অধিকার ডেস্ক
দেশের বেসরকারি টেলিভিশনগুলোর বার্তা বিভাগে ক্রমেই প্রকট হচ্ছে নানা সংকট। আর এই সংকটের কারণেই গত ছয় মাসে দেশের বিভিন্ন টেলিভিশনের অন্তত ৪৫০ জন চাকরি হারিয়েছেন বলে জানিয়েছে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম ডয়চে ভেলে। অভিযোগ কোনো নিয়ম নীতি না মেনেই তাদের ছাঁটাই করা হচ্ছে।
সম্প্রতি গণমাধ্যমকর্মী ছাঁটাইয়ের প্রতিবাদে আন্দোলন শুরু করেছেন এসএ টিভির সংবাদকর্মীসহ ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন (ডিইউজে)। ইতোমধ্যে তারা মূল ফটকে তালাও লাগিয়ে দিয়েছেন। এই আন্দোলনের সাথে একাত্মতা প্রকাশ করেছেন টেলিভিশন সাংবাদিকদের সংগঠন ব্রডকাস্ট জার্নালিস্ট সেন্টারও (বিজেসি)।
সংকট প্রকট হওয়া এসএ টিভির আন্দোলনকারীদের পক্ষে সাংবাদিক মো. মোহসিন কবীর বলেন, ‘গত সাত বছরে আমাদের ৫০০ কর্মী থেকে ছাঁটাই করে ২৫০ জনে নামিয়ে আনা হয়। এরপর সর্বশেষ আরও ১৮ জনকে ছাঁটাই করায় কর্মীরা বিক্ষুব্ধ হয়ে শনিবার (৭ ডিসেম্বর) থেকে আন্দোলন শুরু করেন। তারা গুলশানের টেলিভিশন কার্যালয়ের একটি গেটে তালা লাগিয়ে দেন। দাবি না মানা পর্যন্ত আন্দোলন চলবে।’
তিনি বলেন, ‘শুধু ছাঁটাই নয়, গত চার মাস ধরে আমাদের বেতন নেই। সাত বছর আগে টেলিভিশনটি প্রতিষ্ঠার পর থেকে কোনো ইনক্রিমেন্ট বা পদোন্নতিও দেওয়া হয়নি। আর সম্প্রতি টেলিভিশন কর্তৃপক্ষ প্রায় সবাইকে ছাঁটাই করে কম বেতনে নতুন লোক নেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিল।’
গণমাধ্যমকর্মীদের সকল সংকটে পাশে থাকা ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি আবু জাফর সূর্য বলেন, ‘আমাদের সাথে এর আগে এসএ টিভির সাথে বৈঠক হয়েছে। তারা ১৩ দফা দাবি বাস্তবায়নে একটি ত্রি-পক্ষীয় চুক্তি করেছেন। কিন্তু তা বাস্তবায়ন না করে আবার ছাঁটাই শুরু করেছে। কিন্তু আমরা ১৩ দফা আদায় করে ছাড়ব। কাউকে অন্যায়ভাবে চাকরিচ্যুত করা যাবে না।’
এসএ টিভির ঘটনা নিয়ে প্রতিষ্ঠানটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা খ ম হারুন বলেন, ‘আমি ঢাকার বাইরে আছি। তবে ঘটনা শুনেছি। কিন্তু পুরো ঘটনা সম্পর্কে ঢাকায় ফিরে আসা না পর্যন্ত কিছু বলা সম্ভব নয়।’
এসএ টিভির অফিসের সামনে অবস্থান কর্মসূচিতে ডিইউজে সভাপতি আবু জাফর সূর্য
আবু জাফর সূর্য আরও বলেন, ‘ইলেকট্রনিক মিডিয়ার জন্য কোনো সরকারি নীতিমালা নেই। নিয়োগ এবং চাকরিচ্যুতিতে কোনো নিয়ম মানা হয় না। তাই সেখানে অস্থিরতা বিরাজ করছে। আমাদের কাছে যে তথ্য রয়েছে তাতে গত ৬-৭ মাসে এই সেক্টরের চারশ থেকে সাড়ে চারশ কর্মী চাকরি হারিয়েছেন। এই চাকরি হারানোদের মধ্যে সাংবাদিক ছাড়াও বিভিন্ন বিভাগের কর্মী রয়েছেন। আরও অনেক কর্মী চাকরি হারানোর আতঙ্কে আছেন।’
ব্রডকাস্ট জার্নালিস্ট সেন্টার (বিজেসি) বাংলাদেশের বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলগুলোর ওপর সম্প্রতি একটি জরিপ পরিচালনা করেছে। তাতে দেখা গেছে ১৮টি চ্যানেলে নিয়মিত বেতনবৃদ্ধি হয় না। ১০টি চ্যানেলে চাকরিচ্যুতির ঘটনা ঘটেছে। তিন থেকে ছয় মাস বেতন হয় না এরকম চ্যানেলের সংখ্যা সাত থেকে ১০টি।
বিজেসির সদস্য সচিব এবং একাত্তর টিভির হেড অব নিউজ শাকিল আহমেদ বলেন, ‘গত এক বছরে আমরা যদি দেখি তাহলে একটি চ্যানেলের পুরো বার্তা বিভাগই বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। ফলে ওই একটি চ্যানেল থেকেই কমপক্ষে ১২০ জন কর্মী ছাঁটাই করা হয়েছে। আরও নয়টি চ্যানেল থেকে জনবল ছাঁটাই করা হয়েছে। ফলে ছাঁটাইয়ের সংখ্যাটি কম নয়। আর সব সময়ই ছাঁটাই আতঙ্ক চলছে। সংখ্যার চেয়ে যেটা আরও বেশি আতঙ্কের তা হলো যারা অভিজ্ঞ এবং এ কারণে যাদের বেতন বেশি তারা এই ছাঁটাইয়ের কবলে পড়ছেন আগে। অর্থাৎ যারা ভালো কাজ করেন তারা সর্বোচ্চ জায়গায় যেতে পারবেন না। আমরা বলছি অন্যায়ভাবে কাউকে চাকরিচ্যুত করা যাবে না। কারও বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ থাকলে সেটা ভিন্ন বিষয়।’
এই সংকটের কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘অনেকগুলো টেলিভিশনের লাইসেন্স দেওয়া হলেও শিল্প সুরক্ষার বিষয়টি একেবারেই দেখা হয়নি। টেলিভিশনগুলো কীভাবে আয় করবে তার সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য নাই। এখানে যারা কাজ করবেন তাদের বেতন কাঠামো, মানোন্নয়ন কীভাবে হবে কোনো কিছু ঠিক না করেই টেলিভিশন শুরু করা হয়েছে। এখানে আকাশ উন্মুক্ত। বিদেশি টেলিভিশন অবাধে দেখা যায়। বিজ্ঞাপন বিদেশে চলে যায়। সরকার সম্প্রতি কিছু উদ্যোগ নিয়েছে। বিদেশি চ্যানেলে বিজ্ঞাপন বন্ধে কঠোর হয়েছে। গণমাধ্যমকর্মী আইন করতে চাইছে। পে- চ্যানেল করারও উদ্যোগ নিয়েছে। যদি এভাবে শিল্প সুরক্ষা নিশ্চিত হয় তাহলে বাংলাদেশে ৩০টি কেন, ৫০টি টেলিভিশনও চলতে পারবে বলে আমি মনে করি।’
বাংলাদেশে এখন ৩০টি বেসরকারি টেলিভিশন চালু আছে। তথ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাব মতে লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে ৪৪টি চ্যানেলকে। আরও কয়েকটি চ্যানেল লাইসেন্স পাওয়ার অপেক্ষায় আছে।
ডিইউজের সভাপতি জানান, ‘শুধু বেসরকারি টেলিভিশন নয়, অনলাইন নিউজ পোর্টালের কোনো নীতিমালা নেই। সেখানে নানা রকম সমস্যা তৈরি হচ্ছে। বেশ কিছু সংবাদপত্রেও ছাঁটাই হয়েছে। এর বিরুদ্ধে আমরা আন্দোলনে আছি।’
ওডি/এমআই
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড