• শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩৭ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

গল্প : অনির্ণীত

  হাসান মাহমুদ হক

১৭ অক্টোবর ২০১৯, ১৪:৩২
গল্প
ছবি : মৃন্ময়ী অনু

নিয়তি কখন কাকে কোথায় এনে দাঁড় করায়, প্রকৃতি কাকে কখন কোন অবস্থায় এনে ফেলে, তা মাঝে মাঝে মানুষের কল্পনাকেও হার মানায়। নিয়তি আর প্রকৃতি হয়ত একই ব্যাপার। হয়ত কল্পনাও তাই। কে জানে? এত জটিল বিষয় নিয়ে ভাববার মতো অবস্থা এখন আমার নেই। অবস্থা থাকলেও অবশ্য ভাবতাম না। বিষয় পছন্দ না হলে আজকাল আর ভাবিনা। আর কত?

বয়স চল্লিশ পেরিয়েছে তাও বোধহয় বছর তিনেক হলো। নিয়তি বা প্রকৃতি বা কল্পনা, এই মুহূর্তে আমাকে নিয়ে এসেছে হাসপাতালের বিছানায়। হাসপাতালটা আমার পরিচিত, কিন্তু বিছানাটা নয়। কেবিনটাও নয়। পরিচিত কারণ প্রথম যৌবনে ডাক্তার কাম কেরানি হিসেবে চাকরি করেছিলাম এখানে চার বছরের মতো। অপরিচিত কারণ এটা ভিআইপি কেবিনের ভিআইপি বিছানা। আমার এখানে থাকার যোগ্যতা বা সামর্থ্য কোনোটাই কখনো ছিলনা, এখনও নেই। তবু আছি, অধ্যাপক বন্ধুর ভালোবাসায় কিংবা করুণায়। আমার নিজেকে ভালোবাসার যোগ্য মনে হয়না। যোগ্য হলে হয়ত আমার গল্প অন্যরকম হত। হয়ত এখন আমার বিছানার পাশের চেয়ারটায় একজন নারী থাকত। সেই নারী। সাধের নারী। সাধের নীরা। সেই নীরা।

নীরার নাম শুনেই বিরক্ত হয়ে গেলেন? ভাবছেন, আবার নীরা? আপনাকে আশ্বস্ত করছি এই বলে যে এই গল্পটা নীরার হবেনা, এটা আমার গল্প।

কারণ, আমি অসুস্থ অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি। আহারে বেচারা! একটু কি করুণা হচ্ছে আমার জন্যে? বেশিরভাগ মানুষই করুণা চায়না। আমি অবশ্য করুণা পেলেও নিজেকে ভাগ্যবান মনে করি। মনে করি আপনার মধ্য দিয়ে ভগবানই আমায় করুণা করছেন। ভগবানের করুণা তো সবার ভাগ্যে জোটেনা, ভগবান পরম করুণাময় হওয়া সত্ত্বেও। মেয়েটা করুণা নাকি ভালোবাসা নিয়ে বসে আছে তা বোঝা যাচ্ছেনা। আমার জন্য বসে আছে নাকি নিজের জন্যেই বসে আছে সেটা তো বোঝা সম্ভবই না। সেটা বোধহয় ও নিজেও বুঝতে পারছেনা এই মুহূর্তে। যে কারণেই থাকুক, আমার মতো নিঃসঙ্গ মানুষের অসুস্থ অবস্থায় সঙ্গ দিচ্ছে, এরজন্যে আমি কৃতজ্ঞ। যারা নিঃসঙ্গতা আর একাকীত্বের স্বাদ একসাথে পেয়েছেন, কেবল তারাই বুঝবেন এই সময়টায় নিঃসঙ্গতা কতটা অসহনীয় হতে পারে। সেটা আরো কয়েকগুণ বেড়ে যায়, যখন প্রায় সপ্তাখানেক ভর্তি থাকার পরও জানা না যায় যে, আমার কী অসুখ হয়েছে।

বেশ খানিকক্ষণ ধরে তাকিয়ে আছি আমাকে সঙ্গ দিতে গিয়ে একা হয়ে যাওয়া মেয়েটার দিকে। মেয়েদের দিকে তাকিয়ে থাকলে নাকি তারা বুঝতে পারে, তা সে যেভাবেই তাকানো হোক, যেদিকেই তাকানো হোক, যেদিক থেকেই তাকানো হোক আর যে মানুষই বা পুরুষই তাকিয়ে থাকুক। এটা আসলে বাজে কথা। এই কথাটা, আমার ধারণা, মেয়েরাই বানিয়েছে আর রটিয়েছে। জীবনে অসংখ্যবার প্রমাণ পেয়েছি যে তারা আসলে খুব সামান্যই টের পায়। ভাগ্যিস! নাহলে কত অসংখ্যবার কত অপরূপ রূপ উপভোগ করতে গিয়ে থেমে যেতে হত, পাছে বিব্রতকর চোখাচোখি হয়ে যায়!

এত মনোযোগ দিয়ে কী করছে মেয়েটা? শোয়া অবস্থাতেই একটু গলা লম্বা করে দেখতে পেলাম, কিছু একটা পড়ছে আর কলম দিয়ে দাগ কাটছে একটু পর পর। যাক, তাহলে কাজই করছে। বস অসুস্থ হবার সুযোগে ফাঁকি দিচ্ছেনা কাজে। আমি কেন ধরে নিলাম যে আমার লেখাই পড়ছে? অন্যকিছুও তো পড়তে পারে। যাই পড়ুক, আমার নিজের লেখা ভেবে আনন্দ হচ্ছে, আমি তাই ভাবব। আর তাছাড়া, আমার ব্যক্তিগত সহকারী আমার হাসপাতাল কেবিনে বসে অন্যের লেখা পড়ার সাহস দেখাবার মতো সাহসী নয়।

আমি ওর নাম দিয়েছি শান্তি। কেন এই শান্তি নামকরণ, তা বহুবার বহুভাবে জানতে চেষ্টা করেও শান্তি জানতে পারেনি আজও, চাকরি প্রায় সাত-আটমাস হয়ে যাবার পরও। এই লেখাতেই কারণটা বলে দিতে ইচ্ছে করছে আপনাদেরকে আর অবশ্যই তার আগেই, শান্তিকে। পাঠক পড়ার আগে আমার ব্যক্তিগত সহকারী আমার লেখা পড়বে, সেটাই স্বাভাবিক।

কিন্তু বলে লাভ নেই। শান্তি বিশ্বাস করবে না। ও আমার কোনো কথাই বিশ্বাস করেনা। বলে, আমি নাকি সবসময়ই গল্পের মতো বানিয়ে বানিয়ে কথা বলি। হ্যাঁ, বানিয়ে কথা আমি বলি, তবে সবসময় না। নীরা বলত, আমি নাকি একেক সময় একেকরকম কথা বলি একই বিষয়ে।

শান্তির কথা আর নীরার কথার অর্থ কি একই? নীরা কি এখনও এমনটাই ভাবে, এই এত বছর পরেও? নীরার কথা থাক। শান্তির কথা বলি।

শান্তি মেয়েটা বিশেষ সুন্দরী না। অবশ্য জগতের কোনো কিছুই বিশেষ সুন্দর না। বিশেষত্ব আমরা আরোপ করি। যেমন আমি এই মুহূর্তে আমি আরোপ করছি শান্তির ওপর। আরোপ করতে গিয়ে পড়লাম বিপাকে। শান্তিকে ঠিক শান্তি শান্তি লাগছে না। পশ্চিমের মেয়েদের মতো পোশাক পরেছে। পশ্চিমের নারীর পোশাক পূর্বের পুরুষদের অশান্তই করতে পারে, শান্তি দিতে পারে না।

অফিসিয়াল ধরনের কিন্তু বেশ পাতলা আর নরম কাপড়ের মেটে রঙের একটা শার্ট পরেছে শান্তি। পাতলা বুঝতে পারছি শার্ট ভেদ করে অন্তর্বাস স্পষ্ট দেখতে পেরে। আর নরম বুঝতে পারছি নরমের মোড়কে পরম নরম অবয়বের সমুন্নত আর সগৌরব উপস্থিতি প্রায় স্পষ্ট বুঝতে পেরে।

পরনে বোধহয় জিন্স, ছাইরঙা, বিছানায় শুয়ে ঠিক করে দেখতে পারছিনা। চাকরিতে যোগ দেবার আগেই, সাক্ষাতকারের শেষে চাকরি নিশ্চিত হবার পরেই শান্তি জিজ্ঞেস করেছিল, আমার ড্রেস কোডটা কীরকম হবে, স্যার?

আমি বলেছিলাম, তোমার খুশিমতো পরবে। আমি শুধু সুন্দর দেখতে চাই। সুন্দর আর শান্ত এক নয়। সেদিন শান্তিকে সুন্দর লাগছিল, শান্ত লাগছিল। শাড়ি পরেছিল সেদিন ও। আজও সুন্দর লাগছে। কিন্তু অশান্ত। এই অশান্ত সুন্দরের প্রভাবে আমার শান্ত মনটা খানিক চঞ্চল হয়ে উঠল। আমার নীরার কথা মনে পড়ল। শান্তির অশান্ত সৌন্দর্য দেখতে দেখতে আমার নীরার শান্ত সৌন্দর্যের কথা মনে পড়ে গেল।

ঠিক বিষণ্নতায় ডুবতে যাবার মুহূর্তটিতে শান্তি আমাকে ধরে ফেলল। নরম করে ডাকল, স্যার।

কী শান্ত সুন্দর গলার স্বর শান্তির! নীরার গলার স্বর সুন্দর ছিল, শান্ত ছিলনা। কথা বললেই নীরাকে চঞ্চল লাগত। আমি ওর ঠোঁটে আমার আঙুল দিয়ে চুপ করিয়ে দিতাম। মাঝে মাঝে আঙুলে কামড় দিয়ে দিত আলতো করে। আর আমি তখন...স্যার, আবার ডাকল শান্তি।

আমি সাড়া দিলাম এবার, হ্যাঁ শান্তিদেবী, বলো। কী দেখছেন সেটা তো বুঝতেই পারছি। কিন্তু কী ভাবছেন সেটা বলেন। আমি কি সামান্য বিব্রত বোধ করলাম? না বোধহয়। আমি আসলে কিছু দেখছিলাম না। দৃষ্টি ছিল শূন্য। শূন্য দৃষ্টি কি মেয়েরা বোঝেনা? মেয়েরা সাধারণভাবে না বুঝলেও শান্তির অন্তত বোঝার কথা আমার শুন্য দৃষ্টি। তাহলে এভাবে বলল কেন? ও কি ভাবল আমি ওর...এইযে স্যার, এবার উঠে দাঁড়িয়ে বেশ জোর দিয়েই ডাকল শান্তি।

আমি এবার বিব্রত হলাম খানিকটা। সেটা ঢাকতে হাসলাম ছোট্ট করে। উঠে বসতে বসতে দেখালাম আমার বিছানার মাথার কাছে রাখা চেয়ারটা। বললাম, এখানে এসে বসো।

শান্তি বিনা বাক্যব্যয়ে এসে বসল সে চেয়ারটাতে। আমি একটা সুগন্ধ পেলাম ও কাছে আসতেই। কী পারফিউম দেয় ও? এত সুন্দর সুগন্ধ!

শান্তি বলল, এখন কেমন লাগছে, স্যার? ব্যথাটা কমেছে? আমার মনে পড়ে গেল আমি অসুস্থ। মনে পড়তেই ব্যথাটা টের পেলাম। বুকে ব্যথা। বললাম, এতক্ষণ ছিলনা। তুমি কাছে বসার পর থেকে টের পাচ্ছি। শান্তি আমার এরকম কথা শুনে অভ্যস্থ। তাই একটুও বিব্রত না হয়ে মিষ্টি হেসে বলল, তাহলে তো অসুখটা হৃদয়ঘটিতই মনে হচ্ছে। সে তো আমার বহু পুরনো অসুখ। ভাবছিলেন কী বলেন তো, নীরা বৌদির কথা? কী সর্বনাশ! মনের কথা বুঝে ফেলছ নাকি আজকাল? আপনার মনের কথা বুঝব? আমি? আপনার যা কুটিল মন! আমি তো সরল নারী। কুটিল? কুটিল নয়? আচ্ছা কুটিল। হেসে ফেলল শান্তি। বলল, এই যে আপনি এত নির্বিবাদী মানুষ, সবকিছুই মেনে নেন, আপনাকে পেলে কেউ ছাড়ে কীভাবে বুঝিনা।

বুকের ব্যথাটা তীক্ষ্ণভাবে জেগে উঠল আমার। হাতটা স্বয়ংক্রিয়ভাবে বুকে উঠে গেল। বললাম, দেখা পেলে জেনে নিয়ো ওর থেকেই। আমার তো জানা নেই

আমার বুকে হাত দেওয়া দেখে অথবা প্রসঙ্গ পালটাবার উদ্দেশ্যে শান্তি বলল, আপনার প্রফেসর বন্ধু তো আজ দেখতে এলেন না আপনাকে। আমি ফোন করে জানাব ব্যথার কথা?

আমি বললাম, তোমরা দুজন ষড়যন্ত্র করেই তো আমাকে আটকে রেখেছ। কতবার করে বলছি আমার কিছু হয়নি, শুনছোই না তোমরা।

এই ষড়যন্ত্র চলল আরো দুদিন। লাভ হলোনা কিছুই। প্রফেসর বন্ধু সকালবেলা আমার কেবিনে এসে ব্যজার মুখ করে বলল, পরীক্ষা নিরীক্ষায় কিছুই ধরা পড়ল না। আমি বললাম, ধরা পড়লেই মনে হচ্ছে বেশি খুশি হতি তুই।

বন্ধু আমার কথার মানে ঠিকই বুঝল। তারপরও রসিকতা করে বলল, তা তো হতামই। তোর চিকিৎসা করার ইচ্ছা আমার মেলাদিনের। তা সে নাহয় করতি। তোর হাসপাতালে এসেছি যখন, না করতাম না। কিন্তু কিছু ধরতেই তো পারলি না। শালা তুইও পিসলা, তোর অসুখও পিসলা। শব্দ করে হেসে উঠলাম আমি। হাসল বন্ধুও। হাসল শান্তিও। শান্তি বলল, তাহলে স্যারকে বাড়ি নিয়ে যাই আজ? বন্ধু বলল, হ্যাঁ, নিয়ে যাও। দুপুরের দিকে যাও, আমি পৌঁছে দেব। দুপুরবেলায় আমরা তিনজনে হাসপাতালের গেটে দাঁড়িয়ে আছি। বন্ধুর ড্রাইভার গাড়ি নিয়ে দাঁড় করাল আমাদের সামনে। আমি বললাম, লেডিস ফার্স্ট। শান্তি ছোট্ট করে হেসে গাড়িতে উঠল। শান্তির পর আমি গাড়িতে উঠতে যাচ্ছি যখন, বন্ধু আমার কাঁধে হাত রাখল। বলল, নীরা। আমি খানিক বিরক্তি নিয়ে দাঁড়িয়ে গেলাম। বললাম, কী নীরা?

বন্ধু ইশারা করলে সেদিকে তাকালাম। দেখতে পেলাম একটা চকচকে লাল রঙের গাড়ির পাশে দাঁড়িয়ে আছে নীরা। গাড়ির ড্রাইভিং সিটে কেউ একজন বসে আছে, ভালোভাবে দেখা যাচ্ছিল না। আন্দাজ করলাম জুয়েল, নীরার বর। বন্ধুর দিকে তাকিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে বললাম, তুই কেন ফোন করেছিস ওকে?

বন্ধু আমার কাঁধে চাপ দিয়ে বলল, আমি না, নীরাই আমাকে ফোন করেছিল কাল রাতে হঠাত। আমি তোর অসুস্থতার কথা না বলে পারিনি, বন্ধু।

আমি কিছু বলতে যাব, আটকে গেলাম। নীরা সামনে এসে দাঁড়িয়েছে। আমি শুকনো হেসে তাকালাম ওর দিকে। কতদিন পর মুখোমুখি আমরা? তা প্রায় বছর আটেক হবে বোধহয়। নীরার বয়স মনে হচ্ছে আগের জায়গাতেই আটকে আছে। সামান্য একটু ভারী দেখাচ্ছে আগের চেয়ে, চুলগুলো ছেঁটে কাঁধ অবধি করেছে আর চোখে রিমলেস চশমা। আগে কি নীরার চশমা লাগত? মনে করার চেষ্টা করছি, পারছিনা।

নীরাই নীরবতা ভাঙল। আমাকে কিছু না বলে বন্ধুকে বলল, রোগী তাহলে সুস্থ? বন্ধু জবাব দেবার আগেই আমি বললাম, সুস্থই ছিলাম তোমাকে দেখার আগে। এই কথাটার দুরকম অর্থই নীরা বুঝতে পারল বলে আমার ধারণা। দেখলাম ডান হাত দিয়ে বাঁহাতের অনামিকায় পরা আংটিটা নাড়াচাড়া করছে। নাড়াচাড়ায় আংটির হীরেটা ঝলসে ঝলসে উঠছে। আমি বুকে ব্যথা অনুভব করলাম। নিশ্বাস বন্ধ হয়ে আসতে চাইল। স্যার, শান্তির ডাক, নেমে এসেছে শান্তি গাড়ি থেকে।

আমি, বন্ধু, নীরা তিনজনেই তাকালাম শান্তির দিকে। আমি বুক ভরে শ্বাস নিলাম শান্তিকে দেখে। কী অদ্ভুত এই অনুভূতি। আমি ওর দিকে ইশারা করে নীরার দিকে তাকিয়ে বললাম, ও হচ্ছে শান্তি।

নীরা শান্তির পা থেকে মাথায় একবার, মাথা থেকে পায়ে একবার চোখ বোলাল। নীরাকে অনুসরণ করে আমিও তাই করলাম। শান্তি আজ শাড়ি পরেছে। হালকা বেগুনী রঙের পাতলা একটা শাড়ি। আমার হঠাত মনে হলো এই শাড়িটা নীরা পরলে কেমন দেখাত? সেটা আরেকটু ভালোভাবে কল্পনা করার জন্য আমি নীরার দিকে তাকালাম। নীরার বাঁকাঁধে ওড়নাটা ফেলে রাখা। ওড়নার ঠিক পাশে কাঁধ আর গলার সন্ধিস্থলে ছোট্ট কালো তিলটা চোখে পড়ল। আমার অতিপ্রিয় সেই তিলটা। তিলকে তাল এবং আরও অন্যান্য ফল ও ফুলে পরিণত করে ফেলল এক নিমেষেই, আমার কল্পনা। আমি সইতে পারলাম না। কল্পনা এবং বাস্তবতা থেকে একসাথে পালাবার জন্য বললাম, দেখলেই তো রোগী সুস্থ। আমরা আসছি তাহলে।

আমি আর দাঁড়ালাম না। লেডিস ফার্স্টের তোয়াক্কা না করে, কারো কথার অপেক্ষা না করে, সবার আগেই গাড়িতে উঠে বসলাম।

মিনিটখানেক পর শান্তি গাড়িতে উঠে বসল আমার পাশে। তারপর বোধহয় ভদ্রভাবে বিদায় নিয়ে বন্ধু উঠে বসল ড্রাইভারের পাশের সিটে। বন্ধু বলল, এমন ব্যবহার না করলেও পারতি।

আমি বন্ধুর দিকে তাকালামও না। আমার দৃষ্টি জানালা দিয়ে বাইরে। তবে কিছুই দেখছিনা আমি। শূন্য দৃষ্টি। বাইরে তাকিয়েই বললাম, ড্রাইভার ভাই, গাড়িটা এবার ছাড়ো। না দেখলেও আমি জানি, ড্রাইভার তখন তাকালো বন্ধুর দিকে। বন্ধুর ইশারা পেয়ে গাড়ি স্টার্ট দিল। গাড়ি চলতে শুরু করলেই আমি নীরার লাল গাড়ি দেখতে পেলাম। ড্রাইভিং সিটের দিকে চোখ যেতেই চোখ ফেরালাম আমাদের গাড়ির ভেতরে, শান্তির দিকে। শান্তি বলল, দেখা তো পেলাম। কিন্তু জিজ্ঞেস তো করা হলোনা।

বন্ধু সামনের সিট থেকে পেছন ফিরে বলল শান্তিকে, কী জানতে চেয়েছিলে? শান্তি এবার বন্ধুকেই জিজ্ঞেস করল, কী অসুখে? বন্ধু সামনে ফিরতে ফিরতে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল, অনেক জিজ্ঞেস করেও জানতে পারিনি, অনেক কিছু শুনেও ধরতে পারিনি। শান্তি কেমন করে যেন তাকালো আমার দিকে। আমি সেই দৃষ্টি সহ্য করতে পারলাম না। মুখ ঘুরিয়ে চোখ ফিরিয়ে নিলাম জানালা দিয়ে বাইরের দিকে। জানালার কাচ নামিয়ে দিলাম। দম বন্ধ হবার অনুভূতি হচ্ছিল আবার। চশমাটা খুলে হাতে নিলাম।

আমার চোখে বাতাসের ঝাপটা লাগছে। বাতাসের ঝাপটায় অথবা অন্য কোনো কারণে আমার চোখ ভিজে উঠেছে। আমি মনে মনে ভাবছি, সব অসুখ কি আর ধরা যায়, বন্ধু? আমিই কি পেরেছি?

গাড়ি আমার বাড়ির দিকে চলছে হাসপাতালকে পেছনে ফেলে আর নীরাকে পেছনে ফেলে। আমার বুকের ব্যথাটা বাড়ছে।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড