• শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩০ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

সঞ্চয়পত্র বিক্রি কমায় ব্যাংক ঋণে ঝুঁকছে সরকার

  নিজস্ব প্রতিবেদক

০৫ ডিসেম্বর ২০১৯, ০৯:৪০
সঞ্চয়পত্র বিক্রি কমায় ব্যাংক ঋণে ঝুঁকছে সরকার (প্রতীকী ছবি)
সঞ্চয়পত্র বিক্রি কমায় ব্যাংক ঋণে ঝুঁকছে সরকার (প্রতীকী ছবি)

চলতি (২০১৯-২০) অর্থবছরের প্রথম চার মাসে ধারাবাহিকভাবে কমেছে সঞ্চয়পত্র বিক্রি। অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে ২ হাজার ১৬০ কোটি টাকার সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে। আগস্টে বিক্রি হয়েছে ২ হাজার ২০৫ কোটি টাকা, সেপ্টেম্বরে বিক্রি হয়েছে ৯৮৫ কোটি টাকা। আর অক্টোবর মাসে বিক্রি হয়েছে মাত্র ৮২২ কোটি টাকার সঞ্চয়পত্র।

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, একক মাস হিসেবে অক্টোবরে নিট সঞ্চয়পত্র বিক্রির এই হিসাব সবচেয়ে কম। ২০১৮ সালের একই মাসে যা ছিল ৪ হাজার ৪১৬ কোটি টাকা। গত বছরের অক্টোবরের চেয়ে এই বছরের অক্টোবরে বিক্রি কমেছে ৩ হাজার ৫৯৪ কোটি টাকা।

জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তর ও বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্র মতে, গত কয়েক মাসে সঞ্চয়পত্রের বিক্রির পরিমাণ তিন ভাগের এক ভাগে নেমে এসেছে। চলতি ২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) ৪ হাজার ৭০০ কোটি টাকার সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে। অথচ আগের অর্থবছরের একই সময়ে এই বিক্রির পরিমাণ ছিল ১৩ হাজার ৪১২ কোটি টাকা। সেই হিসাবে এ বছর সঞ্চয়পত্রের বিক্রি আগের বছরের চেয়ে ৬৫ শতাংশ কমে গেছে। তিন মাসেই সঞ্চয়পত্রের নিট বিক্রি কমেছে ৮ হাজার ৪১৪ কোটি টাকা। গত ১০ বছরের মধ্যে সঞ্চয়পত্র বিক্রিতে এই নিম্ন প্রবণতা এবারই প্রথম।

সঞ্চয়পত্র কেনার ক্ষেত্রে কর শনাক্তকরণ নম্বর (ই-টিআইএন) বাধ্যতামূলক করা, ব্যাংক হিসাব খোলা, অনলাইনে আবেদন করা এবং অর্থের উৎস সম্পর্কে বিবরণ দেয়ার কারণে উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে সঞ্চয়পত্র বিক্রি।

অর্থনীতিবিদরা অবশ্য এই প্রবণতাকে ইতিবাচকভাবেই দেখছেন। এতে সরকারের সুদ ব্যয় কমবে। তবে সঞ্চয়পত্র বিক্রি কমলে ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়া বেড়ে যায় সরকারের।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সঞ্চয়পত্র বিক্রি কমে যাওয়ার কারণে সরকারের অর্থ সংগ্রহও কমে যায়। এ অবস্থায় দেশে মেট্রোরেল এবং পদ্মা সেতুর মতো বড় বড় প্রকল্পে অর্থায়নে ব্যাংকের ওপর সরকারের নির্ভরশীলতা বাড়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। এ ধরনের অবস্থাও নেতিবাচক বলে উল্লেখ করেছেন সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের নির্বাহী পরিচালক অর্থনীতিবিদ ড. ফাহমিদা খাতুন।

তিনি বলেন, এতে ব্যক্তিগত পর্যায়ে বিনিয়োগ কমে যায়। ব্যাংকগুলো তো সরকারকেই ঋণ দিতে চাইবে। এসব কারণে পুঁজি সংকট তৈরি হওয়া এবং বিনিয়োগ কমে যাওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয় বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

এ দিকে সঞ্চয়পত্র বিক্রি কমায় ব্যয় মেটাতে ব্যাংক খাতে তারল্য সংকটের মধ্যেও বেড়েছে সরকারের ব্যাংক ঋণ। ফলে ব্যাংক থেকে ঋণ পাচ্ছে না বেসরকারি খাত। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, গত এপ্রিলে বেসরকারি খাতের ঋণপ্রবাহ ছিল ১২ দশমিক শূন্য ৭ শতাংশ। যা গত ৫৭ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন। এর আগে ২০১৪ সালের আগস্টে বেসরকারি খাতের ঋণপ্রবাহ ছিল ১১ দশমিক ৩৯ শতাংশ।

বাণিজ্যিক ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলছেন, সরকারের ঋণ বেড়ে যাওয়ায় বেসরকারি খাতে ঋণ বিতরণে ব্যাংকের সক্ষমতা কমিয়ে দেওয়া হচ্ছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, গত অর্থবছরের মে মাস পর্যন্ত ব্যাংক থেকে সরকার ১১ হাজার ৭০ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে। এর মধ্যে বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে নিয়েছে ৭ হাজার ২৬৪ কোটি টাকা। আর বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে নিয়েছে তিন হাজার ৮০৬ কোটি টাকা। বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর কাছ থেকে সরকার সবচেয়ে বেশি ঋণ নিয়েছে গভর্নমেন্ট সিকিউরিটিজ ও ট্রেজারি বিল খাতে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হিসাবে, গত ২১ মে পর্যন্ত সরকারের কাছে ব্যাংকের পাওনা দাঁড়িয়েছে ৯৯ হাজার ৩২৮ কোটি টাকা। এর মধ্যে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর কাছ থেকে নেওয়া আছে ৭১ হাজার ৮৭৬ কোটি টাকা। আর বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে নিয়েছে ২৭ হাজার ৪৫২ কোটি টাকা।

ওডি/কেএসআর

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড