• বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১  |   ২৮ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

রুম্পার মৃত্যু : হত্যা সন্দেহে তদন্তে পুলিশ

  বিশেষ প্রতিবেদক

০৭ ডিসেম্বর ২০১৯, ০৮:৪৭
নিহত রুবাইয়াত শারমিন রুম্পা (ছবি : সংগৃহীত)
নিহত রুবাইয়াত শারমিন রুম্পা (ছবি : সংগৃহীত)

স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের ছাত্রী রুবাইয়াত শারমিন রুম্পা পরিবারের সঙ্গে থাকতেন মালিবাগের শান্তিবাগে। কিন্তু তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে বাসা থেকে আধা কিলোমিটার দূরে সিদ্ধেশ্বরী সার্কুলার রোড থেকে। কে বা কারা কীভাবে তাকে সিদ্ধেশ্বরীতে নিয়ে গিয়েছিলেন; নাকি তিনি নিজেই গিয়েছিলেন—এসব প্রশ্ন সামনে রেখে রুম্পার মৃত্যুর ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ।

তবে এ ঘটনায় এখনো কোনো কূলকিনারা করতে পারেনি তদন্ত সংশ্লিষ্টরা। পুলিশ বাদী হয়ে একটি হত্যা মামলা করলেও এখন পর্যন্ত খোদ পুলিশই নিশ্চিত হতে পারেনি, ঘটনাটি হত্যা নাকি আত্মহত্যা?

তবে রুম্পা হত্যার শিকার হয়েছেন, এমনটা ধরে নিয়েই মামলা দায়েরের পর তদন্ত কার্যক্রম শুরু করেছে পুলিশ। যদিও ওই ঘটনায় কে বা কারা জড়িত সে বিষয়ে পরিবার ও তদন্ত সংশ্লিষ্টরা নিশ্চিত হতে পারেনি।

বহুতল আবাসিক ভবন থেকে নিচে পড়ে গেল রুম্পা। কিন্তু তখন কোনো চিৎকার-চেঁচামেচির শব্দ পাওয়া গেল না। এমনকি নিচে পড়ার পরও কোনো শব্দ করেনি কিংবা সামান্যতম নড়া-চড়াও করেনি সে। তবে কি পরিকল্পনার অংশ হিসেবে মেয়েটিকে খুন করে নিচে ফেলে দেওয়া হয়েছে?

এমনই প্রশ্ন পুলিশকন্যা ও বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী রুবাইয়াত শারমিন রুম্পার মরদেহ উদ্ধারস্থল আশ-পাশের ভবনের বাসিন্দাদের। বুধবার (৪ ডিসেম্বর) দিবাগত রাতে রাজধানীর সিদ্ধেশ্বরীর সার্কুলার রোডের ৬৪/৪ নম্বর বাসার নিচ থেকে অজ্ঞাতপরিচয় হিসেবে ওই তরুণীর মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।

শুক্রবার (৬ ডিসেম্বর) বিকেলে মরদেহ উদ্ধারের ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, সিদ্ধেশ্বরীর সার্কুলার রোডের ছোট চিকন গলিতে পাশাপাশি অনেকগুলো বহুতল ভবন। শেষ মাথায় আরেকটি সুউচ্চ ভবনের পেছন অংশে শেষ হয়েছে গলিপথ। গলির শেষ মাথায় হাতের ডানে ৬৪/৪ ভবনের নিচেই মুখ পার্শ্বে পড়ে ছিল নিথর রুম্পা।

ওই ভবনের নিচতলার ফ্ল্যাটে মেস রয়েছে। সেখানে সাতজন ব্যাচেলর ভাড়া থাকেন। মেসের বাসিন্দা পলাশ দেবনাথ বলেন, বুধবার আনুমানিক রাত ১০টা ৪২ থেকে ৪৩ মিনিটে ওপর থেকে কিছু একটা পড়ার শব্দ হয়। বস্তা পড়েছে ভেবে আমরা রুম থেকে বেরিয়ে দেখি একটি মেয়ে উপুড় হয়ে পড়ে আছে। সঙ্গে সঙ্গে আমরা বাসা থেকে বের হই এবং আমাদের চিৎকারে আশ-পাশের অনেকেই ছুটে আসেন।

‘পরে মেয়েটিকে উপুড় হওয়া থেকে সোজা করা হয়। এর মধ্যেই স্থানীয় এক ডা. বাসিন্দা ছুটে আসেন। তিনি চেক করে প্রথমেই বলেন মারা গেছে। তখন পুলিশকে খবর দিলে পুলিশ এসে মরদেহ উদ্ধার করে নিয়ে যায়।’

তিনি বলেন, এটা নিশ্চিত মেয়েটি উপর থেকে পড়েছে। কিন্তু অবাক করা বিষয় পড়ার সময় কোনো চিৎকার শুনিনি। পড়ার পরও কোনো শব্দ করেনি মেয়েটি, এমনকি সামান্যতম নড়াচড়াও করেনি।

এ দিকে প্রশ্ন উঠেছে, পাশের দুই ভবন (৪ তলা ও ৫ তলা) নাকি শেষের ওই ভবন (১০ তলা) থেকে রুম্পা পড়েছে কিংবা তাকে ফেলে দেওয়া হয়েছে? আর ওই তিনটি ভবনের যেকোনো একটিতে পরিচিত কেউ না থাকলে রুম্পা কিভাবে সেখানে প্রবেশ করবেন? অথবা তাকে নিয়ে যাওয়া কেউ নিশ্চয়ই ওই ভবনের সংশ্লিষ্ট?

এসব প্রশ্নের কোনটিরই সদুত্তর দিতে পারেননি পুলিশ। তবে ঘটনাটিকে হত্যাকাণ্ড উল্লেখ করে পুলিশ বাদী হয়ে রমনা থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছে। এটিকে হত্যাকাণ্ড বিবেচনায় নিয়েই প্রাথমিকভাবে তদন্ত শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

পুলিশ জানায়, ঘটনার পরপরই রুম্পা হত্যার আলামত সংগ্রহ করা হয়। সেসব আলামত ফরেনসিক পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে। মরদেহের ময়না তদন্তের পর পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।

ময়না তদন্তে প্রাথমিকভাবে রুম্পার উপর থেকে পড়ে যাওয়ার বিষয়টি জানা গেছে, কিন্তু প্রতিবেদন পাওয়ার আগে মৃত্যুর কারণ নিশ্চিত হওয়া যাবে না বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক।

এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে ঢাকা মহানগর পুলিশের রমনা বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) সাজ্জাদুর রহমান বলেন, আমরা এখন পর্যন্ত বলার মতো কিছু পাইনি। তবে রুম্পা হত্যার শিকার হয়েছেন, এমন সন্দেহে পুলিশ বাদী হয়ে হত্যা মামলা দায়ের করেছে। হত্যা সন্দেহেই তদন্ত প্রাথমিক কাজ চলছে।

তিনি বলেন, ময়না তদন্ত প্রতিবেদন ও ধর্ষণ হয়েছেন কি না এমন এক্সপার্ট অপিনিয়ন (মতামত) পাওয়ার পর মামলা ডিটেকশন হবে। সে পর্যন্ত আমাদের অপেক্ষা করতে হচ্ছে। আমরা এখনও কাউকে আটক করিনি। জিজ্ঞাসাবাদও করিনি।

অন্য দিকে ঘটনার ছায়া তদন্ত করছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি দক্ষিণ বিভাগ)। ডিবি দক্ষিণের উপকমিশনার (ডিসি) রাজিব আল মাসুদ বলেন, ঘটনাটি চাঞ্চল্য ছড়ানোর পর ছায়া তদন্ত শুরু করেছে গোয়েন্দা দক্ষিণ বিভাগ। তবে এখন পর্যন্ত বিশেষ কিছু মেলেনি। আসলে সুইসাইড নাকি হত্যা সেটা আগে নিশ্চিত হওয়া জরুরি। তাছাড়া অন্যান্য আলামত পরীক্ষার প্রতিবেদন পাওয়ার পর স্পষ্ট হবে মোটিভ।

ওডি/কেএসআর

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড