• শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩০ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

গল্প : সয়ফুল ছড়ায়াল

  মেহেদী হাসান তামিম

০২ অক্টোবর ২০১৯, ১২:২৭
গল্প
ছবি : প্রতীকী

সয়ফুল মিয়া সবসময়ই অমন গদাইলস্করি চালে হাঁটাচলা করে, তা অবশ্য না। ইদানীং শরীরের ওজনটা সামান্য বেড়ে যাওয়ায় এই একটু আধটু সমস্যা হচ্ছে। একটা সময় ছিল সেও ছিপছিপে তরুণদের মতো লাফিয়ে লাফিয়ে হাটতে পারত!

- আহা সময়!

সয়ফুল ভাবে আর দীর্ঘশ্বাস ফেলে। পরিশ্রম বিষয়টি কোনোকালেই তার খুব একটা ভালো লাগেনি। যা কিছু করার বাধ্য হলেই করে, অথবা নয়। আলস্য ছিল বলে, তার কারণে নিজ জীবনে বেশ কিছু উপকারও খুঁজে পেয়েছে সে। বিয়ে না করাটা আলস্যের দান বিশাল ফজিলত মনে করে সে।

সয়ফুলের মতে বিবাহ বিষয়টাই একটা বিশাল পরিশ্রমের কাজ,

- বাজার সদাই করো, বউরে আদর সোহাগ করো, তার হুকুম তামিল করো, বাচ্চাকাচ্চা পয়দা করো, তাগো সামলাও, খাওনের জোগাড় যন্ত্র করো, বেশি বেশি আয়-রোজগার করো রে...মাইনষে বিয়া কি কামে করে! নিজ হাতে ধইরা বাজার তন আছিলা বাঁশ আননের কাম বাঁধে নাইকা!

নিজের জন্য খানাখাদ্যের ব্যাবস্থা কোনো না কোনোভাবে করেই ফেলা যায়। সে নিয়ে দুশ্চিন্তা নেই, কোনোকালে ছিলও না। কিন্তু যা করা হয়নি সে নিয়েই তার যত চিন্তা। বিয়ে না করার আফসোস কখনো যদি মনে আসে, নিজেকে সান্ত্বনা দেয়।

— সয়ফুইল্লা বিয়া না কইরা যে একখান জ্ঞানের কাজ করছ, বোঝতা মিয়া ঘরে যদি বউ থাকত, পোলাপাইন নামের দুচাইরডা প্যানপ্যানানি বাক্স থাকত! আল্লার কসম লাগে, আল্লায় তোমারে মিয়া নিজ হাতে ধরি বাঁচাইছে।

সয়ফুলের বাপের দেয়া শিক্ষা হলো,

- বাজান মনে আফসোস আইব আট যাইব কিন্তু মনটার মইধ্যে হেইসব জায়গা দেলেই, হেরা তোমরারে আস্ত খাইব।

বাপের কথাগুলো অক্ষরে অক্ষরে পালন করার চেষ্টা করে সে। মনে কখনো আফসোসকে জায়গা দেয় না। সবসময় হাসি খুশি না থাকলেও চিন্তামুক্ত থাকতে যথাসাধ্য চেষ্টা করে। ছোটবেলায় দেখত, বাপ যেদিন ঘরে চাল আনতে পারত না, মা ঝাঁটা দেখিয়ে গালিগালাজ করে ঘর থেকে বের করে দিত।

— মরদ বউ বাচ্চাগো খাওনের মুরাদ নাই, হেয় আবার ছড়িয়াল। যান বাইর হোন গা, আদারে বাদারে গিয়া কুটকুট কইরা ছড়া কাটেন। রোজগারে মন নাই, আছেন ছড়া নিয়া। যান, হাট-বাজারে গিয়া ছড়া পেটান, মাইনষে গামলা ভইরা ভাত দিব।

বাপ কোনো কথা বলত না। ঘর থেকে আস্তে করে বের হয়ে পুরোনো জাম গাছতলায় গিয়ে বসত। বিড়িতে সুখটান দিতে দিতে গুনগুন করত, আর শিষ বাজাত। সয়ফুলের মায়ের উপর খুব রাগ হতো। বাপকে ঘর থেকে বের করে দিয়েছে সেজন্য নয়। বরং জ্ঞানী সেই মানুষটাকে মা ছড়িয়াল বলে অপমান করলে, খুব খারাপ লাগত। বাপ কথায় কথায় শব্দের পেটে শব্দ বসিয়ে কী সুন্দর ছন্দ তালে কথা বলত, দশগ্রামে কেউ তো পারত না! তার কথা একটু শোনার জন্যই কত মানুষজনকে বাপের পাশে মৌমাছির মতো ঘুরঘুর করতে দেখেছে সয়ফুল। মানুষজন আদর সম্মান করে বাপটাকে ডাকত কদম আলী ছড়াকার বলে। আর মা কিনা সেই মহান মানুষটাকেই উঠতে বসতে এমন কথা শোনায়, ছড়াকে কটাক্ষ করে ছড়ি বলে, ছোট করে, অপমান করে ঘর থেকে বাহির করে দেয়! বাপের জন্য খুব খারাপ লাগত সয়ফুলের!

আট ভাইবোনের মধ্যে বাপের সবচেয়ে বেশি নেওটা ছিল সয়ফুলই। যেদিন ঘরে রান্নাবান্না কিছু হত না, অন্যান্য ভাই বোনেরা ঘরের ত্রিসীমানায় ঘেঁষত না। মায়ের সামনে সে সময়ে কোনোভাবে পড়া মানেই কোনো কারণ ছাড়াই ব্যাপক ধুনা খাবে সেটা তারা নিশ্চিত করে জানত। তারচেয়ে ভালো বাজারে চলে যেত। মানুষের টুকটাক কাজ করে দিলে কিছু না কিছু পাওয়াই যায়। শুধু সয়ফুল ভাইবোনদের সাথে না গিয়ে বাপের আশপাশেই ঘোরাঘুরি করতে থাকত। মানুষটাকে প্রতিটা মুহূর্তে তার কাছে হিরো মনে হত। মা যে কত খারাপ খারাপ কথা বলে, গালিগালাজ দেয় অথচ বাপের কোন বিকার নেই, সাদা ধবধবা দাঁতগুলো বের করে হাসে। কালো মুখটায় যখন বাপের অমন হাসি ফুটে, কুদ্দুসের মনে হত যেন মুক্তার ঝিলিক। তার প্রতিটি চালচলন, শব্দের পীঠে শব্দ মিলিয়ে কথা বলার ধরণ, গলায় গামছা পেচানোর, বদনায় পানি নিয়ে কুলকুচি করা— বাপের সবকিছু তাকে ভীষণ মুগ্ধ করত। মনেপ্রাণে চাইত সে বাপের মতো হতে।

আশপাশে ঘুরঘুর করতে দেখলেই বাপ তাকে ডেকে কাছে বসাবে, জানত সয়ফুল। তারপর আজব আজব সব গল্প বলত, উপদেশ দিত, ছন্দে ছন্দে কথা বলত। বাপের মুখে ছন্দ মিলানো কথা শুনতে সয়ফুলের যে কী ভালো লাগত! তার মনে হতো সেই ছোট্টবেলার জীবনটায় ভালো লাগা কিছু থাকলে সেটা বাপের মুখের আওয়াজ। সে শোনার জন্যই সবসময় যেন মুখিয়ে থাকত। বাপ তাকে কাছে ডেকে বলত,

- আব্বা সয়ফুল, রাইখো মনে খুব হুশ জেবনটা হইল দুই দিনকার, দম ফুরাইলেই কলে সব এক্কেরে ঠুশ।

ছেলে বিমোহিত হয়ে, হা হয়ে বাপের কথাগুলো যেন গিলতে থাকে,

-মনের মইধ্যে রাইখ না দুকখো না রাইখো কুনো কষ্ট থাকবা আনন্দে, থাকবা হাসিখুশি নইলে দুইদিনকার দুইনা হইব ফানাফানা মনটায় খালি কইব, যা কিছু দেহে চক্ষুজোড়া বেবাকই নষ্ট।

বাপের কথাগুলো যেন সয়ফুলের বুকের ভিতর গিয়ে প্রতিধ্বনিত হয়। খুব প্রশান্তি লাগত তার মনে সেই কথাগুলো শুনে,

বাফধন সমস্যা জেবনে আইব, হেইটা, আবারো যাইব মালিক আছে উপ্রে সে-ই সমাধার পথ বাতলাইব। মইরা গেলেই ব্যাবাক শ্যাষ জেবনও নাই, নাই কারো কুনো বাপ মাও দ্যাশ।

বাপের কথাগুলো এখন পর্যন্তই ধ্যানজ্ঞান মানে সয়ফুল। আজাইরা কোনো টেনশনের মধ্যেই নেই সে। কোনো কর্মে যদি মনে সামান্য চাপ অনুভব করে, সাথে সাথে ছেড়ে দিয়েছে। তাই বেশিভাগ কাজেই তার টিকে থাকার অতীত রেকর্ড বেজায় মন্দ।

ইদানিং সয়ফুল যে নতুন কর্মে ঢুকেছে, সেটাও প্রায় বছর খানেকের মতো হয়ে গেল। জীবনে বহু রকম, চিত্র বিচিত্র বহু ধরণের কাজকর্ম করেছে সে। কিন্তু মনটাকে কোথাও সেভাবে বসাতে পারেনি। কাজ পেতে তার অবশ্য কখনো কোনো সমস্যাও হয়নি। শুধু সেটায় টিকে থাকারটা ব্যাপার তার জন্য নিতান্তই ইঁদুর কপালে।

তীব্র রোদের মধ্যে সূর্যের দিকে মুখ। করিমপুর ঘাটের দিকে ধীরগতিতে হেঁটে এগুতে থাকে সয়ফুল। জীবনের নানান স্মৃতি মনে আসে। বর্তমানে যা করছে সেটা পুরো কর্মজীবনেই তার দ্বিতীয় বারের জন্য ভালো লাগা কোনো কাজ। ৪০ - ৪৫ বছর বয়সী জীবনে তার কপালে যে কর্মটা সর্বোচ্চ দিন ছিল, সেটার মেয়াদ সাড়ে তিন বছর। তার প্রথম ভালো লাগা কর্মও ছিল সেটি। কাজেকর্মে তেমন কোনো চাপ তো ছিলই না, বরং ছিল শুধু আরাম আর আরাম। পাঁচতলা দালানবাড়ীর নীচে একটা টুলের উপর সারাদিন বসে থাকা। দারোয়ানের কাজ। রাস্তার দিকে তাকিয়ে মানুষ দেখা, বাপের মতো করে ছন্দ মিলিয়ে নিজের সাথে কথা বলার চেষ্টা, মানুষজন এলে, গাড়ী সাইকেল এলে গেট খোলা আর বন্ধ করা— কোনো কঠোর পরিশ্রম কিছু নেই। তাই ভীষণ ভালো সময় কাটত সয়ফুলের। এর মাঝে মাঝে বাসাবাড়ীর কাজে আসা বিভিন্ন বুয়াদের সাথে একটু আধটু হাসি-মজাক, রঙ-তামাশা করে তার দিনগুলো খুব ভলোই কাটছিল। মনের মধ্যে রসের কোনোই অভাব নেই তার,

- কি গো জরিনার মা আছো গো কিমন? তোমরারে আইজ লাগতিছে সেইরহম ফাইন, এক্কেরে তিমন।

বুয়ারাও তার কথা শুনে খলবল করে হেসে উঠত। কেউ কেউ আদিখ্যেতা করে একটু বেজার ভাব দেখানোর চেষ্টা করলেও, মনে মনে খুশি হত ব্যপক। অনেকেই চেষ্টা করত তাকে আদর যত্ন করার। সুযোগ হলেই সয়ফুল ভাইয়ের জন্য ভালোমন্দ খাবার আনত। তার দিনকাল বেশ সুখে শান্তিতে কেটে যাচ্ছিল। এ সময়টায় শরীরটাও ছেড়ে দিল। ওজনও বাড়ল লাফিয়ে।

সুখ কেন তার কপালে সইবে! টেপীর মার সাথে কিছু তো করলই না নগদের উপর সুখের চাকরিটাই হারাতে হলো। এখন তার মনে হয়, মালিকের বাড়ীর বুয়া টেপীর মার সাথে ফাও হাসি তামাশা করতে যাওয়া তার উচিত হয়নি। আফসোস লাগে, নিজেকে শেখায়-

- ফষ্টিনষ্টি, হাসি, তামাসা মজাক মানুষ বুইঝা করণ লাগে। সবাইর সবকিছু নেওন ক্ষেমতা থাকে না। অনেকই ভাব ধরব সে খুব আপনা, খুব কাছের মানুষ, হের সাথে সব কওন যায়। কিন্তুক আসলে হেয় তেমনই না। এইসব মাইনষের সাথ আরো বেশি বেশি বুইঝা চলতে হয়।

টেপীর মাকে একটা কথা বললে যেভাবে হেসে গড়াগড়ি খেত, খিলখিল কিলবিল করত, সয়ফুলের মনে হয়েছিল তার সাথে হাসিমজা করাই যায়। কিন্তু সে যে ম্যাডামের কাছে গিয়া বিচার দিবে ঘুণাক্ষরেও ভাবেনি। অথচ ঘটনা তেমন কিছুই না। পেছন থেকে শুধু তার শাড়ী ধরে হাল্কা একটু টানা দিয়েছিল, অমনি বহু ব্যবহারে ত্যানাত্যানা হওয়া শাড়িটা প্যাড়প্যাড় করে দু’খান হয়ে গেল। ব্যাস বেটিরে আর পায় কে! সে কী হুলস্থুল কান্না। সয়ফুল শেষমেষ এটিও বলল সামনের মাসে বেতন পেলে একটা নতুন শাড়ি কিনে দিবে। কিন্তু বেটি নিজেরে বাঁচানোর জন্য ঠিকঠিকই ম্যাডামের কাছে গিয়ে বিচার দিল। কতবার কসম কিরা কেটে ম্যাডামের কাছে কাকুতি মিনতি করল,

- আপায় আল্লার কসম কই, হেই বিটিরে আর কিচ্ছু করি নাই। আমরার নিয়তও মন্দ আছিল না। হের শাড়ী ধইরা হাল্কা টানই দিছি। মজাক করতে গেলাম বিটির শাড়ি ছিল ত্যানার অধিক নরম। আপায় বিশ্বাস না লাগলে হেরে জিগান, আর কোনদিন কিছু করছি, নাকি কোনোদিনও কিছু করবার চাইছি! আমরার কোনো খারাপ কুনো রেকর্ডও পাইবেন না।

কোনোকিছু বলেই আর লাভ হয়নি। ধর্ষণ চেষ্টার দায়ে দোষী সাব্যস্ত হয়ে তাকে চাকরিটা হারাতে হলো। এরপর আশেপাশের বাড়ীতে চাকরির চেষ্টা করলে কেউ আর তাকে ভরসা পায়নি। সেই থেকে মহিলাদের উপর তার বেতাল রাগ। অগত্যা গায়েই ফিরতে হয়েছিল তাকে। সয়ফুলের ধারণা শুধু ওই বেটির জন্যই তার চাকরিটা যায়নি। ম্যাডামের গ্রামের বাড়ীর মতিন মিয়াকে তার জায়গায় যখন দেখল, তখন সে নিশ্চিত হয়েছিল ম্যাডামের আসলে প্রয়োজন ছিল একটা বাহানা।

গা বেয়ে টপটপ করে ঘাম পড়ছে। পরণের জামা কাপড় ভিজে একাকার। কিচ্ছু করার নেই, পা চালাতেই হবে। মালিক নেহাল মিয়া খচ্চর প্রজাতির লোক, সকাল ১০টার পর গেলে সেদিনের কাজই বন্ধ। শরীরের অতিরিক্ত ওজন নিয়ে সর্বোচ্চ শক্তিতে পা চালিয়ে হাঁটে সয়ফুল।

সকালে হোটেলে বন্ধ, কিন্তু রাত ১২টা- ১টা পর্যন্ত করিমপুর ঘাটে মানুষের আনাগোনা থাকে। তখন খুব বেশি কিছু করার না থাকলেও, হোটেলের সামনে থাকতে হয়। সকাল বেলা সাড়ে নটার পর থেকে ঘাটে মানুষজন নামতে থাকে, হোটেলে ভিড়ও বাড়তে থাকে। কাজেই ৯টা থেকে উপস্থিত থাকা বাধ্যতামূলক। বাবুর্চি, আর রান্নার স্টাফদের আরো সকালে আসতে হয়। তাই তাদের ছুটিও দুই ঘন্টা আগে। সয়ফুলের চাকরিটা অনেকটা ক্যানভাসিং করার মত। তার ডিউটি হলো- হোটেলে কি কি রান্না হয়েছে চিৎকার করে করে তা মানুষজনকে জানানো, হোটেলের দিকে নজর টানা, ডাকাডাকি করে মানুষ আনা, যেভাবেই হোক হোটেলের ভেতরে তাদের খেতে ঢোকানো। ঘাটের চারপাশ ঘিরে বহু ভাতের হোটেল গড়ে উঠেছে। কম্পিটিশনের বাজারে মানুষজনকে আকৃষ্ট করার কোনো বিকল্প নেই।

ডাকাডাকি করলেই গ্রাহক যে হোটেলে ঢুকবে, বিষয়টি তেমন না। তবু চিল্লাপাল্লা করে, ডাকাডাকি করে মানুষজনকে একটা ভ্যাবাচ্যাকার মধ্যে রাখা যায়। দৃষ্টি কিছুটা হলেও আকর্ষণ করা যায়। সম্ভাব্য গ্রাহক হোটেলের দিকে অন্তত একবার তাকায়। তারপর মন চাইলে ঢুকে। মালিক নেহাল মিয়ার নির্দেশ হলো, ‘যেমতে পারিস মাইনষেরে আগত এদিক তাকানির ব্যবস্থা করবি, হেরপর হেগোর ঢুকা না ঢুকা।’

প্রত্যেক হোটেলেই এখন ডাকাডাকি করার জন্য লোক রাখা হয়েছে। যার ডাক যত আকর্ষণীয় হয়, যত মিষ্টি হয় তার হোটেলে গ্রাহকও তত বেশি হয়। ডাকাডাকি করার এই কাজ সম্পর্কে সয়ফুলের কোনো পূর্ব অভিজ্ঞতা না থাকলেও, কাজটাকে সে যেন একটা শিল্পের পর্যায়ে নিয়ে গিয়েছে। এমন অভিনব, এত আকর্ষণীয় করে মানুষ ডাকতে আশপাশে দশ হোটেলের কেউ তো দূরেই থাকল, শহরে হোটেলগুলোর কেউও সয়ফুলের মতো করে পারে না। এই কাজে এত নামডাক, খ্যাতি ব্যাপারটির জন্যও বাপের প্রতি তার কৃতজ্ঞতার অন্ত নেই। তার ধারণা, বাপের কাছে দুনিয়ার নানান কিছিমের গল্পগুজব, ছন্দের কথাবার্তা শুনতে শুনতে নিজের অজান্তে সে ক্ষমতা তার মধ্যেও তৈরী হয়ে গিয়েছিল। মাঝে মাঝে ভাবে সয়ফুল, হোটেলের চাকরিটা না করলে সারাজীবনেই নিজের এত্ত বড় গুণটা অজানাই থেকে যেত। তাই তার মনে হয় কোনো কাজই ফেলনা নয়। কোন কাজে মানুষ কখন নিজেকে কিভাবে আবিস্কার করে ফেলবে সে নিজেও জানে না।

খাবারের বিল জন প্রতি ১০০ টাকা হলে তার কমিশন ৪, আর ৫০ হলে ২টাকা। সয়ফুল এখানে কাজে ঢুকার পর প্রথম প্রথম লক্ষ্য করে দেখত, বেশিভাগ ক্ষেত্রেই শুধু ডাকাডাকিতে কাস্টমারদের হোটেলে ভিড়ানো যায় না। চমক লাগে। চমক ছাড়া দুনিয়া অচল। আজকাল চমক দিতে না পারলে, হয়ত রুটিন জীবন কেটে যাবে কিন্তু কোন কাজে সে অর্থে সফলতা আসে না, বুঝে সে। বহু ভেবেচিন্তে বের করল, অন্য সবার মতো করে সে ডাকবে না। সয়ফুলের মনে মনে খুব ইচ্ছে হতো বাপের মতো শব্দের পিঠে শব্দ বসিয়ে তালে তালে কথা বলে। এর আগে তেমন করে বলার চেষ্টা কখনো করে দেখেনি।

নিজের প্রতি তার যথেষ্ট সন্দেহ ছিল বাপের মতে অমন সুন্দর করে আদৌ ছড়া বাঁধতে পারবে কিনা! কিন্তু আশ্চর্য হয়ে লক্ষ্য করল তার কোন সমস্যা হচ্ছে না। যখনই ভাবে ছন্দ মিলিয়ে ছড়া বানিয়ে ফেলতে পারে। এখন সয়ফুলের কাছে ছড়া মিলিয়ে কথা বলা কোনো ব্যাপার না। ধীরে ধীরে মানুষজন তার ছড়া কাটার এই প্রতিভা সম্পর্কে জানতে শুরু করল। তার কথায় ঘাটে নামা মানুষজন আকৃষ্ট হতেও শুরু করল। এখন যেটা হয়েছে ডাকাডাকির সময় তো বটে, সাধারণ কথাবার্তাও সে ছন্দে ছন্দে বলে। বলে বললে ভুল হবে, এসে যায়। এখন চিন্তা করেও কথা বলতে হয় না, কথা বললেই ছন্দ মিলে যায়।

হোটেলে প্রতিদিনের রান্না হওয়া খাবার আইটেমগুলো নিয়ে নিত্য নতুন ছড়া বলে। ঘাটে নামা নতুন পুরাতন মানুষ যাদের ভাত খাওয়ার নিয়ত থাকে, বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সয়ফুলের ছড়া শুনে হাসতে হাসতে সে হোটেলেই ঢুকে। আয় রোজগার মন্দ হচ্ছে না। ইদানিং অন্যান্য হোটেলের মালিকরাও তাকে সমীহ করে। ইশারায় কাছে ডাকার চেষ্টা করে। বিষয়টা খুব ভালো লাগে তার। দুই চারজন গ্রাহক তো রীতিমতো সয়ফুলের ছড়াতে বাঁধা পড়ে গেছে। ঘাটে নেমে অন্য কোনো দিক না তাকিয়ে সোজা হাঁটা ধরে নেহাল মিয়ার হোটেলে। তারপর সয়ফুলকে ডেকে বলে, ‘ওই মিয়া সয়ফুল ছড়ায়াল মনডায় চাইছে ঝাল নিয়া তুমার ছড়া শুনবাম।’

সয়ফুল সব কটা দাঁত বের করে হাসে। তার কী যে ভালো লাগে মানুষজন যখন তাকে ছড়ায়াল বলে ডাকে! সাথে সাথে ছড়া বাঁধে,

- মরিচের আরেক নাম হইল ঝাল

পাশে বসা চুল দাঁড়ি সাদা হওয়া বয়স্ক বাবুর্চি, সফেদ আলীর দিকে তাকিয়ে তারপর বলে,

- মরিচ মামুর আরেক নাম হইল ঝাল সফেদ মিয়া বাবুর্চি কামায় না বহুদিন হের বাল।

দোকানে উপস্থিত সবাই হো হো করে হেসে উঠে। শুধু সফেদ মিয়া গজর গজর করে বিচারের আশায় মালিকের দিকে তাকায়। নেহাল কিছু বলে না, মুখ টিপে হাসে।

আর বেশিদূর নেই। এক মাইলের মতো বাকী। সমস্যা হলো সয়ফুলের গ্রাম থেকে করিমপুর ঘাট পর্যন্ত রিক্সা, ভ্যান জাতীয় তিন চাকা চলার মতো কোনো রাস্তাই নেই। এই আল, ওই ঢাল, খানাখন্দ পার হয়ে তবেই ঘাট। একটা যানবাহন অবশ্য আছে। গায়ের বেকার কিছু পোলাপাইন সাইকেল নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। ১০ টাকা দিলে সাইকেলের পেছনে ক্যারিয়ারে বসে ঘাট থেকে গা অথবা গা থেকে ঘাট। সয়ফুল দু’চারদিনে সাইকেলে যাওয়া আসার চেষ্টা করেছেও। কিন্তু যে কবার সে যার সাইকেলেই উঠেছে, কিছুদূর না এগুতেই পেছনের চাকা পাংচার। এজন্য এখন কেউ তাকে সাইকেলে তুলে না। নিজেও সে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছে।

কাজেই হাঁটা ছাড়া তার গত্যন্তরও নেই। সকাল ৯ টার আগেই পৌঁছল সয়ফুল। রান্নাবান্না ততক্ষণে শেষ। হোটেল গ্রাহকদের খাওয়ানোর জন্য প্রস্তুত। ঝটপট আইটেমগুলো দেখে নেয় সে। তার নির্ধারিত টুল নিয়ে হোটেলের সামনে রাস্তার ধারে গিয়ে বসে। হোটেলে প্রতিদিন একই পদ রান্না হয় না। আজকের আইটেম গরুর মাংস, মাছের মাথা মুগডাল দিয়ে আর করল্লা ভাজি। পাতলা ডাল নিত্যদিনই হয়।

ঘাটের দিকে দৃষ্টি দেয় সয়ফুল। একটা ফেরিও লাগেনি তখনো। তবে ওপারে যাবার যাত্রীরা দুচারজন করে জমা হতে শুরু করেছে। সকালে, দুপুরের পর আর সন্ধ্যার আযানের আগে একবার, হোটেলের সামনে বালতি ভরে তিনবেলা পানি ছিটানো সয়ফুলেরই দায়িত্ব। মোটা শরীরটা নিয়ে হাঁসফাঁস করতে করতে কলপাড় থেকে শক্ত টিউবওয়েল চেপে বালতিতে পানি ভরে সে। টিউবওয়েলটা দোকান থেকে প্রায় চল্লিশ কদম দূরে। কয়েকটা দোকানের মালিক মিলে চাঁদা তুলে সেটা লাগিয়েছিল। কলটা এখন পুরোনো হয়ে যেন বেশি শক্ত হয়ে গেছে। শরীরের সমস্ত শক্তিতে চাপলেই কেবল পানি ওঠে। ইদানিং এই চল্লিশ কদম বালতিতে পানি ভরে হোটেল পর্যন্ত আনতেই ভীষণ কষ্ট হচ্ছে তার। সারাদিনের ডিউটিতে পানি আনা আর ধুলোবালিতে ছেটানো অংশটুকু সয়ফুলের খুব অপ্রিয় হয়ে উঠছে দিনেদিনে। আবার ভালোমতো পানি না ছিটালেও তাকেই সবচেয়ে বেশি ধুলোবালি খেতে হয়। সে বোঝে বয়স হচ্ছে। একবছর আগেও পানি আনতে বা নাকেমুখে ধুলোবালি গেলে কোনো বিকার হত না। এখন রীতিমতো শ্বাসকষ্ট হচ্ছে। মনে মনে ঠিক করে সয়ফুল, গায়ে ফেরার পথে জোগেন কবিরাজকে একবার দেখিয়ে নেবে।

পানি ছেটানো শেষে বালতিটা হোটেলের ভিতরে রেখে এলো। গ্রাহক ডাকাডাকি করার জন্য পুরোপুরি রেডি। দোকানের সামনে দিয়ে দু-চারজন হাঁটাচলা করতে শুরু করেছে। মানুষজন না থাকলে ফাঁকার মধ্যে চিল্লাপাল্লা করতে মোটেই ইচ্ছে করে না তার। আবার কিছুক্ষণ চুপচাপ বসে থাকলেই নেহাল মিয়া ক্যাশ বাক্স থেকে গজর গজর করে উঠে, ‘কি গো ছড়ায়াল, আইজকা কি ছড়িয়াল হই গেলা!’

সয়ফুলের মেজাজ খিঁচে উঠে। আর কোনোকিছুতে তার তেমন রাগ হয় না। ‘ছড়িয়াল’ শব্দতেই যত আপত্তি, একজন ছড়ায়াল কখনো ছড়ির কারবারি বা লাঠিয়াল হতে পারে। তার ধারণা বাবার ছড়া বলার ক্ষমতাকে তাচ্ছিল্য করতেই মা ছড়ি শব্দ ব্যবহার করত। কিছু বলে না সে, রাগ পুষে রাখে বাপের উপদেশের কথা মনে করে,

- আব্বাগো রাখবা মনে রাগ হইল মাইনষের পোধ্ধান শতরু রাগ পোকাশ করল যে মানুষ হেওভি হই গেল পশু, একখান আস্তা গরু।

সব রাগ একেবারে শেষ বিন্দু পর্যন্ত গিলে ফেলে সয়ফুল। রান্না করা গরুর মাংসের আইটেম নিয়ে ডাক শুরু করে,

- আর কিডায় খাইছে নেহাল হোটেলের এমন রান্ধা গরুর গোশ্ত একবার খাইলে দিলটায় কয়— যুইতমতো খাইলাম চাইরডা কদ্দিন পর ও মোর দোস্ত!

সয়ফুলের কথা শুনে কেউ কেউ কিঞ্চিত থামে, শুনে, হাসে, চলে যায়। এমনিতেই সকাল বেলায় ভাত খাওয়ার কাস্টমার কমই থাকে। যাদের বাড়ি এপার তারা সকাল সকাল খেয়েই রওনা হয়। কিন্তু কিছুক্ষণ কাস্টমার না ঢুকলে, একটু ফাঁকা হলে নেহাল মিয়ার অস্থির লাগতে শুরু করে। তার মনে হয়, সব কাস্টমার বুঝি অন্য হোটেলগুলোতে ঢুকে পড়েছে। সে তার যক্ষের ধন ক্যাশবাক্সটা ছেড়েই তখন বের হয়। চারপাশে রেকি করে আসে কোন কোন হোটেলে লোক ঢুকেছে। ক্যাশবাক্স ছেড়ে নেহাল মিয়া কোথাও বেশিক্ষণ থাকতেও পারে না। বিশাল এক দ্বন্দ্বের মধ্যে পার হয়। দোকানে বসে থাকলে মনে হয় সব মানুষ অন্য হোটেলে ঢুকল, আর বাহিরে গেলে মনে হয় ক্যাশবাক্স বুঝি গেল। দুনিয়ার কোনো মানুষকে সে বিশ্বাস করতে পারে না। সয়ফুল মিয়া চিৎকার করে মানুষ ডাকুক আর না ডাকুক, কিছুক্ষণ পরপর গলা খাঁকারি দিয়ে, তার দিকে তাকিয়ে বলে,

- কি গো ছড়ায়াল আইজ মনে হইতেছে মন নাই। ছড়া তো তেমন যুইতের ঠিকতেছে না।

সয়ফুল এখন ভালোমতো জানে এটা তার রুটিন বকাবাজি। এবারেও মুখে কিছু না বলে মনে মনে একটু গালি দিয়ে আরাম পায়,

- হারামজাদা নেহাল তোর বাপ দাদা চোদ্দগুষ্টির কেউই পারবনি বানাইতে একখান ছড়া তোর হোটেল হইক রফাদফা, বিয়ানবেলায় আইসা পাইবি একদিন ক্যাশবাক্স মাইনষের গুয়ে ভরা..

এখন নেহাল মিয়ার কথা গায়ে মাখায় না আর। সে জানে তাহলে এখানেও টিকতে পারবে না। এই কর্ম করতে তার খুব ভালো ঠেকছে, কোনোমতেই সে এটা ছাড়তে চায় না। তার মনে হতে শুরু করেছে এই কাজেই সে তার বাপের ইজ্জত ঐতিহ্যকে রক্ষা করছে। বেলা বাড়ে, লোকজনও বাড়ে, সেই সাথে তাকেও গলার আওয়াজ বাড়াতে হয়। চারদিকে তাকিয়ে মানুষজনের চোখে সরাসরি চোখ রেখে ছড়া আওড়াতে হয়। মাছের মাথার তরকারি নিয়ে ছড়া বলতে শুরু করেছে সে,

- আইজ হইছে রান্ধা, সুগন্ধি মুগডাইলের সাথে দিয়া মৎস মস্তক এক মস্ত একবার খাইলে কামড়াইতে হয় প্লেট, হুড়মুড়াইয়া চাটতে হইব আপন আপন হস্ত। প্রত্যেক আইটেমের জন্যই তার ছড়া আছে। আবার এমনো না একই ছড়া বারবার বলে। যখন যেটা মনে আসে বলতে থাকে। করল্লা ভাজি জাতীয় কমদামী তরকারি নিয়ে ছড়া বলতে হয় দুপুর গড়িয়ে যাবার পর। দুপুরের খাবার যাদের ঘাটে খাবার নিয়ত থাকে তারা সাধারণত বিকেল ৪টার মধ্যেই খেয়ে ফেলে। যারা টাকা বাঁচানোর উদ্দেশ্য ৪টা পর্যন্ত না খেয়ে থাকে, কমদামে খাবারের কথা শুনে, মন বদলিয়ে হোটেলে খেতে ঢুকে পড়ে। সয়ফুলের মতে এই যে মানুষ ডাকাডাকির কাজ, এসব মোটেই সহজ কোনো কিছু না। একটা কথা বললাম আর হয়ে গেল তেমনও না। চিন্তা ভাবনা কর ছড়া বলতে হয়। বিকেলের দিকে সে ডাকে,

- নেহাল মিয়ার হোটেলের খাওন দামে সব থিকা কম, করলা ভাজি খাইলেও মনটা কইব খাইলাম গোশ্তের দম।

আবার দুপুরের আগে হলে করল্লা ভাজি নিয়েই ছড়া কাটে,

করল্লা ভাজি করল্লা ভাজি সবায় কয় তেতা এইহানকারটা খাইলে জীবটায় হয় জ্যাতা বাড়িত রানধে বউ করলা হায়, হের বাপের মাথা।

দোকানের মালিক নেহালকে খুশি রাখতেও মাঝে মাঝে ছড়া বানায়,

- আয়েন ভাইডি আয়েন বইনডি আয়েন সবডি অত্র এলাকায় সবচেয়ে ফাইন হইল নেহাল মিয়ার হোটেল হের আইটেমের কাছে নাই অন্য কুনো হোটেলের বেইল

নেহাল মিয়াও বোঝে কুদ্দুসের ছড়া পাবলিকের জন্য একটা বিরাট বিনোদন। তার কারণে আজকাল বেচাকেনা কিছুটা হলেও বেড়েছে। মনে মনে খুব খুশি, কিন্তু কখনো তা প্রকাশ করে না সে। প্রকাশ করলেই কমিশন রেট বাড়ায় চাইতে পারে, এজন্য চুপচাপ থাকাই শ্রেয় মনে করে। তার উপর মাঝে মাঝে একটু ডাটও দেখাও। নেহাল মিয়ার ২২ বছরের হোটেল ব্যাবসার অভিজ্ঞতা বলে হোটেলের কর্মচারী বাবুর্চিদের মায়া মহব্বত দেখাতে নেই। এরা মালিকের কাছে শুধু গালিগালাজ শুনতে চায়। সেটা করলে সবকিছু সোজা থাকে। দোকানের কর্মচারীদের শৃঙ্খলা ঠিক রাখা হোটেল ব্যবসার জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মনে করে নেহাল মিয়া।

পড়তি বিকেল। ঘাটে লোকজনের অভাব নেই। সয়ফুল তার স্বরে ফোড়ন কেটে চলেছে। কিন্তু হুট করেই চারপাশ কেমন জানি ফাঁকা হয়ে গেল। হোটেলে লোকজনও তেমন নেই। অথচ অন্যদিন এমন সময়ে হোটেলের ভিতরে লোকজন গমগম করে। নেহাল মিয়ার খটকা লাগে। কান পেতে শোনার চেষ্টা করে সয়ফুল ঠিকমতো ডাকাডাকি করছে কিনা। না, শোনা যাচ্ছে সে ঠিকমতো ছড়া কাটছে। নেহাল মিয়া অস্থির হয়ে হোটেল থেকে বেরিয়ে এলো। চার-পাঁচটা পরের মামুন মিয়ার দোকানে মানুষের জটলা দেখতে পেল। মামুন মিয়া বয়সে তরুণ। কিছুদিন হলো হোটেল ব্যবসায় নেমেছে। তার হোটেলে এত ভীড় হওয়ার তো কথা না। নেহাল চিন্তিত হয়ে এগিয়ে যায়। কি আশ্চর্য কাজ কারবার! হোটেলের মধ্যে দখিন বাজারের ফসকা বাউল দোতারা বাজিয়ে গান গাইছে। কি অদ্ভুত মিষ্টি গলা!

নেহালের মনে হলো সেও ভেতরে ঢুকে গান শোনে। ক্যাশবাক্সের কথা মনে হতে সে যেন সম্বিত ফিরে পেল। দ্রুত গতিতে হোটেলে ফিরছে নেহাল মিয়া। মস্তিষ্ক সিগনাল পাঠাচ্ছে তাকে, ছড়ায়াল ছড়িয়াল দিয়ে আর ব্যবসা চলবে না, তার লাগবে গাতক। মনে মনে ঠিক করে ফেলল, রসুলপুর গ্রামের কানা বাউলকে আগামীকাল থেকেই হোটেলে বসাতে হবে। নেহাল দূর থেকে দেখতে পাচ্ছে, সয়ফুল ছড়ায়াল তার স্বরে চেঁচিয়ে চলেছে। কেউ একবার তার দিকে ঘুরেও তাকাচ্ছে না।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড