• শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩০ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

চালকের বেপরোয়া মনোভাব কেড়ে নেয় রাজীব-দিয়ার প্রাণ

  অধিকার ডেস্ক

০১ ডিসেম্বর ২০১৯, ০৯:৫৩
সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত  দিয়া খানম মীম ও আবদুল করিম রাজীব
সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত দিয়া খানম মীম ও আবদুল করিম রাজীব (ছবি : সংগৃহীত)

জাবালে নূর পরিবহনের দুটি গাড়ির চালক রেষারেষি করে চালানোর সময় সড়কের পাশে অপেক্ষমান দুই কলেজ শিক্ষার্থী দিয়া খানম মীম ও আবদুল করিম রাজীবকে পিষ্ট করে। ২০১৮ সালের ২৯ জুলাই দুপুরে বিমানবন্দর সড়কে এ দুর্ঘটনা ঘটে।

এরপর বিচারের দাবিতে সড়কে নেমে আসে সারা দেশের লাখো শিক্ষার্থী। তারা সড়ক আইন পরিবর্তনসহ বেশ কিছু দাবি জানিয়ে আন্দোলন গড়ে তোলে।

শিক্ষার্থী রাজীব-দিয়া নিহতের ঘটনায় করা মামলার রায় ঘোষণা করা হবে আজ। রবিবার (১ ডিসেম্বর) বিকাল ৩টায় ঢাকা মহানগর দায়রা জজ ইমরুল কায়েশ এ রায় ঘোষণা করবেন।

রায়ের প্রত্যাশা জানতে চাওয়া হলে মামলার বাদী নিহত দিয়া খানম মিমের বাবা জাহাঙ্গীর আলম কালু বলেন, ‘আমার মেয়েকে ইচ্ছাকৃতভাবে চাপা দিয়ে হত্যা করা হয়েছে। এটা দুর্ঘটনা নয়, হত্যাকাণ্ড। গাড়ি একটু স্লো করলে মেয়েকে হারাতে হইত না। মেয়ের আত্মা শান্তি পাবে এমন রায় চাই। রায়ে যেন আমরাও শান্তি পাই।’

এ মামলার ছয় আসামির মধ্যে জাবালে নূর পরিবহনের মালিক জাহাঙ্গীর আলম, দুই চালক মাসুম বিল্লাহ ও জুবায়ের সুমন এবং তাদের সহকারী এনায়েত হোসেন কারাগারে।

জাবালে নূর পরিবহনের আরেক মালিক শাহাদাত হোসেন জামিনে রয়েছেন। তার পক্ষে মামলা উচ্চ আদালতের নির্দেশে স্থগিত রয়েছে। আর চালকের সহকারী কাজী আসাদ এখনো পলাতক।

কী ঘটেছিল সেদিন : ২৯ জুলাই রোববার দুপুর ১২টায় শহীদ রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের একদল শিক্ষার্থী গণপরিবহনের জন্য বিমানবন্দর সড়কে কলেজের বিপরীত পাশের ফুটপাতে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছিলেন। এ সময় আবদুল্লাহপুর থেকে মোহাম্মদপুর রুটে চলাচলকারী জাবালে নূর পরিবহনের দুটি বাস প্রতিযোগিতা করে যাত্রী তুলতে কলেজের শিক্ষার্থীদের ওপর একটি বাস তুলে দেয়। মুহূর্তের মধ্যেই বদলে যায় সেখানকার দৃশ্যপট! রক্তাক্ত শিক্ষার্থীরা প্রাণ বাঁচাতে চিৎকার করতে থাকে। এ খবর দ্রুত পৌঁছে যায় কলেজে। কলেজ থেকে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা এসে আহতদের উদ্ধার করে নিয়ে যায় কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে। সেখানেই মারা যায় কলেজের দুই শিক্ষার্থী রাজীব ও দিয়া। সেই ঘটনায় আরও ১২ জন আহত হলেও তারা প্রাণে বেচেঁ যায়। দুজনের মৃত্যুর খবর চারিদিকে ছড়িয়ে পড়লে হৃদয়বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়।

শিক্ষার্থীরা তাদের দুই সহপাঠীকে হারিয়ে হাউমাউ করে কাঁদতে থাকে। ঘটনার পর কলেজের শিক্ষার্থীরা বিমানবন্দর সড়কে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ শুরু করে। তারা দুটি বাসে আগুন ধরিয়ে দেয়। রাস্তায় যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।

ঘটনার পরদিনও কলেজের বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ অব্যাহত রাখে। সেই ঘটনার পরে তৎকালীন নৌমন্ত্রী ও পরিবহন মালিক নেতা শাজাহান খানের সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকরা প্রশ্ন করছিলেন, নৌমন্ত্রীর প্রশ্রয় ও মদদেই চালকরা এ ধরনের সাহস পাচ্ছে, সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে শাজাহান খান বলেছিলেন, ‘আমি যদি না থাকি, আপনারা কী মনে করেন...’।

এরপর তিনি বলেন, ‘আমি যদি আপনাদের প্রশ্ন করি, গতকাল আপনারা লক্ষ্য করেছেন, ভারতের মহারাষ্ট্রে একটা গাড়ি অ্যাক্সিডেন্ট করে ৩৩ জন মারা গেল’।

‘আমরা যেভাবে এগুলোকে নিয়ে কথা বলি, সেখানে (ভারতে) কী এভাবে কথা বলে?’ এরপরও একজন সাংবাদিক সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ে প্রশ্ন করলে শাজাহান খান বলেন, ‘আপনি কী জানেন যে, ভারতে প্রতি ঘণ্টায় সড়ক দুর্ঘটনায় কতজন মারা যায়? ১৬ জন মারা যায়, আপনাদের রিপোর্ট থেকেই জানলাম’। তিনি বলেন, ‘পোর্ট নিয়ে কোনো প্রশ্ন থাকলে করেন।’

শাজাহান খানের ব্যঙ্গাত্মক হাসি ও এমন মন্তব্যের পর সেই বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে সারাদেশে। নিরাপদ সড়কের দাবিতে সেই আন্দোলন স্মরণকালের সবচেয়ে বড় অহিংস আন্দোলনে রূপ নেয়। পরে সড়কে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে ক্ষমা চেয়ে পার পান শাজাহান খান।

ওই সময় শিক্ষার্থীদের দাবিগুলোর অন্যতম ছিল- বেপরোয়া গাড়ি চালিয়ে দুই শিক্ষার্থীকে হত্যাকারী চালকের ফাঁসির দাবি, সড়কে ফিটনেসবিহীন গাড়ি না চলা, নিরাপদ সড়ক নিশ্চিত করা এবং হাফ ভাড়ার ব্যবস্থা করা।

শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে গত বছরের ১৯ সেপ্টেম্বর জাতীয় সংসদে সড়ক পরিবহন বিল-২০১৮ পাস হয়। পাসকৃত আইনে সড়কে ‘ইচ্ছাকৃতভাবে দুর্ঘটনা ঘটিয়ে’ প্রাণহানি ঘটালে সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ডের বিধান রাখা হয়। এছাড়া কোনো ব্যক্তির বেপরোয়া ও অবহেলাজনিত গাড়ি চালানোর কারণে দুর্ঘটনা ঘটলে এবং সেই দুর্ঘটনায় কেউ আহত বা নিহত হলে সর্বোচ্চ পাঁচ বছর কারাদণ্ড বা পাঁচ লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে। গাড়ি চালানোর কারণে দুর্ঘটনা ঘটলে এবং সেই দুর্ঘটনায় কেউ আহত বা নিহত হলে সর্বোচ্চ পাঁচ বছর কারাদণ্ড বা পাঁচ লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে।

এক বছর আগে নতুন সড়ক পরিবহন আইন পাস হলেও পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের বাধার মুখে তা বাস্তবায়ন করতে পারেনি সরকার। অবশেষে গত ১ নভেম্বর থেকে কার্যকর হয় ‘সড়ক পরিবহন আইন, ২০১৮’।

ওডি/এসআর/এসএস

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড