• সোমবার, ২০ মে ২০২৪, ৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১  |   ২৮ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

‘দ্যা গেম’-এর দ্বিতীয় পর্ব

ধারাবাহিক উপন্যাস : দ্যা গেম

  রোকেয়া আশা

২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ১১:৪৫
গল্প
ছবি : প্রতীকী

তারিকুল সবার আগে দেখতে পেলো মেয়েটাকে। কোকড়ানো লম্বা চুল, ব্লন্ড। হাতে প্লাকার্ডে ওদের কারও নাম লেখা নেই। ওদের নামের বদলে লেখা Programmers from Bangladesh; প্রবাসে নিজের নামের চেয়ে দেশের নাম দেখতে বোধহয় বেশি ভালো লাগে। পাশে দাঁড়িয়ে থাকা দীপ্তের কনুইয়ে মৃদু ধাক্কা দিয়ে তারিকুলকে বললো, ‘দীপ্তদা, ওই দেখো। আমাদেরকে রিসিভ করতে এসেছে।’ দীপ্তও তাকায়। দীপ্তকে ডাকার সময়ই আয়েশাও শুনেছে। সেও তাকায়। মেয়েটার দিকে তাকিয়ে হাত নাড়ে। তারপর পেছনে ফিরে বাকিদের ডাক দিয়ে বরলো, ‘এই তোরা আয় এইদিকে।’ মেয়েটি আয়েশার হাত নাড়ানো দেখতে পায়। একসাথে সাতজন বাদামী চামড়ার মানুষ দেখে আঁচ করে নেয়, এদেরকেই সে খুঁজছে। হাসিমুখে এগিয়ে আসে। সবার সামনে থাকা তারিকুলের দিকে হাত বাড়িয়ে দিয়ে বলে, ‘মাশা সকোলোভা।’ তারিকুল মাথা ঝাঁকিয়ে হ্যান্ডশেক করে বলে, ‘তারিকুল ইসলাম।’ মাশা হাত ছাড়তেই ব্লন্ড চুলের এক তরুণ এসে হাত বাড়িয়ে দেয়। মাশার পাশেই দাঁড়িয়ে ছিলো। অথচ ওকে কেউ খেয়ালই করেনি। প্ল্যাকার্ড হাতে না থাকায়ই বোধহয়। - হ্যালো! আমি কির ইভানোভ। মাশা আর কির দু’জনেই একে একে সবার সাথে হাত মেলায়। - আমি ভেবেছিলাম তোমাদের নাম অনেক কঠিন হবে। উচ্চারণই করতে পারবো না। মাশা হেসে বলে। ওদের দুজনের ইংরেজির টানটা একটু অন্যরকম, দ্রুত। বাক্যের শেষে ‘আ’ ধ্বনির মত টান। সম্ভবত এটাই রুশ একসেন্ট। মাহিরা হাসতে হাসতে বলে, ‘আমিও তোমাদের নাম অনেক কঠিন হবে ভেবেছিলাম। অবশ্য সারনেমগুলো এখনো কঠিনই লাগছে।’ কির আর মাশা পরস্পরের মুখের দিকে তাকিয়ে হেসে ওঠে। - বেশ তো! লাগেজগুলো ঠিকঠাক এসেছে? কির প্রশ্ন করে। সবার লাগেজই ঠিকঠাক এসেছে। শুধু শাহেদের লাগেজটার স্টিকার উঠে গেছে। কিন্তু শাহেদ এ নিয়ে কিছু বললো না। কির তার নীল চোখ দুটো নাচিয়ে বাঙালি দলটার উদ্দেশ্যে বলে, ‘চলো তাহলে। বের হই। বৃষ্টি হচ্ছে বাইরে, গাড়ি পর্যন্ত যেতে যেতে হাল্কা ভিজে যেতে পারো অবশ্য।’

মাহিরা ছটফটিয়ে ওঠে শুনে বলে, ‘বৃষ্টি? আমি তো ভেবেছিলাম এখানে তেমন বৃষ্টি হয় না।’ মাশা মাহিরার ছেলেমানুষীতে হেসে ফেলে আবারও। তারপরে বলে, ‘অটামে মাঝেমধ্যে বৃষ্টি হয় অবশ্য। নিয়মিত না তেমন। তবে হয়।’

নয়জন হয় ওরা। সবাই ধীরে ধীরে হাঁটতে থাকে। এয়ারপোর্টের পার্কিং জোনে বড় একটা ভ্যানের দিকে ইশারা করে মাশা। নিজেই এগিয়ে যায়, দুবার টোকা দেয় কাচে। - ফিউদর? ফ্রন্ট সিটের ভেতর থেকে বের হয়ে আসে লোকটা। প্রথম দেখায় অস্বস্তি লাগে। তিরিশ পেরিয়েছে বোধহয়। চওড়া কাঁধ। ছফিটের মত লম্বা, প্রশস্ত বুকের ছাতি। গড়নের চেয়েও বেশি করে চোখে পড়ে চোখ দুটো। নীল বা সবুজ নয়। এমনকি বাদামী বা কালোও নয়। ধূসর আভা থাকলেও আইরিশ দুটো রুপালি রঙা। চুলও রুপালি। নাকটা বাজপাখির ঠোঁটের মতো বাকানো। সব মিলিয়ে লোকটার অস্তিত্বই যেকোনো জায়গায় অস্বস্তিকর পরিবেশের জন্ম দিতে পারে। - হ্যালো ইয়াং পিপলস! আমি ফিউদর। ফিউদর স্মিরনোভ। মাহিরা একটু উশখুশ করে। তারপর জিজ্ঞেস করে ফেলে, ‘তোমাদের রুশদের সবারই কি নামের শেষে ভ থাকে?’ ফিউদরের চোখে আলো দেখা যায়। সে বলে ওঠে, ‘সবারই থাকে, তা নয়। তবে আমাদের সাধারণ সারনেম গুলোর শেষে ভ বেশি থাকে।’ এটুকু বলে লোকটাহাসে। হাসিটা দেখে মাহিরা ভ্রু কুঁচকে ফেলে। অস্বস্তিকর এই লোকটা। পেছন থেকে মাশা আর কির তাড়া দেয় বলে, ‘এই সবাই উঠে পড়ো। প্রথমে তোমাদের হোটেলে নিয়ে যাবো, তারপর তোমরা ফ্রেশ হয়ে নিলে আমরা একসাথে মিনিস্ট্রিতে যাবো। ওইখানেই আজকের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান।’

একে একে সবাই ভ্যানের পেছনে উঠে পড়ে। কির গিয়ে বসে ফিউদরের পাশে। সুমন উঠে বসার পর আয়েশার কানে ফিসফিস করে বলে, ‘মাশা মেয়েটা সুন্দর আছে না?’ আয়েশা সাথে সাথেই সুমনের ডান কানটা ধরে মোচড় দিয়ে বলে, ‘শালা লুইচ্চা কোথাকার!’ কানটা জোরে টানলেও কথাটা ফিসফিস করেই বলে আয়েশা। সাথে দুইটা বাচ্চা মেয়েও আছে। ওদেরকে এসব শোনানোর দরকার নেই। দীপ্ত চশমা খোলে, চশমাটা মুছতে মুছতে মিশুর দিকে তাকায়। মিশুর ঠিক মুখোমুখি বসেছে সে। দীপ্তের পাশে তারিকুল বসে বলে, ‘মিশু, মাহিরা, তোদের কেমন লাগছে এখন?’

মিশু ম্লান একটা হাসি দেয় উত্তরে। পাশে বসে থাকা মাহিরা হাত ধরে ফেলে মিশুর। দীপ্ত সেদিকে তাকিয়ে একটা শ্বাস ফেলে। এয়ারপোর্টে মাহিরা যখন সুমনের সাথে কথা বলছিলো, তখনই দীপ্ত শুনেছে; মিশুর ভাই মারা গেছে কিছুদিন আগে। মেয়েটার জন্য মায়া হচ্ছে খুব। কানমলা খাওয়ার পরে সুমন মাশার সাথে জায়গা অদলবদল করেছে। এখন মেয়ে চারজনই একপাশে। সুমন এপাশে এসে বসতেই শাহেদ গলা নিচু করে সুমনকে জিজ্ঞেস করে, ‘তুইও কি গতরাতে টেক্সট পাইছিস?’ সুমন আয়েশার সাথে কথা বলার পর যদিও কিছুটা সন্দেহ করা শুরু করেছিলো; তবুও শাহেদের প্রশ্নে আবারও অবাক হয়ে বলে, ‘অদ্ভুত একটা ফন্টে না? ’ শাহেদ মাথা নাড়ে। - তারিকুল আর দীপ্তও পাইসে একই টেক্সট। পিচ্চি দুইটার ব্যাপার অবশ্য জানি না। - এখন জিজ্ঞেস করবি? আড়চোখে একবার মাশার দিকে তাকায় শাহেদ। - না থাক। হোটেলে পৌঁছে করবো। বাইরে বৃষ্টি। ওরা যখন লিলিয়া ইনে পৌঁছায় তখনও বৃষ্টি কমেনি। লিলিয়া ইন, নতুন করেছে হোটেলটা। নামেই ইন, আদতে পাঁচ তারকা সুবিধা সমেত হোটেল। লাগেজগুলো নিজেরা নিয়ে যায়নি। এমনিতেই পার্কিং লট থেকে ছুটে লবিতে চলে গেছে সবাই। তারপরও ভিজে গেলো। আয়েশা গিয়ে মাহিরা আর মিশুর মাথায় হাত রাখে বলে, ‘এহহে! একদম ভিজে গেছিস। দাঁড়া, চেক ইন করেই এক দৌঁড়ে গিয়ে জামাকাপড় পাল্টে ফেলিস’

মাশা আর কির রিসিপশনের সামনে যায়। আগে থেকেই বুক করে রাখা রুম সাতটার চাবি নিয়ে দ্রুতপায়ে হেঁটে আসে। মাশাকে দেখে চুপচাপ থাকা মিশু নিজেই কথা বলে। - তুমিও ভিজে গেছো। আমার মনে হয় মাহিরার ড্রেস তোমার ফিট হবে। তুমিও এসে চেঞ্জ করে নাও। - নহ্যাঁ, চলো। মাহিরাও অনুযোগ করে। মাথা নাড়ে মাশা। - সেই ভালো। আমার আবার সাইনুসাইটিসের সমস্যা আছে। দ্রুত ঠান্ডা বাঁধিয়ে ফেলি। চেঞ্জ করতে পারলে ভালোই হবে। একটু থেমে কির আর ফিউদরের দিকে তাকায়। বুঝতে পেরে আয়েশা ওর কাঁধে হাত রাখে। - ভেবো না। সুমনরা ম্যানেজ করে নেবে। মাশা আশ্বস্ত হয়ে মেয়েদের সাথে পা বাড়ায়। ছেলেরাও কির আর ফিউদরকে সাথে যাওয়ার জন্য বলে। - তোমরা যাও। আমি আসছি। ফিউদরের কথা শুনে কেউ অবাক হয় না। ওর হয়তো কাজ আছে। ওদের গমনপথের দিকে তাকিয়ে ফিউদরের মুখে বাঁকা একটা হাসি ফোঁটে। প্যান্টের পকেট থেকে ফোনটা বের করে হাতে নেয়। প্রাইভেট নাম্বারটা থেকে টেক্সট এসেছে। - কাজটা শেষ হলেই বিশ হাজার বিটকয়েন পাবে। ফিউদরের মুখে হাসিটা চওড়া হয়। ভার্চুয়াল গেমে এই সাতটা ছেলেমেয়ে ফিউদরের ধারেকাছেও আসতে পারবে না। ফোনে টেক্সটটার স্ক্রিনশট তুলতে যায় ফিউদর। দুই... এক... আশ্চর্য! স্ক্রিনশট উঠেছে ঠিকই, কিন্তু ম্যাসেজটা নাল আসছে। মানে কি এসবের?

(চলবে...)

‘দ্যা গেম’-এর প্রথম পর্ব- ধারাবাহিক গল্প : মায়াবতী

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড