মনিরুল ইসলাম মনি
দেশের সব হাসপাতালে আইন অনুসারে পর্যাপ্ত পরিমাণ তামাকবিরোধী সাইনেজ স্থাপনের জন্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তরকে অনুরোধ জানিয়েছেন সংসদ সদস্য ডা. হাবিবে মিল্লাত। পাশাপাশি হাসপাতাল এরিয়ার ১০০ মিটারের মধ্যে তামাক বিক্রি বন্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ারও অনুরোধ জানান তিনি।
সোমবার (১৩ জানুয়ারি) জাতীয় প্রেসক্লাবে বাংলাদেশ ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন আয়োজিত সেমিনারে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ভারপ্রাপ্ত লাইন ডিরেক্টর ডা. রায়হান-ই-জান্নাতকে তিনি এই অনুরোধ জানান।
সেই সঙ্গে তামাক কর কাঠামো সংস্কার ও কর বাড়াতে ১০০ এমপিকে নিয়ে কাজ করার ঘোষণাও দেন তামাকের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানে থাকা এই এমপি।
রাজধানীর সব সরকারি হাসপাতালে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন বাস্তবায়ন পরিস্থিতি নিয়ে এক জরিপের ফল প্রকাশ করা হয়। জরিপে উঠে আসে ভয়ঙ্কর কিছু তথ্য।
জরিপে বলা হয়, দেশে বিদ্যমান তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইন অনুসারে সকল হাসপাতাল সম্পূর্ণ তামাকমুক্ত হওয়ার কথা। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, ঢাকার ৭১ ভাগ সরকারি হাসপাতালে ধূমপান হয়, এমন প্রমাণ হিসেবে সিগারেটের বাট, ধোঁয়ার গন্ধ ইত্যাদি পাওয়া গেছে। আর এক-তৃতীয়াংশ হাসপাতালে কাউকে না কাউকে সরাসরি ধূমপান করতে দেখা গেছে।
সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশনের অ্যান্টি-টোব্যাকো কর্মসূচির প্রোগ্রাম অফিসার ডা. আহমাদ খাইরুল আবরার।
তিনি জানান, ঢাকার ৫১টি হাসপাতালে জরিপটি পরিচালিত হয়। জরিপে ঢাকার প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ হাসপাতালে ধোঁয়াবিহীন তামাক ব্যবহারের প্রমাণ হিসেবে পানের পিক, চুনের দাগ দেখা গেছে। আর সরাসরি ধোঁয়াবিহীন তামাক ব্যবহার করতে দেখা গেছে প্রায় অর্ধেক হাসপাতালে (৪৫ শতাংশ)।
জরিপে দেখা যায়, ঢাকার ৮০ শতাংশ সরকারি হাসপাতালের ১০০ মিটারের মধ্যে তামাক পণ্য বিক্রি হয়। এমনকি ১৮ শতাংশ হাসপাতালের সীমানার মধ্যেই এমন দোকান রয়েছে।
অপরদিকে হাসপাতালগুলোতে আগত রোগী ও দর্শনার্থীদের তামাক ছাড়ার ব্যাপারে সহায়তা দিতে তামাক নিবৃত্তকরণ ক্লিনিক থাকা জরুরি। কিন্তু ৫১টি হাসপাতালের মধ্যে মাত্র একটিতে এই সুবিধা রয়েছে।
সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশনের সভাপতি জাতীয় অধ্যাপক ব্রিগেডিয়ার (অব.) আব্দুল মালিক।
সেমিনারে উপস্থিত অতিথিরা
সেমিনারে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন- স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের উপসচিব (বিশ্বস্বাস্থ্য) শামীমা ফেরদৌস, বাংলাদেশ জাতীয় যক্ষা নিরোধ সমিতির সভাপতি মোজাফফর হোসেন, বাংলাদেশ ক্যান্সার সোসাইটির সভাপতি অধ্যাপক ডা. মোল্লা ওবায়েদুল্লাহসহ বিভিন্ন তামাকরিবোধী সংগঠনের সদস্যবৃন্দ।
সেমিনারে উন্মুক্ত আলোচনায় বক্তারা বলেন, তামাকজাত দ্রব্যের মধ্যে সিগারেট, বিড়ির মতো ধোঁয়াযুক্ত পণ্যগুলো শুধু সেবনকারীর স্বাস্থ্যেরই মারাত্মক ক্ষতি করে না, বরং আশেপাশের মানুষেরও সমান ক্ষতি করে। পরোক্ষ ধূমপানের ফলে ফুসফুসের ক্যানসার, হৃদরোগ, শ্বাস-প্রশ্বাসের সমস্যা, স্ট্রোক ও প্রজনন সমস্যা দেখা দিতে পারে।
গ্লোবাল অ্যাডাল্ট টোব্যাকো সার্ভে (গ্যাটস) ২০১৭-এ দেখা যায়, হাসপাতালের মতো গুরুত্বপূর্ণ স্থানেও প্রায় ১৩ ভাগ মানুষ পরোক্ষ ধূমপানের শিকার হয়।
হাসপাতালগুলোকে তামাকমুক্ত করতে কর্তৃপক্ষের সচেতন হওয়া জরুরি উল্লেখ করে বক্তারা বলেন, প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বিপুল সংখ্যক রোগী এবং দর্শনার্থী হাসপাতালে আসেন। এছাড়া সেখানে চিকিৎসক, সেবিকা, টেকনিশিয়ানসহ অন্যান্য কর্মকর্তা-কর্মচারীরা রয়েছেন। স্বাস্থ্যকর্মীদের মধ্যে তামাক ব্যবহারের হার কমাতে এবং রোগী ও অন্যান্যদের পরোক্ষ ধূমপানের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে বাঁচাতে হাসপাতালগুলো তামাকমুক্ত রাখা জরুরি।
হাসপাতালগুলো শতভাগ তামাকমুক্ত হলে সেখানে কর্মরত চিকিৎসক, কর্মকর্তা, কর্মচারী এবং আগত রোগী, দর্শনার্থী ও অন্যান্যদের মধ্যে তামাক থেকে বিরত থাকার প্রবণতা বাড়বে বলে আশা প্রকাশ করেন বিশেষজ্ঞরা।
ওডি/এমআই
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড