• রোববার, ০৫ মে ২০২৪, ২২ বৈশাখ ১৪৩১  |   ২৮ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

‘মাইন্ড এইড’ হাসপাতালে পুলিশের তালা

  নিজস্ব প্রতিবেদক

১০ নভেম্বর ২০২০, ২১:১৬
অধিকার
ছবি : সংগৃহীত

পুলিশের সিনিয়র এএসপি আনিসুল করিমকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় রাজধানীর আদাবরের মাইন্ড এইড হাসপাতালে তালা ঝুলিয়ে দিয়েছে পুলিশ। এছাড়া হাসপাতালটির নানা অনিয়ম নিয়ে তদন্ত করছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

মঙ্গলবার (১০ নভেম্বর) বিকালে আদাবরের বাইতুল আমান হাউজিং সোসাইটি এলাকায় অবস্থিত হাসপাতালটি পরিদর্শনে আসেন তেজগাঁও জোনের উপ-পুলিশ কমিশনার(ডিসি) হারুন অর রশিদ। এ সময় তার নির্দেশে পুলিশ হাসপাতালটির প্রধান ফটকে তালা ঝুলিয়ে দেয়।

এদিকে, এসপি হত্যাকাণ্ডের ঘটনার মামলায় মঙ্গলবার সন্ধ্যা সাড়ে ৫টার দিকে মাইন্ড এইড হাসপাতালের পরিচালক নিয়াজ মোর্শেদকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এর আগে এএসপি হত্যাকাণ্ডের ঘটনার মামলায় সোমবার রাত ও মঙ্গলবার ‘মাইন্ড এইড’ হাসপাতালের মার্কেটিং ম্যানেজার আরিফ মাহমুদ, কো-অর্ডিনেটর রেদোয়ান সাব্বির, কথিত ফার্মাসিস্ট তানভীর হাসান, ওয়ার্ডবয় জোবায়ের হোসেন, তানিফ মোল্লা, সজীব চৌধুরী, অসীম চন্দ্র পাল, লিটন আহাম্মদ, সাইফুল ইসলাম ও শেফ মো. মাসুদকে গ্রেফতার করা হয়।

পরে মঙ্গলবার গ্রেপ্তারকৃতদের আদালতে হাজির করা হয়। মামলার সুষ্ঠু তদন্তের জন্য প্রত্যেককে ১০ দিনের রিমান্ডে নিতে আবেদন করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা আদাবর থানার পরিদর্শক (অপারেশন) মোহাম্মদ ফারুক মোল্লা। শুনানি শেষে প্রত্যেকের সাতদিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন বিচারক।

সোমবার (৯ নভেম্বর) সকালে আদাবরের এই মানসিক রোগ নিরাময় কেন্দ্রে চিকিৎসা নিতে গিয়ে হাসপাতালে কর্মচারীদের পিটুনিতে এএসপি আনিসুল করিম নিহত হন বলে জানিয়েছে পুলিশ।

পুলিশ বলছে, হাসপাতালের কর্মচারীদের এলোপাতাড়ি পিটুনিতে আনিসুল মারা গেছেন। তার মৃত্যু অনাকাঙ্ক্ষিত নয়, এটি হত্যাকাণ্ড। আনিসুলের পরিবারও একই অভিযোগ করেছে। তারা জানিয়েছেন, ভর্তির পর পর হাসপাতালের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা তাকে পিটিয়ে হত্যা করেছে।

তবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দাবি, উচ্ছৃঙ্খল আচরণ করায় তারা পুলিশ কর্মকর্তাকে শান্ত করার চেষ্টা করেছেন। পরে তার মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় সোমবার রাতেই তার বাবা বাদী হয়ে আদাবর থানায় একটি মামলা করে।

হাসপাতালটি পরিদর্শন শেষে পুলিশ কর্মকর্তা হারুন অর রশিদ বলেন, হাসপাতালটি ঘুরলাম। ঘুরে যেটি মনে হলো এটি হাসপাতাল নয় এটি জেলখানা। বারান্দাকেও তারা এমনভাবে রুম বানিয়েছে যেখানে বাতাস ঢোকার কোনো সিস্টেম নাই। সেখানে সাধারণ মানুষ গেলেও অসুস্থ হয়ে যাওয়ার কথা আর সেখানে অসুস্থ রোগী গেলে তার কী অবস্থা! অথচ এখানে একজন রোগীর উপর ১০ থেকে ১২ জন উঠলে তিনি তো এমনিতেই মারা যাবে।

হারুন অর রশিদ বলেন, হাসপাতালে ডাক্তার নেই, মানসিক হাসপাতালের অনুমোদন নেই, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কোনো অনুমোদন নেই। এমন একটি বাড়ির মধ্যে যেটি জেলখানার মতো তারা বিভিন্ন জায়গা থেকে রোগী এনে এই কাজগুলো করে। আমি আবারো বলি আমাদের একজন সিনিয়র এএসপিকে নির্মমভাবে অত্যাচার নির্যাতন করে হত্যা করেছে। আমরা ১০ জনকে গ্রেপ্তার করেছি। তাদের ১০ দিন করে রিমান্ডে আনা হয়েছে। এছাড়া আরও একজনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। যিনি এখন রাজধানীর নিউরোসাইন্স হাসপাতালে ভর্তি আছেন। তার নাম ডাক্তার নিয়াজ। তার সঙ্গে আরও যারা যারা জড়িত তাদেরকে আইনের আওতায় আনা হবে।

পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, আমরা যাকে হারিয়েছি তিনি শুধু একজন সিনিয়র এএসপি না তিনি একজন মেধাবী কর্মকর্তা ছিলেন। তিনি ৩১তম বিসিএস পরীক্ষায় প্রথম স্থান অধিকার করেছিলেন। হয়তো তাকে আমরা ফেরত আনতে পারবো না, তার পরিবারকে আমরা ফেরত দিতে পারবো না, কিন্তু আমাদের নৈতিক দায়িত্ব হচ্ছে, বাংলাদেশ পুলিশের দায়িত্ব হচ্ছে তার হত্যাকারীদের বিচার নিশ্চিত করা। না হলে আমরা বিবেকের কাছে দায়ী থাকবো।

হারুন অর রশিদ বলেন, আমি সাংবাদিকদেরকে বলবো, আপনাদের কাছে কোনো তথ্য থাকলে আমাদের দিয়ে সহযোগিতা করবেন। যাতে আমরা যাবতীয় তথ্য নিয়ে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারি।

তিনি জানান, হাসপাতালে সাতজন পরিচালকের মধ্যে দুজনকে গ্রেপ্তার করে রিমান্ডে আনা হয়েছে। এছাড়া আরেকজন পরিচালক হাসপাতালে ভর্তি, তাকেও আমরা গ্রেপ্তার করবো। এছাড়াও আমরা সব কাগজপত্র পরীক্ষা নিরীক্ষা করছি।

তেজগাঁও জোনের উপ-পুলিশ কমিশনার(ডিসি) বলেন, এই যে ঢাকা শহরে অরাজকতা চলছে, বিশেষ করে মোহাম্মদপুর, আদাবর, শেরেবাংলা নগরে অনেকগুলো অবৈধ ক্লিনিক গড়ে উঠেছে, তাদের কোনো বৈধ কাগজ নেই। তারা শুধু সরকারি হাসপাতাল ও অ্যাম্বুলেন্স ব্যবহার করে জোরে রোগী ভাগিয়ে আনে। অনেক সময় অনেকে আমাদের কাছে অভিযোগ করে না। অভিযোগ করে না বলেই এগুলো গড়ে উঠেছে। আমরা এই হাসপাতালটিকে তালা মেরে দিয়েছি। এছাড়া যে অবৈধ ক্লিনিকে রোগী নিয়ে আসে ওই ক্লিনিক বন্ধ করবো এবং ওই দালালদেরও ধরবো। পাশাপাশি যে অ্যাম্বুলেন্সগুলো আছে, তারা বিভিন্ন জায়গা থেকে রোগী এনে সরকারি হাসপাতালে না নিয়ে এখানে এনে ভর্তি করে তাদেরকেও ধরবো।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড