগ্রগতি লাভ করেছে। বাংলাদেশ বর্তমানে বিশ্বে প্রথম পাঁচটি দ্রুততম অর্থনৈতিক অগ্রগতির দেশের মধ্যে অন্যতম ও জিডিপিতে বাংলাদেশের অবস্থান ৪১তম বলে জানান শেখ হাসিনা।

জাতিসংঘ এ বছর বাংলাদেশকে এলডিসি ক্যাটাগরি থেকে উত্তরণের স্বীকৃতি দিয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০৩১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে উচ্চ-মধ্য-আয়ের দেশে এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উচ্চ-আয়ের দেশে রূপান্তরিত করার পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ করছে সরকার। ডেল্টা-প্ল্যান ২১০০ গ্রহণ করা হয়েছে। আমরা ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি সমৃদ্ধ এবং জলবায়ু স্থিতিস্থাপক বদ্বীপ তৈরি করে যেতে চাই।

বাংলাদেশের অগ্রগতির কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, পদ্মা সেতু, ঢাকা মেট্রো রেল, কর্ণফুলি টানেল এবং রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের মতো মেগা অবকাঠামো প্রকল্প চালু করছি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ডিজিটাইজেশন ও সংযোগে বাংলাদেশের বিনিয়োগ ডিজিটাল অর্থনীতি, তরুণদের নেতৃত্বে উদ্ভাবন এবং রূপান্তরমূলক আর্থ-সামাজিক পরিবর্তনকে উৎসাহিত করেছে। এটি এখন আমাদের কোভিড-১৯ মহামারিকে আরও ভালোভাবে মোকাবেলা করতে সহায়তা করছে। তিনি বলেন, আমাদের তরুণদের সংখ্যা প্রচুর। ডিজিটাল অর্থনীতি এবং প্রযুক্তিগত উদ্ভাবনের সর্বাধিক সুবিধা পেতে তাদের সহায়তা করার জন্য আমরা তাদের শিক্ষা এবং দক্ষতা বিকাশে প্রচুর বিনিয়োগ করেছি।

বিগত বছরগুলোতে টেকসই উন্নয়নসহ বিভিন্ন সেক্টরে বাংলাদেশের অগ্রগতির কথা তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। অনুষ্ঠানে ২০১৫ সাল থেকে ২০২০ সাল পর‌্যন্ত টেকসই উন্নয়নে বাংলাদেশের অর্জনের জন্য ‘এসডিজি প্রোগ্রেস অ্যাওয়ার্ড’ পেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

আরও পড়ুন: করোনা শনাক্তের হার ৪ শতাংশে নামল

জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৬তম অধিবেশনে যোগ দিতে রবিবার (১৯ সেপ্টেম্বর) স্থানীয় সময় বিকেলে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সে নিউইর্য়ক যান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর আগে শুক্রবার (১৭ সেপ্টেম্বর) সকালে ঢাকা থেকে রওনা দিয়ে ফিনল্যান্ড হয়ে নিউইর্য়ক যান তিনি।

ওডি/আজীম