• শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩৭ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

‘দ্যা গেম’-এর পঞ্চম পর্ব

ধারাবাহিক উপন্যাস : দ্যা গেম

  রোকেয়া আশা

০৩ অক্টোবর ২০১৯, ১৫:১৯
গল্প
ছবি : প্রতীকী

ইয়ুন দুয়ো আর মাশার সাথে আয়েশা রিসিপশনে চলে এসে দেখে সুমন, শাহেদ, কির আর ফিউদর এসে বসে আছে। - দীপ্তরা কই? আর পিচ্চি দুইটা? আয়েশা সুমনকে দেখে প্রশ্ন করে। - দীপ্ত আর তারিকুল পিচ্চিগুলারে নিয়া আসতেছে। সুমন হাল্কা গলায় উত্তর দেয়। আয়েশা আঁচ করতে পারে, সম্ভবত ওই ম্যাসেজটার ব্যাপারেই কথা বলতে গেছে দীপ্ত আর তারিকুল। ইয়ুন দুয়ো একটু উশখুশ করে, সেদিকে লক্ষ্য করে অন্যরা। ওকে সহজ করার জন্য এগিয়ে এসে বলে, ‘হ্যালো, আমি শাহেদ।’ পাশ থেকে সুমনও এসে দাঁড়ায় বলে ‘আমি সুমন।’ ইয়ুন দুয়োর নাম উচ্চারণে এরাও একইরকম বিপাকে পড়ে যায়। সিদ্ধান্ত হয়, ইয়ুন দুয়োকে সবাই ক্লাউড বলেই ডাকবে। - আমার টিম মেটরা আসেনি? ইয়ুন দুয়োর প্রশ্নে কির হাসিমুখে জানায়, ‘তায়ে হির সাথে কথা হয়েছে আমার। ছয়জন একসাথে আসছে। চিন্তা করো না তুমি।’ কিছুটা বোধ হয় ভরসা পায় মেয়েটি। মাথা ঝাঁকায়। ২১৩ নাম্বার রুমটাতে তখন দীপ্ত আর তারিকুল হতভম্ব হয়ে পরস্পরের দিকে তাকায়। কিছুক্ষণ চুপ থেকে দীপ্ত প্রশ্ন করে, ‘ওই ম্যাসেজটা আছে? তোর ভাইয়ের ফোনে যেটা এসেছিলো?’ মিশু এপাশ ওপাশ মাথা নাড়ে। - না, নেই। ভাইয়া যখন পড়ে গেলো, আমি ভাইয়ার জন্য নিয়ে যাওয়া কফির মগটা ফেলে ভাইয়ার পাশে হাটু মুড়ে বসে পড়ি।তখনই ভাইয়ার ফোনের দিকে চোখ যায় আমার। ম্যাসেজটা প্রায় সাথে সাথেই ব্লাংক হয়ে যায়। এমন আমি কক্ষনো দেখি নি। দীপ্ত নিজের দাঁত চেপে ধরে। তারিকুল মেয়েটার মাথায় আলতো করে হাত বুলিয়ে দেয়। মিশু মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে। নিচের ঠোঁটটা কামড়ে ধরে প্রাণপণে কান্না আটকানোর চেষ্টা করছে, বোঝা যায়। -মিশু?’ ডাক শুনে মুখ তুলে দীপ্তের দিকে তাকায় মিশু। চোখে প্রশ্ন- - মিশু, ম্যাসেজটায় কি লেখা ছিলো পড়তে পেরেছিলি? মিশু স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে কিছুক্ষণ; তারপর বলে, ‘একটা বাক্য। ইংরেজিতে৷ ওন্ট সে গুডবাই?’ দীপ্ত আর তারিকুল কিছু বলে না এবার। মাহিরা ওদের দু’জনের দিকে তাকিয়ে থাকে। সেদিকে খেয়াল করে দীপ্ত হাসার চেষ্টা করে। - আরে! এত টেনশনের কিছু নাই। একটা ম্যাসেজই তো! তারিকুল দীপ্তের কাঁধে হাত রাখে, ‘দীপ্তদা, আমাদের বের হওয়া দরকার এখন।’ মাহিরা এগিয়ে গিয়ে নিজের ব্যাকপ্যাকটা তুলে নেয়। মিশু সাইডব্যাগ ব্যবহার করে। ওর পরনে হলুদ রঙের সালওয়ার কামিজ। খোলা চুল। মাহিরা রয়েল ব্লু জিন্স, ল্যাভেন্ডার রঙের হাফ স্লিভ শর্ট টপ্স আর কনভার্স পরেছে। লম্বা, সোজা চুলগুলো পনিটেইলে আটকানো। ব্যাকপ্যাকটা কাঁধে ফেলে বাকিদের বলে, ‘চলো। বের হই।’ পরমুহূর্তেই মিশুর দিকে তাকিয়ে ভ্রু কুঁচকে ফেলে। ‘তোর ল্যাপটপ কই?’ মিশু চমকে ওঠে। - ভুলে গেছিলাম। দাঁড়া, নিচ্ছি।’ কাপবোর্ড থেকে ল্যাপটপের ব্যাগটা বের করে হাতে নেয় মিশু। একে একে সবাই বের হয়ে যায় এবারে। ওরা যখন মিনিস্ট্রির কনভেনশন হলে গিয়ে পৌঁছায় তখন বৃষ্টি থেমে গেছে। যাওয়ার সময়ই ইয়ুন দুয়ো আলাদা হয়ে গেছে। ও তার নিজের টিমের সাথে, আলাদা ভ্যানে। প্রকাণ্ড হলটায় ঢোকার পর ওকে আশেপাশে কোথাও দেখা গেলো না। অস্বাভাবিক না। মোট তিরিশটা টিম এসেছে। সাথে সব টিমের গাইড, অরগানাইজার এবং মিনিস্ট্রির লোকজন৷ রাশিয়ার কিছু আইটি এক্সপার্ট, এবং ছাত্রছাত্রী। এত মানুষের মধ্যে একটি মেয়ে আলাদা করে চোখে নাও পড়তে পারে। - লেডিস এন্ড জেন্টলম্যান! মাইক্রোফোনে কারও কণ্ঠস্বর গমগম করে ওঠে। এতক্ষণ ধরে হলরুমটায় চলতে থাকা গুঞ্জন মিলিয়ে যায়৷ সবাই একসাথে তাকায় হলের সামনের দিকের মঞ্চে। ডায়াসের ওপাশে দাঁড়িয়ে থাকা ভদ্রলোকের দিকে৷ ছ ফিট উচ্চতার অত্যন্ত সৌম্যদর্শন এক পৌঢ়। বয়স হয়তো পঞ্চাশ পেরিয়েছে। যদিও, শরীরের বাঁধ বেশ শক্তই লাগছে দেখতে। আয়েশা তার বয়স অনুমান করে চোখের নিচের বলিরেখা দেখে৷ ভদ্রলোকের চুলগুলো ধবধবে সাদা। সাদা শার্টের ওপর হালকা আকাশী ব্লেজারে চমৎকার মানিয়েছে তাকে৷ - লেডিস এন্ড জেন্টলম্যান। তিনি আবারও বলতে শুরু করেন। - আমাদের গ্র‍্যান্ড ওপেনিংয়ের ঠিক আগ মুহুর্তে একটু বিরক্ত করতে এলাম। আমি ইভান সকোলভ। এই কনটেস্টের বুড়ো কনভেনার। আপনাদের মনে হয়তো অনেক প্রশ্ন আছে, একটা বড় প্রশ্ন যেটা আমি মেইলে অনেকবার পেয়েছি; কেন এখানে আমরা প্রতি টিমে সাতজন রেখেছি। কারণ বন্ধুরা, আপনারা জানেন, প্রোগ্রামিং কনটেস্টে সাধারণত তিনজনের টিম অংশ নেয়। ওয়েল, মাই ডিয়ার ফ্রেন্ডস, এই প্রশ্নের উত্তর আমি দেবো। তবে ক্লোজিং সেরেমনিতে। আপাতত, আপনাদের জন্য আমরা একটু রুশ আতিথেয়তার ব্যবস্থা করেছি। প্রথমে ভোজন পর্ব, যেখানে আপনাদের খাদ্য গ্রহণকে আরও আনন্দদায়ক করার জন্য আমাদের রুশ বাদকেরা হার্প এবং অর্কেস্ট্রায় মধুর ঝংকার তুলবে।এবং এরপর আমাদের বলনাচ। যেখানে আপনারাও বিব্রতবোধ না করলে পছন্দমতো জুটি খুঁজে নিয়ে নাচতেই পারেন। কিন্তু মনে রাখবেন বন্ধুরা, সময় সীমিত। কারণ ঠিক সন্ধ্যে ছ’টায় আমরা আপনাদের প্রবলেম এনাউন্স করবো, যেগুলো সমাধান করতে আপনারা পাবেন দু’ঘন্টা।’ পুরো হলরুমে তখন বিপুল করতালি। - বন্ধুরা! সবাই আবার একসাথে থেমে যায়। সবার চোখ সামনের শুভ্রকেশ নীল চোখের পৌঢ়ের দিকে। - আপনারা রাউন্ড পর্ব কেমন হবে তা জানেনই। কিন্তু, এখন আপনাদের জেনে রাখা দরকার, প্রবলেম সলভ আপনারা কোন ভাষায় করবেন। হল থেকে সমবেত কণ্ঠে প্রশ্ন ভাসে, ‘সি?’ - না। - সি প্লাস প্লাস? - তাও নয়। - পাইথন? ভদ্রলোক স্মিত হেসে মাথা নাড়েন। ‘না বন্ধু।’ সমবেত কণ্ঠে এবার মৃদু গুঞ্জন ওঠে। - আমি জানাচ্ছি আপনাদের। হলরুমে আবারও পিনপতন নিস্তব্ধতা নেমে আসে। ইভান সকোলভ ঘোষণা করেন, ‘আপনাদের প্রবলেম সলভিং ল্যাংগুয়েজ হবে, জুলিয়া।’

(চলবে...)

‘দ্যা গেম’-এর চতুর্থ পর্ব- ধারাবাহিক গল্প : দ্যা গেম

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড