• বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩০ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

‘মায়াবতী’-এর চতুর্থ পর্ব

ধারাবাহিক উপন্যাস : মায়াবতী

  রিফাত হোসেন

১১ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ১৪:১৩
গল্প
ছবি : প্রতীকী

বাড়িতে প্রবেশ করতেই অল্প বয়সী একটা মেয়ে বিস্ময় নিয়ে এগিয়ে আসতে লাগল ওদের দিকে। মেয়েটার দিকে মনোযোগ দিয়ে তাকালো নিশু। মেয়েটা অসম্ভব সুন্দরী। এর থেকেও সাংঘাতিক ব্যপার হলো মেয়েটা ওর সমবয়সী। অনেকটা ওর স্বপ্নের ভালোবাসার মানুষটার মতো দেখতে। মেয়েটা আসতে আসতে ওদের কাছাকাছি এসে দুই হাত বাড়িয়ে দিলো। নিশুর মনে হয়েছিল হয়তো দুই হাত বাড়িয়ে দিয়ে ওকে ডাকছে মেয়েটা। কিংবা হটকারিতায় উদ্বিগ্ন হয়ে জড়িয়ে ধরতে আসছে। নিশু মুচকি হাসি দিয়ে মেয়েটার দিকে এগিয়ে যেতে চাইলে মায়া ওকে বাধা দিলো। নিশু করুণ দৃষ্টিতে তাকালো মায়ার দিকে। মায়া চোখ রাঙিয়ে বলল, ‘একদম চুপ করে দাঁড়িয়ে থাক। এটা তোর স্বপ্নের গালফ্রেন্ড নয়।’

নিশুর মুখটা মলিন হয়ে গেল মুহূর্তের মধ্যেই। মেয়েটা ওদের সামনেই দাঁড়িয়ে ছিল তখন। মায়া দুই হাত বাড়িয়ে দিয়ে মেয়েটাকে জড়িয়ে ধরে বলল, ‘কেমন আছিস অরিন?’

অরিন প্রতিউত্তরে অস্থির কণ্ঠে বলল, ‘তোমাকে দেখে আমার মনটা ভালো হয়ে গেছে আপু। তুমি কোথায় ছিলে এতদিন? তুমি জানো, তোমাকে কত জায়গায় খুঁজেছি আমরা। মামা-মামি তো প্রায় পাগল হয়ে গিয়েছে তোমাকে না পেয়ে। আজও তোমার অপেক্ষায় তারা বসে আছে। তুমি কেন আমাদের ছেড়ে চলে গিয়েছিলে আপু? জানো, গ্রামের সবাই বাবার কাছে এসে ক্ষমা চেয়েছে। তারা স্বীকার করেছে যে, তুমি খারাপ কিছু করোনি। তারা বিষয়টিকে খারাপ দিকে টেনে নিয়ে গেছে। শুধু শুধু তোমার বিরুদ্ধে গিয়েছিল সবাই। আসলে তোমার উধাও হয়ে যাওয়াটা নিয়ে গ্রামের সবাই খুব কষ্ট পেয়েছিল। তারা বুঝতে পেরেছিল তোমার সাথে যা হয়েছে, সেটা খুব বড় অন্যায়। মামা শ্রদ্ধেয় একজন কৃষক। গ্রামের কৃষক থেকে শুরু করে অনেকেই মামাকে সম্মান করে। কিন্তু কিছু মানুষ রূপি পশুর জন্য মামাকে অনেক অপমান সহ্য করতে হয়েছিল। পরে অবশ্য সবাই ক্ষমা চেয়েছে। আর সেই থেকে মামার অবস্থা খারাপ হতে থাকে। কারোর সাথে কথা বলেন না। কাজ করেন না। মাঝে মাঝে শুধু কেঁদে কেঁদে বলেন, আমি নিজের মেয়ের জীবনতা শেষ করে দিলাম। আমার জন্য আমার মেয়ে হারিয়ে গেছে আমার কাছ থেকে। আমার মেয়েটা বেঁচে আছে কি-না, তা-ও জানি না।’

মনোযোগ দিয়ে অরিনের বলা কথাগুলো শুনলেও মায়ার বুকে বয়ে যাচ্ছিল কষ্টের স্রোত। বুকের ভিতরে চাকু দিয়ে আঘাত করার মতো কষ্ট হচ্ছিল মায়ার। অনেক কষ্টে চোখের জল আটকে রেখে অরিনকে বলল, ‘বাবা কোথায় এখন?’

অরিন কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলল, ‘নিজের ঘরেই আছেন তিনি। তবে অসুস্থ।’

মায়া আর এক মুহূর্ত-ও দাঁড়াল না ওখানে। দৌড়ে চলে এলো বাবার ঘরের দিকে। নিশু এতক্ষণ ‘হা’ করে সব শুনছিল। কিন্তু এবার ওর ঘোর কেটে গেল। কিছু বুঝে ওঠার আগেই মায়া বাবার ঘরে চলে গেছে। নিশু এখন কোথায় যাবে? বুঝতে পারছে না। তাই সেভাবেই দাঁড়িয়ে রইল চুপচাপ।

তবে আড়চোখে ওর সামনে দাঁড়িয়ে থাকা সমবয়সী সুন্দরী মেয়েটাকে দেখছিল ও। নিশুর আড়চোখে তাকানো খুব ভালো করেই বুঝতে পেরেছিল অরিন। তাই রাগী কণ্ঠে বলল, ‘এভাবে তাকিয়ে কী দেখছেন? অপরিচিত একটা মেয়ের দিকে কূ-নজরে তাকাচ্ছেন। আপনার সাহস তো কম না।’

নিশু কিছুটা ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেল অরিনের কথা শুনে। মেয়েটা দেখতে ঠিক যতটা সুন্দরী আর ভদ্র। কথাবার্তায় ঠিক তার থেকে হাজার গুণ বেশি মেজাজী আর অভদ্র। অরিন আবার বলল, ‘শুনুন, আমাকে কূ-নজরে দেখবেন না।’

অরিনের দিকে কিছুটা এগিয়ে গিয়ে নিশু বলল, ‘তাহলে কী ভালো নজরে দেখব?’

নিশুর দিকে রাগে কটমট করতে করতে তাকালো অরিন। নিশু মুচকি হাসি দিয়ে আবারও বলল, ‘অপরিচিত মেয়েদের প্রতি আলাদা একটা আকর্ষণ আছে। তাই, না চাইলেও তাদের দিকে নজর চলে যায়। আর সেই অপরিচিত মেয়েটা যদি হয় সমবয়সী, তাহলে তো কোনো কথাই নেই।’

অরিন কী ভাবল তা জানে না নিশু। তবে এইটুকু বুঝতে পারছে যে, অরিন খুব রেগে গেছে। নিশু কিছু বলার আগেই অরিন হনহনিয়ে ভিতরে চলে গেল। নিশু মনে মনে বলল, ‘কী অভদ্র মেয়ে রে বাবা! বাড়িতে গেস্ট এসেছে৷ অথচ সেদিকে তার কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই।’

নিশু আর কোনো উপায় না পেয়ে একাই এদিক-ওদিক তাকাতে তাকাতে সামনের দিকে এগোতে লাগল। একসাথে অনেকগুলো ঘর আছে এখানে। নিশু জানে না এই ঘরগুলো কাদের। তবে এইটুকু বুঝতে পারছে যে, এই ঘরগুলো মায়ার খুব কাছের মানুষের। কারণ মায়া এদিকেরই কোনো একটা ঘরেই গিয়েছে। আরো কিছুটা সামনে এগিয়েই অরিনকে দেখতে পেলো নিশু। অরিন নিশুর দিকে একবার তাকিয়ে আবারও উল্টো দিকে মুখ ঘুড়িয়ে নিলো। মৃদু হাসি দিয়ে আবারও মায়াকে খুঁজতে লাগল নিশু। অল্প কিছুক্ষণের মধ্যেই পেয়ে-ও গেল একটা ঘরে। তবে দরজার বাইরেই দাঁড়িয়ে ছিল ও। ভিতরে তাকিয়ে দেখে মায়া বয়স্ক একজন লোকের পাশে বসে কাঁদছে মায়া। বয়স্ক লোকটা কাঁদতে বারন করলেও শুনছে না ও। সে অনবরত কাঁদছে আর বলছে, ‘আমাকে ক্ষমা করে দাও বাবা। তোমার এই অসুস্থতার জন্য শুধুমাত্র আমি দ্বায়ী। আমি সেদিন চলে না গেলে হয়তো এইসব কিছুই হতো না। হয়তো তুমি এখন সুস্থ থাকতে।’

নিশু বুঝতে পারল এই বয়স্ক লোকটা-ই মায়ার বাবা। তিনি মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললেন, ‘তোর কোনো দোষ নেই মা। তুই হয়তো আমাদের সম্মানের কথা ভেবেই বাড়ি থেকে চলে গিয়েছিলি। আমাদের তখন উচিত ছিল তোর পাশে থাকা। তোকে মানসিকভাবে সাপোর্ট দেওয়া। কিন্তু আমরা তা করিনি। দোষটা আমাদেরই। কিন্তু আজ যখন ফিরে এসেছিস, তখন আর সেইসব কথা ভেবে মন খারাপ করিস না। অতীত ভেবে ভুলে যা নৃশংস মুহূর্তগুলো।’

মায়া কিছু বলল না। ও কাঁদছে। খুবই কাঁদছে। হয়তো আনন্দ মিশ্রিত কান্না। কিংবা দুই বছরেরও অধিক সময়ের যন্ত্রণার অশ্রুস্রোত।

বেশ কিছুক্ষণ পর স্বাভাবিক হয় মায়া। বেরিয়ে আসে বাবার ঘর থেকে। একে একে পরিবারের সবার সাথে কথা বলতে থাকে, এবং নিশুকে পরিচয় করিয়ে দিতে থাকে। অরিনের সাথে পরিচিত হতে গিয়ে নিশু অরিনকে চোখ মেরেছিল। যা দেখে অরিন রাগে ফুসতে থাকে। আর ওদের দু'জনের কাণ্ড থেকে মুচকি হাসি দিয়ে চলে যায় মায়া।

নিশু ভাবতে পারেনি, মায়াকে এত তাড়াতাড়ি আপন করে নিবে ওর পরিবার। নিশু প্রথমে ভেবেছিল হয়তো ওদের অপমান করবে। কিংবা ওদের ভিতরেই ঢুকতে দিবে না। বাইরে থেকে তাড়িয়ে দিবে। কিন্তু এখানে এসে সবার সাথে কথা বলার পর নিশুর এই ধারণা পুরোপুরি পাল্টে গেল। অত্যন্ত শালীন এবং ভালো মানুষজন মায়ার পরিবার। এইরকম একটা পরিবারের দুর্ব্যবহারের স্বীকার হয়েছে মায়া! এটা কীভাবে সম্ভব তা কিছুতেই বোধগম্য হচ্ছে মা নিশুর। হয়তো পরিস্থিতির স্বীকার হয়ে কঠোর হতে হয়েছিল তাদের। তবে মায়া যে ভালো ভাবে নিজের পরিবার ফিরে পেয়েছে, এটা ভেবেই বেশ আনন্দ হচ্ছে নিশু। এবার নিশ্চয়ই মায়া আর কখনোই পরিবার থেকে আলাদা হবে না। আর কখনোই ওই ঢাকা নামক যন্ত্রণায় যাবে না মায়া। যেখানে প্রতিটি মুহূর্ত বাস্তবতার সাথে লড়াই করে চলতে হয়। কিন্তু নিশু! ওকে তো ফিরে যেতেই হবে। ঢাকায় তো ওর মায়ের কবর। মাকে ঢাকায় রেখে এখানে কীভাবে থাকবে নিশু? তাহলে কী মায়াকে ছেড়ে একাই ঢাকায় ফিরে যেতে হবে?

হঠাৎ নিশুর বুকটা ধুক করে উঠল। বোনকে ছেড়ে চলে যাওয়ার কষ্টটা এখনই যন্ত্রণাদায়ক ভাবে অনুভব করতে পারছে ও। রাত হয়ে আসছিল। নিশুকে আলাদা একটা ঘরে শোয়ার ব্যবস্থা করে দেওয়া হলো। এদিকে নিশুর একটু-ও ঘুম আসছে না। ও প্রতিদিন মায়ার কোলে মাথা রেখে ঘুমায়। কিন্তু আজ তার ব্যতিক্রম বলে নিশুর দৃষ্টিতে ঘুম নেই। হয়তো পরবর্তী সময়ে এভাবেই একা একা ঘুমাতে হবে। কোলে মাথা রেখে ঘুম পাড়িয়ে দেওয়ার মতো কেউ থাকবে না তখন। জ্বর বা ঠাণ্ডা হলে জড়িয়ে ধরে শুয়ে থাকবে না কেউ। খেতে না চাইলেও জোর করে নিজের হাতে খাইয়ে দিবে না কেউ। কেউ আর আদর করে কপালে ভালোবাসার পরশ এঁকে দিবে না। এরপর থেকে হয়তো সেই মায়াবী মুখটা না দেখেই ঘুম ভাঙাতে হবে। হাত দিয়ে কেউ আর এলোমেলো চুলগুলো ঠিক করে দিবে না। এইসব ভাবতে গিয়ে ডুকরে কেঁদে উঠছে নিশু। দুই বছরের অভ্যাস হঠাৎ করে চেঞ্জ হয়ে যাবে! কিন্তু ভালোবাসার আবেশ তো সারাজীবন থাকে। আচ্ছা, অভ্যাস আর আবেশ কী এক? উঁহু! এই দু'টোকে এক ভাবা-ও ভয়ঙ্কর একটা বোকামি। মানুষের অভ্যাস একসময় না একসময় পরিবর্তন হয়ে যায়। কিন্তু আবেশ কখনো পরিবর্তন হয় না। সারাজীবন থেকে যায় সেই আবেশ। হয়তো কোনো এক স্মৃতিতে।

দরজায় টোকা দেওয়ার শব্দে সম্মতি ফিরল নিশুর। বিছানা থেকে ওঠে দরজা খুলে দিলো। দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে আছে মায়া আর অরিন। তবে দু'জনের ভাব-ভঙ্গি ভিন্ন। মায়ার ঠোঁটের কোণে মৃদু হাসি থাকলেও অরিন রাগে ফুসছে। হয়তো নিশুকে দেখেই। নিশু অরিনকে আরো কিছুটা রাগিয়ে দেওয়ার জন্য বলল, ‘আল্লাহর কাছে অসংখ্যবার শুকরিয়া আদায় করছি। আমাকে একসঙ্গে দু'টো চরিত্র দেখবার সৌভাগ্য করে দিয়েছেন তিনি।’

মায়া আর অরিন ভিতরে এলো। মায়া বলল, ‘দু’টো চরিত্র কোথায় পেলি?’

- আমার সামনেই দাঁড়িয়ে আছে দু'টো চরিত্র। একজনের মায়াবী মুখের হাসি। আরেকটা বদমেজাজি মেয়ের রাগ।

মায়া শব্দ করে হেসে উঠল। সাথে নিশু-ও। অরিন চেঁচিয়ে বলল, ‘উফ্ আপু। তোমার এই পাগল ভাইয়ের কথা শুনে হাসছ তুমি। দেখতে পাচ্ছ না, সেই কখন থেকে আমাকে রাগিয়ে যাচ্ছে।’

মায়া হাসি থামিয়ে বলল, ‘আরে রাগ করছিস কেন? আসলে, সমবয়সী মেয়েদের প্রতি ওর আকর্ষণ একটু বেশি।’

অরিন আবারও রাগী কণ্ঠে বলল, ‘আপু তুমিও! এখন তো মনে হচ্ছে এই পাগল ছেলেটার সমবয়সী হয়ে খুব বড় ভুল করে ফেলেছি আমি।’

অরিনের কথা শুনে আবারও শুব্দ করে হেসে উঠল মায়া আর নিশু। রাগে ফুসতে ফুসতে ঘর থেকে বেরিয়ে এলো অরিন। মায়া আর নিশুর হাসি যেন থামতেই চাইছে না। এভাবেই কিছুক্ষণ সময় পেরিয়ে যাওয়ার পর মায়া বলল, ‘রাতের খাবার খাওয়ার জন্য ডাকছে।’

নিশু পেটে হাত দিয়ে বলল, ‘ভেবেছিলাম আজ আর খেতে দিবে না। তাই না খেয়েই ঘুমিয়ে পড়ার চেষ্টা করছিলাম।’

মায়া অবাক কণ্ঠে বলল, ‘বলিস কী রে? খেতে দিবে না কেন? তাছাড়া তুই খালি পেটে ঘুমাতে পারবি?’

নিশু মৃদু হাসি দিয়ে বলল, ‘কয়েকদিন না খেয়ে থেকেও ঘুমাতে পারব। কিন্তু তোমার কোলে মাথা না রেখে ঘুমাতে পারব না আমি।’

মায়া নিশুর মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলল, ‘ঠিক আছে। আমি এসে তোকে ঘুম পাড়িয়ে দিয়ে যাবো।’

- আজকেই তো শেষ। এরপর তো আমি ঢাকায় চলে যাবো। আর তুমি এই গ্রামে নিজের বাবা-মায়ের কাছে থাকবে। তখন আর ইচ্ছে করলেও তোমার কোলে মাথা রেখে ঘুমাতে পারব না আপু।

মায়া নির্বাক দৃষ্টিতে তাকালো নিশুর দিকে। নিশু আবার বলল, ‘তুমি নিজের পরিবারের মানুষদের সাথে আবারও আনন্দে দিন কাটবে। আবারও নতুন করে জীবন গুছিয়ে নিবে।’

অস্ফুটস্বরে মায়া বলল, ‘আর তুই?’

তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে নিশু বলল, ‘আমি আবারও সেই পথবাসী জীবনে ফিরে যাবো। কখনো খাবো, তো কখনো খাবো না। নিশ্চিন্তে ফুটপাতের রাস্তার মোড়ে রাত কাটিয়ে দিবো। কোনো পিছুটান থাকবে না। কোনো আকাঙ্খা-ও থাকবে না। একাকী নীরবে সময় পাড় করে দিবো।’

নিশুকে জড়িয়ে ধরল মায়া। কাঁদোকাঁদো স্বরে বলল, ‘আমি এতটা স্বার্থঃপর নই রে ভাই। যে নিজের পরিবারকে পেয়ে তোকে ভুলে যাবো। তুই ভাবলি কীভাবে? যে মানুষটা আমাকে নতুন করে ভাবতে শিখিয়েছে, তাকে আমি ভুলে যাবো। তুই ঢাকায় চলে গেলে আমিও ঢাকায় চলে যাবো। তোর সাথে থাকবো আমি। আবারও সেই জীবনে ফিরে যাবো আমরা। তোকে কখনোই ভুলব না আমি।’

নিশু-ও কেঁদে উঠল। ভিতরের একটা ঘর থেকে কেউ একজন ডাক দিলো। নিশুকে ছেড়ে দিয়ে মায় বলল, ‘সবাই ডাকছে। তাড়াতাড়ি চল ভাই।’

দুই চোখ মুছে নিশু হাঁটা দিলো। সাথে মায়া-ও। খাবারের ওখানে গিয়ে নিশু বলল, ‘গ্রামের মানুষজন শহরের মতো টেবিলে বসে খায়?’

টেবিলের এক পাশে চেয়ারে বসা ছিল অরিন। ও নিশুর দিকে তাকিয়ে বলল, ‘২০১৯ সালে এসে এই কথা বলছেন মি: নিশু। আপনার মাথায় তো কোনো বুদ্ধি নেই। এখন আর মাটিতে বসে খাবার খাওয়ার দিন নেই। শহরের মানুষদের সাথে সাথে গ্রামের মানুষজন-ও এখন উন্নত।’

অরিনের মুখে নিজের নামটা শুনে অনেকটা অবাক হলেও তা প্রকাশ করল না নিশু। কারণ এটা নিয়ে কিছু জিজ্ঞেস করা আরেকটা বোকামি। একজন মানুষের নাম জানা আহামরি কিছু নয়। নিশ্চয়ই মায়া ওর নামটা সবাইকে বলেছে। বারবার এইরকম বোকামি করলে যে সম্মানের আর কিছু থাকবে না, তা বুঝতে পেরে চুপ করে গেল নিশু। কিন্তু অরিন চুপ নেই। ও অনবরত নিশুকে রাগীয়েই যাচ্ছে। সুযোগ পেয়ে যেন টানাহেঁচড়ার করতে শুরু করেছে। নিশুকে চুপ থাকতে দেখে অরিন বলল, ‘কি মি. নিশু! রাগ করলেন নাকি?’

নিশু হুট করেই বলে দিলো, ‘বিখ্যাত গবেষক মি. নিশু বলেছে, সমবয়সী মেয়েদের কথায় রাগ করতে নেই। কারণ তাদের খোঁচামারা কথাতে-ও অদ্ভুত এক ভালোলাগার ব্যপার আছে।’

রাগী দৃষ্টিতে নিশুর দিকে তাকালো অরিন। উপস্থিত সবাই হো হো করে হেসে উঠল।

খাওয়া দাওয়া শেষ হলে নিশু নিজের ঘরে এলো। মায়ার সাথে গল্প করতে করতে ঘুমিয়ে পড়ল ও।

(চলবে...)

‘মায়াবতী’-এর ৩য় পর্ব- ধারাবাহিক উপন্যাস : মায়াবতী

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড