• রোববার, ১৯ মে ২০২৪, ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১  |   ৩৩ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

করোনা প্রতিরোধে প্রস্তুত বাংলাদেশ

  নিজস্ব প্রতিবেদক

০৪ মার্চ ২০২০, ১৫:১০
করোনা
দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে করোনা, সর্তক অবস্থানে বাংলাদেশ (ছবি : সংগৃহীত)

করোনা ভাইরাসের বিস্তার কিছুতেই রোধ করা যাচ্ছে না। বরং আরও দ্রুতগতিতে সারা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়ছে ভাইরাসটি। সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ভয়াবহ হয়ে উঠা প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাস যেহেতু আমাদের আশপাশের দেশগুলোতে এসে গেছে, তাই বাংলাদেশেও যে এটা আসবে না, তা নিশ্চিত করে বলা যায় না। এ কারণে করোনা মোকাবিলায় জাতীয় রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর) এবং স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে।

আইইডিসিআর বলছে, করোনা ভাইরাস আক্রান্ত দেশ থেকে যারা আসছেন তাদের সবাইকেই গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। কারও প্রতি সন্দেহ হলেই তাকে আইসোলেশনে রাখা হচ্ছে। জরুরি প্রয়োজনে করোনা ভাইরাস আক্রান্তদের চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করতে বেসরকারি হাসপাতালগুলোয় আইসোলেশন ইউনিট চালুর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

দেশে এখন পর্যন্ত মোট ৯৬ জনের নমুনা পরীক্ষা করে করোনা ভাইরাসের উপস্থিতি পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছে আইইডিসিআর।

আইইডিসিআর পরিচালক অধ্যাপক মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা বলেন, বিশ্বব্যাপী করোনা পরিস্থিতি খারাপের দিকে যাচ্ছে। ভ্যাকসিন নিয়েও আপাতত কোনো আশাবাদ নেই। তাই প্রতিরোধের ওপরই জোর দিচ্ছে সরকার। তাই যেসব দেশে এ রোগ ধরা পড়েনি সেখান থেকে ফিরলেও তারা যেন হোম কোয়ারেন্টিনে থাকেন। খুব প্রয়োজন না হলে বাড়ির বাইরে বের না হন।

করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে আইইডিসিআরের পাঁচ নির্দেশনা

১. ঘন ঘন হাত পরিষ্কার করুন। উভয় হাত। কব্জি পর্যন্ত হাতের উভয় পাশ, হাতের নখসমূহ। সাবান ও পানি দিয়ে ভালো করে হাত পরিষ্কার করুন অন্তত ৪০ থেকে ৬০ সেকেন্ড সময় ধরে অথবা অ্যালকোহলযুক্ত স্যানিটাইজার দিয়ে হাত পরিষ্কার করুন (২০ থেকে ৩০ সেকেন্ড)। পানি দিয়ে হাত ভেজান। পুরো হাতে সাবান মেখে ভালো করো ধুয়ে নিন অথবা হাতের তালুতে স্যানিটাইজার দিয়ে ভালো করে হাত পরিষ্কার করুন।

২. হাঁচি-কাশি শিষ্টাচার মেনে চলুন। হাঁচি বা কাশি দেওয়ার সময় হাতের কনুইয়ের ভাঁজে বা টিস্যু দিয়ে মুখ ও নাক ঢাকুন। ব্যবহৃত টিস্যুটি দ্রুত বন্ধ ডাস্টবিনে ফেলুন এবং স্যানিটাইজার বা সাবান ও পানি দিয়ে ভালো করে হাত পরিষ্কার করুন।

৩. অপরিষ্কার হাত দিয়ে চোখ, নাক ও মুখ স্পর্শ করা থেকে বিরত থাকুন।

৪. আক্রান্ত ব্যাক্তি থেকে নিরাপদ দূরত্বে থাকুন। হাঁচি, কাশি বা জ্বরে আক্রান্ত ব্যক্তি থেকে কমপক্ষে ১ মিটার বা ৩ ফুট দূরত্ব বজায় রাখুন।

৫. পরিচিত বা অপরিচিত ব্যক্তির সঙ্গে হাত মেলানো বা আলিঙ্গন করা থেকে বিরত থাকুন।

বাংলাদেশের জন্য নতুন আতঙ্ক তিন দেশ

করোনা ইস্যুতে এতদিন বাংলাদেশের জন্য সবচেয়ে উদ্বেগের বিষয় ছিল চীন। এবার সেই তালিকায় যুক্ত হয়েছে ইতালি, ইরান ও দক্ষিণ কোরিয়ার নামও। আর এ কারণে এসব দেশ থেকে আসা যাত্রীদের ব্যাপারে বাড়তি সতর্ক থাকার কথা জানিয়েছে আইইডিসিআর।

কারণ ইউরোপ এবং ইউরোপ ছাড়াও বেশকিছু দেশে যাদের করোনায় আক্রান্ত হয়েছে দেখা যায় তারা ইতালি থেকে ভ্রমণ করে যাচ্ছেন। মধ্যপ্রাচ্যের যেসব দেশে এখন করোনা রোগী বাড়ছে, তারা ইরান থেকে গেছেন। বাংলাদেশের সঙ্গে দক্ষিণ কোরিয়ার সম্পর্ক ভালো। অনেক শিক্ষার্থী সেখানে পড়াশোনা করেন। আমাদের এখান থেকে অনেক কর্মী সেখানে কাজ করেন। এছাড়া আমাদের সঙ্গে ব্যবসায়িক সংযোগও রয়েছে। এসব কারণে এটা আমাদের একটা উদ্বেগের জায়গা।

এজন্য আক্রান্ত দেশগুলো থেকে আসা ব্যক্তিদের তথ্য জানাতে আবাসিক হোটেল মালিকদের নির্দেশনা দিয়েছে আইইডিসিআর।

করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে স্বাস্থ্য বিভাগের তিন স্তরের নিরাপত্তা কৌশল

প্রথমত, যেসব দেশে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ঘটেছে সেসব দেশ থেকে যেন করোনা ভাইরাস দেশে প্রবেশ করতে না পারে সেজন্য বিমানবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে থার্মাল ও হ্যান্ড স্ক্যানারের সাহায্যে প্রতিটি যাত্রীর হেলথ স্ক্রিনিং করা হচ্ছে। বিদেশ থেকে আগত যাত্রীদের কাছে হেলথ কার্ড ও হেলথ ডিক্লারেশন ফরমের মাধ্যমে পূর্ববর্তী দুই সপ্তাহে তিনি কোন দেশে সফর করেছেন, কোন ধরনের রোগে ভুগছেন এসব তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করা হচ্ছে। এছাড়া ওইসব দেশ থেকে আগত যাত্রীদের নিজের তথা পরিবারের স্বাস্থ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ১৫ দিন স্বেচ্ছায় অন্তরীণ থাকার পরামর্শ দিচ্ছেন। আইইডিসিআরের কর্মকর্তারা যাত্রীদের কাছে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করে খোঁজ রাখছেন। এছাড়া স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক প্রবাসে বসবাসরত বাংলাদেশিদের পারত পক্ষে এই মুহূর্তে দেশে না ফেরার আহ্বান জানিয়েছেন। একইভাবে দেশ থেকে আক্রান্ত দেশসমূহে পারত পক্ষে না যেতেও আহ্বান জানান তিনি।

দ্বিতীয়ত, সন্দেহভাজন কোনো রোগী পাওয়া গেলে তাকে পৃথক করে ১৫ দিন অন্তরীণ রেখে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত নন এমন নিশ্চয়তা পেলেই তাদের বাড়ি ফিরে যেতে দেওয়া হচ্ছে।

তৃতীয়ত, কোনো কারণে রোগটির বিস্তার ঘটলে আক্রান্ত রোগীদের সুচিকিৎসা নিশ্চিত করার জন্য রাজধানীর উত্তরার কুয়েত মৈত্রী হাসপাতাল, বিমানবন্দরের অদূরে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালসহ বিভিন্ন মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, জেলা-উপজেলা হাসপাতালে পৃথক আইসোলেশন ওয়ার্ড/ইউনিট প্রস্তুত রাখা হয়েছে। মুমূর্ষু রোগীদের জন্য আইসিইউ শয্যা প্রস্তুত রাখা হচ্ছে। স্বাস্থ্যমন্ত্রীর নেতৃত্বে ৩১ সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটিসহ জেলা-উপজেলায় দুটি কমিটি গঠন করে করোনা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে।

আরও পড়ুন : করোনা ভাইরাস : পরীক্ষার জন্য আইসোলেশনে ৫ জন

প্রসঙ্গত, বুধবার (৪ মার্চ) সকাল পর্যন্ত বিশ্বব্যাপী করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃতের সংখ্যা ৩ হাজার ২০২ জনে পৌঁছেছে। আক্রান্তের সংখ্যা ৯৩ হাজার ছাড়িয়েছে। বিশ্বের অন্তত ৭৩টি দেশে করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছে। ঝুঁকিতে আছে আরও অনেক দেশ। এ অবস্থায় বিশ্বজুড়ে সর্বোচ্চ সতর্কতা জারি করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)।

ওডি/টিএএফ

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড