• বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৪০ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

‘বুলবুল’ আতঙ্কে সারা দেশ

  সারাদেশ ডেস্ক

০৯ নভেম্বর ২০১৯, ১৯:২৪
ঘূর্ণিঝড়
ঘূর্ণিঝড় বুলবুল (ছবি : সংগৃহীত)

গতি পাল্টে আরও শক্তিশালী হয়ে বাংলাদেশের উপকূলের দিকে ধেয়ে আসছে ঘূর্ণিঝড় ‘বুলবুল’। পূর্বের ‘আয়লার’ চেয়েও এই ঘূর্ণিঝড়ে বেশি ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা করা হচ্ছে। ঘণ্টায় ১২০ থেকে ১৪০ কিলোমিটার গতিতে বাতাসের শক্তি নিয়ে উপকূলের দিকে ছুটে আসছে ঘূর্ণিঝড়টি। যা খুব শীঘ্রই বাংলাদেশের উপকূলে আছড়ে পড়ার উপক্রম। এ দিকে, আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, ক্রমশ বেড়েই চলেছে ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের গতি। সব মিলিয়ে ঘূর্ণিঝড় বুলবুল আতঙ্কে সমগ্র বাংলাদেশ। দৈনিক অধিকারের জেলা প্রতিনিধিদের পাঠানো তথ্যের ভিত্তিতে জেলাগুলোতে বুলবুলের সর্বশেষ পরিস্থিতি।

চট্টগ্রাম

চট্টগ্রাম বন্দরে পূর্বের ঘোষিত ৬ নম্বর বিপদ সঙ্কেত নামিয়ে ৯ নম্বর মহাবিপদ সঙ্কেত দেখাতে বলার পাশাপাশি বন্দরের কনটেইনার ও কার্গো হ্যান্ডলিংসহ সকল কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এছাড়া বন্দর থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে সকল জাহাজ। এমনকি জারি করা হয়েছে বন্দরের নিজস্ব সর্তকতা অ্যালার্ট-৪।

শনিবার (৯ নভেম্বর) সকাল থেকে বন্দরের মূল জেটির জাহাজগুলোকে বহির্নোঙরে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।

বিষয়টি নিশ্চিত করে বন্দর সচিব মো. ওমর ফারুক বলেন, ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে বন্দর কর্তৃপক্ষ সজাগ রয়েছে। প্রতি মুহূর্তে করণীয় নির্ধারণে সর্বোচ্চ টিম কাজ করছে। পাশাপাশি অভ্যন্তরীণ ছোট ছোট নৌযানগুলো এবং বড় জাহাজগুলোকে বন্দর থেকে সরিয়ে নিরাপদ দূরত্বে রাখা হয়েছে।

তবে, স্থল বন্দরের কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করা হলেও বিমানবন্দরের কার্যক্রম স্বাভাবিক রয়েছে।

বিমানবন্দরের ম্যানেজার উইং কমান্ডার সারোয়ার-ই-আলম জানান, ‘বিমানবন্দরে বিমান ওঠানামাসহ সকল কার্যক্রম এখনো স্বাভাবিক রয়েছে। তবে, যে কোনো পরিস্থিতি মোকাবেলায় আমরা প্রস্তুত রয়েছি।’

চাঁদপুর

ঘূর্ণিঝড় ‘বুলবুলের’ প্রভাবে চাঁদপুরে আকাশ মেঘাচ্ছন্ন থাকার পাশাপাশি থেমে থেমে বৃষ্টিপাত হচ্ছে। কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা এড়াতে চাঁদপুর থেকে যাত্রীবাহী লঞ্চসহ সব ধরনের নৌযান চলাচল বন্ধ ঘোষণা করেছে বিআইডব্লিউটিএ-এর চাঁদপুর কর্তৃপক্ষ।

এ দিকে, ঘূর্ণিঝড়টি মোকাবিলায় ৫৮টি মেডিকেল টিম, স্থানীয় রেডক্রিসেন্ট, স্কাউটসহ বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা প্রস্তুত রাখা হয়েছে। পাশাপাশি চরাঞ্চলগুলোতে মাইকিং করে নিরাপদে অবস্থান নিতে বলা হয়েছে। একইভাবে নগদ অর্থ, শুকনো খাবার সংরক্ষণ এবং সাইক্লোন শেল্টারগুলোকেও প্রস্তুত রাখা হয়েছে।

কক্সবাজার

ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের প্রভাবে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত উত্তাল রয়েছে। শনিবার সকাল থেকেই জেলাব্যাপী থেমে থেমে বৃষ্টিপাত হচ্ছে। পাশাপাশি কক্সবাজারের উপকূলীয় অঞ্চলের মানুষ ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের খবরে আতঙ্কে রয়েছেন।

এর আগে শুক্রবার জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কমিটির একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে কক্সবাজারে ঘূর্ণিঝড় নিয়ে কাজ করা সকল কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। তারা জানিয়েছেন, আবহাওয়া অধিদপ্তর থেকে জানানো হয়েছে, ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাব কক্সবাজারে খুব বেশি পড়বে না। তবে, ঘূর্ণিঝড় পরবর্তী বৃষ্টিপাত ও জলোচ্ছ্বাসের ফলে উপকূলীয় মানুষের সম্পদের ক্ষয়ক্ষতি হতে পারে।

অপরদিকে সেন্ট মার্টিনেও আতঙ্কে রয়েছে মানুষ। বিশেষ করে সেন্ট মার্টিনে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ঘুরতে আসা এক হাজারের অধিক পর্যটক আটকা পড়েছেন। বৈরী আবহাওয়ার কারণে সেন্ট মার্টিন থেকে জাহাজ ছেড়ে না আসায় তারা ফিরে আসতে পারছেন না। এমতাবস্থায় আটকে পড়া পর্যটকদের মধ্যে মহিলা ও শিশুদের স্থানীয় প্রশাসন থেকে সহযোগিতা করা হচ্ছে।

এ দিকে, জেলা আবহাওয়া কার্যালয়ের সহকারী আবহাওয়াবিদ মো. আব্দুর রহমান জানিয়েছেন, কক্সবাজারে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সঙ্কেত দেখাতে বলা হয়েছে। ঘূর্ণিঝড় ‘বুলবুল’ কক্সবাজার থেকে ৪৮০ কিলোমিটার পশ্চিম দক্ষিণ পশ্চিমে অবস্থান করছে। সমুদ্রে স্বাভাবিক জোয়ার থেকে ৩ থেকে ৫ ফুট অধিক উচ্চতায় জোয়ার আসার সম্ভাবনা বেশি।

ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় প্রশাসনের পাশাপাশি মাঠে তৎপর রয়েছে প্রায় অর্ধ-শতাধিক টুরিস্ট পুলিশ।

পটুয়াখালী

ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের প্রভাবে পটুয়াখালী পায়রা সমুদ্রবন্দরকে ১০ নম্বর মহাবিপদ সঙ্কেত দেখিয়ে যেতে বলেছে বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর। পাশাপাশি ইতোমধ্যেই পটুয়াখালী উপকূলের মানুষকে সাইক্লোন শেল্টারে সরিয়ে নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।

শনিবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে জেলা প্রশাসক মো. মতিউল ইসলাম চৌধুরী বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

এ দিকে, পটুয়াখালী আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বশির আহমেদ জানান, পায়রা সমুদ্রবন্দরকে ৭ নম্বর বিপদ সংকেত নামিয়ে তার পরিবর্তে ১০ নম্বর মহাবিপদ সঙ্কেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। এছাড়া শুক্রবার (৮ নভেম্বর) মধ্যরাত থেকে শনিবার সকাল ৯টা পর্যন্ত জেলায় ২৭ দশমিক ৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।

এর আগে গত দুই দিন থেকে পটুয়াখালীতে হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টিপাত হচ্ছে। তবে, শুক্রবার রাত থেকেই বাতাসের গতিবেগ কিছুটা বৃদ্ধি পেয়েছে। পাশাপাশি সাগরও উত্তাল রয়েছে। এ দুর্যোগ মোকাবিলায় ত্রাণ কার্যক্রম পরিচালনার জন্য ১৬৬ বান্ডিল টিন, দুই লাখ ৭৫ হাজার টাকা, ১শ মেট্রিক টন চাল, ৪০৩টি সাইক্লোন শেল্টার ও তিন হাজার ৫শ কম্বল প্রস্তুত রাখা হয়েছে।

বাগেরহাট

ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের প্রভাবে শনিবার সকাল থেকে বাগেরহাটে ঝড়ো বাতাসের সঙ্গে বৃষ্টিপাত অব্যাহত রয়েছে। পাশাপাশি ১০ নম্বর মহাবিপদ সঙ্কেত জারির পর জেলার সুন্দরবন সংলগ্ন উপজেলা থেকে আতঙ্কিত হয়ে লোকজনেরা নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে শুরু করেছেন।

১০ নম্বর বিপদ সঙ্কেত জারির পর জেলার শরণখোলা, মোড়েলগঞ্জ, রামপাল ও মোংলা উপজেলায় সুন্দরবন সংলগ্ন এলাকাগুলো থেকে জনসাধারণদের নিরাপদ আশ্রয়কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়ার জন্য জোর তৎপরতা চালাচ্ছে স্থানীয় প্রশাসনসহ জনপ্রতিনিধিরা। জেলার প্রায় প্রতিটি উপজেলায় স্থানীয় প্রশাসন, জনপ্রতিনিধি, পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকে দুর্গতদের আশ্রয়কেন্দ্রে যাওয়ার জন্য দফায় দফায় মাইকিং করে সর্তক করা হচ্ছে।

এরই মধ্যে জেলার শরণখোলায় ৬শ, মোড়েলগঞ্জে ৪শ, রামপালে ৫শ ও মোংলা উপজেলায় ৬শ প্যাকেট শুকনো খাবার প্রাথমিকভাবে সরবরাহ করা হয়েছে বলে জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে। পর্যাপ্ত পরিমাণ খাবার মজুদ ও চাহিদা অনুযায়ী স্ব-স্ব উপজেলা থেকে খাবার সরবরাহ করা হবে বলে জেলা প্রশাসন থেকে জানানো হয়েছে। এছাড়া জরুরি প্রয়োজনে জেলা সদরসহ সকল উপজেলায় কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে।

এ দিকে, বাগেরহাট জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সাইক্লোন শেল্টারগুলোতে আশ্রয় নেওয়া লোকজনদের জন্য শুকনো খাবার ও নিরাপদ পানির ব্যবস্থা করা হয়েছে। পাশাপাশি জেলার ৯টি উপজেলার ২৩৪টি ঘূর্ণিঝড় আশ্রয় কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে, যার ধারণ ক্ষমতা ২ লাখ ২৬ হাজার ৫৫৫। একই সঙ্গে ১০টি মেডিকেল টিম, রেডক্রিসেন্ট, স্কাউটস, সিভিল ডিফেন্স, আনসার ভিডিপি, গ্রাম পুলিশের সদস্যসহ স্থানীয় সেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠানের সদস্যদের প্রস্তুত রাখা হয়েছে।

সাতক্ষীরা

ঘূর্ণিঝড় ‘বুলবুলের’ প্রভাবে সাতক্ষীরায় শনিবার দিনভর গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টিসহ ঝড়ো হাওয়া বয়ে চলেছে। আবহাওয়া অফিসের পক্ষ থেকে জেলায় ১০ নম্বর মহাবিপদ সতর্ক সঙ্কেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। ইতোমধ্যেই দুর্যোগে ক্ষয়ক্ষতি মোকাবিলায় পুলিশ, বিজিবি, নৌবাহিনী ও কোস্ট গার্ডের সমন্বয়ে গঠিত টিম উপকূলবর্তী মানুষদের নিরাপদ আশ্রয়ে আনার কাজ শুরু করেছে। পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট প্রশাসন থেকে হাসপাতাল ও কমিউনিটি ক্লিনিক সার্বক্ষণিক খোলা রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

এ দিকে, ইতোমধ্যে জেলার ২৭০টি আশ্রয় কেন্দ্রে ৬০ হাজার মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন বলে দাবি করেছেন জেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি ও জেলা প্রশাসক এস এস মোস্তফা কামাল। এছাড়া দুর্গতদের সহায়তায় ৩১০ মেট্রিক টন চাল, নগদ পাঁচ লাখ ৪২ হাজার টাকা, দুই হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার, ২৭ হাজার পিস পানি বিশুদ্ধিকরণ ট্যাবলেট ও পর্যাপ্ত ওষুধপত্র মজুদ রাখা হয়েছে বলেও জানিয়েছেন তিনি।

সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক আরও জানিয়েছেন, দুর্যোগ পূর্ববর্তী, দুর্যোগকালীন এবং দুর্যোগ পরবর্তী তিন স্তরের প্রশিক্ষিত ২২ হাজার স্বেচ্ছাসেবকসহ ৮৫টি মেডিকেল টিম প্রস্তুত রয়েছে। পাশাপাশি শিশুদের জন্য এক লাখ টাকা ও গবাদি পশুর জন্য আরও এক লাখ টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। উপকূলীয় উপজেলা শ্যামনগর, আশাশুনি ও কালিগঞ্জ উপজেলার প্রত্যন্ত এলাকায় সর্বোচ্চ সতর্কতা জারি করা হয়েছে। একই সঙ্গে সুন্দরবন সংলগ্ন নদী ও খালে থাকা নৌযানগুলোকে উপকূলবর্তী নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।

এ দিকে, পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, সাতক্ষীরার দুইটি বিভাগের আওতায় ২৫০ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ রয়েছে। ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের প্রভাবে ৭ ফুট উচ্চতার যে জলোচ্ছ্বাসের আশঙ্কা করা হচ্ছে, তা উপকূলে আছড়ে পড়লে এসব বেড়িবাঁধ রক্ষা করা সম্ভব হবে না।

বরিশাল

বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট প্রবল ঘূর্ণিঝড় ‘বুলবুল’- এর জন্য বরিশালের ভোলাসহ উপকূলীয় নয় জেলায় ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেত জারি করেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। শনিবার সকালে আবহাওয়া অধিদপ্তরের ২২ নম্বর বুলেটিনে ঘূর্ণিঝড় ‘বুলবুলের’ প্রভাবে বরিশালসহ নয়টি জেলাকে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। এরপর থেকেই জনমনে আরও আতঙ্ক বেড়ে গেছে।

এ দিকে, বৈরী আবহাওয়ায় বৃষ্টির জন্য ঘর থেকে বের হতে পারছে না কেউ। ফলে জেলাজুড়ে অচল হয়ে পড়েছে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা। পাশাপাশি বরিশাল জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে দফায় দফায় সভা করে জনগণকে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। একই সঙ্গে শনিবার দুপুর নাগাদ ‘বুলবুলের’ অগ্রবর্তী আঘাত লাগতে পারে এমন খবরে ফের সভা ডেকেছে জেলা প্রশাসন।

ঘূর্ণিঝড়টি মোকাবিলায় বরিশাল জেলার ১০টি উপজেলায় ২৩২টি সাইক্লোন শেল্টার প্রস্তুত রাখা হয়েছে। পাশাপাশি জেলার সিপিপির ৬ হাজার ১৫০ জন কর্মী ছাড়াও রোভার স্কাউট ও গার্লস গাইডসহ বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনকে সার্বক্ষণিক প্রস্তুত রাখা হয়েছে।

ভোলা

ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের ক্ষয়ক্ষতি মোকাবিলায় ইতিমধ্যেই ভোলার আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে ১ লাখ ২৫ হাজার মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক মাসুদ আলম ছিদ্দিক। পাশাপাশি এসব কেন্দ্রে আশ্রয় নেওয়া মানুষের মধ্যে শুকনো খাবার বিতরণ শুরু করেছে জেলা প্রশাসন।

শনিবার দুপুর দেড়টার দিকে ভোলার পূর্ব ইলিশা ইউনিয়নের একটি আশ্রয় কেন্দ্র পরিদর্শনে এসে জেলা প্রশাসক মাসুদ আলম ছিদ্দিক জানান, ইতোমধ্যে ১ লাখ ২৫ হাজার মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে, বিকাল নাগাদ তা ২ লাখ অতিক্রম করবে। পাশাপাশি আশ্রয়কেন্দ্র স্থানান্তরিত এসব মানুষের মধ্যে ইতোমধ্যে শুকনো খাবার (চিড়া, মুড়ি) বিতরণ করা হয়েছে। এছাড়া স্ব স্ব ইউনিয়নের চেয়ারম্যানরা খিচুড়ি রান্না করছে, বিকাল নাগাদ প্রতিটি কেন্দ্রে আশ্রয় নেওয়া মানুষের মধ্যে এসব খিচুড়ি বিতরণ করা হবে।

এ দিকে, ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের প্রভাবে ভোলায় নদী এখনো উত্তাল রয়েছে। পাশাপাশি জেলাজুড়ে অব্যাহত রয়েছে থেমে থেমে বৃষ্টিপাত। এমন বৈরী আবহাওয়াতেও ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় থাকা মানুষকে আশ্রয়কেন্দ্র নিয়ে আসতে কাজ করছে স্বেচ্ছাসেবকরা।

বরগুনা

ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের ক্ষয়ক্ষতি মোকাবিলায় ইতোমধ্যেই বরগুনায় ৫০৯টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। আটটি জরুরি কন্ট্রোল রুমসহ বুলবুলের প্রভাব মোকাবিলায় ৪২টি মেডিকেল টিম ও ১০ হাজার স্বেচ্ছাসেবককেও প্রস্তুত রাখা হয়েছে।

বরগুনা জেলা প্রশাসক মোস্তাইন বিল্লাহ জানিয়েছেন, ‘বরগুনায় ৫০৯টি সাইক্লোন শেল্টার, ৪২টি মেডিকেল টিম, আটটি জরুরি কন্ট্রোল রুমসহ সিপিপি, রেড ক্রিসেন্ট ও বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের ১০ হাজার স্বেচ্ছাসেবক প্রস্তুত রয়েছে। পাশাপাশি বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরতে যাওয়া ট্রলারগুলোকে তীরে ফিরিয়ে আনা হয়েছে। একই সঙ্গে হাজারো ট্রলারকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, সবমিলিয়ে যে কোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় বরগুনা জেলা প্রশাসন সর্বোচ্চ প্রস্তুতি নিয়েছে। তবে, ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের প্রভাবে গতকাল থেকে বরগুনায় শনিবার দুপুর পর্যন্ত একটানা বৃষ্টিপাত অব্যাহত রয়েছে। পাশাপাশি নদীতে স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে প্রায় চার থেকে পাঁচ ফুট পানি বৃদ্ধি পেয়েছে।

ঝালকাঠি

ঘূর্ণিঝড় বুলবুল মোকাবিলায় ঝালকাঠিতে ব্যাপক প্রস্তুতিসহ সাইক্লোন শেল্টারে সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকার বাসিন্দা ও গবাদী পশুদের। পাশাপাশি জেলার ৭৪টি সাইক্লোন শেল্টারসহ শতাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে প্রস্তুত রাখা হয়েছে। সকাল থেকে আশ্রয়কেন্দ্র গুলো খালি পড়ে থাকলেও সন্ধ্যা নাগাত জেলার বেশিরভাগ আশ্রয়কেন্দ্রে মানুষদের নিরাপদ ভিড় জমাতে দেখা গেছে।

এ দিকে, ঝড়ের প্রভাবে শুক্রবার সকাল থেকে জেলাজুড়ে বৃষ্টি শুরু হয়েছে যা শনিবার দুপুরের পর ভারি বৃষ্টিতে রূপান্তরিত হয়েছে।

খুলনা

বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় বুলবুল বাংলাদেশের উপকূলের দিকে ক্রমশ ধেয়ে আসায় খুলনার উপকূলবর্তী এলাকায় ১০ নম্বর মহাবিপদ সঙ্কেত দেখিয়ে যেতে বলেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। পাশাপাশি উপকূলীয় এলাকার বাসিন্দারা রাতে আশ্রয়কেন্দ্রে না গেলেও শনিবার সকাল থেকেই আশ্রয়কেন্দ্রে যাওয়া শুরু করেছেন।

শনিবার উপকূলীয় এলাকা দাকোপ, কয়রা, পাইকগাছা, বটিয়াঘাটা সংলগ্ন বেড়িবাঁধ ঘুরে দেখা গেছে এসব এলাকার বাসিন্দারা তাদের মালামাল নিয়ে ছুটে চলেছেন আশ্রয় কেন্দ্রেগুলোতে। শিশু ও বৃদ্ধদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে স্বেচ্ছাসেবকরা আশ্রয়কেন্দ্রে নিয়ে যাচ্ছেন।

এ দিকে, ঘূর্ণিঝড় বুলবুলকে কেন্দ্র করে উপকূলবর্তী এলাকায় ১০ নম্বর বিপদ সঙ্কেত জারির পরে ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচি (সিপিপি), রেডক্রিসেন্টসহ বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের স্বেচ্ছাসেবকরা মাইকিং শুরু করেছে। পাশাপাশি আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী, ফায়ার সার্ভিস, স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ও রোভার স্কাউটের সদস্যরাও উপকূলের বাসিন্দাদের নিরাপদে আশ্রয়ে সরিয়ে নিতে কাজ করছেন।

খুলনা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হেলাল হোসেন জানিয়েছেন, ‘আমাদের সব ধরনের প্রস্তুতি রয়েছে। এছাড়া শুক্রবার রাত থেকেই বেড়িবাঁধসহ ঝুঁকিপূর্ণ এলাকার বাসিন্দাদের নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে মাইকিং করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত উপকূলের ১ লাখ ১০ হাজার মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান করছেন।

সিরাজগঞ্জ

সিরাজগঞ্জে ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের প্রভাবে প্রবল বৃষ্টিপাত শুরু হয়েছে। শুক্রবার দুপুর থেকে গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টিপাত হলেও রাত থেকে বৃষ্টিপাত বেড়েছে। একইভাবে শনিবার সকাল থেকে বৃষ্টিপাতের তীব্রতা ক্রমশ বেড়েই চলছে।

এ দিকে, ঘূর্ণিঝড় বুলবুল মোকাবিলায় জেলা প্রশাসন ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন রেডক্রিসেন্ট সোসাইটি সমগ্র প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে।

জেলা প্রশাসক ড. ফারুক আহাম্মদ জানিয়েছেন, জেলার প্রতিটি উপজেলা প্রশাসনকে দুর্যোগ মোকাবিলা ও দুর্যোগ পরবর্তী পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এছাড়া জেলার রেডক্রিসেন্ট ইউনিট ঘূর্ণিঝড় বুলবুল মোকাবেলায় স্বেচ্ছাসেবকদের প্রস্তুত রেখেছে।

ওডি/আইএইচএন

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড