• শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩৭ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

প্রেমে ব্যর্থ হয়ে আত্মহত্যা করেন রুম্পা!

জট খুলছে স্টামফোর্ড ছাত্রী রুম্পার মৃত্যুরহস্যের

  মনিরুল ইসলাম মনি

০৮ ডিসেম্বর ২০১৯, ১৪:১২
নিহত রুম্পা ও প্রেমিক সৈকত
নিহত রুম্পা ও প্রেমিক সৈকত (ছবি : দৈনিক অধিকার)

রাজধানীর সিদ্ধেশ্বরীতে স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী রুবাইয়াত শারমিন রুম্পার (২০) মৃত্যুরহস্যের জট খুলতে শুরু করেছে। ঘটনাস্থল ও এর আশপাশ থেকে উদ্ধার হওয়া আলামত ও মৃত্যুর আগে বান্ধবীদের সঙ্গে রুম্পার কথোপকথনের সূত্র ধরে তদন্ত সংশ্লিষ্টরা ধারণা করছেন ঘটনাটি আত্মহত্যা।

এ ঘটনায় রুম্পার হত্যার ঘটনায় তার কথিত প্রেমিক আবদুর রহমান সৈকতকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের পর গ্রেফতার দেখিয়ে রিমান্ড আবেদনের জন্য আজ রবিবার (৮ ডিসেম্বর) আদালতে পাঠানো হবে বলে জানিয়েছেন ডিবি।

এ বিষয়ে ডিবির যুগ্ম কমিশনার মাহাবুবুল আলম বলেন, ‘ওই ভবনটিতে রুম্পা তার বয়ফ্রেন্ডের সঙ্গে প্রবেশ করেছিলেন। যেটা সিসি ক্যামেরার ফুটেজে নিশ্চিত হওয়া গেছে। এ কারণে সৈকত নামের ওই যুবককে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, বাদানুবাদের এক পর্যায়ে তিনি দৌড়ে ছাদে গিয়ে লাফিয়ে পড়তে পারেন। তবে বিষয়টি এখনো পরিষ্কার নয়।’

মামলার তদন্ত সূত্রে জানা গেছে, কয়েক মাস আগেই সৈকতের সঙ্গে রুম্পার মান-অভিমান শুরু হয়। ওই ঘটনার পর থেকেই সৈকত রুম্পাকে এড়িয়ে চলছিলেন। যা রুম্পা ভালোভাবে নিতে পারেননি। ঘটনার দিন সৈকতই তার সাথে যোগাযোগ করেন। এরপর তারা সিদ্ধেশ্বরীর ৬৪/৪ নম্বর বাসায় দেখা করার সিদ্ধান্ত নেন। ওই ভবনের নিচ তলায় ও তৃতীয় তলায় ব্যাচেলর কিছু ছাত্র বসবাস করেন। সেখানে স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু ছাত্রও রয়েছেন। সেখানকার তিন তলার মেসে রুম্পা ও সৈকত দীর্ঘসময় কথা বলেন।

তদন্ত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ‘রুম্পার মতো একাধিক মেয়ের সঙ্গেই দৈহিক সম্পর্ক ছিল সৈকতের। রুম্পার সঙ্গে সৈকত সম্পর্ক রাখতে না চাওয়ায় মানসিকভাবে ভালো ছিল না সে। সম্পর্ক টিকিয়ে রাখার জন্য কলেজের ঘনিষ্ঠ বান্ধবী সুলতানার শরণাপন্ন হন রুম্পা। সুলতানা ঘটনাস্থলের ঠিক পাশের ভবনের ৫ তলায় থাকেন। মাঝে মাঝে সেখানে রাতে রুম্পাও থাকতেন। সৈকতের সম্পর্ক না রাখার বিষয়টি রুম্পা সুলতানাকে জানালে ঘটনার দিন দুপুরে স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে সৈকত যাওয়ার পর সুলতানা তাকে সম্পর্কটি রাখার কথা বলেন। কিন্তু সৈকত আবারও সম্পর্ক রাখা সম্ভব নয় বলে জানিয়ে দেয়। এতে আরও বিষণ্ণ হয়ে পড়েন রুম্পা।’

সূত্র জানায়, এরপরই বিশ্ববিদ্যালয়ের সহপাঠী আবিদাকে রুম্পা ফেসবুকের ম্যাসেঞ্জারে নক করে বলেন, ‘দোস্ত আমাকে মাফ করে দিস, ভুল হলে। আমার জীবনের সবকিছুই শেষ।’

ঘটনাস্থলের দক্ষিণ পাশের একটি ছাদ থেকে তদন্তকারী সংস্থা সিআইডি চুল, সিগারেটের উচ্ছিষ্ট অংশ, স্যান্ডেলের ছাপ এবং ব্যবহৃত কনডমসহ কিছু আলামত সংগ্রহ করেছে।

আলামত ও বান্ধবীদের সঙ্গে কথোপকথনের সূত্র ধরে তদন্তকারীরা ধারণা করেন, রুম্পা ‘আত্মহত্যা’ করেছেন। তবে সৈকতসহ রুম্পার বান্ধবীদের জিজ্ঞাসাবাদ শেষ হলেই উঠে আসবে প্রকৃত তথ্য। আরও বিস্তারিত জানার জন্য প্রযুক্তির সাহায্য নিচ্ছেন তদন্তকারী সদস্যরা।

তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্র আরও জানায়, রুম্পার অনেক স্বপ্ন ছিল সৈকতকে নিয়ে। সেজন্য ঘটনার দিন সৈকতের সঙ্গে দেখা করার জন্য ভালো জামাও পরেন রুম্পা। যে জামা পরেই সেদিন ক্যাম্পাসে গিয়েছিলেন রুম্পা। কিন্তু সৈকত রুম্পার যাওয়ার বিষয়টি না জানায় ক্যাম্পাসে রুম্পাকে দেখে অবাকই হন সৈকত। রুম্পা ও সৈকতের মধ্যস্থতাকারী সুলতানাকে সব কথাই বলতেন তিনি। সম্পর্ক না রাখার কথা জানালে গত তিন-চার মাস আগে আয়েশা শপিং কমপ্লেক্সের ছাদেও উঠেছিলেন রুম্পা। তখন সবাই মিলে জোর করে তাকে নামিয়ে আনে। আসলে সৈকতের এড়িয়ে যাওয়ার বিষয়টি মেনে নিতে পারেনি রুম্পা। যে কারণে হয়তো ওই সময় রুম্পা আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। সৈকত ও রুম্পার কথোপকথনের ৯৯ ভাগ কথাবার্তাই হতো হোয়াটস অ্যাপ ও ফেসবুক ম্যাসেঞ্জারে।

সূত্রটি জানায়, ঘটনার পরপরই সুলতানা তার ফেসবুক আইডি ডিঅ্যাকটিভ করে রাখলেও পরে আবার চালু করেন। এছাড়া এ ঘটনায় রুম্পার আরেক বান্ধবী আদিবাকেও জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে।

রুম্পার মৃত্যুর ঘটনায় তদন্তে সহায়তাকারী সংস্থা হিসেবে কাজ করা পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) সিরিয়াস অ্যান্ড হোমিসাইডাল স্কোয়াডের অতিরিক্ত বিশেষ পুলিশ সুপার মো. রাজিব ফারহান বলেন, ‘রুম্পার মৃত্যুর বিষয়টি মূলত থানা ও গোয়েন্দা পুলিশ তদন্ত করলেও সিআইডি তাদের সহায়তা করছে। রুম্পার ব্যবহৃত মোবাইল ফোনসহ কিছু আলামত সিআইডিতে ফরেনসিক পরীক্ষা করা হচ্ছে।’

এ দিকে শনিবার (৭ ডিসেম্বর) রাতে রাজধানীর খিলগাঁও এলাকা থেকে সন্দেহভাজন হিসেবে রুম্পার সাবেক প্রেমিক আবদুর রহমান সৈকতকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করেছে গোয়েন্দা পুলিশ। সৈকত স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বিবিএর সাবেক শিক্ষার্থী। পরে সে চলে যায় আদমজী ক্যান্টনমেন্ট কলেজে। সৈকতকে গ্রেফতার দেখিয়ে আজ রবিবার (৮ ডিসেম্বর) রিমান্ড আবেদনের জন্য আজ আদালতে পাঠানো হবে। আদালতে পাঠানোর কথা রয়েছে পুলিশের। পুলিশ বলছে, হত্যা মামলাটি আত্মহত্যা মামলা হয়ে সৈকতকে প্ররোচনায় অভিযুক্ত করা হতে পারে।

রবিবার (৮ ডিসেম্বর) সৈকতকে গ্রেফতারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।

ডিবি দক্ষিণ বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) রাজীব আল মাসুদ জানান, ‘সন্দেহভাজন হিসেবে সৈকতকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। রুম্পা হত্যা মামলায় তাকে গ্রেফতার দেখিয়ে রিমান্ড আবেদন করে আদালতে পাঠানো হবে।’

উল্লেখ্য, বুধবার (৪ ডিসেম্বর) রাত পৌনে ১১টার দিকে সিদ্ধেশ্বরীর ৬৪/৪ নম্বর বাসার নিচে রুম্পার লাশ পড়ে থাকার খবর পেয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা লাশটি উদ্ধার করেন। এ সময় তারা কিছু আলামতও সংগ্রহ করেন।

ধারণা করা হচ্ছে, পুলিশের সুরতহাল রিপোর্ট অনুযায়ী রুম্পার মেরুদণ্ড, বাম হাতের কনুই ও ডান পায়ের গোড়ালি ভাঙা। মাথা, নাক, মুখ জখম এবং রক্তাক্ত অবস্থায় ছিল। বুকের ডান দিকে ক্ষত চিহ্ন রয়েছে।

নিহত রুম্পার বাবা হবিগঞ্জের একটি পুলিশ ফাঁড়ির পরিদর্শক। বাবা হবিগঞ্জে থাকলেও মা ও পরিবারের অন্য সদস্যদের সঙ্গে ঢাকার শান্তিবাগে থাকতেন রুম্পা। দুই ভাইবোনের মধ্যে রুম্পা ছিলেন বড়। তাদের গ্রামের বাড়ি ময়মনসিংহে।

রুম্পার মৃত্যুর ঘটনার পর থেকেই বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেছেন স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটির সকল স্তরের শিক্ষার্থীরা। শনিবার (৭ ডিসেম্বর) রাজধানীর ধানমন্ডি ও সিদ্ধেশ্বরী ক্যাম্পাসে আয়োজিত মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিলে অংশ নেন প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষার্থীরা।

ওডি/এমআই

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড