নিজস্ব প্রতিবেদক
রাজধানীর কুর্মিটোলায় ধর্ষণের শিকার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ঘটনার বর্ণনা দিয়ে বলেছেন, ‘ধর্ষক বারবার আমার নাম-পরিচয় জিজ্ঞেস করছিল। আমি ভাবছিলাম, আমি ঢাবি ছাত্রী বললে আমাকে মেরে ফেলবে। আমার পরিচয় জানলে আমি বাঁচব না। ওই লোক খুব দাম্ভিক ছিল। আমি তাকে প্রতিরোধ করতে পারিনি।’
ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে ভর্তির আগে ও পরে কয়েকজন শিক্ষক ও বন্ধুকে এভাবে ঘটনার বর্ণনা দেন ওই শিক্ষার্থী। পরে তারা কথাগুলো গণমাধ্যমের সঙ্গে শেয়ার করেন। ধর্ষণের কোনো একসময় জ্ঞান হারিয়ে ফেললে জ্ঞান ফিরে আসা পর্যন্ত ধর্ষক ২ ঘণ্টা সেখানে উপস্থিত ছিল বলেও জানান ঢাবির ওই ছাত্রী।
ভিকটিমের দেওয়া ঘটনার বিবরণ অনুযায়ী, রবিবার (৫ জানুয়ারি) সন্ধ্যা ৭টায় ঢাবির বাস থেকে কুর্মিটোলা বাসস্ট্যান্ডে নামার পরে থেকে শেওড়ার যে বান্ধবীর বাসায় রওনা দিয়েছিলেন তিনি, সেই বান্ধবীর বাসায় পৌঁছানো পর্যন্ত সময় লাগে মোট সাড়ে ৩ ঘণ্টা। এই সময়ের মধ্যে ধর্ষণের ঘটনা ঘটে। ঠিক কতটা সময় তিনি জ্ঞান হারিয়েছিলেন তা জানাতে পারেননি। তবে জ্ঞান ফিরে আসার পর বুঝতে পারেন, দুই ঘণ্টা পার হয়েছে এবং ধর্ষক তখনো ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিল।
সহমর্মিতা জানাতে ধর্ষণের শিকার ছাত্রীর সঙ্গে রাতে ঢামেক হাসপাতালে ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষক অধ্যাপক সাদেকা হালিম ও সামিনা লুৎফা। ভিকটিম শিক্ষার্থীর সঙ্গে তারা কথা বলেছেন, যার অনেক কিছু তারা সংবাদ মাধ্যমকেও জানাতে রাজি হননি। ঘটনার বিবরণে ওই শিক্ষার্থী কী বলেছেন জানতে চাইলে সাদেকা হালিম বলেন, ‘মেয়েটির সামনে পরীক্ষা। পরীক্ষাকে সামনে রেখে স্টাডি সার্কেলে পড়ালেখা করে শিক্ষার্থীরা। সে কারণেই বান্ধবীর বাসার উদ্দেশে রওনা দিয়েছিল। তার সঙ্গে বাড়তি পোশাক ছিল, পড়ালেখার বই-নোটস আর প্রয়োজনীয় কিছু জিনিস।’ শিক্ষার্থীর বিবরণীতে ধর্ষক একজনই ছিল বলে জানান তিনি।
ধর্ষক দেখতে সিরিয়াল কিলারের মতো বলে জানিয়েছেন ভিকটিম। ঢাবির এই অধ্যাপক বলেন, ‘দেখে মনে হচ্ছিল সিরিয়াল কিলার। ঠান্ডা মাথায় যে ধর্ষণের মতো অপরাধ ঘটিয়েছে একাধিকবার। মেয়েটিকে জোর করে পোশাকও পরিবর্তন করিয়েছে, আবার ধর্ষণ করেছে। ভিকটিম জানিয়েছে, ধর্ষক তার পরিচয় জানতে চেয়েছে বারবার। মেয়েটি আন্দাজ করছিল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচয় পেলে তাকে মেরে ফেলা হতে পারে। তাই সে মুখ খোলেনি।’
ভিকটিম ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে আসার বিষয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান ডা. সোহেল মাহমুদ জানান, ধর্ষণের কোনো একসময় মেয়েটি জ্ঞান হারায়। এরপর যখন জ্ঞান ফেরে তখন সে ধর্ষককে দেখতে পায়। ধর্ষক পেছন ফিরে ভিকটিমের ব্যাগ থেকে কিছু বের করার চেষ্টা করছিল। এই সুযোগে সে ওই স্থান থেকে পালিয়ে আসে।
কীভাবে ঘটনাস্থল ত্যাগ করে এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সামিনা লুৎফা বলেন, ‘কিছু দূর হেঁটে সে (ভুক্তভোগী ছাত্রী) চেষ্টা করেছে সিএনজি বা গাড়ি থামাতে। না পেরে সড়ক পার হয়ে বন্ধুর বাসায় পৌঁছাতে সক্ষম হয়, তখন রাত ১০টা ৩০ মিনিট।’
‘ঘটনাস্থল এত অনিরাপদ হবে- এটা না জানা থাকলে আন্দাজও করার কথা না’ উল্লেখ করে সামিনা লুৎফা বলেন, ‘মেয়েটির বয়স খুবই কম। শরীরে অসংখ্য আঘাতের চিহ্ন। প্রচণ্ড শক্তি প্রয়োগ করা হয়েছে, হাতে নানা জায়গায় কালসিটে। মেয়েটি বেঁচে আছে অনেক ব্যথা নিয়ে। অসম্ভব মানসিক শক্তি ছিল বলে প্রায় তিন ঘণ্টা পরে সে ওখান থেকে পালিয়ে আসতে পেরেছে।’
আরও পড়ুন : ঝোপের মধ্যে ঢাবি ছাত্রীর বই-ঘড়ি-ইনহেলার
ঢাবির এই অধ্যাপক আরও বলেন, ‘অবয়ব বিষয়ে পুলিশকে বিস্তারিত জানিয়েছে সেই শিক্ষার্থী। তবে লোকটি দাম্ভিক ছিল বলেও জানিয়েছে। তাকে পেছন থেকে ধরে নিয়ে গেছে।’
ওডি/এএস
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড