রিফাত হোসেন
রাস্তার মাঝে লোকজনের ভীড় দেখে কিছুটা অবাকই হয় ইনস্পেক্টর মাসুদ আহমেদ। যদিও হাতে সময় কম, কিন্তু এত মানুষের ভীড়ের কারণটাও জানা প্রয়োজন তার। হয়তো কোনো ঝামেলা হয়েছে। তাই মাসুদ আহমেদ বিষয়টি দেখার জন্য লোকগুলোর কাছে এসে গাড়ি ব্রেক করার নির্দেশ দিলেন ড্রাইভারকে। নির্দেশ মোতাবেক লোকগুলোর কাছে এসে গাড়িটা ব্রেক করল ড্রাইভার। মাসুদ আহমেদ তড়িঘড়ি করে গাড়ি থেকে নেমে লোকগুলোর সামনে দাঁড়ালেন। সেই সাথে তিনি লক্ষ্য করলেন উপস্থিত সবার চোখেমুখে আছে এক আতঙ্ক। এক অজানা শঙ্কার প্রতিচ্ছবি। কিছুটা চুপ করে থাকার পর সবার উদ্দেশ্যে তিনি বললেন, ‘কি হয়েছে এখানে? আপনারা এতজন এখানে ভীড় করে রেখেছেন কেন?’
মাসুদ আহমেদ ইউনিফর্ম পরা। তাই স্বাভাবিক ভাবেই উপস্থিত জনতাদের মধ্যেকার কারোরই বুঝতে একটুও অসুবিধা হয়নি যে, সামনে দাঁড়িয়ে থাকা লোকটা একজন পুলিশ। তাই উত্তেজিত হয়ে একসাথে কয়েকজন লোক এগিয়ে এসে আবোলতাবোল বলতে লাগলেন। মাসুদ আহমেদ তাদের থামিয়ে দিয়ে বললেন, ‘ঝামেলা না করে একজন আমাকে বলুন কী হয়েছে? এভাবে হৈচৈ করে পুরো এলাকার মানুষদের মাঝে আতঙ্ক সৃষ্টি করবেন না।’
একথা শোনার পর সবাই থেমে গেল মুহূর্তের মধ্যেই। কিছুক্ষণ নীরব থাকার পর হঠাৎ একজন মধ্যবয়স্ক লোক বলতে শুরু করলেন, ‘আহসান সাহেবকে কয়েকজন লোক মারতে মারতে গাড়িতে তুলে নিয়ে গেছে স্যার। আমরা প্রথমে থামানোর চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু ওদের সাথে পেরে উঠিনি কারণ ওরা অনেকজন ছিল। আর আমরা মাত্র দুই চারজন ওদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করার সাহস পাইনি।’
লোকটার কথা শুনে ইনস্পেকটর মাসুদ আহমেদ ‘হা’ হয়ে গেলেন। পাশে থাকা ড্রাইভার মধ্যবয়সী লোকটাকে উদ্দেশ্য করে বলল, ‘আহসান সাহেবকে আপনি চিনেন?’
- হ্যাঁ। তারা অনেকদিন ধরেই এখানে আছেন। উনার ছেলে একজন উকিল। আর উনার স্ত্রী কি করেন তা জানি না। তবে উনাকে খুব কমই দেখেছি অবশ্য। বয়স খুবই কম।
- গতকালকে উনার স্ত্রী খুন হয়েছে।
ড্রাইভার এর কথা শুনে লোকগুলো অবাক দৃষ্টিতে নিজেদের মধ্যে চাওয়াচাওয়ি করল কয়েকবার। তারপর একজন বললেন, ‘দু’দিন আগেও সকালবেলা মেয়েটিকে দেখেছি আমি।’
ইনস্পেক্টর মাসুদ আহমেদ সবাইকে থামতে বললেন। লোকটা সহ ড্রাইভার-ও থেমে গেল। মাসুদ আহমেদ বললেন, ‘এখন এইসব বলার বা শোনার সময় নেই আমাদের কাছে। যেভাবেই হোক মিস্টার আহসান সাহেবের কিছু হওয়ার আগেই তাকে উদ্ধার করতে হবে। তার কোনো ক্ষতি হতে দেওয়া যাবে না কোনোভাবেই।’
ড্রাইভার বলল, ‘ইয়েস স্যার।’
মাসুদ আহমেদ লোকটাকে উদ্দেশ্য করে বলল, ‘কে বা কারা উনাকে তুলে নিয়ে গেছেন আপনারা কী জানেন?’
- না স্যার। ওদের মুখে রুমাল বাধা ছিল। তবে আপনারা যদি এখনি ওদের পিছু নেন, আমার মনে হয় আহসান সাহেবকে বাঁচাতে পারবেন আপনারা।
- কোনদিকে গেছে ওরা? এতক্ষণে নিশ্চয়ই অনেকটা দূরে চলে গেছে।
লোকটা সামনের রাস্তাটা দেখিয়ে বলল, ‘দু’টো গাড়ি ছিল। বড় একটা গাড়িতে অন্যরা সবাই হাইওয়ের দিকে গেছে। আর আহসান সাহেবকে নিয়ে একটা লোক এই রাস্তা দিয়ে গেছে। এই রাস্তাটা হাইওয়ের দিকে যাইনি। তাই আহসান সাহেব সহ ওই লোকটাকে পেতে আপনাদের অসুবিধা হবে কম। হয়তো কোনো বাড়ির সামনে গাড়িটা থামা অবস্থায় দেখতে পাবেন। রাস্তাতেও পেয়ে যেতে পারেন।’
- গাড়িটা কী রঙের? গাড়ির নম্বর দেখেছেন আপনারা?
- কালো রঙের প্রাইভেট কার ছিল ওটা। নম্বরটা জানি না। আসলে এতটাই ভয় পেয়েছিলাম যে, গাড়ির নম্বর প্লেটের দিকে তাকানোর কথা মনেই ছিল না।
- ঠিক আছে। অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাদের। ড্রাইভার গাড়ি স্টার্ট দাও তাড়াতাড়ি।
মাসুদ আহমেদ তাড়াতাড়ি ওঠে পড়লেন গাড়িতে। ড্রাইভার গাড়ি স্টার্ট দিয়ে দ্রুত গতিতে সামনে এগোতে লাগল। দু’জনেই চারিদিকে ভালো করে নজর রেখেছেন। কিন্তু অনেক খোঁজাখুঁজির পর-ও মিস্টার আহসান কিংবা কালো রঙের কোনো প্রাইভেট কার উনাদের নজরে পড়েনি।
ড্রয়িংরুমের সোফায় বসে আছে ফারাবী। রাগে আর ক্ষোভে নিজের মাথার চুল নিজেই টানছেও। রাগটা অবশ্য নিজের উপরেই। কিছুক্ষণ আগেই মাসুদ আহমেদ ফোন করে জানিয়েছে মিস্টার আহসান এর কিডন্যাপ হওয়ায় ব্যপারটি। বাবার কিডন্যাপ হওয়ার কথাটা জানতে পেরে কান্নায় ভেঙে পড়েছিল ফারাবী। মাসুদ আহমেদ ওকে আশ্বাস দিয়েছে এবং এটাও বলেছে ও যেন বাড়ি থেকে বের না হয়। সেই সাথে থানা থেকে কয়েকজন কনস্টেবলকে ও বাড়িতে পাহারা দেওয়ার জন্য রেখে দিয়েছে।
কারণ তার ধারণা মিস্টার আহসান এর কোনো শত্রু প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য এইরকম করছে। আর প্রতিশোধের নেশায় মিস্টার আহসান এর সাথে সাথে ফারাবীর-ও কোনো ক্ষতি করতে পারে ওরা। মূলত সেজন্যই বাড়ির বাইরে পুলিশের লোকজন দাঁড়িয়ে আছে। এদিকে ফারাবীর চোখ দিয়ে অনবরত জল গড়িয়ে পড়ছে। নিজের অসহায়তার জন্য নিজের প্রতি রাগ দেখাচ্ছে ও। কয়েকবার বাড়ি থেকে বের হওয়ার চেষ্টা করছে। কিন্তু পারেনি। পুলিশের কড়া নজর পুরো বাড়িতে। দরজা খুললেই দেখে সামনে দাঁড়িয়ে আছে কনস্টেবলরা। বাইরে যেতে চাইলেই বাধা দেয় তারা। ফারাবী কিছু বলতে গেলেই ওরা বলে, ‘সরি স্যার। কোনোভাবেই আপনাকে বাইরে যেতে দিতে পারব না আমরা। উপর মহল থেকে কড়া অর্ডার এসেছে। দায়িত্বের ব্যতিক্রম হলেই আমাদের চাকরি নড়বড়ে হয়ে যাবে।’
কারণ জিজ্ঞেস করলেও কেউ বলে না। মাসুদ আহমেদ অবশ্য এর কারণটা ফারাবীকে বলেছে। কিন্তু ফারাবীর কাছে সেই কারণটা তুচ্চ-তাচ্ছিল্যের এবং অযৌক্তিক মনে হয়। কারণ কেউ ওর কোনো ক্ষতি করতে চাইলে এতক্ষণে করে ফেলতো। বাড়ির সামনে এসে ওর বাবাকে তুলে নিয়ে গেছে। ওদের উদ্দেশ্যের মধ্যে যদি ফারাবী থেকে থাকে, তাহলে নিশ্চয়ই ওকে ছেড়ে দিতো না। ফারাবী যখন বুঝতে পারল বাড়ি থেকে বের হওয়ার আর কোনো উপায় নেই, তখন হাল ছেড়ে দিয়ে সোফায় বসে মাথা নিচু করে রইল।
চোখ মেলে নিজের অবস্থান দেখে নিলো ফারাবী। ওঠে বসে চোখ কচলাতে লাগল। কালকে গভীর রাতে ক্লান্ত শরীর নিয়ে সোফায় শোয়ার সাথে সাথে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। কালকের রাতের কথা মনে পড়তেই বুকের ভিতর যন্ত্রণা অনুভব করল ফারাবী। দরজার দিকে একবার তাকালো। এরপর চোখটা আবার ফিরিয়ে এনে নিজের ফোনটা খুঁজতে লাগল।
ফোনটা হাতে পাওয়ার পর শুরুতেই মিস্টার আহসান এর নম্বরে কল দিলো। কিন্তু কালকের মতো এখনো অপর পাশের ফোনটা বন্ধ বলছে। দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে ইনস্পেক্টর মাসুদ আহমেদ এর নম্বরে ফোন দিলো ফারাবী। কিন্তু হঠাৎই দরজায় কলিংবের বেজে উঠল। তাই ফোনটা কেটে দিয়ে দরজার খুলে দিতে গেল। দরজা খুলে দিয়ে সামনের দিকে তাকাতেই ভীমড়ি খেয়ে গেল ফারাবী। আতঙ্কিত দৃষ্টিতে মিস্টার আহসান এর দিকে তাকিয়ে রইলো। কিছুক্ষণ পর নিজের মধ্যে ফিরে এসে উৎকণ্ঠিত গলায় বলল, ‘তোমাকে কারা তুলে নিয়ে গিয়েছিল বাবা? আর তোমার শরীরের এই অবস্থা কেন?’
মিস্টার আহসান এর পাশের দাঁড়িয়ে আছে মাসুদ আহমেদ। তিনি ফারাবীকে উদ্দেশ্য করে বললেন, ‘উনাকে একটু বসতে দিন আগে। আমি আশা করি উনি আমাদের সবটা পরিষ্কার করে বলবেন।’
ফারাবী মিস্টার আহসান এর হাত দিয়ে ভিতরে নিয়ে এলো। ড্রয়িংরুমের সোফায় বসিয়ে দিয়ে এক গ্লাস পানি এগিয়ে দিলো তার দিকে। ঢকঢক করে সবটুকু পানি খেয়ে নিলো মিস্টার আহসান। ফারাবী মাসুদ আহমেদ এর দিকে তাকিয়ে বলল, ‘বাবাকে কোথায় পেলেন আপনি? আর যারা বাবাকে নিয়ে গিয়েছিল, তারা কারা? তাদের কী ধরতে পেরেছেন আপনারা?’
- না। এখনো কাউকেই ধরতে পারিনি। ভোরবেলা আপনাদের বাড়ির ওই সামনের রাস্তাতে উনাকে হাত-পা, মুখ আর চোখ বাধা অবস্থায় পেয়েছি। তারপর কাছের একটা হাসপাতালে নিয়ে গিয়েছি। শরীরের ক্ষত স্থানগুলোতে প্রাথমিক চিকিৎসা করিয়ে এখানে নিয়ে এলাম।
ফারাবী এবার মিস্টার আহসান কে বলল, ‘ওরা কারা ছিল বাবা? আর তোমাকে তুলে নিয়ে গিয়েছিল কেন? কোথায়-ই বা নিয়ে গিয়েছিল তোমাকে?’
মিস্টার আহসান দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছেড়ে গ্লাসটা পাশে রাখলেন। এরপর বলতে শুরু করলেন, ‘আমি যখন খাবার নিয়ে বাড়ির দিকে আসছিলাম। তখনই ওরা আমাকে বাঁধা দেয়। মারতে মারতে আমাকে গাড়িতে তুলে। আমি কিছুতেই বুঝতে পারছিলাম না ওদের উদ্দেশ্য কী? এদিকে আমার মাথা ফেটে রক্ত পড়ছিল। আমি জ্ঞান হারালাম তখন। যখন জ্ঞান ফিরল, তখন একটা অন্ধকার ঘরে হাত-পা বাধা অবস্থায় নিজেকে আবিষ্কার করলাম। আমার সামনে একজন দাঁড়িয়ে ছিল। এক হাতে ছিল পিস্তল। আরেকহাতে ছিল ফোন। কারোর সাথে ফোনে কথা বলছিল। আমি খুব ভয় পেয়ে যাই। আমার জ্ঞান ফিরেছে, তা টের পেয়ে ফোন কেটে দিয়ে লোকটা আমার মাথায় পিস্তল তাক করে বলল- ভিডিওটা দিন আমাকে।’
মাসুদ আহমেদ উনাকে থামিয়ে দিয়ে বলল, ‘কীসের ভিডিও?’
- আমি জানি না কীসের ভিডিও এর কথা বলছিল লোকটা। আমি উনাকে বলেছিলাম আমার কাছে কোনো ভিডিও নেই। কিন্তু লোকটা জোর দিয়েই বারবার বলছিল, সে নাকি নিশ্চিত আমার কাছেই ভিডিওটা আছে। আমি যখন অস্বীকার করছিলাম, লোকটা তখন রেগে গিয়ে পিস্তল দিয়ে আবার আমার মাথায় আঘাত করল। ফলে দ্বিতীয়বারের মতো আমি অজ্ঞান হয়ে গেলাম। পরেরবার জ্ঞান ফিরল হাসপাতালে। তখন পাশে তাকিয়ে দেখি আপনি দাঁড়িয়ে আছেন।
- আমি নিশ্চিত এটা খুব বড় একটা চক্র। আর ভিডিওতেও খুব জরুরি কিছু আছে। নাহলে একটা ভিডিও এর জন্য এভাবে আপনাকে তুলে নিয়ে যেতো না। কিন্তু আপনাকে একেবারে না মেরে আবার ছেড়ে দিলো কেন? লোকটা নিশ্চয়ই এতটাও বোকা নয় যে, আপনাকে ছেড়ে দেওয়ার মতো রিস্ক নিবে।
- আমাকে এখনি মেরে ফেললে ওর কোনো লাভ হবে না। বরং ক্ষতি হবে আরো।
ফারাবী আর মাসুদ আহমেদ একসাথে অবাক কণ্ঠে বলল, ‘মানে?’
- লোকটা নিশ্চিত যে কোনো একটা ভিডিও আমার কাছে আছে। আর সেই ভিডিওটা আমার স্ত্রীই আমাকে দিয়েছে। আর আমার স্ত্রী এখন মৃত। সুতরাং ভিডিওটা উনার হাতে যাওয়ার এরমাত্র মাধ্যম হলাম আমি। আমাকে মেরে ফেললে ভিডিওটাই হাতছাড়া হয়ে যাবে।
- আপনার স্ত্রী ভিডিওটা আপনাকে দিয়েছে মানে? ভিডিওটার সাথে আপনার স্ত্রীর সম্পর্ক কী?
- ভিডিও এর সাথে আমার স্ত্রীর সম্পর্ক আরো গভীর। লোকটার কথানুযায়ী আমার স্ত্রী নিজেই আমাকে ভিডিওটা দিয়েছিল। এবং সেই ভিডিওটার জন্যই আমার স্ত্রীকে খুন করেছে লোকটা।
মিস্টার আহসান এর কথা শুনে ফারাবী আর ইনস্পেক্টর একে অপরের দিকে তাকালো একবার। এরপর আবার মিস্টার আহসান এর দিকে তাকিয়ে বলল, ‘আপনার স্ত্রীকে ওই লোকটাই খুন করেছে?’
- হ্যাঁ।
- এতটা শিওর কীভাবে হচ্ছেন আপনি?
- আগে শিওর ছিলাম না আমি। তবে কালকে ওই লোকটা ভিডিও চাওয়ার পর থেকেই শিওর হয়েছি আমি। সেদিন যখন কেউ একজন আমার স্ত্রীর কাটা মাথাটা ড্রয়িংরুমে ছুড়ে দিয়ে যায়, তখনই ওই মাথাটার ঘাড়ের সাথে লাগানো একটা কাগজ দেখতে পাই আমি। ফারাবীর সামনে কাগজটা পড়তে চাইনি বলেই মাথাটা নিজের ঘরে নিয়ে যাই। কিন্তু সেখানেও ফারাবী চলে যায়। তাই মাথাটা ফ্রিজে রেখে দিই। ফারাবী চলে যাওয়ার পর-ই কাগজটা পড়তে থাকি আমি। সেই কাগজে-ও বারবার একটা কথাই লিখা ছিল, তা হলো ‘ভিডিওটা দিন।’ কিসের ভিডিও এর কথা বলছে, তা বুঝতে না পারলেও আমি এটা বুঝতে পারছিলাম, আমার স্ত্রীর খুন হওয়ার পিছনে সাংঘাতিক একটা রহস্য লুকিয়ে আছে। আর সেই রহস্যের মধ্যে আছে মৃত্যুর মতো ভয়ঙ্কর এক বিপদ। তাই ফারাবীকে এই কেইস থেকে দূরে থাকতে বলেছিলাম আমি। কারণ ও আমার স্ত্রীকে খুন করেছে, এবার হয়তো আমার ছেলেকেও খুন করবে। এরপর আমাকে। ভয়টা ফারাবীর জন্যই বেশি ছিল আমার।
- আপনার স্ত্রীর খুন হওয়ার কারণটা আর আপনাকে অপহরণ করার উদ্দেশ্যটা এখন পরিষ্কার আমার কাছে। কোনো এক গোপন ভিডিও আপনার স্ত্রীর কাছে ছিল। আর সেটা ওই লোকটার জন্য বিপদজনক ছিল। তাই ভিডিওটা পাওয়ার জন্য আপনার স্ত্রীর উপর আক্রমণ করে লোকটা। আপনার স্ত্রী হয়তো খুন হওয়ার আগে বলেছিল ভিডিওটা তিনি আপনাকে দিয়েছেন। তাই লোকটা আপনার স্ত্রীকে খুন করে সেই মাথাতেই আপনাকে একটা ছোট্ট বার্তা পাঠায়। লোকটা ভেবেছিল আপনি হয়তো ভয় পেয়ে বার্তানুযায়ী ভিডিওটা তাকে দিয়ে দিতে চাইবেন। তাই রাস্তাতেই আপনার কাছে ভিডিওটা চেয়েছিল। আপনি যখন ভিডিওটা দিতে চাননি, তখন উনি আপনাকে মেরে অজ্ঞান করে সাথে নিয়ে যায়। কিন্তু এরপরও আপনি ভিডিওটার সম্পর্কে কিছুই বলেননি উনাকে। আর ভিডিওটা হাতে না পেয়ে আপনাকে খুন করতেও পারছিল না লোকটা। তাই আবারও আপনাকে সুযোগ দিয়েছে। যাতে ভিডিওটা তাকে ফিরিয়ে দেন। দুই একদিনের মধ্যে হয়তো আবারও আপনাকে তুলে নিয়ে যাবে উনি।
- কিন্তু কোনো ভিডিওই তো নেই আমার কাছে। লোকটাকে কীভাবে দিবো আমি?
- সেটা আমরা বিশ্বাস করলেও লোকটা করবে না এত সহজে।
ফারাবী বলল, ‘লোকটা বিশ্বাস করুক চাই না করুক। সেটাতে আমার কোনো আগ্রহ নেই। কিন্তু এভাবে জোর করে বাবাকে তুলে নিয়ে অত্যাচার করবে, সেটা তো মেনে নিবো না আমি। ইনস্পেক্টর আপনার কাছে আমার অনুরোধ, দ্রুত লোকটাকে ধরার ব্যবস্থা করুন।’
- সবরকম চেষ্টা করছি আমরা। আচ্ছা মিস্টার আহসান সাহেব, লোকটার সম্পর্কে এমন কিছু আপনি বলতে পারবেন, যার দ্বারা লোকটার পরিচয় পেতে সুবিধা হবে আমাদের।
- লোকটার নিজের নাম করে কাউকে ফোনে বলছিল, এই পৃথিবীতে কাউকেই ভয় পায় না ও। সুতরাং নামটা ছাড়া কিছুই জানি না আমি।
- কী নাম উনার?
মিস্টার আহসান লোকটার নাম বললেন। কিন্তু লোকটার নাম শুনে সবাই-ই অবাক আর বিস্ময় নিয়ে ভ্রু-কুঁচকালো।
(চলবে...)
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড