• বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩৬ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

‘দ্যা গেম’-এর ষষ্ঠ পর্ব

ধারাবাহিক উপন্যাস : দ্যা গেম (ষষ্ঠ পর্ব)

  রোকেয়া আশা

০৬ অক্টোবর ২০১৯, ১৭:১০
গল্প
ছবি : প্রতীকী

হলঘরটায় সাথে সাথে মৃদু গুঞ্জন শুরু হয়ে যায়। সি, সি প্লাস প্লাস আর পাইথন সবসময়ই প্রচলিত। কিন্তু জুলিয়া এখনো পর্যন্ত সি প্লাস কিংবা পাইথনের মতো এত বেশি প্রচলিত প্রোগ্রামিং ল্যাংগুয়েজও না। বাংলাদেশের দলটাও নিজেদের মধ্যে কথা বলছে। দীপ্ত দ্রুতই দলের নেতৃত্ব নিয়ে নেয়। - সুমন ভাই, আয়েশা আপু, তোমরা জুলিয়া পারো না? মাথা নাড়ে। ওরা দু’জনই পারে। - শাহেদ ভাই তুমি? - পারি। - তারিকুল? তারিকুল একটু ইতস্তত করে। তারপর বলে, ‘তেমন ভালো পারি না। প্রচুর এরর আসে প্রোগ্রাম লিখলে।’ মাথা ঝাঁকায় দীপ্ত। সবার শেষে তাকায় মাহিরা আর মিশুর দিকে। - তোরা পারিস? - না। দুইজন একসাথেই উত্তর দেয়। মুখ পাণ্ডুর হয়ে আছে দু’জনেরই। দীপ্ত হাসে। - একদম পারফেক্ট। সবাই তাকায় দীপ্তের দিকে। কি বলতে যাচ্ছে তার অপেক্ষায়। - সবাই পারলেই তো ঝামেলা। মাহিরা, মিশু, তোরা সায়েন্সে পড়িস না? - হু। - এইতো, গুড। আজকে তোদের ম্যাথ পরীক্ষা। ভালো করলে ইন্টারে প্লাস কনফার্ম। মাহিরা প্রশ্ন করে, ‘আমরা তাহলে ম্যাথ করবো?’ - হ্যাঁ। দীপ্ত এরপর তারিকুলের দিকে তাকায় বলে, ‘তুই পাজল সলভ করবি।’ তারিকুল সম্মতি দেয়। আরও প্ল্যানিং হয়তো দীপ্তের মাথায় ছিলো; কিন্তু সেটা চাপা পড়ে যায় হার্পের তীক্ষ্ণ আওয়াজে। ওরা সাতজন যেই টেবিলটায় বসে আছে সেখানে চেয়ার আটটা। আট নাম্বার চেয়ারটা ফাঁকাই পড়ে আছে। হলরুমের একপাশে বাদকেরা হার্প আর অর্কেস্ট্রা বাজিয়ে যাচ্ছে। শাহেদ সেদিকে তাকিয়ে বললো, ‘ইশ্! যদি আইডার গান হতো!’ বাকিরা আইডাকে, সেটা জিজ্ঞেস করতে যাবে, তার আগেই মাশার কণ্ঠ শোনা যায়। - তুমি আইডাকে চেনো? কথা বলতে বলতেই এসে ফাঁকা চেয়ারটায় বসে পড়ে। শাহেদ হাসিমুখে জানায়, ‘এক্স ফ্যাক্টর।’ - ওহ্! হ্যাঁ। আইডা নিকোলাইচুকের অডিশনটা তো পুরো ভাইরাল হয়ে গেছিলো। আমার তো মনে হয় দ্যা ভয়েসের অডিশনও এত ভাইরাল হয় না। আয়েশা লক্ষ্য করে, মঞ্চের কাছ থেকে ইভান সকোলভ এদিকে হাত তাকিয়ে হাত নেড়ে কারও দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করছে। আয়েশা মাশাকে বলে, ‘তোমার বাবা ডাকছেন তোমাকে।’ মাশা কিছুটা চমকে ওঠে। আয়েশার নির্দেশিত দিকে তাকিয়ে ইভানকে দেখে। - তুমি জানো কিভাবে? মাশা চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়াতে দাঁড়াতে আয়েশাকে প্রশ্ন করে। আয়েশা হাসে বলে, ‘সহজ।’ - তোমাদের দেখতে একরকম। তাছাড়া তোমার সারনেম সকোলভা, উনার সারনেম সকোলভ। মেইকস এনাফ সেন্স? আয়েশার কাঁধে একটা চাপড় দিয়ে চলে যায় মাশা সকোলভা। প্রায় সাথে সাথেই বো টাই পড়া দুজন খাবারের ডিশ হাতে টেবিলের সামনে চলে আসে। টেবিলে ডিশগুলো নামিয়ে রাখে একজন। অন্যজন প্লেট আর চামচ সাজিয়ে দিতে থাকে। - তোমাদের এই চেয়ারটা কি ফাঁকা? বসা যাবে? প্রশ্নকর্তার দিকে তাকাতেই একটি সুদর্শন মুখ দেখতে পায় দীপ্তরা সবাই। লম্বা, মেদহীন ছিপছিপে এক তরুণ। নাকি কিশোর? টিকালো নাক, গাঢ় নীল চোখ আর মাথাভর্তি সোনালি চুল।

সুমন একবার আড়চোখে হলের প্রান্তে তাকায়। মাশা ইভানের সাথে কথা বলছে। ফিরে আসবে কিনা বোঝা যাচ্ছে না। একটু ইতস্তত করছে সবাই৷ ছেলেটাও ওদিকে তাকায়। - ওহ্, মাশা? টিম গাইডরা আলাদা লাঞ্চ করবে। একসাথে। বসি আমি? এবার আর দ্বিধা করে না কেউই। ছেলেটা বসে নিজের পরিচয় জানায়। - আমি স্টিফান। স্টিফান গিলবার্ট। টিম ইউএসএ। স্টিফানের ঠিক পাশেই মাহিরা। ও জানায়, ‘আমরা টিম বাংলাদেশ।’ টেবিলের অন্যপাশ থেকে সুমন জিজ্ঞেস করে, ‘তুমি মাশাকে চেনো?’ স্টিফান জানায়, ‘আমি ফ্লাইটের আগে ইভেন্টের গাইড প্রোফাইল চেক করেছিলাম।’ একটু বিরতি দিয়ে ছেলেটা আবার বলে, ‘তোমাদের সাথে বসেছি৷ অথচ তোমাদের কারও নামই জানি না।’ এতক্ষণে বাকিদেরও খেয়াল হলো। ওরা পরিচিত হতে হতে ওদের টেবিলে পানীয় আর গ্লাসও চলে এলো।

খেতে খেতে আলাপ সারলো ওরা। জানা গেলো স্টিফান হাই স্কুলে পড়ছে। এই ডিসেম্বরে স্কুল শেষ ওর। কলেজে ভর্তির জন্য স্কলারশিপ লাগবে ওর। প্রোগ্রামিং কনটেস্টে ওর নিয়মিত অংশগ্রহণের এটাই মূল কারণ। - তোমার টিমমেটরা কোথায়? শাহেদের প্রশ্নের উত্তরে স্টিফান আঙুল তুলে ইশারা করে। সবাই তাকায় সেদিকে। ওদের টেবিলের থেকে মোটামুটি কাছেই আরেকটা টেবিল। সেখানে তিনজন শ্বেতাঙ্গ তরুণ, দুই শ্বেতাঙ্গ তরুণী, একজন কৃষ্ণাঙ্গ কিশোর বসা। বাকি দু’জনের ফিচার এশীয়। চীনা হতে পারে। কিংবা জাপানি। অথবা কোরিয়ান। - এশিয়ান দু’জন কোরিয়ার টিমের। নাম ভুলে গেছি আমি। উচ্চারণও করতে পারি না। তবে তোমাদের মেয়ে তিনজনের নাম সহজ।’ স্টিফান হাসে। - ও, আর ওই যে কালো ছেলেটাকে দেখছো, ও লুক। লুকাস। আমাদের সবচেয়ে ছোট সদস্য। মাত্র পনেরো বছর ওর বয়েস। দীপ্ত মিশু আর মাহিরাকে দেখিয়ে জানায়, ‘আমাদের সবচেয়ে ছোট সদস্য এরা। অবশ্য লুকাসের চেয়ে দু’বছরের বড়।’ - ওয়েল, আমি তোমাদের চেয়ে তাহলে এক বছরের বড়। আমি একজন এডাল্ট। ওরা রুশ মিউজিকের সাথে সাথে খাওয়া শেষ করে। স্টিফান বা হাতের স্মার্ট ওয়াচে চোখ বুলিয়ে বলে, ‘এখনো দু’ঘন্টা বাকি প্রবলেম রিলিজের।’ হলঘরের সামনের দিকের ফাঁকা জায়গাটায় তখন অনেকেই নাচছে। মাশাকে দেখা গেলো কিরের সাথে। স্টিফান টেবিলের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো, ‘তোমরা কেউ নাচবে? আমার বল নাচ খুব ভালো লাগে।’ তিনজনের উদ্দেশ্যে বললেও ছেলেটা সম্ভবত মিশুকেই জুটি হিসেবে চাইছে, মনে মনে ভাবে আয়েশা। ওর ধারণাকে ভুল প্রমাণ করে স্টিফান সরাসরি বলে, ‘মাহিরা, যদি তোমার কোন সমস্যা না থাকে আর কি!’

মাহিরার মুখ দেখে বোঝা যাচ্ছে ও নাচতে আগ্রহী, কিন্তু টিমের অন্যরা কি ভাববে, তাই ভেবে যেতে পারছে না। মাহিরার জন্য পরিস্থিতি সহজ করতে আয়েশা সুমনের দিকে তাকিয়ে বলে, ‘সুমন, দোস্ত, নাচবি নাকি?’ সুমন উঠে দাঁড়ায়। আয়েশা সুমনের সাথে সামনের দিকে চলে যায়। মাহিরা আর দ্বিধা করে না। উঠে স্টিফানের হাত ধরে। টেবিলে ওরা চারজন যখন বসে গল্প করছে তখন পাশের টেবিল থেকে কোরিয়ান এক ছেলে এসে দাঁড়ায়। - ইয়ুন দুয়ো বোধহয় তোমাদের পরিচিত। ওকে দেখেছো কোথাও? - না তো। হোটেলে আমাদের থেকে আলাদা হয়ে যাওয়ার পর থেকে আর দেখি নি। এখানেও না। তারিকুল জানায়। - ভ্যান থেকে নামার পর সবার আগে ও ভেতরে ঢুকেছে। কিন্তু এরপর আমরাও আর ওকে দেখিনি। দীপ্তরা চারজন মুখ চাওয়াচাওয়ি করে পরস্পরের। ইয়ুন দুয়ো গেলো কোথায়?

হলরুমের সামনের দিকে তখন নাচের সাথে মানানসই করার জন্য হাল্কা মিউজিক পালটে ভিন্ন ধাচের মিউজিক বাজছে। এরমধ্যেই একটি বেমানান দৃশ্যের অবতারণা ঘটে। উদ্ভ্রান্তের মতো একটি মেয়ে চিৎকার করতে করতে ভেতরে ঢোকে। ভারতীয় ফিচারের মেয়েটি। এভাবে চিৎকার করতে করতে মেয়েটিকে ছুটে আসতে দেখে বাদকেরাও বাজনা থামিয়ে দিয়েছে। ইভান সকোলভ মেয়েটির কাছে ছুটে আসে। মাশা তারও আগে ছুটে এসে মেয়েটিকে জড়িয়ে ধরে। মাশার বয়সী আরেকজন রুশ তরুণীও এসে মেয়েটিকে অন্যপাশ থেকে জড়িয়ে ধরে। রুশ মেয়েটি ওকে ধরে নরম গলায় জিজ্ঞেস করে, ‘শিল্পা, শিল্পা, কি হয়েছে?’ শিল্পা নামের মেয়েটি হিস্টিরিয়াগ্রস্তের মতো কাঁপতে কাঁপতে বলে, ‘সামওয়ান ইজ লায়িং ডেড ইন ফিমেইল ওয়াশরুম।’

(চলবে...)

‘দ্যা গেম’-এর পঞ্চম পর্ব- ধারাবাহিক গল্প : দ্যা গেম

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড