সাদিয়া আফরিন প্রমা
আজ ত্রিশ বছর পর আবার দেখা। যদি ও চেহারায় আগের সেই লাবণ্য নেই। ঢাকা পড়েছে বয়সের আড়ালে। আগের সে দাপুটে ভাবটাও মনে হচ্ছে হারিয়ে গেছে সময়ের স্রোতে। কিন্তু কিছু চেহারা কখনো ভোলা যায়না। এত প্রাচুর্য থাকার সত্ত্বেও ইনি আজ এখানে কেন? প্রশ্নটি বারবার ঘুরপাক খাচ্ছিল তরু দেবীর মনে।
- কেমন আছো? অনেকদিন পর চেনা গলার স্বর শুনতে পেয়ে কিছুটা চমকে উঠলেন অমল বাবু।
- তরু তুমি? তোমার সাথে আবার কখনো দেখা হবে সেটা কখনো ভুল করেও ভাবতে পারিনি। বলতে পার আমি চাইনি কখনো দেখা হোক। তোমার সাথে আমি যা করেছি সত্যি পাপ ছিল।
- থাক ওসব পুরনো কথা। কিন্তু তুমি এই বৃদ্ধাশ্রমে কেন? তোমার তো এখন ছেলে, নাতী-নাতনীদের সাথে সুখে থাকবার কথা। সবই তো আছে তোমার। শুধু একটা ছেলের কমতি ছিল। সেটিও তো পূরণ হয়েছে এখন তোমার। তা সত্ত্বে এখানে?
একটা টানা নিঃশ্বাস ফেলে বলতে শুরু করে অমল বাবু, ‘ছেলে এখন তার নিজের পরিবার নিয়ে বেশ আছে। তার পরিবারে নাকি আমি বড্ড বেমানান। আমাকে বাবা হিসেবে পরিচয় দিতে তার নাকি সম্মানে লাগে। আমার সাথে মিশলে নাকি তার ছেলে আদব কায়দা শিখতে পারবে না। তাই এখানে পাঠিয়ে দিল। আচ্ছা তরু, তোমার এখানে আসবার কারণ? তুমিও কি আমার মতো...’
তরু দেবী একটু হেসে উত্তর দেয়, ‘এই বৃদ্ধাশ্রমটি আমার মেয়ে গড়ে তুলেছে।’
এই কথা শুনবার পর অমল বাবুর সব কথার ভাষা যেন হারিয়ে গেছে। সব ভাষা যেন চোখের পানি হয়ে গড়িয়ে পড়ছে। আজ থেকে ঠিক ৩০ বছর আগে মেয়ে জন্ম দেওয়ার অপরাধে তরু দেবীকে ঘর ছাড়া করেছিলেন অমল বাবু নিজে। তরু দেবীর আকুতি বিন্দু মাত্র স্নেহ জাগাতে পারেনি। আজ সেই মেয়ে তার শেষ আশ্রয়।
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড