• মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩৬ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

ধারাবাহিক উপন্যাস : মেঘ বর্ষণ (৭ম পর্ব)

  রিফাত হোসেন

২১ অক্টোবর ২০১৯, ১৪:৫৭

সায়েমের ইচ্ছে করছে লোকটার চুলহীন টাক মাথাটা ফাটিয়ে দিতে। একেই শরীরে ১৬০ ডিগ্রি রাগ ছিল, এই লোকটার কথা শুনে সেটা বেড়ে গিয়ে ৩২০ ডিগ্রিতে দাঁড়িয়েছে। যাই হোক, বয়স্ক লোক। এইসব কিছু ভুলেও করা যাবে না। তাই রাগটাকে দমিয়ে রাখল সায়েম। বাড়িওয়ালা নিজের সবগুলো দাঁত বের করে খিলখিল করে হাসতে লাগল। রাগে গজগজ করতে করতে দরজা খুলে ভিতরে ঢুকে গেল সায়েম। বাড়িওয়ালা ওখানে আর দাঁড়িয়ে না থেকে নিজের ঘরের দিকে চলে গেলেন। ড্রায়িংরুমে গিয়ে একটা চেয়ারে বসে জুতোর ফিতে খুলায় ব্যস্ত হয়ে পড়ল সায়েম। কিছুক্ষণ পর হঠাৎ পিছন থেকে কেউ গলা জড়িয়ে ধরতেই চমকে উঠল। চোখ দু’টো বাঁকা করে গলায় জড়ানো হাত দু'টোর দিকে তাকিয়ে মৃদু হাসি দিলো। এরপর জুতোর ফিতে ছেড়ে দিয়ে একটা হাত ধরে পিছনে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষটাকে সামনে নিয়ে এসে বলল, ‘আমার বোনটাকে আজ একটু বেশিই আনন্দিত মনে হচ্ছে, কারণটা কী জানতে পারি?’

ইতি একটা চেয়ার টেনে সায়েমের সামনে বসল। এরপর সায়েমের হাতটা শক্ত করে ধরে বলল, ‘তোমার এই বোনটা আজ নিজের স্বপ্ন পূরণ করতে পেরেছে ভাইয়া। সাথে তোমার-ও৷ তুমি তো চেয়েছিলে আমি প্রতিষ্ঠিত হই। সমাজে যেন মাথা উঁচু করে চলতে পারি। সেইভাবেই তো আমাকে দেখতে চেয়েছিলে, তাই না ভাইয়া?’

- হ্যাঁ।

ইতি হেসে দিয়ে বলল, ‘আমি চাকরি পেয়েছি ভাইয়া। জীবনে এই প্রথম কোনো অফিসে ইন্টারভিউ দিয়েছি আমি। আজকের এই ইন্টারভিউটা আমার জন্য একটা যুদ্ধ ছিল। এবং এই যুদ্ধে আমি সফল হয়েছি। তোমার-ও তো আমাকে নিয়ে অনেক স্বপ্ন ছিল। সেই স্বপ্ন পূরণ করতে পেরেছি আমি ভাইয়া। আমি আজ খুব খুশি।’

সায়েমের চোখ দু’টো ছলছল করছে। ও কী বলবে ভেবে পাচ্ছে না। কথায় আছে না, অতি আনন্দে-ও মানুষ কান্না করে দেয়। সায়েমের ক্ষেত্রেও তেমনটিই হচ্ছে এখন। এই মুহূর্তে চিৎকার করে কাঁদতে ইচ্ছে করছে ওর। ও পেরেছে! বাবাকে দেওয়া চ্যালেঞ্জ এ জিততে পেরেছে ও। সেদিন আনিস উদ্দিনকে চ্যালেঞ্জ করে বলেছিল সায়েম, ‘আজ আমি বোনকে সাথে নিয়ে চলে যাচ্ছি। এখন থেকে আমার একটাই লক্ষ্য, তা হলো নিজের দায়িত্বশীলতা প্রমাণ করা। শুধু অন্যের ভরসায় নয়, এই সায়েম নিজের ভরসাতে বাঁচতে পারে। এবং শুধু নিজে না, পরিবারের সবার দায়িত্ব নেওয়ার ক্ষমতা রাখে এই সায়েম। আমি এই বাড়িতে আবারও আসবো, যেদিন নিজের লক্ষ্য পূরণ করতে পারব। আপাতত আমার দায়িত্ব হলো, বোনের স্বপ্ন পূরণে সাহায্য করা। ওর পাশে থেকে ওকে সাপোর্ট করা। এবং এই কাজটা করে আমি ফিরে আসবো। শুধু তাই নয়, আমি এমনভাবে ফিরে আসবো, যাতে করে বোনের সাথে সাথে এই পরিবারের সবার দায়িত্ব নিতে পারি। শুধু বাবার টাকায় সারাজীবন পাড় করব না আমি। তোমার এই খারাপ ছেলে এখন থেকে ভালো হবে। দায়িত্বশীল হবে। লাইফ নিয়ে সিরিয়াস হবে। কথায় কথায় আমাকে বেপরোয়া আর অসভ্য বলতে, তাই না? আমি চ্যালেঞ্জ করছি, এমন একদিন আসবে, যেদিন আমার সফলতা দেখে আজকের এই ভুল সিদ্ধান্তের জন্য অনুশোচনা হবে তোমার।’

আনিস উদ্দিন যে সেদিন চুপচাপ সায়েমের কথা শুনছিলেন, তেমনটা নয়। সে-ও একঝাঁক আত্নীয়দের সামনে সায়েমকে অপমান করেছিলেন। অনেক কটূক্তি-ও করেছিলেন তিনি। সেজন্যই বাড়ি থেকে বেরিয়ে এসেছিল ওরা দু’জন।

সায়েমকে চুপ থাকতে দেখে ইতি বলল, ‘চুপ হয়ে গেলে কেন ভাইয়া? তুমি খুশি হওনি?’

চোখ মুছে সায়েম বলল, ‘খুশি হবো না কেন? আজ তোর জন্য বাবার সাথে করা চ্যালেঞ্জ এ জিততে পেরেছি আমি। এবার বাবার সব ধারণা ভেঙে যাবে।’

ইতি হাত কচলাতে কচলাতে বলল, ‘আমাকে বলেছিল , তুই এখনো বাচ্চা মেয়ে৷ চাকরিবাকরি করার বয়স হয়নি তোর।" অথচ এই ছোট্ট মেয়েটাকেই বিয়ে দিয়ে দিচ্ছিল। বজ্জাত বাবা একটা।’

সায়েম হাসতে হাসতে বলল, ‘অদ্ভুত একটা লোক সে। কখন যে কী চায়, নিজেও জানে না।’

- ঠিক তাই।

- আচ্ছা, তুই বাইরে কোথায় গিয়েছিলি?

- অফিস থেকে বেরিয়ে ফাহাদ ভাইয়ের সাথে দেখা করতে গিয়েছিলাম। তার সাথে দেখা করে দুপুরে বাড়িতে এসেছি। আমার কাছে তো এক্সট্রা চাবি ছিলই। সেটা দিয়েই ভিতরে এসে ঘুমিয়েছিলাম কিছুক্ষণ। এরপর সারা আপুর মায়ের সাথে গল্প করার জন্য উপরের তলায় গিয়েছিলাম। এখনই ফিরলাম ওখান থেকে।

- ওহ্ আচ্ছা। ঠিক আছে, আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি।

সায়েমের কথায় সম্মতি জানালো ইতি। সায়েম জুতো খুলে নিজের ঘরে চলে গেল।

পরেরদিন সকালে অফিসে যাওয়ার জন্য রেডি হচ্ছিল সায়েম। ইতি একবারও ওকে ডাকতে আসেনি আজ। অবশ্য তার প্রয়োজনও হয়নি। কারণ ইতির ডাকাডাকি ছাড়াই সায়েমের ঘুম ভেঙে গেছে আজ। আকাশী-নীল রঙের শার্ট, আর কালো প্যান্ট পড়েছে সায়েম। কড়া করে পারফিউম দিয়েছে শরীরে। স্পেশাল দিন নয়, তবুও কেন জানি কড়া করে পারফিউম দিতে ইচ্ছে করল। এলোমেলো চুলগুলো হাত দিয়ে ঠিক করে নিলো। ইং করে পুরো পারফেক্ট বয় হয়ে রুম থেকে বের হয়ে ড্রয়িংরুমে এলো। সোফায় বেশ কিছুক্ষণ বসে থাকার পর-ও ইতির দেখা পেলো না ও। এমনিতে এই সময়টাতে ইতি রান্নাবান্নায় ব্যস্ত থাকে। আজকে হঠাৎ করে এমনটা হওয়াতে বেশ অবাক হলো সায়েম। ইতির ঘরের দিকে তাকিয়ে দেখে দরজাটা খোলাই আছে। সায়েম ইতির ঘরের সামনে গিয়ে দেখে, ইতি আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে চুল আঁচড়াচ্ছে। পা টিপে টিপে একপা দু'পা করে রুমের ভিতরে ঢুকলো সায়েম। মিটমিট করে হেসে মনে মনে বলল, ‘দারুণ একটা সুযোগ পেয়েছি। একদম চমকিয়ে দিবো ওকে। সবসময় আমাকে চমকে দেয়, তাই না? আজ ওকে দেখিয়ে দিবো, আমিও পারি।’

সায়েম আবারও মৃদু হাসি দিয়ে আস্তে আস্তে ইতির দিকে এগোতে লাগল। ঠোঁটের কোণে এক চিলতে হাসি নিয়ে ইতি মনে মনে বলল, ‘বোকা ভাই আমার। ভাবছে আমাকে চমকে দিবে। অথচ আয়নায় ওর সব কর্মকাণ্ড দেখতে পাচ্ছি না।’

সায়েম আস্তে আস্তে ইতির পিছনে গিয়ে দাঁড়াল। - ঘরে একটা বেড়াল ঢুকেছে। কেউ লাঠিটা নিয়ে আয় তো। চুল আঁচড়াতে আঁচড়াতে কথাটা বলল ইতি। সাথে সাথে থমকে গেল সায়েম। একদিক দিয়ে রাগ হচ্ছে এটা ভেবে যে, ইতি ওকে বেড়াল বলেছে। অন্যদিকে এটা ভেবে অবাক হচ্ছে যে, সামনের চোখ দু'টো দিয়ে পিছনে থাকা সায়েমকে দেখল কীভাবে ইতি? যাই হোক, রাগের মাত্রাটা একটু বেশি থাকায় অবাক হওয়াটা আপাতত স্থগিত রাখল। ইতির পাশে দাঁড়িয়ে আড়চোখে একবার দেখল ইতিকে। সায়েমের রাগী মুখটা দেখে শব্দ করে হেসে উঠল ইতি। সায়েম রাগটা আর সামলাতে না পেরে পাউডার বক্সের ক্যাপটা খুলে সব পাউডার ঢেলে দিলো ইতির মাথায়। ইতির শ্যাম্পু করা কালো কুচকুচে চুলগুলো সাদা দবদবে হয়ে গেল মুহূর্তের মধ্যেই। তা দেখে পুরো শরীর ঝাঁকিয়ে হাসতে লাগল সায়েম। যেন বিশ্বের বিখ্যাত কোনো জোঁকারের কাছ থেকে জোক্স শুনেছে। এদিকে সায়েমের শরীর ঝাঁকানো হাসি দেখে রাগে ফুসতে লাগল ইতি। এটাই যথেষ্ট ছিল। শুরু হয়ে গেল দু'জনের মাঝে মারামারি। ইতি সায়েমের হাত থেকে পাউডারের বক্স কেড়ে নিয়ে নিলো। এরপর বাকি সব পাউডার সায়েমের দিকে ছুড়ে মারতে লাগল। সায়েম হাত দিয়ে ইতির চুলগুলো সব এলোমেলো করে দিলো। এতে আরো কয়েকগুণ রেগে গেল ইতি। পাউডারের বক্স ফেলে দিয়ে হাতে তুলে নিলো লিপস্টিক। বিছানার উপরে ওঠে কিছুটা উঁচু হয়ে নিলো। তা দেখে হাসতে লাগল সায়েম। ইতি নিজের দাঁতগুলো চেপে ধরে বলল, ‘দাঁড়া-ও, তোমাকে দেখাচ্ছি মজা। এতবড় সাহস তোমার, আমার সাথে লাগতে এসেছে।’

সায়েম কিছু বুঝে উঠার আগেই ইতি ওর পুরো মুখে লিপস্টিক লাগিয়ে দিলো। সায়েম-ও হার মানার ছেলে নয়। ইতির হাত দু'টো চেপে ধরে নিজের একটা হাতের মুঠোয় বন্দি করে নিলো। ইতি নিজের সব শক্তি দিয়ে হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করছে আর বলছে, ‘এটা চিটিং, এটা চিটিং, তুমি আমার সাথে আর পারছ না বলে হাত আটকে ধরেছ। কিন্তু এটা নিয়মের বাইরে। তুমি চিটিং করছ ভাইয়া।’

সায়েম হাসতে হাসতে বলল, ‘সায়েম যে হেরে যাওয়ার ছেলে নয়, সেটা প্রমাণ করে দিচ্ছি। ওয়েট।’

সায়েম আরো শক্ত করে ইতির হাত ধরে মেকাপ বক্সের পাশ থেকে কাজল নিয়ে ইতির পুরো মুখে লাগিয়ে দিলো। এরপর হাত ছেড়ে দিয়ে খিলখিল করে হাসতে লাগল। হাত ছাড়া পেয়ে বিছানা থেকে লাফ দিয়ে নেমে পড়ল ইতি। আয়নায় নিজের মুখটা দেখে চেঁচামেচি শুরু করে দিলো। সায়েম আরো জোরে জোরে হাসতে লাগল। সেই সাথে এমন করছে, যেন বিছানায় গড়াগড়ি খেতে ইচ্ছে করছে ওর। ইতি ওর দিকে এগিয়ে এলেই দৌড়ে ড্রয়িংরুমে চলে এলো সায়েম। পিছনে পিছনে ইতি-ও এলো। হঠাৎ কলিংবেল বেজে উঠায় থেমে যায় দু'জনে। দু'জনেই একে অপরের দিকে একবার তাকায়, আবার দরজার দিকে তাকায় একবার।

কিছুক্ষণ নীরবতা দু'জনের মাঝে। বারবার করে কলিংবেল বাজতে থাকায় সায়েমকে চোখ রাঙিয়ে বলল দরজা খুলে দিতে। সায়েম -ও কোনোকিছু না ভেবে দরজা খুলে দিলো। দরজা ওপাশে দাঁড়িয়ে ছিল সারা। সায়েম আর সারার মধ্যে চোখাচোখি হতেই লজ্জায় চোখ নামিয়ে নিলো সায়েম। সারা হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে রইল সায়েমের দিকে। সায়েম দরজার সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়াল। সারা ওকে পাশ কাটিয়ে ড্রয়িংরুমে প্রবেশ করতেই ইতির দিকে নজর দিলো। ইতির চোখেমুখের অবস্থা দেখে ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেল সারা। মনে মনে সারা বলল, ‘এদের এই অবস্থা কেন? একজনকে রাক্ষস, আরেকজন কে পেত্নীর মতো লাগছে।’

সারার ইচ্ছে করছিল কথাটা ওদের বলতে৷ কিন্তু কথাটা বলা ঠিক হবে কি-না বুঝতে পারছে না ও৷ কিন্তু এইসব নিয়ে ভাবার এত সময়-ও নেই। তাই ইতির দিকে তাকিয়ে বলল, ‘তোমরা কী মেকাপ এর প্রচারণা করছ? সেজন্যই কী নিজেদের মুখে এইসব লাগিয়ে রেখেছ? যাতে করে তোমাদের দেখাদেখি অন্যরা-ও ওগুলো কেনাকাটায় উৎসাহিত হয়।’

সারার কথা শুনে দরজার ওখানে থেকে কিছুটা এগিয়ে এলো সায়েম। ইতি কিছু না বলে চুপ করে নিজের ঘরে চলে গেল। সায়েম রাগে ফুসতে ফুসতে বলল, ‘সবসময় উল্টো পাল্টা কথা বলে ঝগড়া না করলে আপনার পেটের ভাত হজম হয় না, তাই না? আমাদের এই অবস্থায় দেখে প্রথমে আপনার এটাই মনে হলো যে, আমরা কাজল আর লিপস্টিক এর প্রচারণা করছি। কেন, অন্যকিছু কী ভাবা যেতো না?’

- আসলেই আপনি একটা রাক্ষস। কিন্তু রাক্ষস বললে খারাপ দেখায়, সেজন্য কাজল আর লিপস্টিক এর প্রচারণার কথাটা বললাম। তবুও সেই ঝাড়ি খেতেই হলো। এখন তো মনে হচ্ছে রাক্ষস বললেই ভালো হতো।" কথাটা বলতে চেয়েও কেন জানি বলতে পারল না সারা। ওর প্রবলভাবে ইচ্ছে করছে সায়েমকে একটু ঝাড়ি দিতে। কিন্তু পারছে না।

সায়েম আবারও বলল, ‘কী হলো চুপ করে আছেন কেন?’

সারা মাথা নিচু করে বলল, ‘হয়। ঝগড়া না করলেও আমার পেটের ভাত হজম হয়।’

- কই দেখি?

- কী?

- আপনি পেট।

সারা মাথা তুলে ভ্রু-কুঁচকে তাকালো সায়েমের দিকে। চোখ দু'টো বড় বড় করে তাকিয়ে রইল ও। কিছুক্ষণ তাকিয়ে চোখ দু'টো নিচে নামিয়ে নিলো। ইদানীং সায়েমের চোখের দিকে তাকানোর সাহস পায় ন সারা। সায়েমের ঠোঁটের সাথে সাথে সায়েমের চোখে-ও আকর্ষণীয় একটা ভাব আছে। যা প্রতিমুহূর্তে সারাকে আকৃষ্ট করে। আষ্টেপৃষ্টে কাছে টানতে থাকে ওকে। তাই চোখ নামিয়ে বিড়বিড় করে বলল, ‘ইশ, লোকটা এত অসভ্য কেন? এভাবে কেউ একটা যুবতী মেয়ের পেট দেখতে চায়! মুখে কী কিছু আটকায় না উনার? যখন যা ইচ্ছে তাই বলে দেয়। শুধু শুধু আমাকে লজ্জায় ফেলে দিলো। এখন আমি কীভাবে তাকাবো উনার দিকে?’

সারাকে লজ্জা পেতে দেখে ঠোঁট বাঁকা করে হাসল সায়েম। এরপর বলল, ‘নিশ্চয়ই নেগেটিভ কিছু ভাবছেন? যেমনটা গতকালকে ভেবেছিলেন।’

সারা মনে করার চেষ্টা করল গতকালকে কী ভেবেছিল। হঠাৎ করে কালকের ঘটনা মনে পড়ে যাওয়ায় লজ্জায় লাল-নীল হতে লাগল সারার মুখ। চোখ দু'টো বন্ধ করে মনে মনে বলল, ‘কালকে লোকটা আমার খুব কাছাকাছি চলে এসেছিল। লোকটার নিঃশ্বাস অনুভব করতে পারছিলাম আমি। এরপর কী হয়েছিল? ওহ্ হ্যাঁ, এরপর আমি উদ্ভট সব কল্পনা করছিলাম। এই অসভ্য লোকটাকে নিয়ে। আমি ভেবেছিলাম লোকটা আমার ঠোঁটে চুমু খাবে।’

দ্বিতীয়বারে মতো লজ্জা পেলো সারা। সায়েম ওকে বারবার লজ্জায় ফেলে দিচ্ছে। সারা চোখ খুলে তাকাতে-ও পারছে না। হঠাৎ অচেনা এক পারফিউম এর ঘ্রাণ পেলো সারা। এই পারফিউম ও ব্যবহার করে না সেটা নিশ্চিত। কারণ ওর ব্যবহারকৃত পারফিউম এর ঘ্রাণ ওর কাছে পরিচিত। কিন্তু এই পারফিউম এর ঘ্রাণ ওর অপরিচিত। খুব অপরিচিত ঘ্রাণ এটা। কড়া পারফিউম এর ঘ্রাণটা ক্রমশ আকর্ষণ করছে সারাকে। ঘ্রাণটা যত বেশি করে অনুভব করতে পারছে, ওর বুকের ভিতরের হৃদস্পন্দন ততই যেন লাফালাফি করছে। ও জানে, ওর সামনে এখন দাঁড়িয়ে আছে সায়েম। এটা নিশ্চয়ই সায়েমের শরীরের থাকা পারফিউম এর ঘ্রাণ। যা আগে কখনোই পায়নি সারা। কারণ আগে কখনোই সায়েমের এতটা কাছাকাছি আসেনি ও। - লোকটা কী এখন আমাকে জড়িয়ে ধরবে? আমি কি একবার চোখ খুলে দেখব?" মনে মনে নিজেকেই প্রশ্নটা করল সারা। কিন্তু ডিরেক্টলি কোনো উত্তর এলো না। না আসাটাই স্বাভাবিক বটে। এই মুহূর্তে সারার ইচ্ছে করছে মরে যেতে। কিংবা সায়েমকে সামনে থেকে সরিয়ে দিয়ে এক ছুটে পালিয়ে যেতে। সায়েম যে ক্রমশ ওর কাছাকাছি চলে আসছে, তা স্পষ্টভাবে অনুভব করতে পারছে সারা। কিন্তু কিছু বলতে পারছে না। মুখ দিয়ে কোনো কথা বের হচ্ছে না ওর। সারার মনে হচ্ছে, ওর বুকের ভিতর কেউ একজন হাতুড়ি পেটাচ্ছে। সায়েম যত ওর কাছাকাছি আসছে, ততই যেন ভয়ে কুঁকড়ে যাচ্ছে সারা। সেই সাথে হৃদস্পন্দন এর ছটফটানি। ইদানীং মেঘ যেমন উদ্ভ্রান্তের মতো আকাশে ছুটোছুটি করে, সারার মনে হচ্ছে সায়েমের প্রতিমুহূর্তের নিঃশ্বাস-ও ওর পুরো শরীরে উদ্ভ্রান্তের মতো ছুটোছুটি করছে। একপ্রকার পাগলের মতো ছটফট করছে সারা। হঠাৎ কপালে কারোর স্পর্শ পেয়ে শিউরে উঠল। ও ঘামতে শুরু করেছে ইতিমধ্যেই। এবার সত্যি সত্যিই ওর মরে যেতে ইচ্ছে করছে। ওর ভিষণভাবে চাচ্ছে সায়েম সামনে থেকে সরে যাক। আর সেই সুযোগে ও মরে যাবে। যাতে করে আর লজ্জা পেতে না হয়। কিন্তু না! সেরকম কোনো লক্ষ্মণ-ই দেখতে পাচ্ছে না সারা। সায়েম ওর কপালে আলতো করে স্পর্শ করে দিচ্ছে। সারা আবারও ডুবে গেল কল্পনার জগতে।

- সায়েম নিজের ঠোঁট দু'টো দিয়ে ওর কপালে স্পর্শ করে দিচ্ছে। আলতো ছুঁয়ে দিয়ে ওকে প্রেমাতাল করে দিচ্ছে। সায়েমের আকর্ষণীয় ঠোঁটের স্পর্শে ওর দেহের শিরা-উপশিরায়গুলোও কেঁপে উঠছে।

- চুলগুলো এভাবে বাঁধতে হয় মিস সারা। সায়েমের কথায় বাস্তবে ফিরল সারা। প্রায় চমকে গিয়ে চোখ মেলে তাকালো। চোখ বাঁকা করে উপরের দিকে তাকাতেই দেখল মাথায় থেকে কিছুটা চুল এলোমেলো ভাবে কপালে এসে পড়েছিল। যা হাত দিয়ে এক করে ধরে রেখেছে সায়েম।

- সায়েম ঠোঁট নয়, হাত দিয়ে স্পর্শ করেছে আমার কপাল। নিজের মনে মনে কথাটা বলল সারা। সায়েম হাতটা সরিয়ে নেওয়াতে চুলগুলো আবারও এলোমেলো ভাবে কপালে এসে পড়ল। সারা এবার নিজেই চুলগুলো ঠিক করে সায়েমের দিকে তাকালো। সায়েম কিছু না বলে নিজের ঘরে চলে গেল। সারা এলো ইতির ঘরে। ইতি তখন ওয়াশরুম থেকে ফ্রেশ হয়ে ঘরে আসছিল। সারা ভিতরে গিয়ে বলল, ‘আমাদের ঘরের চাবিটা রাখো ইতি। দুপুরের দিকে হয়তো বাবা-মা আসবে। তাদের চাবি দিয়ে দিও। আমি অফিসে যাচ্ছি।’

ইতি তোয়ালে দিয়ে মুখ মুছতে মুছতে বলল, ‘যদিও আমি এখন বাইরে যাবো। তবে দুপুরের আগেই ফিরে আসবো। চাবিটা রেখে যাও। আমি দিয়ে দিবো আন্টিকে।’

সারা হেসে দিয়ে বলল, ‘থ্যাঙ্কিউ।’

প্রতিউত্তরে ইতি একটু হাসল। চাবিটা রেখে ঘর থেকে বেরিয়ে ড্রয়িংরুমে এলো সারা। আড়চোখে সায়েমের ঘরের দিকে তাকালো একবার। সায়েম সম্ভবত ওয়াশরুমে গেছে। তাই সেদিকে ভ্রুক্ষেপ না করে অফিসে যাওয়ার উদ্দেশ্য রওয়ানা দিলো।

(চলবে...)

আরো পড়ুন ৬ষ্ঠ পর্ব- ধারাবাহিক উপন্যাস : মেঘ বর্ষণ

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড