নিজস্ব প্রতিবেদক
বিশ্বজুড়ে সংক্রমিত করোনা ভাইরাস (কোভিড-১৯) আক্রান্তদের পরীক্ষা করার কিট তৈরি করার কাঁচামাল এসেছে পৌঁছেছে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ল্যাবে।
রবিবার (০৫ এপ্রিল) সকালে চীন থেকে ইউএস বাংলার একটি বিমানে এই কাঁচামাল এসে পৌঁছায় ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে। আগামী ১১ এপ্রিল কিটগুলো পরীক্ষামূলকভাবে রাষ্ট্রীয় ও আন্তর্জাতিক কিছু সংস্থার হাতে তুলে দেবে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র।
রবিবার (৫ এপ্রিল) রাত ৯ টার দিকে এসব তথ্য জানান প্রতিষ্ঠানের অন্যতম ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী।
জাফরুল্লাহ চৌধুরী জানান, সোমবার (৬ এপ্রিল) করোনা আক্রান্ত অন্তত পাঁচজনের রক্তের নমুনা তার প্রতিষ্ঠানের ল্যাবে প্রয়োজন হবে। ইতোমধ্যে বিষয়টি নিয়ে সরকারের দায়িত্বশীল পর্যায়ে কথা বলেছেন তিনি। আশা করছেন, কাল গবেষকরা কাজ শুরু করবেন।
গত ১৭ মার্চ করোনা ভাইরাসে আক্রান্তদের পরীক্ষার জন্য প্রাতিষ্ঠানিক গবেষণায় কিট উৎপাদনের কথা জানায় গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র। পরে ১৯ মার্চ কিট উৎপাদনে সরকারি অনুমোদন পায় প্রতিষ্ঠানটি। করোনাভাইরাস শনাক্তকরণের ‘জিআর র্যাপিড ডট ব্লট ইমিউনোঅ্যাসি’ কিট তৈরির জন্য গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের গবেষকদের দলটি কাজ করছে ড. বিজন কুমার শীলের নেতৃত্বে। বাকি গবেষকেরা হলেন— ড. নিহাদ আদনান, ড. মোহাম্মদ রাঈদ জমিরউদ্দিন, ড. ফিরোজ আহমেদ ও সিঙ্গাপুরের একজন গবেষক।
এ বিষয়ে জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, কাঁচামাল ইউএস বাংলার একটি বিমানে এসেছে। চিনে নিযুক্ত আমাদের রাষ্ট্রদূত মাহবুব উজ জামান, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন ও এনবিআর চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিমের (সিনিয়র সচিব) প্রতি আমি কৃতজ্ঞ। চিন থেকে কাঁচামাল আনার প্রক্রিয়ায় তাদের সহযোগিতা ছিল ভীষণভাবে।
জাফরুল্লাহ চৌধুরী আশা প্রকাশ করেন, সবকিছু রেডি। আমাদের টিম ইতোমধ্যেই কাজে নেমে গেছে। আমরা দ্রুতগতিতে কাজ করবো। আগামী ১১ এপ্রিল ফরমালি নমুনাগুলো দিয়ে দেবো। এরপর ফাইনাল অ্যাপ্রুভাল পেলে চূড়ান্ত উদপাদনে যাবো।’
তিনি জানান, ১১ এপ্রিল সকাল ১১টায় ঢাকার ওষুধ অধিদফতর, আইইডিসিআর, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, আমেরিকান সিডিসি, বিএসএমএমইউ, আর্মি প্যাথলজি বিভাগে কিট পৌঁছে দেওয়া হবে তারা যেন টেস্ট করতে পারেন। এরপরই অনুমোদন পেলে চূড়ান্ত উৎপাদনে যাব।
গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র জানায়, গণস্বাস্থ্য-আরএনএ বায়োটেক লিমিটেডের গবেষক দল ফেব্রুয়ারি থেকে করোনা ভাইরাস পরীক্ষার কিটের ডিজাইন এবং উৎপাদন প্রক্রিয়া নিয়ে কাজ করছে। এ প্রযুক্তির ব্যাপারে পুরো গবেষক দলের সরাসরি কাজ করার অভিজ্ঞতা আছে। এর আগে ২০০৩ সালে র্যাপিড ডট ব্লট সার্স পিওসি কিট তৈরি দলের সদস্য ছিলেন ড. বিজন কুমার শীল। ওই কিটটি সিঙ্গাপুরে পেটেন্ট করা হয়েছিল। এবার করোনার কিট তৈরির জন্য গঠিত গবেষক দলকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন বিজন কুমার। এই কিট তৈরির জন্য বিএসএল টু প্লাস ল্যাব তৈরির কাজ প্রায় শেষের দিকে।
১৮ মার্চ গণস্বাস্থ্যের জনসংযোগ থেকে জানানো হয়েছিল, করোনা ভাইরাস ডায়াগনোসিস করার একটি মানসম্পন্ন পদ্ধতির নাম হলো, রিভার্স ট্রান্সক্রিপশন পলিমারেজ চেইন রিঅ্যাকশন (আরআরটি-পিসিআর)। থুথুর নমুনা থেকে এই রোগ নির্ণয় করা হয়। কয়েক ঘণ্টা থেকে দু’দিনের মধ্যে এর ফল জানা যায়। এই পরীক্ষার জন্য জন্য খুব দক্ষ জনবল এবং উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন ল্যাব প্রয়োজন। এক্ষেত্রে বাংলাদেশের সীমাবদ্ধতা আছে এবং এই পদ্ধতিতে এখানে রোগ শনাক্ত করা খুব কষ্টসাধ্য। এর পাশাপাশি এই রোগ শনাক্তের আরেকটি স্বীকৃত পদ্ধতির নাম অ্যান্টিবডি অ্যাসে (আইজিএ, আইজিজি ও আইজিএম ইমিউনোঅ্যাসে)। রক্তের সিরামের নমুনা, লালা বা থুতু থেকেও এ পরীক্ষা করা যায়। এই পদ্ধতিতে কয়েক মিনিটের মধ্যেই রোগ নির্ণয় করা সম্ভব।
এরপর গত ২৪ মার্চ বাংলা ট্রিবিউনের সঙ্গে আলাপকালে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের গবেষক ড. বিজন কুমার শীল বলেছেন, এই কিটের মাধ্যমে ১৫ মিনিটের মধ্যে করোনাভাইরাস শনাক্ত করা যাবে। প্রতিটি কিটের জন্য খরচ হবে ২০০ থেকে ২৫০ টাকা। এটা নতুন কোনও উদ্ভাবন নয়। ২০০৩ সালে যখন সারা বিশ্বে সার্স ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ে তখন সিঙ্গাপুরে আমি ও আমার এক সহকর্মী মিলে এই কিট তৈরি করি। এটি দিয়ে সে সময় সিঙ্গাপুরে সার্স ভাইরাস শনাক্ত করা হয় ১৫ মিনিটের মধ্যে। যদিও প্রথম দিকে সময় লাগতো ৯০ মিনিট। আমরা সেটাকে পরে ১৫ মিনিটে নামিয়ে আনি। ফলে প্রযুক্তিটির সফলতা নিয়ে কোনও প্রশ্ন নেই। এখন করোনা শনাক্তকরণের জন্য আমরা যেটা করবো তা হলো, “টেকনোলজি ট্রান্সফার”। এর বেশি কিছু নয়।
তিনি আরও জানিয়েছিলেন, এপ্রিলের ২০ তারিখের মধ্যেই গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র তৈরি কিট সরকারকে দিতে পারবে। আর এটার দাম হতে পারে ২০০-২৫০ টাকা।
চিন থেকে আসা কাঁচামালে কিট উৎপাদনের প্রক্রিয়া শুরু হলেও মার্চে ইংল্যান্ড থেকে আনা র-ম্যাটেরিয়ালও যুক্ত হবে কয়েকদিনের মধ্যে। বর্তমানে ইংল্যান্ড থেকে আনা কাঁচামাল জার্মানিতে রয়েছে বলে জানান জাফরুল্লাহ চৌধুরী। এই কাঁচামালটিও দু-তিন দিনের মধ্যে ঢাকায় এসে পৌঁছাবে বলে আশা প্রকাশ করেন জাফরুল্লাহ চৌধুরী।
এদিকে, আগামী ১১ এপ্রিল কিট উৎপাদনের বিষয়ে সংবাদ সম্মেলন করবে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র কর্তৃপক্ষ। এদিন হাসপাতালের ধানমন্ডি শাখার মিলনায়তনে সকাল ১১টায় সংবাদ সম্মেলন হবে। এতে মুক্তিযুদ্ধের গেরিলা কমান্ডার এটিএম হায়দার উপস্থিত থাকবেন বলে জানান প্রতিষ্ঠানের অন্যতম ট্রাস্টি জাফরুল্লাহ চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘সেদিনই আমরা সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানে কিট পাঠিয়ে দেব।
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড