সাবিকুন নাহার নিপা
ফারজানা টেবিলে রাখা পানির বোতল থেকে গ্লাসে পানি নিয়ে রিশিতার সামনে রাখলো। রিশিতা সে পানি ছুঁয়েও দেখলো না। আবারও বলতে শুরু করলো, ‘আমি পুরোপুরি মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়লাম। আমি সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছিলাম সে বছর আর পরীক্ষা দেবনা। হোস্টেলের রুমে সারাদিন বসে বসে কাঁদতাম কিন্তু কেউ ছিলো না আমার পাশে যে আমাকে বলবে, আর কাঁদিস না!’একদিন শুভ্র আমার সাথে দেখা করতে আসলো। সেদিন আমি খুব অবাক হয়ে গিয়েছিলাম। শুভ্র আমাকে জিজ্ঞেস করলো, ‘রিশিতা তুমি নাকি পরীক্ষা দিচ্ছো না?’ আমি মাথা নেড়ে না বললাম। প্রথমবারের মতো আমি শুভ্রকে লক্ষ্য করলাম। গায়ের রঙ ফর্সাও না কালোও না, মাথার চুলগুলো খাড়া টাইপ, চোখ দুটো ছোট ছোট। মুখের দিকে তাকালে কেমন যেন মায়া অনুভব হয়। শুভ্র আমাকে বলল, ‘কেনো রিশিতা? এই টুকুতেই হেরে যাবে? সবাইকে দেখিয়ে দিতে ইচ্ছে করছে না যে রিশিতা হেরে যাওয়ার মত নয়! রিশিতাদের জন্ম হয়েছে শুধু লড়াই করার জন্য।’ আমি তখন বললাম, আমি এখন বড্ড ক্লান্ত, আমার আর লড়াই করতে ইচ্ছা করছে না। শুভ্র সেদিন চলে গেলেও আমাকে বার বার ফোন করছিলো। আমি শুধু ওর কথাগুলো শুনতাম কিন্তু কিচ্ছু বলতাম না। এরপর একদিন আমি প্রণবকে ফোন দিয়েছিলাম। আমি প্রণবকে জিজ্ঞেস করেছিলাম, ‘তুমি কি চাও?’ প্রণব বলেছিল, ‘বাবা তোমার সাথে যা করেছে তার জন্য আমি সরি। কিন্তু আমি এই সম্পর্ক আর রাখতে চাইনা।’ আমার তাতে কোনো রাগ হলো না। আমি জিজ্ঞেস করলাম, ‘নতুন কাউকে পেয়ে গেছো নাকি?’ ও বলল, ‘মা তার বান্ধবীর মেয়ে মিমের সাথে বিয়ে দিতে চায় কারণ মিম পড়াশোনাতে খুব ভালো। আমার সেটা মেনে নেয়া ছাড়া আর কোনো উপায় নেই।’ আমি সেদিন ফোন রাখার আগে প্রণবকে বললাম, আবার এমন যেন না হয় যে আবার আমার কাছেই ফিরে আসতে হলো! আমি পরীক্ষা দিতে রাজি হয়ে গেলাম। সব ব্যবস্থা শুভ্র করে দিলো। পুরো তিনমাস দিন রাত এক করে পড়াশোনা করে পরীক্ষা দিলাম। শুভ্রর সহযোগিতায় ঢাকা এসে কোচিং করতে শুরু করলাম। এর মধ্যে ফুপুর সাথে যোগাযোগ করলাম কিন্তু ফুপু স্পষ্টই জানিয়ে দিলো সে আমার মুখ দেখতে চায়না। আমার সব ফিনান্সিয়াল দিক শুভ্র দেখতো, আমি চেয়েছিলাম টিউশনি করবো কিন্তু শুভ্র বলল তাতে আমার পড়াশোনার ক্ষতি হবে। ও বলল, আপাতত আমি তোমাকে ধার দিচ্ছি ডাক্তার হওয়ার পর সব ফিরিয়ে দিও!
আমি মূলত ডাক্তার হয়েছিলাম শুভ্রর ইচ্ছায়, আমার ইচ্ছায় নয়। আমি গ্রিনরোডের এক হোস্টেলে থাকতাম। আমি কোচিং করতাম মেডিকেলের জন্যে, আর শুভ্র করতো ভার্সিটির জন্যে। দু’জনেই সময় পেতাম খুব কম, তারপরও মাঝে মাঝে ঘুরতে যেতাম। একদিন সাহস করে শুভ্রকে জিজ্ঞেস করেছিলাম, আমার জন্যে কেনো এতকিছু করেছো শুভ্র? শুভ্র সেদিন বলেছিল, জানিনা তো! কিন্তু আমি জেনে গিয়েছিলাম যে এই কয়েকমাসে শুভ্রর প্রতি ভালোবাসা জন্মে গেছে। কিন্তু শুভ্র আমাকে ভালোবাসে কিনা সেটা কিছুতেই বুঝতে পারছিলাম না। একদিন সায়েন্স ল্যাব থেকে হোস্টেলের দিকে ফিরছিলাম তখন একটা ছেলে আমার নাম ধরে ডাকছিলো, ছেলেটা সামনে আসতে আমি চিনতে পারলাম। ছেলেটা ছিলো প্রণবের বন্ধু তাইফ। তাইফের কাছ থেকে জানতে পারলাম প্রণব আমার জন্যে খুব অপরাধ বোধে ভোগে, আগের সেই হাসি খুশি প্রণব এখন আর নেই। আমার মনে তখন আবারও ওর বাবার করা অপমানের কথা মনে পরে গেলো। এক ধরনের প্রতিশোধের নেশা চেপে বসল। আমি তাইফকে আমার নাম্বারটা দিয়ে বললাম, সবাই কিন্তু জীবনে সেকেন্ড চান্স পায় না! প্রণব কে বলে দেবেন।
আমার মূল টার্গেট ছিলো প্রণবকে মানসিক কষ্ট দেয়া। যে কষ্টটা আমি পেয়েছিলাম সেটা প্রণবকে দেয়া। একমাস প্রণবকে কষ্ট দিয়ে ছেড়ে দেয়াই ছিলো আমার প্রধান উদ্দেশ্য। কারণ ব্রেকআপের ডিপ্রেশন নিয়ে পরীক্ষা দিয়ে ও কোথাও চান্স পাবে না। তখন ওর বাবা-মা বুঝতে পারবে আমি ঠিক কতটা কষ্ট পেয়েছিলাম। প্রণবের সাথে দেখা করতে গিয়ে আমি বুঝতে পারলাম তাইফের কথা মিথ্যে নয়। প্রণবের চেহারা বলে দিচ্ছিল যে প্রণব ভালো নেই কিন্তু আমার প্রণবকে দেখে মায়া হলো না। অনেক দিন পর দেখা হওয়ায় প্রণব আমাকে জড়িয়ে ধরতে আসলে আমি ওকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিয়ে বললাম এসব আদিখ্যেতা ভালো লাগছে না। প্রণব আহত গলায় বলল, ‘তুমি কি সত্যিই আমায় আর ভালোবাসোনা’ প্রণবকে যত ধরনের মেন্টাল টর্চার করা যায় করতাম। প্রণব বার বার ফোন দিলে তাতে রাগারাগি করতাম আবার ফোন না দিলেও রাগারাগি করতাম। প্রণবও এক পর্যায়ে আমার সাথে ঝগড়া করতো, হয়তো ও আর পারছিলো না! প্রণবের সাথে মিশতে গিয়ে আমি ভালোভাবে বুঝতে পারলাম আমি যেরকম ছেলে পছন্দ করি সেটা কোনোভাবেই প্রণব নয়, সেটা শুভ্র। আমি বিভিন্নভাবে শুভ্রকে বোঝানোর চেষ্টা করতে লাগলাম যে আমি ওকে ভালোবাসি। কিন্তু শুভ্র সেটা বুঝতো না, নাকি বুঝেও না বোঝার ভান করতো সেটা আজও আমার জানা নেই! প্রণবকে শিক্ষা দিতে গিয়ে আমি নিজেও জীবনের সব থেকে বড় শিক্ষাটা পেয়ে গেলাম। আমার রেজাল্ট বের হলো, আমি ভালো রেজাল্ট করলাম, কিন্তু সমস্যা হলো আমি মেডিকেলে চান্স পেলাম না।
এর মধ্যে চিকেন পক্স হয়ে হসপিটাল পরে রইলাম। তখনও আমার পাশে ছিলো শুভ্র। আমি যতদিন অসুস্থ ছিলাম ততদিন শুভ্র আমার পাশেই ছিলো। আমি একদিন অভিমান করে শুভ্রকে বললাম, তুমি আজকাল আমাকে এড়িয়ে কেনো চলছো শুভ্র? শুভ্র তখন বলেছিল, ‘আমার প্রয়োজন কি আর আছে! প্রণব তো ফিরে এসেছে। ওর কথা শুনে আমার বুকের ভিতরে তখন ঝড় বয়ে যাচ্ছিল।’
আমি সেদিন ওর হাত ধরে বলেছিলাম, আমাকে সবকিছু এক্সপ্লেইন করার একবার সুযোগ দাও। শুভ্র আমাকে বলেছিল তুমি কি করবে না করবে সেটা তোমার ব্যাপার। আমি তো তোমার কেউ না! আমাকে কিছু এক্সপ্লেইন করার দরকার নেই। কথাগুলো ঠাণ্ডা গলায় বললেও আমি স্পষ্ট বুঝতে পারছিলাম শুভ্র কষ্ট পাচ্ছে।
আমি হোস্টেলে ফিরে আমার রুমমেটের সাথে ব্যাপারটা শেয়ার করলাম। আমার রুমমেট আমাকে বলল, দু’জনকেই সত্যিটা জানাতে। প্রণবকে আমি সব বললাম। প্রণব একরাশ বিস্ময় নিয়ে আমার হাত ধরে জিজ্ঞেস করলো, ‘তুমি আমায় ভালোবাসোনা? আমি বলেছিলাম না। আমি শুধু শুভ্রকে ভালোবাসি! আমার মনের সব জায়গা জুড়ে শুধু শুভ্রই আছে, সেখানে তোমার কোনো জায়গা নেই।’
প্রণব যাওয়ার সময় আমাকে বলেছিল, ‘ভালো থেকো। আমি সাহস করে প্রণবের চোখের দিকে তাকিয়ে ছিলাম, সে চোখে ছিলো শুধু ঘৃণা আর বিস্ময়!’
কথায় আছে না অন্যের জন্যে কুয়ো খুঁড়লে সেই কুয়োয় নিজেকে পরতে হয়! আমার অবস্থাও সেরকম হলো। আমি চেয়েছিলাম প্রণব যেন কোথাও চান্স না পায় কিন্তু আমার সেই চাওয়া নিজের ক্ষেত্রে ফলে গেলো, আমি কোথাও চান্স পেলাম না। শুভ্রর সাথে আমার যোগাযোগ একদম কমে গিয়েছিল। আমি যখনই ফোন করতাম তখনই ও কাজের বাহানা দিয়ে রেখে দিতো। আবারও প্রচন্ডরকম মানসিক কষ্টের মধ্যে দিন কাটাতে লাগলাম। একদিন রাতে শুভ্রকে ফোন করে কাঁদতে লাগলাম। শুভ্র ব্যাকুল কণ্ঠে জিজ্ঞেস করলো, কি হয়েছে রিশিতা? আমি তখন বললাম আমি কোথাও চান্স পাইনি শুভ্র! আমি এখন কি করবো? শুভ্র কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে তারপর বলল, ‘সেকেন্ড টাইম ট্রাই করবে দেখবে ঠিকই হয়ে যাবে।’ আমি আবারও সেকেন্ড টাইম পরীক্ষা দেয়ার জন্যে প্রিপারেশন নিতে শুরু করলাম। শুভ্র তখনও আমার সাথে ছিলো। আমি মেডিকেলে দ্বিতীয়বার চান্স পেয়ে গেলাম। মেডিকেল কলেজের হোস্টেলে যাওয়ার আগে ফুপু আমাকে বাবার সম্পত্তি বিক্রি করে টাকা পাঠিয়েছিল। মোটা অংকের টাকা হওয়ায় পড়ার খরচের জন্যে আমাকে আর অন্য চিন্তা করতে হলো না। আর শুভ্র তখন খুলনা ইউনিভার্সিটিতে পড়ছিল তাই আমাদের দেখা সাক্ষাৎ হতো না বললেই চলে। ফোনেও খুব বেশী কথা হতো না, কারণ আমরা দু’জনেই পড়াশোনার জন্যে ভীষণ ব্যস্ত ছিলাম। কিন্তু আমি শুভ্রকে বিভিন্নভাবে বোঝানোর চেষ্টা করতাম যে আমি ওকে ভালোবাসি। - আপনি কখনও শুভ্রকে ভালোবাসার কথা বলেন নি কেনো? - আমি ভেবেছিলাম ভালোবাসি কথাটা আমি মেয়ে হয়ে কেনো বলবো! ও কেনো বলবে না! আমি পাশ করে বের হওয়ার এক বছর আগেই শুভ্র গ্রাজুয়েশন কমপ্লিট করলো। একদিন হোস্টেলে ফিরে ঘুমাচ্ছিলাম তখন শুভ্র আমাকে ফোন করে বলল, ও আমার হোস্টেলের সামনে দাঁড়ানো আছে। আমি খুশিতে আত্মহারা হয়ে গিয়েছিলাম, আমি ভেবেছিলাম শুভ্র হয়তো আজ আমাকে ভালোবাসার কথাটা বলবে।
শুভ্র সেদিন আমার সাথে শেষবারের মতো দেখা করতে এসেছিলো। এমবিএ পড়তে কানাডা যাবে তাই আমার সাথে দেখা করতে এসেছিলো। আমি সেদিন স্বার্থপরের মতো জিজ্ঞেস করেছিলাম, ‘তুমি চলে গেলে আমার কি হবে?’ শুভ্র সেদিন বলেছিল, ‘আমার যতটুকু সঙ্গে থাকার দরকার ততটুকু তো ছিলাম। আর তো প্রয়োজন দেখছি না!’ আমি সেদিন চিৎকার করে বলেছিলাম, ‘শুভ্র তুমি বুঝতে পারছো না? যে, আমি তোমাকে ভালোবাসি!’ শুভ্র আমায় জিজ্ঞেস করলো, ‘একসাথে কয়জনকে ভালোবাসো?’ আমি হতভম্ব গলায় বললাম, ‘কি বলছো শুভ্র?’ শুভ্র ঠাণ্ডা গলায় বলল, ‘কাকে ভালোবাসো তুমি প্রণবকে না আমাকে?’ - আমি শুধু তোমাকেই ভালোবাসি শুভ্র। শুধু তোমাকে। তারপর আমি প্রণবের কথা শুভ্রকে বললাম। সব শুনে শুভ্র বলল, ‘ভাগ্যিস প্রণব ফিরে এসেছিলো না হলে আমি তোমাকে কিভাবে চিনতাম! আর আজ যেটা তুমি প্রণবের সাথে করলে সেটা যে একদিন আমার সাথে করবে না তার কি কোনো গ্যারান্টি আছে?’ আমি স্তব্ধ হয়ে শুভ্রর দিকে তাকিয়ে ছিলাম। - আমি চলে যাচ্ছি রিশিতা, আর কখনও ফিরবো না। আর আমি পূর্বা নামে একটা মেয়েকে পছন্দ করি। ওকে বিয়ে করে আমি ওখানেই থেকে যাব। আমার মুখ থেকে সেদিন আর একটা কথাও বের হয়নি। শুভ্র সেদিন কিছুদূর হেঁটে গিয়ে আবারও আমার কাছে ফিরে এসে জিজ্ঞেস করলো, ‘ভালোবাসলে নাকি প্রিয়জনের জন্যে বুকের ভিতর ব্যথা অনুভব হয়। তোমার বুকের মধ্যে কি কখনও সেরকম ব্যথা অনুভব হতো! সেটা কার জন্যে হতো? শুভ্র নাকি প্রণব?’ সরি সরি তুমি তো আবার শুধু নিজের স্বার্থ বোঝো, ‘ভালোবাসা জিনিসটা বোঝোনা।’ সেদিন রাতে আমি এক ফোঁটাও ঘুমাতে পারিনি। সারারাত শুভ্রর বলা কথাগুলো ভাবছিলাম।
শুভ্র চলে যাওয়ার দিন আমি এয়ারপোর্টে গিয়েছিলাম। আমি ভেবেছিলাম পূর্বা নামের যে মেয়েটার কথা বলছিল সেটা হয়তো মিথ্যে, কিন্তু দেখলাম যে না সত্যিই পূর্বা সেদিন ওর সাথে এসেছিল। সবকিছু ভুলে গিয়ে আমি সবার সামনে সেদিন শুভ্রকে জড়িয়ে ধরেছিলাম। শুভ্র আমাকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিয়ে বলেছিল, ‘তোমার নাটক শেষ! আমি সেদিন কাঁদতে কাঁদতে বলেছিলাম আমাকে এত বড় শাস্তিটা দিও না শুভ্র।’
শুভ্র আমার কথা শোনেনি, ‘ও চলে গেলো। আরও একবার পুরুষ জাতির উপর আমার প্রচণ্ড ঘৃণা হতে লাগল।’ সেদিন আমাকে হোস্টেল পর্যন্ত পৌঁছে দিতে আসল শুভ্রর বন্ধু হাসান। হোস্টেলের ভিতরে যাওয়ার আগে হাসান আমাকে ডেকে বলল, তুমি যেদিন শুভ্রকে ফোন করে বলেছিলে যে তুমি কোথাও চান্স পাওনি, সেদিন ফোন রাখার পর শুভ্র কি বলেছিল জানো! বলেছিল সব মেয়েরাই এক রকম, ঠিক আমার মায়ের মতো স্বার্থপর। এত দিন পর ফোন করলো তাও একবার আমাকে জিজ্ঞেস করলো না যে আমি কেমন আছি! সেদিন প্রথমবারের মতো নিজের প্রতি আমার খুব ঘৃণা হলো! শুভ্রর আমাকে খারাপ ভাবাটা ভুল কিছু ছিলো না।
আমার হোস্টেলের রুমমেটরা ব্যপারটা জেনে গেলো। ওরা আমাকে নিয়ে কোনো উপহাস না করে বরং প্রচন্ডরকম মেন্টাল সাপোর্ট দিয়েছিল।
তারপর কেটে গেছে অনেকগুলো বছর। আমি এমবিবিএস, এমপিএইচ শেষ করে নরসিংদিতে প্রথম চাকরি নিলাম। নিজেকে ব্যস্ত রাখার জন্যে আমি চাকরির পাশাপাশি চেম্বারে রোগী দেখা শুরু করলাম। প্রচুর টাকা ইনকাম করতে লাগলাম। চাকরির প্রথম দিকে আমি একদিন হাসানের কাছে গিয়েছিলাম শুভ্রর ঠিকানার জন্যে। হাসান অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো এতদিন পর আবার শুভ্রকে কেনো? আমি বলেছিলাম শুভ্রর অনেকগুলো টাকা আছে সেটা দেয়ার জন্যে।
কয়েক দিন পর হাসান আমাকে ফোন করে জানালো, শুভ্র বলেছে টাকাগুলো কোনো একটা ভালো কাজে খরচ করতে।
আমার ডাক্তার হওয়া সম্ভব ছিলো না যদি না শুভ্র আমার সাথে থাকতো। তাই ভাবলাম দু’একজন গরীব মেধাবী ছাত্র ছাত্রীদের মেডিকেলে পড়তে যতটা সাহায্যে দরকার করবো। ঠিক যেভাবে শুভ্র আমাকে করেছিল।
এভাবেই আমি সবার মাঝে পরিচিত হয়ে গেলাম। ড. রিশিতা সব মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীদের অনুপ্রেরণা হয়ে গেলো। কিন্তু আমি তো জানি যে আমি কিচ্ছু হতে পারতাম না যদিনা শুভ্র আমার পাশে থাকতো। আমি কখনও একা কিছু করতে পারতাম না।
আমাকে যখনই বলা হতো তোমার সফলতার পিছনের গল্পটা কি? আমি তখন এক বাক্যে বলতাম একজন সঙ্গে ছিলো। একদিন আমার এক কলিগ বলেছিল, রিশিতা তোমার সেই একজন কি আর বেঁচে নেই? আমি আঁতকে উঠে বলেছিলাম, কি বলছেন থাকবে না কেনো! - তাহলে তুমি যে বলো একজন সঙ্গে ছিলো। ছিলো যার মানে এখন আর নেই! সেদিন আমি ভেবেছিলাম যে এরপর যখন আমাকে বলতে হবে তখন আমি আর একজন সঙ্গে ছিলো কথাটা না বলে বলবো একজন সঙ্গে আছে!
আমি আর কখনও একজন সঙ্গে আছে কথাটা বলতে পারলাম না। এরপরও আমাকে একজন সঙ্গে ছিলো কথাটা বলতে হয়েছে। কারণ শুভ্র আমাকে ছেড়ে সত্যিই চলে গিয়েছিল। ফারজানা চমকে উঠে জিজ্ঞেস করলো, ‘মানে?’ - রিশিতা স্বাভাবিক গলায় বলল, ‘শুভ্র মারা গিয়েছিল।’
(চলবে....)
আরো পড়ুন ৪র্থ পর্ব- ধারাবাহিক গল্প : একজন সঙ্গে ছিলো
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড