নিজস্ব প্রতিবেদক
চীন থেকে বাংলাদেশে আসা যাত্রীদের বিমানবন্দরে স্ক্যানিং মেশিনের মাধ্যমে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হচ্ছে। এই পরীক্ষায় কারও করোনা ভাইরাসের জীবাণু পাওয়া যায়নি। শনিবার (২৫ জানুয়ারি) রাত পর্যন্ত চীন থেকে বাংলাদেশে এসেছেন ১ হাজার ৭৮৩ জন। সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর) জানিয়েছে, চীন থেকে আসা ব্যক্তিদের টেলিফোন সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে ভেরিফিকেশন (পরিচয় ও ঠিকানা যাচাই) করে দুই জনকে স্যাম্পল নিয়ে পরীক্ষা করা হয়েছে।
রবিবার (২৬ জানুয়ারি) দুপুর ১২টার দিকে রাজধানীর একটি হোটেলে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে আইইডিসিআরের পরিচালক অধ্যাপক মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা এ তথ্য জানান।
তিনি বলেন, সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়া করোনা ভাইরাস নিয়ে আমরা উদ্বিগ্ন নই। বরং আমরা এই ভাইরাস মোকাবেলা করতে প্রস্তুত।
সেব্রিনা ফ্লোরা বলেন, চীনের সঙ্গে আমাদের ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রয়েছে। সুতরাং চীন থেকে করোনা ভাইরাস বাংলাদেশে আসার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যায় না। বিষয়টি আরও আগে থেকে ভেবে আমরা প্রস্তুতি নিয়েছি, চলতি সপ্তাহ থেকে সেটা আরও ইনটেনসিভ করার চেষ্টা করছি। ইতোমধ্যে করোনা ভাইরাস নিয়ে আমরা একটা কন্ট্রোল রুম খুলেছি, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরামর্শক্রমে আমরা কাজ করছি। আমরা এই ভাইরাস মোকাবেলা করব।
আইইডিসিআর পরিচালক বলেন, আমরা সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছি চীন থেকে আসা প্রতিটি যাত্রীর টেলিফোন নাম্বার, পরিচয়সহ তালিকা নিয়ে পরবর্তীকালে তাদের প্রত্যেককেই আমাদের কল সেন্টারের মাধ্যমে আমরা নিয়মিত হিস্ট্রি জানব। কেননা, এই মুহূর্তে জ্বর না থাকলেও পরবর্তী ১৪ দিনের মধ্যে যদি কারও করোনা ভাইরাসে আক্রান্তের লক্ষণ পাওয়া যায়, তাহলে ওই ব্যক্তিকে আমরা পরীক্ষার আওতায় নিয়ে আসব।
তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত আমাদের কাছে ফোন এসেছে ৯ জনের। আমরা ৯ জনকেই টেলিফোন সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে ভেরিফিকেশন করে ২ জনকে স্যাম্পল নিয়ে পরীক্ষা করেছি। বাকিদের কারও করোনা ভাইরাসের আক্রান্তের লক্ষণ পাওয়া যায়নি।
সংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির পরিচালক অধ্যাপক ডা. সানিয়া তাহমিনা বলেন, শনিবার (২৫ জানুয়ারি) রাত পর্যন্ত ১৭৮৩ জন যাত্রী চীন থেকে বাংলাদেশে এসেছে। বিমানবন্দরে দুটি স্ক্যানার মেশিন দিয়ে তাদের প্রত্যেককেই স্ক্যানিং করা হয়েছে। স্ক্যানারগুলো যাত্রীর কাছে থেকে ধরলে যদি তার জ্বর-সর্দি থাকে, তাহলে দ্রুত শনাক্ত করতে পারে। আরও দুটি স্ক্যানার বসানোর জন্য আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি। যাত্রীদের স্ক্যানিং করার মাধ্যমে আমরা দেখব কেউ অসুস্থ আছে কি না।
আরও পড়ুন : তাবিথের প্রার্থিতা বাতিলে হাইকোর্টে রিট
এ সময় উপস্থিত ছিলেন—ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব প্রিভেন্টিভ অ্যান্ড সোশ্যাল মেডিসিনের (নিপসম) পরিচালক অধ্যাপক ডা. বায়োজিদ খুরশিদ, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের হার্ভার্ড মেডিকেল স্কুলের মেডিসিনের অধ্যাপক এডওয়ার্ড টি রায়ান, আইসিডিডিআরবির সংক্রামক রোগ বিভাগের জ্যেষ্ঠ পরিচালক অ্যালেন রস প্রমুখ।
এ দিকে, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, চীনে এখন পর্যন্ত কোনো প্রবাসী বাংলাদেশি করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়নি। চীনের উহানে শহরে থাকা প্রবাসী বাংলাদেশিদের প্রতিনিয়ত খোঁজ-খবর রাখা হচ্ছে। বাংলাদেশ দূতাবাস থেকে একটি হটলাইন খোলা হয়েছে। এই হটলাইন নাম্বার হচ্ছে- (৮৬)-১৭৮০১১১৬০০৫।
চীনে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে এখন পর্যন্ত ৫৬ জন মারা গেছেন। এছাড়াও অস্ট্রেলিয়া, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, নেপাল, দক্ষিণ কোরিয়া, জাপান, থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম, তাইওয়ান, যুক্তরাষ্ট্র ও ফ্রান্সে করোনা ভাইরাসে বেশ কয়েকজন আক্রান্ত হয়েছে বলে দেশগুলো নিশ্চিত করেছে। করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের শরীরে প্রাথমিক লক্ষণ হলো- শ্বাসকষ্ট, জ্বর, সর্দি, কাশির মতো সমস্যা দেখা দেয়।
রবিবার (২৬ জানুয়ারি) পর্যন্ত হালনাগাদ তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বের যেসব দেশে এখন পর্যন্ত করোনা ভাইরাস আক্রান্ত রোগী সন্দেহ করা হচ্ছে বা নিশ্চিত হওয়া গেছে সেসব দেশের নাম ও সংখ্যা হলো—চীন ১৩০০ জন, ভারত ১১ জন, ফ্রান্স ৩ জন, জাপান ৩ জন, তাইওয়ান ৩ জন, সিঙ্গাপুর ৩ জন, ইউএসএ ২ জন, ভিয়েতনাম ২ জন, থাইল্যান্ড ২ জন, দক্ষিণ কোরিয়া ২ জন, অস্ট্রেলিয়া ১ জন, মালয়েশিয়া ১ জন, নেপাল ১ জন।
ওডি/টিএএফ
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড