• মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩৮ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

রম্য গল্প : নিরুপায় পুরুষ

  মেহেদী হাসান তামিম

২৬ অক্টোবর ২০১৯, ১৪:৩১
গল্প
ছবি : প্রতীকী

‘দুনিয়ার পুরুষ এক হও, লড়াই করো’ পহেলাই বিশেষ প্রয়োজনে, বিশেষ প্রয়োজনীয় কিছু টিপস এবং সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি দেয়া যাইতেছে, — দুর্বল হৃদয়ের কোন পুরুষ, যাহারা কোন প্রকার চাপ গ্রহন করিতে পারেন না, দয়া করে এই লেখাটি পড়িবেন না। মনে রাখিতে হইবে, কোনোরুপ দুর্ঘটনা ঘটিয়া গেলে সে দায়ভার এ লেখকের নহে।

— কারো বিবি লেখাটি পড়িয়া ফেলিলে, বিবি সামলানোর দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট খসমের।

— সকল দোষ এই লেখকের উপর চাপাইয়া দিয়া, আপন আপন বিবিকে ধুনফুন বুঝাইয়া খসমগণ শিস বাজাইতে বাজাইতে ঘুরিয়া বেড়াইবেন, সে রকমের কোনোই সুযোগ নাই। পইপই করিয়া বলিয়া রাখিতেছি, আমি কোনোরুপ ঝামেলায় পড়িলে, যাহারা ও যাহারা এই লেখা লিখিবার জন্য বারবার বারবার করিয়া তাগাদা দিয়াছেন, ইন্ধন যুগাইয়া চলিয়াছেন, পত্র প্রেরণ করিয়াছেন, এসএমএস দিয়াছেন, প্রতিটি জিনিস অতীব যত্নের সহিত সংরক্ষণ করা হইয়াছে। প্রযোজ্য ক্ষেত্রে উইকিলিকস তার ভান্ডার ফুটাইতে এতটুকুন পিছপা হইবে না।

কতিপয় দিক নির্দেশনা - — দয়া করিয়া লেখাটিকে কেহ হাল্কা ভাবে গ্রহণ করিবেন না। কারণ সমাজের প্রতি পরতে পুরুষ নির্যাতনের এই ঘোর অকালে এমন বিলাসী ভাবনার অবকাশ আমাদের নেই।

— ইহাকে ভুল করিয়াও কেহ রম্য গালগল্প ভাবিবেন না। ইহা ভীষণই সিরিয়াস একটি বিষয় বটে। যার জানা সে-ই জানে। ওই একখানা পদ্যও এ বিষয়ের উপরেই তো আছে,

কি যাতনা বিষে বুঝিবে সে কিসে কভু আশীবিষে দংশেনি যারে।

(এখানে যথেষ্টই সম্ভাবনা রহিয়াছে কবি কামিনী রায় আশীবিষ বলিতে নারীকেই বুঝাইয়াছেন। সবসময় সব কথা সরাসরি বলাও তো যায় না।)

— দয়া করিয়া লেখাটি পড়িয়া কেহ হা হা ইমো মারাইবেন না। স্যাড ইমো ব্যবহার জায়েজ আছে।

— বাস্তবের কাহরো সহিত গল্পটি পাই টু পাই মিলিয়া যাবার সম্ভাবনা একশোতে একশো। কাজেই একমাত্র নিজেকে গল্পের কেন্দ্রীয় চরিত্র ভাবিয়া মন ভাঙিয়া টুকরো টুকরো করিবেন না, বালিশে মুখ চাপিয়া নিভৃতে ডুকরে কাঁদিবেন না।

— একান্ত কাঁদিবার প্রয়োজন অনুভব করিলে, বাথরুমে প্রবেশকরতঃ শক্তভাবে খিড়কি লাগাইয়া নেবেন। অতঃপর পানির কল ফুল স্পীডে সাই-সাই করিয়া ছাড়িবেন। তারপরই মন খুলিয়া কাঁদিবেন।

— মন চাহিলে হাউমাউ করিয়া ওরে বাবারে ওরে মারে প্রলাপ বকিতে বকিতে কাঁদুন, তবে কাউকে জড়ায় ধরিতে গিয়া ভুল করিয়া কমোড জড়াইয়া ধরিবেন না।

— মনে রাখিবেন, স্বীয় পত্নী সম্মুখে কোনোভাবেই ক্রন্দন করা যাইবে না। আঁখিজলের বেগ একান্ত সামলাইতে না পারিলে, কোনোরুপ আওয়াজ না করিয়া কাঁদিতে পারেন এবং নিজ পত্নী তাহা দেখিয়া ফেলিলে, আপনি ৪৮ দন্ত বিকশিত করিয়া চোখে জল ধরিয়া, হাসিতে হাসিতে কহিবেন, — আজকাল পোকামাকড়ের উৎপাত এমন বাড়িয়াছে, উহারা চোখকেও রেহাই দিতেছে না!

উপরের বিষয়গুলো অক্ষরে অক্ষরে মানিয়া চলিলে, ইন শা আল্লাহ অবলা পুরুষ জাতির বিজয় সুনিশ্চিতভাবেই টানেলের অপরপ্রান্ত হইতে আলো ছড়াইবে।

চলুন মূল বিষয়খানায় প্রবেশ করা যাউক।

‘মানুষ আমি,আমার কেন পাখির মতো মন ভাইয়া, পাখির মতো মন, ও ও ও’

মনে পড়িতেছে, ছোটবেলায় রাত্রিকালে চোখে রাজ্যের ঘুমের সাথে কি যুদ্ধটাই না হইত! শরীর জেগে থাকিতে চায় না, কিন্তু টেলিভিশন জাগাইয়া রাখে। বিশেষ করিয়া যখন এই বঙ্গদেশে শুধুমাত্র সাহেব বিবি গোলামের বাক্স হিসেবে উহার একচ্ছত্র আধিপত্য বিরাজ করিত। আঙ্গুলের ডগায় টিপাটিপির কোনো এন্তেজামও ছিল না। মানুষজন টিভি চ্যানেল এখন যত দ্রুততায় পার হইতে পারেন যে, নিশ্চিত করিয়া বলা সম্ভব নহে, আদতে তিনি কোন অনুষ্ঠান দেখবেন বলে বসিয়াছিলেন। শেষমেশ কোথায় গিয়া তিনি অবস্থান করিবেন ইহার সঠিক অনুমান করিতে পারাটা অষ্টম আশ্চর্যের বিষয়ই হইবে বটে। মাঝেমাঝে মান্না দা'র গানের মতো আমারো খুব জানতে ইচ্ছে করে। খুব জানতে ইচ্ছে করে, মানুষজন এখনো কি টিভি অনুষ্ঠান সময় মাথায় রাখিয়া খাওয়া-দাওয়া সারিয়া, গৃহস্থালি কাজবাজ সব আগে-আগেই শেষ করিয়া ফেলেন! তারপর সবাই মিলিয়া বৃত্তাকারে নাটক বা ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান দেখিতে বসিয়া পড়েন, পরিবারের সকলে একসাথে মজমা জমান!

ইচ্ছে হলে রিমোট টিপিয়া এদি-সেদিক-বেদিক ঘুরিয়া, দেখিতে থাকা অনুষ্ঠানের কথা বেমালুম ভুলিয়া, নতুন কোনো চ্যানেলের সাথে পিরিতি বান্ধিবার সুযোগ সে সময় ছিল না।

তাই বলা যাইতেই পারে, টিভির রিমোট আসিবার সাথে সাথেই বোধহয় ঘন ঘন পরিবর্তন অর্থাৎ যখন যাহা দেখা, তাহা ভালো লাগিয়া যাইবার স্বভাবখানা মনুষ্যমাঝ আসিয়া জাঁকিয়া বসিয়াছে।

কিছু ক্ষেত্রে অবস্থা তো এমন দাঁড়াইয়াছে, আপনার হয়ত একখানা আইফোন-৯ আছে, ব্যবহারও বেশীদিন করা হয় নাই, তবু বাজারে যখন লেটেস্ট ভার্সনেরটি নামিল, অন্যজনের হাতে তাহা দেখা পাইলেন, অমনি আপনার মনের মধ্যে বাকুম বাকুম শুরু হইয়া গেল। মস্তিষ্ক হইতে ছলাত ছলাত করিয়া ডোপামিন হরমোন বাহির হইতে শুরু করিল। আপনার অন্তরের মধ্যি ঘাপটি মারিয়া থাকা চাওয়া-পাওয়ার ইন্দ্রিয়বাবুটি লেলাইয়া উঠিলেন। আপনি গাড়ী চালাইতেন করোলা, খুব ভালো চলিতেছেও। এলিয়নের দাম কিছুটা কমিল, পড়িমরি করিয়া জি করোলা বিনিময়েও এলিয়নের পিছু ভিনগ্রহের এলিয়েনের মতো ছুটাছুটি শুরু করিলেন এবং তাহা আপনানো না পর্যন্ত আপনার সকল সুখ চাঙ্গে উঠাইয়া রাখিলেন।

প্রিয় কমরেডস, ঘাবড়াইবেন না। এইসব ঘটনায় আমাদের তো দোষ নাই। সব হলো ডোপামিনের খেলা। এই যে উথাল-পাথাল উড়ালপঙ্খী মন তা তার ফলাফলই বৈকি।

ধান ভানতে শিবের গীত গাওয়া আমার পুরান অভ্যেসে। কারো কাছে দাসখত দিয়েও লিখতে বসি নাই যে, আমি শিবের গীত আমি গাহিব না! কাউকে তো কোনোমতে কথাও দিই নাই, যে কোন মূল্যে ঘুরিয়ে-পেঁচিয়ে, গরু রচনা লিখতে একটাই পড়া ও পারা নদী রচনাই লিখিব না।আমার গরু আমি নদীতে নামাই আর আকাশেই উড়াই, কার তাতে কি! কাউকে তেমন কোনো কথা আমি দিইনি। তাহলে আমি লিখবই, শিবের গীত লিখব সলোমনের সংগীত গাইব। আপনার ইচ্ছে জাগিলে পড়িবেন, না জাগিলে পড়িবেন না। তবে মূল বিষয়টা হলো কি জানেন, যে যাহাই বলেন, করেন, মারেন, ধরেন, চলেন উৎসে ফিরতেই হয়। উৎসই মানুষের সকল সফলতার একমাত্র উৎস। উৎপত্তিস্থলের সাথে সম্পর্কহীন মনুষ্য বেজায় পতিত হইবেন ইহাই প্রকৃতির নিয়ম।

যে বিষয়টি নিয়া লিখিব বলিয়া মনস্থির করিয়াছিলাম, বোধ হইতেছে এইমাত্র সেই প্রারম্ভিকা প্রবেশ দ্বারে আসিয়া পৌঁছলেম। মূল বিষয় হলো পুরুষও মানুষ, তাঁদের কোমল হৃদয় আছে, ভালোবাসার শক্তি আছে, অন্তর দিয়ে অনুভব করার অনুভূতি। শুরুতে বলিয়াছিলাম মানুষের পাখ-পাখালি স্বভাবের ব্যাপারে, নতুন কিছুতে উৎসাহিত হবার ব্যাপারে, মনের শরীর-স্বাস্থ্য যুতসই রাখার ব্যাপারে (যদি না বলিয়াও থাকি আপনগুণে ধরিয়া লন বলিয়াছি)। কিন্তু লক্ষ্য করিয়া দেখেন, পুরুষেরা আজ সমাজের কোন স্তরে দাঁড়ায়ে! ঘরে ঘরে পুরুষেরা কি অমানবিক নির্যাতনের শিকার, কি পরিমাণ চাপ তাদের পীঠে রাখিয়া চাপাচাপি করা হইতেছে, কিন্তু কেহ মুখ ফুটিয়া তাহা এই নারীশাসিত সমাজে বলিতে পারিতেছেন না। পুরুষদের আজ এই সমাজে নারীরা মিথ্যেবাদী ভন্ড শঠ প্রতারক চরিত্রহীণ সীল মেরে দিয়েছেন। পুরুষের কেউ নির্যাতনের কথা বলতে গেলে এই সমাজ তাকে বিশ্বাস করছে না। বরং উল্টো তাকেই দোষী সাব্যস্ত করা হইতেছে। আহারে অবলা পুরুষ, তারা আজ পুরোপুরিভাবে নিরুপায়।

বিপ্লবী কমরেড-বন্ধুগণ, দেশের আইন কানুনের কথা একটিবার ভাবুন তো একটিবার। এ কেমন অসম আইন! পুরুষ বিদ্বেষী নিপীড়নমূলক আইন! নারী নির্যাতন রোধে শত শত বিধান আছে অথচ পুরুষ নির্যাতনের বিরুদ্ধে সমাজ আজ অন্ধ, সমাজ বোবা। তাদের রক্ষার জন্য একটি আইনও করা হয় নাই। এই অবলা পুরুষেরা কি এভাবেই এক পুরুষ থেকে আরেক পুরুষে বঞ্চিত, নিপীড়িত আর নির্যাতিতই হইতে থকিবে! বন্ধুগণ অধিকার আদায় করিয়া নেবার বিষয়। না চাইলে কেউ এখন বিষও দেয় না। কাজেই পুরুষ জাতিকে রক্ষা করিতে হইলে, তাদের সম্মান পুনরুদ্ধার করিতে হইলে পুরুষকেই সর্বপ্রথম এগিয়ে আসতে হবে। ঘরে ঘরে কঠোর আন্দোলন গড়ি তুলতে হবে, দুর্গ গড়িয়া তুলিতে হইবে। স্ত্রী রুদ্র মূর্তি দেখিয়া ভয়ে পিছপা হইলে চলিবে না, বিদ্রোহ করিতেই হইবে।

পুরুষেরা আজ কত অনিরাপদ, কি নিরুপায়! বিদ্রোহের কথা চিন্তা করিতেই তাহাদের জীবনের ঝুঁকি মনে আসিয়া করাঘাত করে। কেহই কোনো রিস্ক নেবার সাহস করিতেছেন না পাছে স্ত্রীর অকথ্য নির্যাতনে বাকী জীবনটুকু আরো বেশি স্বাদ-আহ্লাদহীন অবস্থাতে কেটে যায়। পুরুষ নিরাপত্তার অভাবে আজিকে ভয়াবহ বিপর্যয়ের সম্মুখীন — পরিবার, জাতি, রাষ্ট্র, পৃথিবী তথা এই মহাবিশ্ব। যেদিকেই তাকাইবেন কি দেখিবেন! দেখিবেন পুরুষ ভাইটির হাতে লাউয়ের ডগা উঁকি দিয়ে থাকা মস্ত এক বাজারফেরত ব্যাগ, নয়ত দেখিবেন ছানাপোনার দল পুরুষ ভাইটির কান্ধে পীঠে চড়িয়া, ঝুলিয়া নামিয়া চড়িয়া মারিয়া টারজান টারজান খেলিতেছে। আনো আর আনো শব্দটি শুনিতে শুনিতে পুরুষ সমাজ ডারউইনের বিবর্তন তত্ত্বের সত্যতা প্রমাণ করিয়া ক্রমশ আজ 'আনিস' জাতিতে পরিণত হইতেছে। পুরুষরা আজ পুষ্টিহীন। সে কি খাইবে, কতটুকু খাইবে পুরোটাই তাহার স্বৈরাচারী স্ত্রীর মর্জির উপর নির্ভর করিয়া থাকিতে হয়। সে যাহা রান্না করিয়া দিবে তাহাই গিলিতে হইবে, সে আপনার পছন্দ হউক অথবা না হউক। রান্নার ঘর থেকে ভীষণ ঘৃণিতভাবে পুরুষ জাতিকে আজ নির্বাসিত করা হইয়াছে।

পুরুষের উপর এমন অমানবিক নির্যাতন আর কতকাল চলিতে থাকিবে, কেহ বলিতে পারিবে না! ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়, সৃষ্টির আদি হতেই পুরুষেরা কত নিরুপায়, কি করে তারা বারবার ভুল পথে পা বাড়াইয়াছিলেন! আজকের পুরুষ জাতি শুধুমাত্র স্ত্রীলোকের হাতের পুতুল, হাতকড়া পরিহিত ক্রীড়ণক মাত্র। নারীরা যেমনে নাচান, পুরুষরা তেমনে নাচেন মাত্র। যে পুরুষ ভাইটি কোনোদিনই নাচ শিখিবার সুযোগ পাইল না, তাহাকেও আজ তাদের কথা মতো ধ্যাং ধ্যাং করিয়া নাচিতে হইতেছে। উঠোন বাঁকা বলিয়া যে নাচিবেন না, স্ত্রী'র কোমরে গোঁজা শাড়িতে হাতে ঝাড়ু নেয়া রুদ্রমূর্তির সামনে সে বলিবারও উপায় নেই। ভবেতে পুরুষের আগমন তবে কি শুধুমাত্র তাহাদের নির্দেশমতো নাচানাচি করার জন্য! কেন এই প্রহসনের জীবন! আর কত হায় আফসোস, হায় হায়, কত! সুন্দর কিছু দেখিয়া এদিক সেদিক যে ঘাড় ঘুরাইবেন তারই বা উপায় কোথায়। ঘাড় ঘুরাইয়া অকাম-কুকাম যে যাই করুক, পুরুষ জাতির এই অত্যাবশকীয় মৌলিক মানবিক অধিকার কেউ তো হরণ করিতে পারেন না! তাহা ছাড়া ইহাতে পুরুষ স্বাস্থ্য আজ বিশাল ঝুঁকির সম্মুখীন। ঘাড় না ঘুরাইতে ঘুরাইতে, বহু পুরুষ সমাজে আজ ফ্রোজেন সোল্ডারের মতো সমস্যা মোকাবিলা করিতেছেন।

আমার বৌ তো সরাসরি বলিয়াই দিয়াছে, অন্য কোনো দিক এদিক-সেদিক উঁকিঝুকি দিলেও নাকি আমার কপালে শনির দশার সাথে, রবি বুধও নাকি আসিবে। কোনোদিকে কিছু করা তো দূর কি বাত, মাথা ঘুরাইলেই নাকি বটি দিয়ে জায়গামতো কোপ মারিবে। তারপর কাওরান বাজারের কসাই সগীর ভাই সাহেবকে দিয়ে সেটা নাকি ছোট ছোট পিস করিয়া, ছড়াইয়া ছিটাইয়া কাক পক্ষীকে খাওয়াইবে। যার কেউ নাই,।আল্লাহই তার একমাত্র মাবুদে এলাহী। আমি জিজ্ঞেস করিবার ধৃষ্টতা দেখাইতে পারি নাই, হে পরম করুণাময় তুমিই জানো, জায়গামতো বলিতে সে কি বুঝাইয়াছে।

তবে ভাইসব এই বলিয়া রাখিতেছি, আমি কিন্তু ভীষণ সাহসী একজন বীরপুরুষ। বৌয়ের বেশীরভাগ কথাকেই পাত্তা দেই নাই। কিন্তু এই কথাটিকে ফেলিয়া দেওয়া যাইতেছে না। হাজার হউক বিষয়টা তো জায়গার। তেমন যদি ঘটাইয়াই ফেলে কি শরমের কথা হবে একবার ভাবুন। সেই জায়গা যদি হয়, না যায় কাহাকে সেটা দেখানো, না যাইবে তা দেখাইয়া প্রমানসমেত প্রতিবাদ করা, বিষয়টা কি বিরাট মান ইজ্জত চলিয়া যাইবারই না হইবে!

দাঁতে দাঁত চাপিয়া বহুকাল সহ্য করিয়া আসিতেছিলাম, কারন এতদিন কেবল সবজি কাটার বটিখানাই দেখাইয়া ভয় দিত। কিন্তু কদিন আগে আমার সমুখেই, জোরে জোরে শুনাইয়া কসাই সগির আলী ভাইকে ফোন করিয়া কথা বলিতে লাগিল। নিজ কর্ণ শ্রবণ করিলাম, গরু জবাই করার যন্ত্রের নাম করিয়া স্পেশালভাবে ধারালো অস্ত্র বানাইবার অর্ডার করিল।

সেটা ডেলিভারি পাইবার পর থাকিয়া তাঁহার চেহারা এবং ভাবভঙ্গি ও বাচনেও যেন আমূল পরিবর্তন ঘটিয়া গেল। সেদিন হইতে সর্বদাই কেমনজানি একরুপ ক্রুর হাসি তাহার ঠোঁটের কোণে যেন লাগিয়াই থাকে। ইদানিং সরাসরি আমার চোখে চোখ দিয়াও শাসাইতেছে না। বরং মাঝে মাঝে সেই ধারালো অস্ত্র খাটের তলা হইতে বাহির করিয়া আমার সামনে নাড়াচাড়া করিতে থাকে। আবার রোদের আলোতে তেড়চা ভাবে সেই অস্ত্র ঘুরাইয়া ফিরাইয়া আমার চোখেই আলো ঝিলিক মারিবার অপচেষ্টাও চালাইতে থাকে। এমন অমানবিক মানসিক নির্যাতন কাহাতক আর চলতে দেওয়া যায়! সত্য কথা বলিতে কি, সবজি কাটার ছুরি দেখিয়া অত ভয় হইত না, কিন্তু ইদানিং এই অস্ত্রের সামনে বুক কাঁপিয়া উঠে, রীতিমতো বুকে ছন্যাৎ করিয়া শব্দ উঠে।

মনে রাখিতে হইবে, পুরুষের ক্ষয়ে যাওয়া, হারিয়ে ফেলা হৃত অধিকার ফেরত আনিতে হইলে, কাঁধে কাঁধ মিলাইয়া ঐক্যবদ্ধ লড়াইয়ের বিকল্প আর কিছুই নেই। কোথাও কোনো ঘরে আমাদের কোন ভাই নির্যাতিত হবার খবর আসিলেই সাথে সাথে, ফেসবুকে ফেক আইডি বানিয়ে, তাহা থেকে পোস্টের পর পোস্ট দিয়া, আপনা ভাইটিকে রক্ষায় ঝাঁপিয়ে পড়িতে হইবে। আসল আইডি ব্যবহার করিয়া আন্দোলনের শুরুতেই নারীগণ দেখিয়া ফেলিলে তা ব্যর্থ হইা যাইতে পারে। ভুল কোন ফাঁদে এই ক্রান্তিকালীন সময়ে পুরুষদের কোনোভাবেই পা দেওয়া যাইবে না।

মনে রাখতে হবে, শত নির্যাতন, অত্যাচার, নিপীড়ন, শারীরিক আঘাত কোন অবস্থাতেই আপন বৌয়ের নিকট আন্দোলনের সাথে আপনিও যে সম্পৃক্ত, তাহা স্বীকার করা যাইবে না। এতদিন ঠিক যেভাবে, যেমন করিয়া ভেজা বেড়ালটি হইয়া বৌয়ের সামনে মিউ মিউ করিতেন, শ্বশুর বাড়ীর লোকজনের সামনে ভাজা মাছটি উল্টাইয়া খাইতে পারেন না, যেমন করিয়া ভাব ধরিয়া থাকিতেন, ঠিক সেভাবেই চলিতে থাকিবেন। নারী জাতির সন্দেহ গ্রন্থিখানা কি করিয়া যেন ভীষণ প্রখরতা লাভ করিয়াছে। তাহাদিগকে একবার সন্দেহ করার সুযোগ দান করিলেই সব কেঁচেগন্ডুষ হইয়া যাইবে। ঘুণাক্ষরেও এই আন্দোলনের গতি প্রকৃতি নেতা রুপরেখা কোনো কিছু সম্পর্কেই তাহাদের কোনোরুপেই টের পাইতে দেওয়া যাইবে না। প্রথমদিকেই কোন নির্যাতিত ভাই বউয়ের কাছে ধরা খাইয়া গেলে, স্ট্রাটেজিক ভাবেই আমাদের আন্দোলনখানা দুর্বল হইয়া যাইবে। এজন্য সহস্রভাগ সাবধানতা অবলম্বন করিতেই হইবে। স্ত্রী জাতিরা এ বিষয়টি জেনে গেলে, শুধু ডিজাস্টার না, মহা ডিজাস্টার হইয়া যাইবে— পায়ে শেকল বাঁধিয়া ঘরে বন্দী হইয়া থাকিবার সম্ভাবনাকেও উড়াইয়া দেওয়া যাইবে না। ভাইরা, খুব ভেবেচিন্তে সুকৌশলে আগাইতে হবে। একটা কথা কোনোভাবেই ভুলে গেলে চলবে না, ওরা অবস্থানগত কারনেই কিছু নয়, পুরোটাই এডভান্টেজ পাবেন— কারন আমাদের দেশের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নারী, বিরোধী দলীয় নেতা নারী, প্রধান বিরোধী দলের নেতা, তিনিও একজন নারীই। তবে এতো আগুপিছু ভাবিয়া আর যাহাই হোক, আন্দোলন হইবে না। কাজেই আমাদের দুর্বলতাগুলোকেই শক্তিতে রুপান্তরিত করিতে হইবে।নারীদের সহিত কাঁধে কাঁধ মিলাইয়া এক কাতারে দাঁড়াইবার সময় এখনই। পুরুষদের রক্ষায় নারী নির্যাতনের মতো যুঁতের শক্ত আইন করিতে হইবে। এবং শুধুমাত্র আইন করিয়া, কাজীর গরু গোয়ালে রাখিলেই দায়িত্ব শেষ হইবে না। আইনটি দস্তুরমতো প্রয়োগের জন্য সক্রিয় ভূমিকা পালন করিতে হইবে।

এই পুরো আন্দোলনকে ভীষণ গোপন ভাবে সম্পন্ন করিতে হইবে। মনে রাখিতে হইবে পুরুষমাত্রই ভাই ভাই, কোথাও কিন্তু বলা নেই এবং বাস্তবতাতেও তাহা হয় না — নারীমাত্রই বোন। বিষয়টি তাই যে কোনো মূল্যেই গোপন রাখিতে হইবে। দয়া করিয়া বিষয়টি দেখিবেন, এমনকি আমার বৌ ঘুণাক্ষরেও যেন না জানিয়া যায়, এই আন্দোলন ডাকের মূল কারিগর আমিই। ইয়ে মানে, তাহাতে মার্ডারও হইয়া যাইতে পারে।

পুরুষ ভাইয়েরা আপনারা যারা আইনের মানুষ তারা কি আইন বানানো যায় তাহা গবেষণা শুরু করিয়া দিন। 'প্রিয় ফুল খেলবার দিন নয় অদ্য'— ভাইয়ের বিপদে ভাইকেই আগাইয়া আসিতে হইবে, তাহাই কি নহে ভাই! আরেকটা বিষয় অন্য কিছু নহে, নিতান্ত কৌতূহলবশত জানিতে ইচ্ছে জাগিতেছে। কেহ জানিলে দয়া করিয়া জানাইবেন, এমনতর গরু জবেহর ধারালো অস্ত্রধারন এবং তা প্রদর্শনের বিরুদ্ধে শক্ত কেনো আইনের ধারা আছে কি! বুঝিয়া শুনিয়া তেমন পাইলে, একখানা মামলাও তবে ঠুকিয়া রাখিব ক্ষণ। তবে ভাই আবারো অনুরোধ করিতেছি, বিষয়টি গোপনীয়, কোনভাবেই তা আমার বেগমের কান পর্যন্ত যেন না পৌঁছাইতে পারে। তাহা হইলে আমার ইয়া নফসি, ইয়া নফসি মন্ত্র পড়া ছাড়া আর কোনো গত্যন্তর থাকিবে না। তাতে আপনাদেরও ক্ষতি কিন্তু কম নহে, শক্ত এই যুদ্ধের ময়দান হইতে আমার মতো সাহসী একজন যোদ্ধাকেও হারাইবেন। আবার ভাবিবেন না, বিষয়টিতে আমি ভয় পাইতেছি। বিষয়টি আসলে তা না, এটা হলো যুদ্ধ কৌশল। স্ট্রাটেজি ভাই স্ট্রাটেজি।

নিরাশার পাখিও আমি নই, কারন আমি ভালো করিয়াই জানি। জানি যে, আপনি এই মুহূর্তে বসিয়া ভাবিতেছেন আপনার নির্যাতিত হবার ঘটনা, একমাত্র আপনার সাথেই ঘটিত। এতদিন সে ভেবেই তা চাপিয়াও গিয়াছেন, লজ্জার বিষয় ঠাওর করিয়া গোপনও রাখিয়াছিলেন। ভাইজান ভুল, ভুল। একেবারে মহা ও ডাহা ভুল। আজকের পুরুষ প্রত্যেকেই স্বগৃহে নিগ্রহ বিগ্রহের ভয়াবহ শিকার। হুমকির সমুখে দাঁড়াইয়া সকলে মুখ বুজিয়া শুধু সংসারধর্ম পালন করিয়াই চলিতেছেন। কিন্তু কোনো পুরুষের মনে শান্তির লেশমাত্র নেই। যুগ যুগান্তর হইতে এই অবলা পুরুষ জাতির হয়ত হাতে গোনা ০.১ ভাগ ভাই ভুল করে প্রতিবাদ করিয়াছিলেন। সেই অকথ্য অমানবিক নির্যাতন প্রকাশ করার সাহস দেখাইয়েছেন। তারপর সেই বীর ভাইয়ের কোনো খবর কি আমরা রাখতে পেরেছি, না কোনো খবর পেয়েছি। একমাত্র মাবুদে এলাহীই জানেন, প্রকাশ পরবর্তী দিনগুলি তাঁহারা কি রুপে গুজরাইয়াছেন। প্রকাশ করিবার সাহস যাহারা এখনো আনিতে পারেন নাই, তাহারাই এখনো এই দেশে, এই সমাজে সংখ্যা গরিষ্ট। উহা প্রায় ৯৯.৯৯% হইলেও অবাক হইবার কিছু নেই। তাহারা সকলেই পিছিয়ে পড়া পুরুষ গোত্রেরই প্রতিনিধি মাত্র।

পুরুষ কমরেডগণ, সময় আসিয়াছে সিদ্ধ ডিম মুখে লইয়া চর বসিয়া থাকা চলিবে না। নিজ মান মর্যাদা ফেরত আনিতে হইলে গর্জে উঠিতে হইবে, ফুঁসিয়া উঠিতেই হইবে। সমাজের অবহেলিত অনালোকিত পুরুষ জাতিকে সকল মারধর, নির্যাতনের বিরুদ্ধে জেগে উঠার ঘন্টা বাজিয়া গিয়াছে। অতিরিক্ত সতর্কতা হিসেবে, প্রত্যেকে বাটি চালাইয়া নিশ্চিত হইয়া নিবেন, ভাবি সাহেবা ধারালো কোনো কিছু গোপনে কিনিয়া রাখিয়াছেন কিনা! সবসময় মনে রাখিতে হইবে, সাবধানেরও মাইর নাই গো ভাইয়ু।

বন্ধুগণ সময় তাই এখনই, সময় তাই শুরু এখানেই। নইলে পিছিয়ে পড়া পুরুষ জনগোষ্ঠী শেষমেশ ইতিহাসের আস্তাকুঁড়েই নিক্ষিপ্ত হইবে। পরবর্তী প্রজন্মের পুরুষদের জন্য একটি বাসযোগ্য পৃথিবী গড়িয়া যাওয়াই হউক এই ক্ষণ হইতেই প্রতিটি পুরুষ জীবনের একমাত্র লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য। চলুন আমরাই গড়িব, আমাদের ইতিহাস, আগামীর পৃথিবী।

পুনশ্চ - আমার জন্য একটু দিল খুলিয়া দোয়া করিবেন। মানে, এই লেখা উনার চোখে পড়িবার আগের ও পরের পরিবেশে নিশ্চয়ই বিস্তর ফারাক থাকিবে। যাহাই হোক, পরাজয়ে তবুও ডরে না বীর। বিনা যুদ্ধে নাহি দিব সূচাগ্র মেদিনীও।

ভাইগো হইল কি, মাবুদে এলাহীই জানে! পাশের ঘর থেকে একটা বিকট চিৎকার কানে আসিতেছে। বিল্ডিং ফাটানো চিৎকার! শুনিতে পাইতেছি, কণ্ঠটি পরিচিত মনে হইতেছে, চিৎকারখানা সম্ভবত আমার বউয়েরই! না, না, সম্ভবত বলিয়াই পৃথিবীতে কোনো শব্দ নাই, আমি স্পষ্ট শুনিতে পাইতেছি, আমি নিশ্চিত হইয়াছি, উনি আমার বউ-ই। সে কি, তিনি চেঁচাইতেছেন আবার আমার নাম ধরিয়াই, - তামিম, আরে, ওই তামিম... বেডায় মরল নাকি... সারাক্ষণ মোবাইল নিয়া... দাঁড়া তোরে মোবাইলই খাওয়াইতেছি... ওই..হেই... ওইইইইই ...

আমার বুকে ফের ছন্যাত করিয়া কি যেন আওয়াজ হইল। ভীষণ কোমল, খুব মোলায়েম সুরে যেন অটোমেটিকই আমার কণ্ঠ হইতে শব্দমালা বাহির হইতে থাকিল,

— ওগো জানু আসতেছি! জান্টুস পাখিটা এত জোরে কথা বলে না, তোমার কষ্ট হচ্ছে তো! অফিসের মেইলটা চেক করছিলাম, এক সেকেন্ডের মধ্যে আসতেছি...

এ কি বিড়বিড় করে বলা আমার কথাগুলো আমার কানেই আতংক হয়ে বাজছে যে! কি মুশকিল, কি মুশকিল! বুকে ধক্ ধক্ বাড়ছে কেন! হতে পারে গ্যাস্ট্রিক! গ্যাস্ট্রিক! কিছু বুঝে উঠতে পারছি না...

ভাইরা আজ যাইতেছি। খাস নিয়তে একটু দোয়া কইরেন ভাই। হে আল্লাহ মানীর মানসম্মান তুমিই রক্ষা কোরো। আমিন। ছুম্মা আমিন। (মনে মনে পড়তে শুরু করেছি, সূরায়ে আয়াতুল কুরসী, আল্লাহু লা ইলাহা ইল্লাহু, ......)

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড