• বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩৭ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

গল্প : তেষ্টা

  নিরব আহমেদ ইমন

২২ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ২২:৫১
গল্প
ছবি : প্রতীকী

ক্লান্ত শরীরে চিরচে না সেই বটগাছটার নিচে বৈঠকখানা। বসে আছে সজল। ক্লান্ত, খুব ক্লান্ত সজল। রোদের অতিরিক্ত তাপ, গায়ের শার্ট ঘামে ভিজে লেপ্টে আছে শরীরে, দুর্গন্ধ। কালকেও ধুয়েছে শার্ট। সাবান না থাকায় শুধু পানি দিয়ে ধুতে হয়। প্রায় চার মাস হয়ে গেছে, একরঙা নীল রঙের কম দামি কাপড় কিনে বাজারের দর্জির থেকে শার্ট বানিয়েছিল। অনেক কষ্টের টিউশনির টাকা জমিয়ে। পুরনো হয়ে গেছে। শুধু পানি দিয়ে ধুয়ে তেমন পরিষ্কার হয় না। তাই একটু আধটু দুর্গন্ধ। ঘামের কারণেই দুর্গন্ধ একটু বেশি। সুগন্ধি শরীরে মাখায় রাস্তায় হাঁটার শৌখিনতা সজল এর হয়নি। শৌখিনতা করার মতো টাকা নেই ওর পকেটে।

তেষ্টা পেয়েছে। তেষ্টায় গলাটা শুকিয়ে গেছে। চারিপাশে দোকান নেই। নির্জন জায়গায় বটগাছ তার চারিপাশে ইট-বালু সিমেন্ট দিয়ে বানানো হয়েছে বৈঠকখানা। অনেক সময় মানুষ তার সমস্ত ক্লান্তি দূর করতে এই গাছের নিচে বসে। এখানে বসলে নাকি কিছুক্ষণের জন্য হলেও মাথাভর্তি টেনশন, ক্লান্তি এসবের থেকে দূরে থাকা যায়। এলাকার সবাই বলে বিশেষ করে চাকুরীজীবী, বয়স্কদের মুখে শোনা যায়। এখানের মৃদু বাতাস, দূষণমুক্ত বায়ু নাকি টেনশন আর ক্লান্তি দূর করে। সজল আজ এসেছে। সজল আজ এসেছে ওর পরিবারের কথা একটু ভুলে থাকতে, ক্লান্তিযুক্ত দেহ নিয়ে, বিশুদ্ধ বাতাস খেতে।

একটু দূরেই টিউবওয়েল আছে। বটগাছ, ইট বালু সিমেন্ট দিয়ে বানানো বৈঠকখানা। এই খাঁ খাঁ দুপুরের রোদ্রে কেউ আসবে না এই সময়ে। সজল এসেছে বাধ্য হয়ে। সজল একাই বসে আছে। বটগাছ এর বিশাল দেহের ছায়ায়। কাঁধের ব্যাগ বৈঠকখানার উপর রেখে চলে যায় তেষ্টা মেটানোর জন্য।

তীব্র রোদে, শরীরের প্রত্যেকটা অঙ্গ উত্তপ্ত হয়ে গেছে। মাথাটা টকবগ টকবগ ফুটছে। ছোট মাথা, ভরা টেনশন রোদের তাপ মাথা গরম হয়ে আছে। গরম হওয়ার’ই কথা। টিউবওয়েলের ঠাণ্ডা পানি মাথার উপরিভাগ ঠাণ্ডা করতে পারলেও, পারবে না ভিতরে টেনশন দূর করতে।

টিউবয়েলে ঠাণ্ডা পানি পেয়ে তাড়াহুড়ায় ঢকঢক করে গিলে খেলো অনেকটা। মাথা ঠাণ্ডা করা প্রয়োজন। জ্বর হবে না, ঠাণ্ডা লাগবে না। এমন ভাবনায় মাথাটা ভিজিয়ে নেয় ঠাণ্ডা পানি দিয়ে সজল।

এখন একটু ভালো লাগছে। ইট-বালু, সিমেন্ট এর বৈঠকখানা’য় আবার এসে বসে। এতক্ষণে মৃদু বাতাসে গায়ের ঘাম শুকিয়েছে। অনেকটা ক্লান্তি কমে গেছে। একটু শান্তি লাগছে। ঘুম ঘুম পাচ্ছে চোখে।দু-একটা হাই এর সাথে নিজেকে এলিয়ে দিতে ইচ্ছে করছে প্রকৃতির সাথে। ক্লান্ত শরীর নিয়ে বিশ্রাম নিতে গেলে একটু ঘুম আসবেই।

সজল এর এখন চোখ ভর্তি ঘুম। মাতালের মত ঘুমোতে ইচ্ছে করছে। ঘুমে একটু মাতাল হতে চায় সজল। পঙ্গু বাবা, বোন, নিজের পড়ালেখা সব চিন্তায় রাতে ঘুম হয় না। বোনের বয়স হয়েছে বিয়ে দিতে হবে। নিয়মিত বাবার ঔষধ কেনা। টাকার প্রয়োজন। থাকার মত একটা জায়গা নেই। রাস্তার পাশে সরকারি জমি। কাঠের বেড়া, টিনের চাল কোন রকম মাথা গোঁজার জন্য একটি ঘর উঠিয়েছিল সজলের বাবা। রোড এক্সিডেন্ট'এ পা হারিয়ে দু’বছর ধরে পড়ে আছে ঘরে।হাঁটতে পারে না একা চলাচল করতে পারে না। সজল দেখাশোনা করে এদের। শুনেছে বাড়িটাও হারাতে হবে। সরকারি জায়গায় ঘর । সরকার চাইলে ছেড়ে দিতে তো হবেই ঘর। রাস্তা বড় হবে ।মংলা সমুদ্র বন্দর থেকে ডাইরেক্ট আমতলী, কলাপাড়া পর্যন্ত নতুন রাস্তা।

যেখানে চলবে ট্রেন, বাস,বড় বড় মালবাহী ট্রাক এসব চলতে প্রয়োজন বড় রাস্তা। যাতে প্রয়োজন অনেক জমির । রাস্তার দু’পাশ থেকে নেয়া হবে জমি। সরকারি জমি বাড়িঘর যতই থাক সরকার চাইলে ছেড়ে দিতে হবে। দুদিন আগে সদর থেকে জেলা প্রশাসক এসে বলে গেছে বাড়ি ছাড়তে হবে। এসি গাড়িতে এসেছে গ্রামের কিছু লোক জড়ো করে কথাগুলো বলে আবার এসি গাড়িতে চলে গিয়েছে। তাদের কি? গরীবের দুঃখ তারা বুঝবে কেনো? গরিবের দুঃখ বলতে গেলেই তাদের যত জ্বালা। দামি গাড়িতে চলে,দামি বাড়িতে থাকে। চাইলেই দু একটা বাড়ি কিনে নিতে পারে সহজেই। ঘর হারানোর কষ্ট তাদের নেই। গরিবের কষ্ট বোঝার ক্ষমতাও হয়তো হয় নি। জেলা প্রশাসকের মুখে ঘর ছাড়ার কথা শুনে, সেইদিন রাতে পঙ্গু বাবা, আর বোনের থেকে মুখ লুকিয়ে দু এক ফোঁটা পানি পড়েছিল চোখ দিয়ে সজলের। দরিদ্র ঘরের ছেলেদের চোখে সহজে পানি চলে আসে না।

সজল কেঁদেছিল সে দিন। এই ছোট্ট ঘরে লুকিয়ে আছে মা, বোন, বাবার সাথে কাটানো আনন্দের দিনগুলো। মাকে হারিয়েছে ছয় বছর আগে। ডায়াবেটিকস ছিল, টাকার অভাবে ডাক্তার দেখানো হয় নি, নানা রোগে আক্রান্ত হয়ে খুব যন্ত্রণা নিয়ে মরে যায় সজলের মা। এই ছোট্ট ঘরে বসেই ধীরে ধীরে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করে ওর মা। সেদিন সজলের কিছুই করার ছিল না। টাকার অভাব খুব ভয়ংকর অভাব। টাকা থাকলে হয়তো আজও ওর মা বেঁচে থাকতো। সেদিন থেকেই এই ঘর ওর খুব আপন। নিজের মাকে খুঁজে পায় ঘরে। ঘরের আনাচে কানাচে পড়ে রয়েছে মায়ের সাথে কাটানো অনেক স্মৃতি। মাকে খুব ভালোবাসে সজল। ঘর হারালে হারিয়ে যাবে মায়ের স্মৃতি।

এসব কথা ভাবতে ভাবতে চোখে আর ঘুম আসে না।

সময় অনেকটা হয়।মাথার উপরের সূর্য পশ্চিম আকাশে হেলে পরতে শুরু করে। পেটের ভিতর ক্ষুধায় ডাক দিচ্ছে।সকালে তেমন কিছু খাওয়া হয়নি। সেই ভোরে ঘর থেকে বের হয়েছে কিছু না খেয়ে স্টুডেন্ট পড়ানোর জন্য। স্টুডেন্ট এর বাসায় এক কাপ চা দুটো বিস্কুট খেয়েই সকালের নাস্তা শেষ করতে হয়।

বটগাছ তলা, সবার কাছে শিমুলতলা নামে পরিচিত। সজলের কাছে বটগাছ তলা।অনেক স্মৃতি মিলিয়ে আছে বটগাছ তলা ইট, বালু, সিমেন্ট দিয়ে তৈরি বৈঠকখানায়। অনেক হারানো স্মৃতি। প্রথম ভালোবাসা হয়েছিলো রক্তাক্ত বিকেলবেলায় এই বটগাছ তলায়। অর্পি দেখতে বেশ ভালোই।গোলাপি পাপড়ির মতো ঠোঁট, লম্বা চুল গায়ের রংটা একটু শ্যামলা।

অর্পিকে প্রথম দেখায় ভালোবাসে সজল।খুব ছোট তখন। আবেগকেন্দ্রিক ভালোবাসা।দরিদ্র ঘরের ছেলে,বড়লোক বাপের মেয়েকে ভালোবাসার কথা বলাও পাপ। সজল কখনো বলে নি, বুঝতেও দেয়নি। অর্পির বাবার অনেক টাকা। নিজের গ্রামের বাড়িতে ২ টা ফ্যাক্টরি /কারখানা। রাজধানী শহরে বড় বড় কয়একটা ফ্লাট বাড়িও আছে। নিজেদের পারসোনাল মাইক্রোবাস আছে।অনেক দাম।গ্রামের লোকেরা অর্পির বাবা লিটন চৌধুরীকে খুব সন্মান করে। টাকা পয়সা থাকার কারণেই হয়তো সম্মান বেশি। তবে লোকটা অনেক ভালো। অর্পির সাথে সজলের পরিচয় ক্লাস সেভেন থেকে। একসাথে পড়াশোনা করেছে। বড় হয়েছে।

বরগুনা কলেজিয়েট মাধ্যমিক বিদ্যালয়'এ অর্পি, সজল, রাকিব, সিফাত, মিম, মুন, নাজমুল আরো অনেকেই মাধ্যমিক পাস করে।, অর্পি, সজল,রাকিব, সিফাত, মিম, মুন, আর নাজমুল এর একটা ফ্রেন্ড সার্কেল ছিল। প্রতিদিন বিকেলে কোচিং এ আসার সময় এই বটগাছ তলায় বসে আড্ডা হতো। মজা করত। অনেক অনেক মজা।

সাত জন মিলে ভাগাভাগি করে টাকা দিয়ে,ঝাল মুড়ি , ফুচকা, তেতুল আচার, নিত্যদিন খাওয়া হতো। অর্পি ফুচকা বেশি পছন্দ করত। সজলের ও ভালো লাগতো ফুচকা। নানা রকম ডাল পাকিয়ে, আলু ভর্তা করে ফুচকার ভিতরের দিত। একটু টক টক তেতুলের ঝোল এর মধ্যে ফুচকা ভিজিয়ে খাবার একটা অন্যরকম স্বাদ। খেতে মন্দ লাগতো না। ফুচকা বেশী খাওয়া হতো। কখনো কেউ টাকা নিতে ভুলে গেলে সেটা অর্পি মিটিয়ে দিতে। খাওয়া বন্ধ হতো না কোনোদিন।

পরীক্ষা শেষ হয়। স্কুল কিছুদিন বন্ধ। এরপর আসবে কলেজে ভর্তি হওয়ার নানা টেনশন। এর মধ্যেও আড্ডা শেষ হতো না। নিয়ম করে প্রতিদিন বিকেলে ঝালমুড়ি ফুচকা তেতুল আচার খেতে আসা হতো। এর মধ্যে অর্পি বুঝতে পারে সজলের ভালোবাসা। সেই আবেগকেন্দ্রিক ভালোবাসাটা আজও আছে আগের মতো। খুব ভালো মনের মানুষ অর্পি। ওর বাবার মত। । সজল ও কর্মঠ মানুষ, লেখাপড়া ভালো। এখান থেকেই শুরু হয় দুজনের সম্পর্ক। খুব কম বয়স। আবেগে পড়ে শুরু হয় একে অপরের ভালোবাসা। শুরু হয়ে যায় কলেজ লাইফ। অর্পি, সজল, রাকিব, সিফাত ভর্তি হয় চারবছর মেয়াদি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে।বরগুনা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট, কলেজ।। অন্যদিকে মিম, মুন, আর নাজমুল ভর্তি হয় সরকারি কলেজ। বরগুনা সরকারি কলেজ। স্কুল জীবন থেকে কলেজ জীবনে এসেও আড্ডাটা আগের মতনই হয়। খাওয়া-দাওয়া ও কমেনি।

সজল দরিদ্র ঘরের সন্তান। তাই টিউশনি শুরু করেছে। নিজের খরচ নিজেকেই বহন করতে হয়। তখন তিনটা স্টুডেন্ট পড়াতো। এতেই নিজের খরচ চলে যেত ।

দেখতে দেখতে দু’বছর চলে যায়। সজল এখন চতুর্থ পর্বের ছাত্র। মায়ের মৃত্যুবার্ষিকী। বাজার থেকে ফেরার পথে মোটরসাইকেলের সাথে ধাক্কা খেয়ে পা হারায় বাবা। বাবার ডাক্তারের টাকা, বোনের খরচ, নিজের খরচ, সংসার দেখা, সব দায়িত্ব এসে পরে সজলের মাথায়। এত ঝামেলার পড়েও হাল ছাড়েনি সজল। দরিদ্র ঘরের বড় ছেলেদের হাল ছাড়লে চলে না। হাল ছাড়তে নেই। সজলও থেমে রয় নি।

শুরু করেছে টিউশনি। নিজেই চালু করেছে কোচিং সেন্টার। সজল ভালো ছাত্র, সবাই কথাটা জানে। তাই যে কারো মা বাবা তার সন্তানকে সজলের কাছে পাড়াতে আপত্তি বোধ করে না। চারটা টিউশনি, একটা কোচিং সেন্টার, এতেই সাংসারিক কাজ বোনের খরচ, নিজের খরচ, বাবার চিকিৎসা খরচ মোটামুটি ভাবে চলে যায়।

এমন সময় অর্পির বাবা এসেছিল সজলের কাছে। তার দুইটা ফ্যাক্টরির থেকে একটা ফ্যাক্টরির দেখাশুনোর কাজ সজলকে দিতে চায়। বিনিময়ে অর্পির বাবা সজলের সংসারের খরচ,বাবার চিকিৎসা খরচ দিবে। সজল কাজ করতে সংকোচ বোধ করে। রাজি হয় না। সজল লেখাপড়া, টিউশনি, এবং তার কোচিং সেন্টার চালিয়ে যেতে চায়। সজলের স্বপ্ন, লেখাপড়া করে বড় ইঞ্জিনিয়ার হবে। অর্পির বাবার কথা মত চললে সেটা কখনোই পূরণ হবে না।

সজলের পড়াশুনা, টিউশনি, কোচিং সেন্টার নিয়মিত চলতে থাকে।অর্পিকে দেওয়ার মত সময় নেই সজলের। ব্যস্ত হয়ে পরে বাস্তবতার সাথে। বিকেলের আড্ডা আর হয় না, ফুচকা ঝালমুড়ি খেতে যাওয়া হয় না। সজল বুঝতে পারে অর্পিকে সে কখনোই পাবে না আপন করে। এতদিন যা ছিল সবই আবেগ। এখন বাস্তবে ফিরতে হবে। আবেগ দিয়ে মধ্যবিত্তদের জীবন চলে না।

একদিন টিউশনি বন্ধ দিয়ে অর্পিকে দেখা করতে বলেছে বটগাছ তলায়।সজল নিঃসংকোচে বলে দিয়েছে সম্পর্ক রাখা সম্ভব না। অর্পি সজল কে দেখে সেদিন অবাক হয়েছিল। অর্পির চোখে মুখে দেখা দিয়েছে অবাক হওয়ার আবছায়া।

‘কেন?’ জানতে চাওয়ায় সেদিন সজল কোন কথা বলেনি। মনে মনে কেঁদেছে সজল। চোখে পানি নেই সজলের। শুকিয়ে গেছে মায়ার টানে। বাস্তবতার সামনে আবেগ কিছুই না। সজল বুঝতে পেরেছিল সেদিন। ধনীর মেয়ে তার কপালে নেই। সে তো দরিদ্র, দরিদ্র ঘরের সন্তান। অর্পি সেদিন কান্নায় চোখ ভিঁজিয়ে চলে গিয়েছিল সজলের সামনে থেকে। বুঝিয়েছে অনেক। দুবছরের সম্পর্ক এভাবে নষ্ট হয়ে যায় না। তবে বাস্তবতা ভিন্ন জিনিস। এখানে সবই সম্ভব। ভালো কিংবা খারাপ।

- বাবা আমায় দুটা টাকা দাও।সকাল থেকে কিছুই খাইনি

বৈঠকখানায় শোয়া সজল। এক লোকের কণ্ঠে হুঁশ ফিরে। লোকটা খুনখুনে বৃদ্ধ।লাঠি ভর করে দাড়িয়ে আছে।ডান পায়ের নিচের অংশ নেই, পঙ্গু। বৃদ্ধাকে দেখে সজলের বাবার কথা মনে পড়লো। বাবাকে কখনো এমন অবস্তায় দেখতে চায় না সজল। বাবা ওর ভালোবাসা। বাবাকে সজল অনেক সুখে রাখতে চায়।লাঠি ভর করে রাস্তায়, পার্কে লোকের কাছে গিয়ে কখনো ভিক্ষা করতে দেখতে চায় না। বাবাকে সজল অনেক ভালোবাসে। বৃদ্ধ লোকটাকে দেখে মায়া হয়।চোখের কোনে পানি আসে।হাতের তালু দিয়ে মুছে ফেলে।

পকেটে দশ টাকার একটা নোট ছিল।বৃদ্ধাকে দিয়ে বলে চাচা আপনি এটা দিয়ে চা বিস্কুট খেয়ে নেন। অনেক বেলা হয়েছে।

সজল ওর ব্যাগ নিয়ে বাড়ির পথ ধরে।চিন্তা করে বাবার কথা।বাবাকে খুব যত্নে রাখতে হবে। এবারের টিউশনির টাকা দিয়ে একটা লুঙ্গির কাপড়, আর গেঞ্জি কিনে দিবে ভাবছে।বাবা অনেক খুশি হবে। বাবার মুখের ওই হাসিটুকু সজলের ভালোলাগে।

সজল রাস্তায় উঠে। গাড়ি আছে কিন্তু পকেটে টাকা নেই। দ্রুত যেতে হবে।কোচিং এ পড়াতে যাওয়ার সময় হয়ে এসেছে।গাড়িভাড়ার টাকা বৃদ্ধাকে দিয়ে এসেছে। বাড়ির পথ ধরে হাঁটতে থাকে।বড় বড় গাড়ি পলকের সাথে চলে যায় পাশ কাটিয়ে ।

চার বছরের ডিপ্লোমা কোর্স শেষ করেছে ছয় মাস আগে। BSC করার ইচ্ছে ছিল, টাকার অভাবে হয়নি। এখন চাকরি পাওয়া একটু কষ্টের তবুও পেতে হবে। একটা চাকরি পেয়ে অর্পির কাছে যাবে। বউ করে ঘরে আনবে। সেই দিনর পর থেকে আর কথা হয় না। রাকিবের কাছে শুনেছে অর্পি আজও অপেক্ষা করে সজলের জন্য। সজলকে ভালোবাসে।

একটা চাকরি পেয়ে বোনের বিয়ে দিতে হবে। খুব ধুমধাম করে বিয়ে দিবে,একটা মাত্র বোন।খুব টাকার প্রয়োজন। বাবাকে একটা হুইল চেয়ার কিনে দিবে।বাবার আর কষ্ট করে লাঠি ভর করে হাটতে দেখতে ভালো লাগে না।

টাকার প্রয়োজন।চাকরিটা খুব প্রয়োজন। আজকাল টাকায় কথা বলে।টাকাই সব টাকাই মূল। যার টাকা নেই তার কিছু নেই। আজকাল টাকার মাধ্যমে সুখ, শান্তি এসব পাওয়া যায়। টাকার চিন্তা মাথায় ভর করেছে। সবাইকে সুখে দেখতে চায় সজল।তার জন্য প্রয়োজন অনেক টাকা।

বড় একটা মালবাহী ট্রাক সজলের গা ঘেঁসে চলে যায়। রক্তাক্ত শরীর পরে থাকে রাস্তার পাশে। কিছু লোক এসে রক্তমাখা শরীর নিয়ে হাসপাতালের দিকে চলে যায়। রাস্তায় পরে থাকে লাল রঙ্গের তরল পদার্থ। আকাশটা আজ মেঘ করেছে। বৃষ্টি আসুক। বৃষ্টি এসে ধুয়ে নিয়ে যাক এই তরল পদার্থ। হয়তো সজল বেঁচেও ফিরতে পারে।

দরিদ্র সজল কি পারবে না ধুমধাম করে বোনের বিয়ে দিতে?অর্পিকে বউ করে ঘরে আনতে? বাবার শান্তিতে চলার জন্য হুইল চেয়ার কিনে দিতে?

সজলের বাঁচাটা খুব জরুরি। কোচিংসেন্টার এ মেধাবী ছাত্ররা ওর জন্য অপেক্ষা করছে। অর্পি অপেক্ষা করছে। সজল বাঁচুক। সজল বাঁচলে বেঁচে রবে এক পঙ্গু বাবা আর এক মায়াবি অভিমানী লক্ষ্মী বোন।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড