• বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩৯ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

ধারাবাহিক উপন্যাস : মেঘ বর্ষণ (৩য় পর্ব)

  রিফাত হোসেন

১৪ অক্টোবর ২০১৯, ১৩:৪৮
গল্প
ছবি : প্রতীকী

একটা বিকট শব্দ শুনতে পেয়ে ড্রয়িংরুমে দৌড়ে এলো ফাহাদ। ড্রয়িংরুমে তখন ওর মাও দাঁড়িয়ে ছিল। মিসেস সাহানা ফাহাদকে দেখে ভয়ার্ত কণ্ঠে বলল, ‘কী হচ্ছে রে বাবা? এই বিকট শব্দ এলো কোত্থেকে?’

ফাহাদ রাফার ঘরের দিকে আঙুল উঁচু করে বলল, ‘মনে হচ্ছে শব্দটা রাফার ঘর থেকেই এসেছে।’

- ওর ঘর থেকে আবার কীসের শব্দ আসবে? চল তো দেখে আসি।

ফাহাদ আর মিসেস সাহানা রাফার ঘরের দিকে গেল। দরজা খোলাই ছিল বলে ভিতরে ঢুকে গেল সরাসরি। রাফা তখন রাগে হাসফাস করছিল। ওর সামনে ভেঙে পড়ে আছে বড় ফুলদানিটা। ফাহাদ অবাক কণ্ঠে বলল, ‘এটা ভাঙল কীভাবে রাফা? আর তুই এইরকম করছিস কেন?’

রাফা মাথা নিচু করেই কড়া গলায় বলল, ‘সায়েম ফোন রিসিভ করছিল না বলে রাগে হাত-পা ছুড়াছুড়ি করছিলাম। তখনই হাতের সাথে লেগে ফুলদানিটা পড়ে গেছে।’

- ওহ্। এটা তো সাধারণ একটা বিষয়। এরজন্য এভাবে রেগে আছিস কেন?

রাফা রাগী কণ্ঠে বলল, ‘পছন্দের ফুলদানিটা অলরেডি হারিয়ে ফেললাম। আর ওদিকে সায়েম ও ফোন তুলছে না। এভাবে আমার প্রিয় জিনিসগুলো হারিয়ে যাচ্ছে, আর এটা তোমার কাছে সাধারণ বিষয় মনে হচ্ছে?’

- ফুলদানিটা ভুলবশত হাত লেগে ভেঙে গেছে। আর সায়েম নিশ্চয়ই কোনো কাজে ব্যস্ত আছে। তাছাড়া ওর এখন অফিসে যাওয়ার সময়। তাই ফোন ধরছে না। এটা সাধারণ বিষয় না তো, খুব অসাধারণ কোনো বিষয় কী?

- সায়েম আমার পার্সোনাল নম্বর ব্লক করে রেখেছে। এটাও কী সাধারণ বিষয়? এটা কি ঠিক কাজ করেছে সায়েম?

- তোর কাছে এটা খুব অপরাধ মূলক কাজ হলেও সায়েমের কাছে এটা সাধারণ বিষয়। কারণটা তুই নিজেই বুঝেনে। তাছাড়া তুই ভাবলি কীভাবে, সায়েমের বিরুদ্ধে অতবড় একটা অভিযোগ আনার পরও তোর সাথে কথা বলবে।

- কী বলতে চাচ্ছ তুমি?

- আমি এটাই বলতে চাচ্ছি, যা হওয়ার তা হয়েছে। এবার সায়েমকেও শান্তিতে থাকতে দে, এবং তুইও নিজের মতো শান্তিতে থাক। ওকে শুধু শুধু বিরক্ত করছিস তুই। আমার এটা ভেবে অবাক লাগছে, তুই আমার বোন হয়ে নিজের ক্যারিয়ার নিয়ে না ভেবে অন্য একটা ছেলেকে নিয়ে পড়ে আছিস। যেখানে আমি নিজে শৈশব থেকেই লড়াই করে বড় হয়েছি। আমার বয়সের অনেকেই সেই সময়টা ঘুরাঘুরি, আড্ডা আর প্রেম করেকাটিয়েছে। অথচ আমি নিজের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে স্ট্রাগল করে কাটিয়েছি শৈশব এবং যুবক বয়সটা। এবং সেজন্যই আজ তোদের দায়িত্ব নিতে পেরেছি। বাবা মারা যাওয়ার পর থেকে তোর খরচ আর মায়ের খরচ আমিই চালিয়েছি। কিন্তু তুই কী করছিস? সারাদিন সায়েমকে নিয়ে পড়ে আছিস। এগুলো বাদ দে বোন। নিজের ক্যারিয়ার নিয়ে ভাব।

রাফা বলল, ‘তুমি কি আমাকে জ্ঞান দিচ্ছ?’

ফাহাদ রাগী কণ্ঠে বলল, ‘আমার ইচ্ছে করছে তোকে ঠাস করে একটা থাপ্পড় মারতে। কিন্তু আমি তা করতে পারছি না! কারণ বাবার নির্দেশ ছিল কক্ষনো যেন তোকে আঘাত দিয়ে কিছু না করি। বাবা অসুস্থতার সময়টাতে পরিবারের সবার খেয়াল রেখেছি আমি। অথচ আমার বয়সই বা তখন কত হবে? খুবই কম। তবুও আমি পিছিয়ে না গিয়ে একজন যোদ্ধার মতো লড়াই করেছি। কখনোই আশেপাশের মানুষদের সাথে, আবার কখনো নিজের সাথেই। আমার বন্ধুদের মধ্যে সায়েমের কথাটাই একবার ভেবে দেখ। ও বড়লোক বাবার ছেলে। ছোট থেকে বিলাসবহুল ভাবে বড় হয়েছে। যখন যা চেয়েছে, তাই পেয়েছে। কিন্তু এখন রাগ করে বোনকে নিয়ে বেরিয়ে এসেছে বাড়ি থেকে। ভাগ্য কিছুটা ভালো ছিল বিধায় একটা চাকরি পেয়েছে। নাহলে খালি পকেটে বোনকে নিয়ে কোথায় যেতো ভেবে দেখ একবার? সায়েম এখন বাস্তবতা বুঝতে শিখেছি। ও বুঝতে পেরেছে, নিয়তি বলে কিছু একটার অস্তিত্ব আছে মানুষের জীবনে। আর এই নিয়তি সবসময় এক পক্ষ নিয়ে চলে না। এর সবকিছুই ভিন্ন। আমি জানি, তুইও একদিন বুঝতে পারবি বাস্তবতা কি। বাবা সবসময় বলে এসেছে, একটা মাত্র জীবন, আর এই এক জীবনে লড়াই করতে হয়। স্ট্রাগল এর মাধ্যমেই জীবনে সফলতা আসে। আমি স্ট্রাগল করেছি বলেই আজ ভালো একটা জায়গায় আসতে পেরেছি। ভালো পোস্টে জব করতে পারছি। তোদের ভালো রাখতে পারছি। আমি চাই তুইও একদিন আমার জায়গায়, কিংবা এর থেকেও উঁচু স্থানে পৌঁছা। আমার বিশ্বাস একদিন তুই বাস্তবতা বুঝতে পারবি, এবং সেদিন থেকেই তুই স্ট্রাগল করতে শুরু করবি। ক্যারিয়ারের পিছনে ছুটে বেড়াবি।

রাফা মাথা নিচু করে আছে এখন। আগের মতো আর রাগে হাসফাস করছে না। ফাহাদ ঘর থেকে বেরিয়ে এলো। মিসেস সাহানা মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে ঘর থেকে চলে এলো। ড্রয়িংরুমে এসে ফাহাদকে উদ্দেশ্য করে বলল, ‘মেয়েটাকে ওভাবে না বললেও পারতি। ঘর থেকে বেরিয়ে আসার সময় দেখলাম চোখ মুছছে। ও খুব ছোট এখনো। এতকিছু কীভাবে বুঝবে বল? ছোট থেকে একটু বড় হতেই বাবার জায়গায় ছায়া হিসেবে ভাইকে পেয়েছে। অভাব জিনিসটাও বুঝতে পারেনিও।’

- মা, তুমি ওকে যতটা ছোট ভাবছ, ততটাও ছোট নাও। স্কুল লাইফ পেরিয়ে কলেজ লাইফে এসেছে। আমি জানি কলেজ লাইফটা সবাই আনন্দ আর হৈচৈ করে কাটায়। কিন্তু পাশাপাশি নিজের জন্য কিছু একটা করতে হয়। বাবার জায়গায় ছায়া হিসেবে আমাকে পেয়েছে। কিন্তু এরপর? আমার কিছু হয়ে গেলে তোমাকে দেখবেকে মা? তোমার তো বয়স হয়েছে। রাফার উচিত জীবনে কিছু একটা করা। যাতে করে আমার কিছু হয়ে গেলেও ও তোমার পাশে থাকতে পারে। শ্বশুর বাড়িতে চলে গেলেও যাতে নিজ যোগ্যতায় তোমার পাশে থাকতে পারে। তোমার দায়িত্ব নিতে পারে। তুমি জানো না ও কতটা খারাপ পথে চলে যাচ্ছে। ওকে বিশ্বাস করে সায়েমকে ভুল বুঝেছি আমি। যার ফলস্বরূপ আমার আর সায়েমের মধ্যে ঝগড়ার সৃষ্টি হয়েছে।

মিসেস সাহানা চোখ মুছতে মুছতে বললেন, ‘আমি সবই বুঝতে পারছি বাবা। কিন্তু কি করব বল? ও তোর বাবার আদরের মেয়ে ছিল। যদিও খুব বেশিদিন বাবাকে পাশে পায়নি। ওর চার বছর পরই চলে গেছেন। কিন্তু তার বলা শেষ কথাটাকে কীভাবে অগ্রাহ্য করব বল? তিনি যে বলেছিলেন মেয়েকে কখনো কষ্ট না দিতে।’

- আমি ওকে কষ্ট দিতে চাই না মা। সেজন্যই সবসময় হাসি মুখে ওর অন্যায়গুলো মেনে নিই। কিন্তু এভাবে কতদিন আর? ও তো নিজেরই ক্ষতি করছে এভাবে। একসময় এই পৃথিবীতে বাবা ছিল আমাদের শেষ আশ্রয়স্থল। কিন্তু হঠাৎ বাবা অসুস্থ হয়ে গেলেন। এরপর ছোট বয়সে আমাকে অনেক কষ্ট করতে হয়েছে। এরপর বাবা মারা গেলেন একসময়। তখন সব দায়িত্ব আমার কাছেই এলো। আমি হাসিমুখে সব দায়িত্ব পালন করেছি। নিজের সব স্বপ্ন বিসর্জন দিয়ে তোমাদের আগলে রেখেছি। আচ্ছা মা, একবার ভেবে দেখ, হঠাৎ করে যদি বাবার মতো আমারও কিছু হয়ে যায়, তখন কী হবে তোমাদের? আমাদের তো এই পৃথিবীতে আর কেউই নেই। কে দায়িত্ব নিবে এই পরিবারের। বাবার মতো আমিও কখনো ছেলে-মেয়ে আলাদা করে দেখিনি। আমার বিশ্বাস ছিল, আমি না পারলেও আমার বোন এই পরিবারের দায়িত্ব নিবে। শ্বশুর বাড়ি চলে গেলেও নিজের যোগ্যতায় তোমার পাশে থাকবে। কারোর করুণা নিয়ে নয়, নিজেই সবদিক সামলাবে। কিন্তু আমার বিশ্বাস যে একটু একটু করে ভেঙে যাচ্ছে মা। ওকে নিয়ে চিন্তা করতে করতে আমি পাগল হয়ে যাবো এবার। মাথার ভিতর একটা যন্ত্রাণা নিয়ে প্রতিটি মুহূর্ত পাড় করছি আমি। কিন্তু এভাবে কতদিন চলবে?’

মিসেস সাহানা কাপড়ের আঁচলে মুখ লুকিয়ে চলে গেলেন নিজের ঘরে।

ফাহাদ উপরের দিকে তাকিয়ে দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছেড়ে নিজের ঘরে চলে গেল অফিসে যাওয়ার জন্য তৈরি হতে।

- ভাইয়া, আমি অফিসে যাচ্ছি। ইন্টারভিউ দিতে যাওয়ার সময় হয়ে গেছে। ড্রয়িংরুমের এসে সায়েমের ঘরের দিকে তাকিয়ে কথাটা বলল ইতি।

সায়েম শার্ট পরতে পরতে বলল, ‘ঠিক আছে। সাবধানে যাস। আর কোনো সমস্যা হলে আমাকে ফোন দিস।’

- ওকে ভাইয়া।

ইতি চলে গেল। সায়েম শার্ট পরে ড্রয়িংরুমে এলো। টেবিলে ওর খাবার রাখা। সায়েম চেয়ারে বসে খাওয়া শুরু করল।

খাওয়া শেষ করে হাত ধুতে যাবে, তখনই হঠাৎ কলিংবেল বেজে উঠল। সায়েম ভেবেছিল ইতি এসেছে। হয়তো কোনো কাগজপত্র বাড়ির রেখে গেছে। তাই তাড়াতাড়ি হাত ধুয়ে দরজা খুলে দিলো। কিন্তু দরজার বাইরে সারাকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে বেশ অবাকই হলো সায়েম। কারণ সারার এতক্ষণ অফিসে চলে যাওয়ার কথা। হয়তো তখন কথা বলার জন্য দেরি হয়ে গেছে। মনে মনে নিজেকে গালি দিলো সায়েম। সামনে থেকে সারা বলল, ‘এবার তো চলুন সায়েম। আমি অবাক হচ্ছি আপনার সময়-জ্ঞান দেখে। আরো ১ ঘন্টা আগে অফিস টাইম শুরু হয়ে গেছে। আর আপনি এখনো রেডি হতেই পারলেন না।’

সায়েম বলল, ‘না মানে। আমি এখনই বের হচ্ছিলাম। কিন্তু আপনি এখনো অফিসে যাননি কেন?’

- আপনার জন্যই অপেক্ষা করছিলাম।

সায়েম অবাক হয়ে বলল, ‘বলেন কি! আপনি আমার জন্য অপেক্ষা করছিলেন?’

- হ্যাঁ।

সায়েম কৌতূহলী দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল, ‘কী ব্যপার মিস সারা? আমার প্রেমে পড়ে গেলেন নাকি। আজ আপনাকে তো নতুন ভাবে দেখছি। মানুষের মনে যখন প্রেম-প্রেম ভাব আসে, তখনই এইরকম হয়।’

সারা রাগ দেখিয়ে বলল, ‘আপনি আসবেন, না আমি একাই চলে যাবো।’

- আরে রেগে যাচ্ছেন কেন? আমি তো একটু মজা করছিলাম। আপনি একটু ওয়েট করুন, আমি ব্যাগটা নিয়ে আসছি।

সায়েম ভিতরে গিয়ে ব্যাগটা নিয়ে এলো। দরজাটা তালা দিয়ে সারার সাথে সিড়ি দিয়ে নামতে শুরু করল।

- এত শব্দ করে হাঁটছেন কেন? দু’তলা থেকে নামার সময় কথাটা বলল সারা। সায়েম আবারও পা দিয়ে ফ্লোরে ঘষা দিয়ে শব্দ করে বলল, ‘পাশের ঘরটা কার জানেন?’

- হ্যাঁ। বাড়িওয়ালা থাকেন এখানে।

সায়েম পূনরায় আরো জোরে শব্দ করল পা দিয়ে। এরপর বলল, ‘এই শালা অভদ্র লোকটাকে বাইরে আনার জন্যই শব্দ করছি।’

সারা রাগী দৃষ্টিতে তাকালো সায়েমের দিকে। সায়েম ঘাবড়ে গিয়ে বলল, ‘সরি, সরি। ভদ্রলোক হবে কথাটা। এই ভদ্রলোককে বাইরে আনার জন্যই শব্দ করছি এভাবে।’

- বুঝলাম না। আঙ্কেলকে বাইরে এনে আপনি কী করবেন? বাড়ি ভাড়া দিবেন? কিন্তু এখনো তো মাস শেষ হয়নি।

- বাড়ি ভাড়া না।

- তাহলে?

- কালকে অফিস থেকে ফিরার যখন আপনার পরপরই আমি উপরের উঠছিলাম। তখনই দেখি দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছে আপনার বাড়িওয়ালা আঙ্কেল। আপনি তো চলে গেলেন।

এরপর লোকটা আমাকে ইঙ্গিত করে টিটকারি মেরে বলল, ‘সারাজীবন ওই পিছন পিছনই ঘুরতে হবে। পাশাপাশি হাঁটতে পারবে না জীবনেও। একবার ভেবে দেখুন, বুড়ো লোকটার সাহস কত! ছেলের বয়সী একজনের সাথে মজা করে। তাও আবার এইরকম বিষয় নিয়ে।’

- তো, সেজন্যই আপনি আজ আমার পাশে হেঁটে তাকে দেখাতে চাচ্ছেন, তাই তো?

- হ্যাঁ।

- তো এভাবে না ডেকে সরাসরি দরজা ধাক্কা দিন। তাড়াতাড়ি ঘর থেকে বের হবে।

সায়েম অবাক হয়ে বলল, ‘আসলেই কী এটা করতে বলছেন?’

সারা হেসে দিয়ে সায়েমের হাত ধরে বলল, ‘হ্যাঁ, এরপর তার সাথে বেয়াদবি করার অপরাধে আপনাকে বাড়িটাই ছাড়তে হবে।’

সারা সায়েমের হাত ধরে নিচে নামতে লাগল। সায়েম কিছু বলল না। বাড়ির বাইরে এসে হাত ছেড়ে দিয়েই স্ট্যাণ্ডে যাওয়ার জন্য হাঁটতে লাগল দু'জনেই। সারা বলল, ‘আজ ইতির চাকরির ইন্টারভিউ, তাই না?’

- হ্যাঁ। কিছুক্ষণ আগেই অফিসের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিলো।

- ও শুধু শুধু এত ঘুরাঘুরি করছে। আপনার সাথে বসের সম্পর্ক ভালো। আপনি বললে বস নিশ্চয়ই ওর জন্য ভালো একটা চাকরির ব্যবস্থা করে দিতো। পড়াশোনা শেষ করেছে। মেধাবী মেয়ে ও। বেশ ভালো একটা চাকরি হতো ওর।

- আমি ওকে বলেছিলাম আমাদের অফিসের কথা। কিন্তু ওর সরাসরি জবাব, কারোর রেফারেন্স এ আমি চাকরি করব না। আমি নিজের যোগ্যতায় এবং নিজের মেধা দিয়ে চাকরি নিতে চাই। আমি আর কী বলব, বলুন? ও বড় হয়েছে। ওর ইচ্ছের বিরুদ্ধে যাওয়া ঠিক নয়।

- আপনার বোনের কথা শুনলে মাঝে মাঝে মনে হয়, ও ৫০ বছরের অভিজ্ঞতা সম্পন্ন এক বুড়ী।

- ৫০ বছরের না হলেও যথেষ্ট বড় হয়েছে ও। আমার থেকে মাত্র তিন বছরের ছোট।

- হ্যাঁ। আর আমার প্রায় সমবয়সী ও। তবুও আমাকে আপু, আপু বলে ডাকে। এই জিনিসটা আমার কেমন যেন লাগে। দুই এক মাসের বড় ছোট কোনো ব্যপার না। যেখানে আমরা বন্ধু হতে পারতাম, সেখানে আমাকে বড় আপু বানিয়ে দিয়েছে ও। কিছু বলতে গেলেই বলে, আমি তোমাকে সম্মান করে আপু বলি। তুমি আমার ছোট হলেও তাই বলতাম আমি।

- ও এইরকমই। ভাই-বোনের মাঝে কয়েক বছরের গ্যাপ থাকে, তবুও অনেক বোনই তার ভাইকে তুই বলে সম্মোধন করে। অথচ এই মেয়ে মাত্র তিন বছরের গ্যাপ এর জন্য আমাকে তুমি বলে সম্মোধন করে। আগে তো আপনি করে বলতো। অনেক বুঝিয়ে তুমি-তে এনেছি।

ওর একটাই কথা, ‘এক দিনের বড় হলেও সে বড়, এবং আমার উচিত তাকে সম্মান করা।’

সারা মৃদু হাসি দিলো। হাঁটতে হাঁটতে স্ট্যাণ্ডে চলে গেল দু'জনেই। একসময় বাস এসে গেল। বাসে উঠে একটা সিটে বসল সারা। সারার পাশের জানালার সিটটাতে একজন মহিলা বসে আছে। সায়েম অসহায়ের দৃষ্টিতে চারিদিকে তাকালো একবার। প্রায় অধিকাংশ সিটই ফাঁকা, তবে একটা করে। নিজের মনে মনে বিড়বিড় করে সায়েম বলল, ‘এ কেমন নিয়ম! সবাই একা একা এসে জানালার পাশের সিটে বসে পড়ে। অথচ পাশের সিটটা খালিই থেকে যায়। তারা কী বুঝে না, কেউ কেউ পাশাপাশি সিটে বসার জন্য জোড়ায় আসে।’

- কী ভাই, দাঁড়িয়ে আছেন কেন? বসে যান।" সায়েমের পাশে থেকে একটা লোক কথাটা বলল। বাস ততক্ষণে ছেড়ে দিয়েছে। তাই সায়েম আর কোনো উপায় না পেয়ে বসে পড়ল লোকটার পাশে। সায়েমের মলিন মুখটা দেখে মিটমিট করে হাসতে লাগল সারা।

বাস চলেই যাচ্ছে। সেই সাথে একের পর এক স্ট্যাণ্ড পেরিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু কোনো স্ট্যাণ্ডেই সারার পাশের মহিলাটা নামল না। ওদের অফিসের সামনে এসে বাসটা থেমে গেল। সেই সাথে সায়েমের ইচ্ছেটা-ও অপূর্ণ থেকে গেল। সারা আর সায়েম বাস থেকে নেমে অফিসের দিকে যেতে লাগল। সায়েম একবার পিছনে তাকিয়ে দেখল মহিলাটাও এই স্ট্যাণ্ডে নেমে গেল। নিজের ভাগ্যকে কয়েকবার গালাগাল দিয়ে ভিতরে চলে গেল সায়েম।

(চলবে...)

আরো পড়ুন দ্বিতীয় পর্ব- ধারাবাহিক উপন্যাস : মেঘ বর্ষণ

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড