অধিকার ডেস্ক
রাজশাহী পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের অধ্যক্ষকে টেনে হিঁচড়ে পানিতে ফেলের অপরাধে চার শিক্ষার্থীর ছাত্রত্ব বাতিল করা হচ্ছে। তদন্ত কমিটির সুপারিশে ৪ শিক্ষার্থীকে স্থায়ী বহিষ্কারসহ আরও ১৬ জনের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেবে কলেজ প্রশাসন। দোষীরা সবাই রাজশাহী পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মী।
সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, চার শিক্ষার্থীকে স্থায়ী বহিষ্কার, পাঁচ শিক্ষার্থীর মূল সনদ আগামী তিন বছর স্থগিত রাখা এবং সাত শিক্ষার্থীকে টিসি (ট্রান্সফার সার্টিফিকেট) দিয়ে অন্য কোনো ইনস্টিটিউটে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
শনিবার (১৪ ডিসেম্বর) বিকালে রাজশাহী পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের অধ্যক্ষ প্রকৌশলী ফরিদ উদ্দিন সাংবাদিকদের এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করতে রাজশাহী পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে রাজনৈতিক কার্যক্রম সম্পূর্ণভাবে বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এছাড়া ছাত্রলীগের টর্চার সেল হিসেবে পরিচিত ইনস্টিটিউটের ১১১৯ নম্বর কক্ষটি ভেঙে ফেলে সেখানে কমনরুম বানানোরও সুপারিশ করা হয়। সিদ্ধান্তগুলো দ্রুত কার্যকরের জন্য এরই মধ্যে বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষাবোর্ডে চিঠি দিয়েছে রাজশাহী পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট।
ছাত্রত্ব বাতিলের সুপারিশ করা শিক্ষার্থীরা হলেন- অধ্যক্ষকে পুকুরে ফেলে দেওয়ার মূল হোতা ছাত্রলীগের বহিষ্কৃত যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ২০১৫-১৬ সেশনের কম্পিউটার বিভাগের ৮ম পর্বের শিক্ষার্থী কামাল হোসেন ওরফে সৌরভ, একই সেশনের ইলেকট্রো মেডিক্যাল বিভাগের ৭ম পর্বের শিক্ষার্থী রায়হানুল ইসলাম, ২০১৭-২০১৮ সেশনের ইলেকট্রনিক্স বিভাগের ৫ম পর্বের ছাত্র মুরাদ হোসেন ও ২০১৮-২০১৯ সেশনের মেকানিক্যাল বিভাগের ৩য় পর্বের শিক্ষার্থী সাজিব হোসেন।
এ ঘটনায় সরাসরি জড়িতের প্রমাণ মেলায় প্রতিষ্ঠান থেকে পাস করা পাঁচ শিক্ষার্থীর মূল সনদসহ অন্য কাগজপত্র আগামী তিন বছরের জন্য স্থগিত করার সুপারিশ করা হয়েছে। এরা হলেন- ইনস্টিটিউটের ২০১৫-২০১৬ সেশনের ইলেকট্রিক্যাল বিভাগের ছাত্র কৌশিক জামান ওরফে বনি, ইলেকট্রো-মেডিক্যাল বিভাগের সালমান রহমান ওরফে টনি, পাওয়ার বিভাগের সাব্বির অহম্মেদ, মেকাট্রনিক্স বিভাগের হাসিবুল হাসান ও কম্পিউটার বিভাগের মারুফ হোসেন।
এছাড়া তদন্ত প্রতিবেদনে ঘটনার সঙ্গে পরোক্ষভাবে জড়িত থাকার দায়ে সাত শিক্ষার্থীকে বদলির সুপারিশ করা হয়েছে। এরা হলেন- ২০১৫-২০১৬ সেশনের পাওয়ার বিভাগের ৬ষ্ঠ পর্বের (অকৃতকার্য) নাঈম ইসলাম, ২০১৬-২০১৭ সেশনের ইলেক্ট্রনিক্স বিভাগের ৭ম পর্বের প্লাবন কুমার কুন্ডু, মেকাট্রনিক্স ৭ম পর্বের মেহেদী মাহমুদ, মেকানিক্যাল বিভাগের ৭ম পর্বের মেহেদি হাসান, ২০১৭-১৮ সেশনের ইলেকট্রনিক্স বিভাগের ৫ম পর্বের ওমর আজিজ, ২০১৮-২০১৯ সেশনের ৩য় পর্বের কম্পিউটার বিভাগের মাহবুবুর রহমান ও পাওয়ার ৩য় পর্বের মাসুদ রানা মীম।
অধ্যক্ষ ফরিদ উদ্দিন বলেন, ‘এ ঘটনায় ইনস্টিটিউটের পক্ষ থেকে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছিল। গত ৯ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত অ্যাকাডেমিক কাম প্রশাসনিক পরিষদের সভায় তদন্ত কমিটির সদস্য সচিব মুস্তাফিজুর রহমান তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন। এই কমিটির দাখিল করা প্রতিবেদনের ওপর ভিত্তি করে ওই সভায় দোষী-সাব্যস্ত হওয়া শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণসহ বিভিন্ন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।’
আরও পড়ুন : রাত পোহালেই প্রকাশ হবে রাজাকারদের তালিকা
এ দিকে, রাজশাহী পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট অধ্যক্ষের দায়ের করা মামলাটি প্রথমে চন্দ্রিমা থানা পুলিশ তদন্ত করছিল। পরে ঘটনার গুরুত্ব বিবেচনায় মামলাটি মহানগর গোয়েন্দা শাখা (ডিবি) পুলিশের কাছে স্থানান্তর করা হয়। বর্তমানে ডিবি পুলিশ মামলাটির তদন্ত করছে।
জানতে চাইলে রাজশাহী মহানগর পুলিশের মুখপাত্র অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (সদর) গোলাম রুহুল কুদ্দুস জানান, ঘটনার মূল হোতা সৌরভসহ এজাহারভুক্ত পাঁচ আসামি এরই মধ্যে গ্রেফতার হয়েছে। নাম উল্লেখ না থাকা আরও ১৩ অজ্ঞাত আসামিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। মামলাটির তদন্ত চলছে। এছাড়া অন্য আসামিদেরও গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।
ওডি/জেআই
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড