• বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১  |   ২৮ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

মরার ওপর খাড়ার ঘা ‘বাসা ভাড়া’

  অধিকার ডেস্ক

০২ এপ্রিল ২০২০, ২১:৫৭
মরার ওপর খাড়ার ঘা ‘বাসা ভাড়া’
মরার ওপর খাড়ার ঘা ‘বাসা ভাড়া’

২০১৯ সালের ৩১ ডিসেম্বর, চীনের উহান শহরে ধরা পড়েছিল নাম না জানা এক ভাইরাস। জ্বর, ঠান্ডা, কাশির মতো খুবই সাধারণ তার উপসর্গ। তবে ভয়ের বিষয় তা ছড়িয়ে পড়ছিল মানুষ থেকে মানুষে, তাও আবার স্পর্শের মাধ্যমেই। পরবর্তী সময়ে ভাইরাসটির নাম দেওয়া হয় নভেল করোনা ভাইরাস বা কোভিড-১৯। পৃথিবীর কেউই তখন আঁচ করতে পারেনি সামনের দিনগুলোর ভয়াবহতা সম্পর্কে।

৩ মাস পরে এখনও পৃথিবীতে ত্রাস চালিয়ে বেড়াচ্ছে উহানের সেই করোনা ভাইরাস। শহর থেকে ছড়িয়েছে দেশে, দেশ থেকে আরও কয়েকটি দেশে এবং এভাবেই বর্তমানে ২০৩টি দেশের মানুষ এই ভাইরাস দ্বারা সংক্রমিত।

গত ৮ মার্চ বাংলাদেশে প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত করা হয়। করোনার বিস্তার প্রতিরোধে দেশের বিভিন্ন এলাকা লকডাউন করার পাশাপাশি নাগরিকদের হোম কোয়ারেন্টিন বা ঘরে থাকার পরামর্শ দিয়েছে সরকার।

এই লক্ষ্যে গত ২৬ মার্চ থেকে আগামী ৪ এপ্রিল পর্যন্ত সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়েছিল। পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করে এ ছুটি এবার বাড়ল ১১ এপ্রিল অব্দি। অর্থাৎ আরও এক সপ্তাহ বন্ধ থাকবে সকল সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান। এ দিকে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ রয়েছে ১৭ মার্চ থেকে। এসব প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় কর্মজীবী মানুষরা হয়ে পড়েছে কর্মহীন। তাদের ওপর নির্ভরশীল নিম্ন আয়ের মানুষরাও হারিয়েছেন কাজ কিংবা আয়ের উৎস। সব মিলিয়ে করোনার বড় একটি ধাক্কা গিয়ে লেগেছে অর্থনীতির দেয়ালে।

অনেকেই বলছেন করোনার কারণে যে অর্থনৈতিক মন্দার সৃষ্টি হবে তার প্রভাব সবচেয়ে বেশি পড়বে নিম্নবিত্তদের ওপর। তবে কিছুটা সময় নিয়ে ভাবলে দেখবেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে সবচেয়ে কষ্টে থাকা মানব শ্রেণী হলো নিম্ন মধ্যবিত্ত ও মধ্যবিত্ত, অন্তত বাংলাদেশের ক্ষেত্রে।

প্রেক্ষাপট ১ : ঢাকায় স্ত্রী ও দুই সন্তান নিয়ে দুই রুমের ফ্ল্যাটে থাকে মাজেদুল হক (ছদ্মনাম)। একটি ছোট কাপড়ের ব্যবসা তার। তা থেকে যা আয় হয় তা দিয়ে কোনোরকমে চলে যায় সংসার। করোনা পরিস্থিতির কারণে ব্যবসা বন্ধ হয়ে আছে। পহেলা বৈশাখ ও ঈদকে কেন্দ্র করে ঋণ করে পণ্য এনেছিলেন। ব্যবসায় ধস তো নেমেছেই তার মধ্যে কর্মহীন হয়ে পড়েছেন তিনি। সঞ্চয় বলতে অল্প কিছু অর্থ রয়েছে যা প্রায় শেষের দিকে। এ দিকে নতুন মাস এসেছে। বাড়িওয়ালা জানিয়ে দিয়েছেন ৫ তারিখের মধ্যেই যেন ভাড়া পরিশোধ করেন। বাসা ভাড়া, খাবার, বিদ্যুতের বিল সবকিছু কোথায় থেকে জোগাড় করবেন জানা নেই তার।

প্রেক্ষাপট ২- একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন হাসিব জুবায়ের (ছদ্মনাম)। করোনা পরিস্থিতির কারণে প্রতিষ্ঠানটি সকল কার্যক্রম বন্ধ রেখেছে। প্রতিষ্ঠানের আয় বন্ধ থাকায় স্বাভাবিকভাবে বেতনও বন্ধ। দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা সাবলীল না হওয়া অব্দি প্রতিষ্ঠানটি চালু হওয়ার সম্ভাবনা নেই। সংসারের চুলা কিভাবে জ্বলবে এমন চিন্তার মাঝেই বাড়ির মালিক ভাড়ার জন্য তাগাদা দিয়ে গেছেন কয়েক দফা।

লকডাউনের প্রভাবে কর্মহীন হয়ে যাওয়া নিম্নবিত্তদের পাশে এরই মধ্যে দাঁড়িয়েছে সমাজের নানা স্বেচ্ছাসেবী দল, প্রতিষ্ঠান, ব্যাক্তি, সংগঠন, সরকার। প্রয়োজনীয় খাদ্য সামগ্রী কিংবা অর্থনৈতিক সাহায্য প্রদান করা হচ্ছে তাদের। একটু খেয়াল করে দেখুন। সমাজের উচ্চবিত্তদের কারও কাছে সাহায্য চাইতে হয় না কারণ তাদের অবস্থা যথেষ্ট উন্নত, নিম্নবিত্তদের সাহায্য করার জন্য রয়েছে উচ্চবিত্তরা। কিন্তু মধ্যবিত্তরা কাউকে না পারে কিছু বলতে, না পারে সইতে।

একে তো হঠাৎ কাজ বা উপার্জন বন্ধ হয়ে যাওয়া, তার ওপর বাড়িওয়ালাদের প্রদত্ত চাপ। এ যেন মরার ওপর খাড়ার ঘা। নিন্ম মধ্যবিত্ত ও মধ্যবিত্তদের জন্য সবচেয়ে বড় দুশ্চিন্তা এখন বাসা ভাড়া। ঢাকায় বসবাসকারী সালেহা খানম(ছদ্মনাম)। পরিবারের একমাত্র কর্মক্ষম ব্যক্তি স্বামী বর্তমানে কাজ হারিয়ে ঘরে। সালেহা বলেন, ‘আমাদের কাছে তো আর কারও সাহায্য আসে না, আমরাও কারও কাছে হাত পাততে পারি না। তিনবেলা না খেয়ে না হয় একবেলা খাচ্ছি কিন্তু বাসা ভাড়া জোগাড় করবো কীভাবে?’

একই প্রশ্নের জবাব খুঁজে বেড়াচ্ছেন অসংখ্য ভাড়াটিয়া। কিছু বাড়িওয়ালা অবশ্য এক মাসের ভাড়া মওকুফ করেছেন, তাদের নিয়ে গণমাধ্যমগুলোতে আলোচনাও হয়েছে বেশ। তবে এ সংখ্যা একেবারের নগণ্য বলা চলে। সমাজের নানা স্তরের মানুষ থেকে শুরু করে রাজনৈতিক অঙ্গনের নানা ব্যক্তিত্ব, উত্তরের মেয়র, বিভিন্ন সংগঠন বাড়িওয়ালাদের অনুরোধ করেছেন ভাড়া মওকুফ কিংবা ৫০ শতাংশ কম নেওয়ার জন্য। তবে এই অনুরোধ কানে কি আদৌ তুলছে কেউ? সারাজীবন আত্মসম্মানবোধ নিয়ে কোনোরকমে জীবন কাটানো ব্যক্তিটিকে যদি ভাড়া না দেওয়ার অপরাধে বাড়ি ছাড়া হতে হয় তবে তার দায়ভার নেবে কে? এ অসময়ে তারা যাবেই বা কোথায়।

মানুষ মানুষের জন্য, বিপদে মানবিকতার পরিচয় দেওয়াই মানুষের ধর্ম। পুরো পৃথিবীই স্থবির হয়ে পড়েছে করোনার কারণে। করোনার সঙ্গে লড়াই করে হেরে না গেলেও অর্থের সঙ্গে লড়াই করে যদি কাউকে হেরে যেতে হয় তবে কি তা আমাদের মানবিকতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করবে না? আসুন নিম্নবিত্তদের পাশাপাশি সমাজের নিম্ন মধ্যবিত্ত ও মধ্যবিত্ত অসহায় মানুষগুলোর পাশে দাঁড়াই, যারা বাড়িওয়ালা আছি তারা এই দুর্দিনে ভাড়াটিয়াদের একটু সাহস যোগাই, বাড়িভাড়া একেবারে মওকুফ না করতে পারলেও ভাড়াটিয়াদের ভাড়ার জন্য চাপ প্রয়োগ না করে সঙ্কট না কাটা অব্দি সময় দিন। ভাড়াটিয়াদের প্রতি মানবিক হোন।

একই সাথে লক্ষ্যনীয়, দোকান পাট, বিভিন্ন ছোট বড় ফ্যাক্টরি, বিভিন্ন ধরনের অফিস এ দুর্যোগে অনেকদিন ধরেই বন্ধ থাকার দরুন তাদের আয় না থাকায় সংশ্লিষ্ট মালিকদেরকেও অসহিষ্ণু না হয়ে ধৈর্য্য ধারন করাটাই শ্রেয়। আমাদের দেশের অধিকাংশ মানুষের এতো সঞ্চয় নেই যে তারা দীর্ঘদিন দোকান বন্ধ রেখে, ফ্যাক্টরি বন্ধ রেখে বা অফিস বন্ধ থাকার পরও এগুলোর ভাড়া যথা সময়ে দিতে সক্ষম হবে। তবে অনেক বাড়িওয়ালা, দোকান মালিক, ফ্যাক্টরির জায়গার মালিক বা অফিসের মালিকদেরও বিভিন্নরকম আর্থিক দায়বদ্ধতা থাকতেই পারে। তাই ঢাকাসহ সারাদেশের মানুষের কথা চিন্তা করে তিন মাসের দোকান ও বাড়ি ভাড়া, ফ্যাক্টরি ভাড়া এবং অফিস ভাড়ার ব্যাপারে সরকারের তরফ থেকে একটি সুষ্ঠু সমন্বয় একান্তই সময়ের দাবি।'​​​​​​​

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড