রিফাত হোসেন
দারোয়ান লোকটির কথা শুনে রীতিমতো হতভম্ব হয়ে গেছে আদিত্য আর মিস্টার ইকবাল। দু’জনের মনে অজানা এক ভয় কাজ করছে। বেশ কিছুক্ষণ নীরবতা সবার মাঝে। হঠাৎ আদিত্য বলল, ‘উনারা কোন হাসপাতালে আছে এখন?’
- এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আছে তারা দু’জনেই।
- আপনি আমাদের আগে জানাননি কেন এই খবরটা? আমার মা আর বোন কোথায় থাকে এখন, সেটা কী আপনি জানতেন না?
দারোয়ান লোকটি চুপ করে রইল। তার দৃষ্টি নিচের দিকে। মিস্টার ইকবাল গর্জে উঠলেন। দারোয়ান কে উদ্দেশ্য করে বললেন, ‘তোমার সাহস হলো কীভাবে, এইরকম একটা ঘটনা আমাদের থেকে আড়াল করার। আমার ফোন নম্বর তো ছিল তোমার কাছে। অন্তত আমাকে একবার বলতে পারতে। ওদের কিছু হলে আমি তোমাকে ছাড়ব না।’
লোকটি কাঁদোকাঁদো দৃষ্টিতে মিস্টার ইকবাল এর সামনে এলো। হাতদুটো এক করে বলল, ‘আমাকে মাফ করে দিন স্যার। আমি আপনাদের খবরটা দিতে চেয়েছিলাম। কিন্তু ছোট স্যারের জ্ঞান ফেরার পর তিনি আমাকে অনুরোধ করে তাদের এই করুণ অবস্থার কথা যেন আপনাদের না বলি। এমনকি তারা স্বামী-স্ত্রী যদি হাসপাতালের বেডে মারা-ও যায়, তবুও যেন কাউকে কিছু না বলি। বিশেষ করে আপনাদের দু’জনকে। আর আদিত্য দাদার মাকে-ও জানাতে না করেছে। একজন মৃত্যুর পদযাত্রী মানুষের কথা কীভাবে ফেলতাম আমি? আপনারাই একবার ভেবে দেখুন। তাকে দেওয়া কথা রাখতেই আমি কাউকে কিছু জানায়নি। আজ আপনারা বাড়িতে চলে এসেছেন, সে-জন্য সত্যি ঘটনাটা আপনাদের বললাম।’
মিস্টার ইকবাল আর একমুহূর্ত-ও দেরি করলেন না। গাড়িতে গিয়ে বসে পড়লেন। আদিত্য-ও গাড়িতে গিয়ে বসে পড়ল। মিস্টার ইকবাল ড্রাইভার কে উদ্দেশ্য করে বললেন, ‘যত তাড়াতাড়ি সম্ভব, সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চলো।’
ড্রাইভার সম্ভবত স্যারের নির্দেষের’ই অপেক্ষায় ছিল। তিনি লোকেশন বলার সাথে সাথে ড্রাইভার গাড়ি স্টার্ট দিলো। দ্রুত এগিয়ে গেল সামনের দিকে। ড্রাইভার এর পেছনের সিট দু’টোতে বসে আছে মিস্টার ইকবাল এবং আদিত্য। দু’জনেই সাংঘাতিক এক আতঙ্কে আছে। তাদের মনে এক অজানা ভয়।
প্রায় ঘন্টা দুই-এক পর তারা হাসপাতালে গিয়ে পৌঁছালো। ডাক্তারের কাছ থেকে অনেক অনুনয় বিনয় করে মিস্টার জাহিদের সাথে একবার দেখা করার ব্যবস্থা করল। মিস্টার ইকবাল আদিত্যকে সতর্ক করে দিলো, তারা যে উদ্দেশ্য এসেছিল, সেই উদ্দেশ্যমূলক কোনো কথা এখন অন্তত বলা যাবে না। এই চাপ মিস্টার জাহিদের শরীরের জন্য ভালো হবে না।
আদিত্য কিছু না বলে শুধু মাথা নাড়ালো। আইসিইউতে চিকিৎসারত অবস্থায় আছে মিস্টার জাহিদ। তবে জ্ঞান আছে। মিস্টার জাহিদের স্ত্রী অবশ্য অনেকটা সুস্থ এখন। তাকে কেবিনে দেওয়া হয়েছে কিছুদিন আগে। আইসিইউ-র ভিতরে যাওয়ার পর দেখল মিস্টার জাহিদ চোখ বন্ধ করে শুয়ে আছে। মিস্টার ইকবাল "জাহিদ" বলে ডাক দিলো। চোখ মেলে তাকালো মিস্টার জাহিদ। বড় ভাইকে দেখে অনেকটা অবাক হয় মিস্টার জাহিদ। তবে নিজেকে কিছুটা সামলে নিয়ে আস্তে আস্তে বললেন, ‘তুমি দেশে কখন এলে ভাই?’
- কালকে রাতের ফ্লাইটে এসেছি। কিছুক্ষণ আগে দারোয়ান বলল তোরা দু'জন হাসপাতালে আছিস।
মিস্টার জাহিদ চোখের পলক ফেললেন। কিছুক্ষণ নীরবতা তার মাঝে। এরপর আস্তে করে বলল, ‘ওহ্।’
একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছাড়লেন তিনি। আদিত্যর দিকে তাকিয়ে বলল, ‘কেমন আছিস আদিত্য?’
আদিত্য কিছু বলল না। ও এখনো ছোট কাকার দিকে তাকিয়ে আছে। অল্প কিছুদিনের মধ্যেই একটা মানুষের শরীরের এবং মনের এতটা পরিবর্তন হয়ে গেছে। এটা ভাবতেই বিস্ময়ের ওর চোখ তীক্ষ্ণ হয়ে যাচ্ছে। তার পুরো মাথায় ব্যান্ডেজ করা। হাত-পা ও ব্যান্ডেজ করা। এই মানুষটা যতই খারাপ কাজ করুক না কেন? তিনি ওর কাকা। আর ও কখনোই চায়নি কাকার এইরকম করুণ অবস্থা হোক। ভালো করে কথাটুকুও বলতে পারছেন না মিস্টার জাহিদ। বারবার চোখের পলক ফেলছেন, সেই সাথে তার চোখ বেয়ে জল গড়িয়ে পড়ছে। বাকরুদ্ধ হয়ে ও শুধু দাঁড়িয়ে-ই আছে। নীরবতা ভেঙে মিস্টার ইকবাল বললেন, ‘তোর এই অবস্থা কে করেছে জাহিদ? আর আমাদের জানাতে নিষেধ করেছিলিস কেন?’
আবারও দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলল মিস্টার জাহিদ। বড় করে চোখের পলক ফেলে বলতে শুরু করল, ‘নিজের অপরাধবোধ থেকেই আমার এই ভয়ঙ্কর পরিনতির কথা তোমাদের জানাতে নিষেধ করেছিলাম। আমি চাচ্ছিলাম না মৃত্যুর আগে আমার এই পাপী চেহারা নিয়ে তোমাদের মুখোমুখি হতে। চাচ্ছিলাম না বললে ভুল হবে। কারণ আমি ওটা চাইলে-ও করতে পারতাম না। তোমাদের সাথে যা করেছি আমি, তা ক্ষমার অযোগ্য। বিশাল বড় বাড়িটা নিজের নামে করে নেওয়ার লোভ আমি সামলাতে পারছিলাম না। তাই তোমাদের সাথে ষড়যন্ত্র করতে বাধ্য হয়েছিলাম আমি। আজ আমার এই অবস্থার জন্য, আমি নিজেই দ্বায়ী। আদিত্যর সাথে যা হয়েছে, সেটা আমারই সাজানো একটা নাটক। আমি ভেবেছিলাম আদিত্যকে বাড়ি থেকে বের করতে পারলেই ওর মা এবং বোনকে বের করতে পারব। তো প্ল্যান অনুযায়ী সফল হয়ে যাই আমি। এবার বাড়িটা নিজের নামে করানোর জন্য পরের প্ল্যানটা করছিলাম। আমি প্রথমে ভেবেছিলাম তুমি সবার উপরে রাগ করে একেবারের জন্য বাইরে চলে যাবে। হয়তো চলে যাওয়ার সময় বাড়িটা আমার নামে করে দিয়ে যাবে। কিন্তু সেটা করলে না তুমি।
এরপর আমি প্ল্যান অনুযায়ী নিজের নামে নতুন একটা দলীল বানাই। তোমার ফ্লাইটের কাগজগুলোর সাথে আমি ওটা ঢুকিয়ে দিই। আমি জানতাম ওই কাগজগুলোতে তুমি সাইন করবে। কারণ ওগুলো প্লেটের টিকিটের কাগজ। তো এই প্ল্যানটা আমার সফল হয়ে যায়। বাড়িটা আমার নামে হয়ে যায়। আমি কোনো ঝামেলা চাচ্ছিলাম না। তাই তোমাকে আর কিছু জানায়নি। তুমি চলে যাওয়ার পর আমি আদিত্যর মা আর বোনকে-ও বাড়ি ছাড়তে বাধ্য করি। এরপর বেশ ভালোই কাটছিল দিনগুলো। হঠাৎ করে রাতে বাইরের দরজায় টোকা দেয় কেউ। জানালা দিয়ে গেইটের দিকে তাকিয়ে দেখি দারোয়ান নেই। ভাবলাম হয়তো কোনো দরকারে দারোয়ান লোকটাই ডাকছে আমাদের। বাড়িতে তখন আর আমার স্ত্রী ছিলাম শুধু। তো ড্রয়িংরুমে এসে দরজা খুলে দেই। হঠাৎ অনেকগুলো লোক এসে মারতে শুরু করল আমাদের দু'জনে। লোকগুলোকে আমি চিনতাম না আগে থেকে। তবে একজন কে চিনতাম। ওর নাম ছিল রোহান। আমি জানি না ওরা কেন আমাকে মারছে। অবশ্য আদিত্য আগেও আমাকে সতর্ক করেছিল যে, রোহান আমাকে মারার প্ল্যান করছে। তখন ওর কথায় তেমন গুরুত্ব দেইনি কারণ রোহান আমার হয়ে কাজ করত। ও আমাকে মারবে কেন! আঘাত পেয়ে আমার স্ত্রী অজ্ঞান হয়ে যায়। ওরা ছুরি দিয়ে আমাকে আঘাত করতে থাকে। একজন একটা গুলি-ও ছুরে। তবে সেটা পেটের পাশ দিয়ে হালকা ছুঁয়ে বেরিয়ে গেছিল। একসময় আমিও অজ্ঞান হয়ে যাই। জ্ঞান ফিরলে আমি নিজেকে এই হাসপাতালে আইসিইউতে আবিষ্কার করি। দারোয়ান লোকটি কিছুক্ষণ পর এসে আমাকে দেখে যায়। ওরা সেদিন দারোয়ানকে আঘাত করে গেইটের কাছে ফেলে রেখেছিল। সে-জন্য ওকে দেখতে পাইনি আমি। ওর জ্ঞান ফেরার পর ও আমাদের হাসপাতালে নিয়ে আসে। আমার স্ত্রী অবশ্য এখন অনেকটা সুস্থ।’
আস্তে আস্তে একনাগাড়ে কথাগুলো শেষ করল মিস্টার জাহিদ। আদিত্য আর মিস্টার ইকবাল মনোযোগ দিয়ে শুনছিল কথাগুলো। সবাই দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছাড়ল। মিস্টার জাহিদ আবারও বললেন, ‘আদিত্য, আমাকে মাফ করে দিস বাবা। আমি লোভে পড়ে এইসব করেছি। আদিবা আর মেঝো ভাবীকে একটু ফোন দে। আমি ওদের কাছে-ও ক্ষমা চাইবো। মৃত্যুর আগে অন্তত এই একটা যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পেতে চাই আমি। ভাই তুমিও পারলে আমাকে ক্ষমা করে দিও।’
আদিত্য কিছু বলল না। মিস্টার ইকবাল বললেন, ‘তুই কোনো চিন্তা করিস না। আর এইসব নিয়ে মন খারাপ করিস-ও না। তুই যে নিজের ভুল বুঝতে পেরেছিস, এটাই অনেক কিছু। আদিত্যকে আমরা সবাই ভুল বুঝেছিলাম। এবং এখন আমরা সবাই নিজেদের ভুল বুঝতে পেরেছি। তুই এখন শুধু তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে নে। তারপর আমরা আবার একসাথে থাকবো সবাই।’
মিস্টার জাহিদ মলিন মুখে একটু হাসি দিলো। বেশ কিছুক্ষণ নীরবতা। এরপর মিস্টার জাহিদ বললেন, ‘২১০ নম্বর কেবিনে আয়শা(মিস্টার জাহিদের স্ত্রী) আছে।’
- হ্যাঁ। রিসিপশন থেকে জেনে এসেছি। তুই এখন বিশ্রাম নে। আমরা ওর সাথে দেখা করে আসি।
আদিত্য আর মিস্টার ইকবাল আইসিইউ থেকে বাইরে বেরিয়ে এলো। ২১০ নম্বর কেবিনে গিয়ে মিসেস আয়শার সাথে দেখা করে বাড়ির দিকে যেতে লাগল ওরা। আদিত্য শুভকে ফোন করে জানিয়ে দিলো আজকে রাতে ও নিজের বাড়িতে থাকবে।
আগে থেকেই শুভর অভ্যাস হয়ে গেছে। নামায শেষ করে মসজিদের ইমাম সাহেবের সাথে বেশ কিছুক্ষণ আড্ডা দেওয়া। মসজিদে বসেই দু'জনে মিলে ইসলামিক বিষয়ে কথা বলে। আজকের আলোচনা বেশ জটিল। সুতরাং সময় একটু বেশিই লাগল। মসজিদ থেকে বের হয়ে একটু হাঁটাহাঁটি করতে লাগল শুভ। আজকে আকশটা গোমড়া হয়ে আছে। সূর্যের দেখা নেই। আকাশের দিকে যতদূর চোখ যায় শুধু ধূসর মেঘ। বেশ ঠাণ্ডা হাওয়া বইছে। শুভ হাঁটতে, হাঁটতে চলে গেল টং দোকানের কাছে। দোকানদারকে চা দিতে বলে বেঞ্চিতে বসে পড়ল ও। বাতাসের তীব্রতায় ধুলোবালি ভরা নোংরা রাস্তাটাও আজ পরিষ্কার হয়ে গেছে। আজকে যানবাহন ও তেমন নেই। হয়তো সকালবেলা আকশের অবস্থা খারাপ দেখে খুব কম সংখ্যক মানুষ গাড়ি নিয়ে বের হয়েছে রাস্তায়। তবে টং দোকানটা হাইওয়ের পাশে থাকায় মাঝে মাঝে দুই একটা বড় বড় গাড়ি যাচ্ছে শোঁ শোঁ আওয়াজ করে। দোকানদার এসে চা দিয়ে গেল শুভর হাতে। চায়ের কাপে চুমুক দিতে দিতে ডান দিকের রাস্তায় তাকালো শুভ। যতদূর চোখ যায় পুরো রাস্তা ফাঁকা। হঠাৎ করে শুভর বুকটা দ্রিম করে শব্দ হলো। চোখটা স্থির হয়ে রইল ডান দিকের রাস্তাটায়। যতদূর চোখ যায় শুধু ফাঁকা রাস্তা। তবুও চোখ সরাতে পারছে না শুভ। খুব কাছের কারোর উপস্থিতি টের পাচ্ছে ও।
তাকে অনুভব করতে পারছে। কিন্তু বুঝতে পারছে না কে সেই ব্যক্তি। কার উপস্থিতি ওকে এতটা আকর্ষণ করছে। হঠাৎ দেখল বেশ কিছুটা দূর থেকে কেউ হেঁটে আসছে। একটা মেয়ে! পরনে কালো রঙের বোরকা। মুখ সম্পূর্ণ কালো কাপড় দিয়ে ঢাকা। হয়তো চোখদুটো খোলা। তবে দূর থেকে স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছে না। শুভর মুখ থেকে অস্ফুটস্বরে বের হয়ে গেল ‘সুমাইয়া’ এর নামটা। শুভ চমকে উঠল। সুমাইয়া নামটা বলল কেন বুঝতে পারল না ও। তাহলে কী দূর থেকে হেঁটে আসা মেয়েটা সুমাইয়া? হয়তো। তবে মেয়েটা যে সুমাইয়া, তার সম্ভাবনা খুব কম। তবুও মেয়েটার দিকে স্থির দৃষ্টিতে চেয়ে আছে শুভ। একটু একটু করে এগিয়ে আসছে মেয়েটা। মেয়েটা শুভর ঠিক সামনে এসে দাঁড়াল। কিছুক্ষণ নীরবতা দু’জনের মাঝে। শুভ বুঝতে পারছে না কী হচ্ছে এইসব। সামনে বোরকা পরে দাঁড়িয়ে থাকা মেয়েটার দিকে তাকিয়ে থেকে একটা ঘোরের মধ্যে চলে গেছে ও। হঠাৎ করে মেয়েটা বলল, ‘অন্যের বউয়ের দিকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে লজ্জা করে না?’
চমকে উঠল শুভ। অন্য কেউ হলে এতক্ষণে লজ্জায় তার চোখমুখ বিভিন্ন আকার ধারণ করত। কিন্তু শুভর তেমন কিছুই হচ্ছে না। সে আরো তীক্ষ্ণভাবে খুটিয়ে খুটিয়ে দেখছে মেয়েটাকে। আবারও মুখ দিয়ে ‘সুমাইয়া’ নামটা বের হয়ে গেল। ওর মুখে সুমাইয়া নামটা শুনে সামনে দাঁড়িয়ে থাকা মেয়েটা শব্দ করে হেসে উঠল। শুভ মনে মনে বলল, ‘এটাই আমার সুমাইয়া। আমি ঠিক চিনতে পেরেছি। সেই চাহনি, সেই হাসির শব্দ, আর সেই কণ্ঠস্বর ভুলবার উপায় নেই।’
মেয়েটা এবার মুখোশ খুলে ফেলে শুভর পাশে বসল। শুভ একরাশ হাসি দিয়ে বলল, ‘অন্যের বউয়ের দিকে তাকালাম কোথায়? আমি তো নিজের বউয়ের দিকেই তাকিয়ে ছিলাম।’
- সে তো এখন চিনতে পারার পর। কিন্তু যখন আমার মুখ ঢাকা ছিল, তখন তো আমাকে চিনতে পারোনি। অপরিচিত একটা মেয়ের মতোই ছিলাম আমি। আর তুমি ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে ছিলে আমার দিকে।
শুভ আবারও হেসে উঠলো। তারপর বলল, ‘তোমাকে দেখার আগে থেকেই আমার মনে অস্থিরতা শুরু হয়েছিল। মনে আছে, একদিন ঠিক এভাবেই মুখোশ পড়ে আমাদের অফিসে নতুন জয়েন করেছিলে তুমি? আমি তোমাকে না দেখেই চিনতে পেরেছিলাম। আজকেও ঠিক সেভাবেই চিনতে পেরেছি। সেদিনও যা বলেছিলাম, আজকেও তাই বলছি। এই মুখোশের আড়ালে যে তুমি ছিলে, তা আমি শিওর জানতাম না। তবে আমি এটা জানতাম, মুখোশের আড়ালে আমার খুব কাছের কেউ একজন আছে।’
- হুম। এভাবেই তো আমার মতো সহজ-সরল, শান্তশিষ্ট মেয়েটাকে পটিয়ে ছিলে। উদ্ভট সব কথা, আর উদ্ভট সব ঘটনা ঘটিয়ে আমার দৃষ্টি আকর্ষণ করিয়েছিলে। সে-জন্যই তো খুব তাড়াতাড়ি তোমার প্রেমে পড়ে গেছিলাম আমি।
শুভ আবারও শব্দ করে হাসল। দোকানদার এসে সুমাইয়ার দিকে একটা চায়ের কাপ এগিয়ে দেয়। সুমাইয়া শুভর দিকে তাকালে শুভ ওকে ইশারায় চা'টা নিতে বলে। সুমাইয়া চা নিয়ে চুমুক দিতে দিতে বলল, ‘তোমার দেরি হচ্ছে দেখেই বুঝতে পেরেছিলাম, তুমি চায়ের দোকানে আছ। আর একেবারে বাজার করে বাড়িতে ফিরতে। কিন্তু বালিশের নিচে দেখলাম তোমার মানিব্যাগ পড়ে আছে। তাই আমি নিজেই মানিব্যাগ দিতে এখানে চলে এলাম। আর আসার সময় এই বোরকা'টা পড়ে বের হলাম।’
- খুব ভালো করেছ। অনেক ভালো লাগছে তোমাকে এভাবে দেখে। তবে বেশ অবাক লাগছে যে, কালকে যে বোরকাটা আমি নিজে কিনে এনেছিলাম। আজকে সেই বোরকা'টা তোমার পরনে দেখেও চিনতে পারিনি আমি।
সুমাইয়া কিছু বলল না। হঠাৎ করে পিছন থেকে শুভর কাধে কেউ একজন হাত রাখল। শুভ আর সুমাইয়া দু'জনেই ওঠে দাঁড়াল। সুমাইয়া অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো সামনে দাঁড়িয়ে থাকা লোকটার দিকে। আড়চোখে শুভর দিকে তাকিয়ে দেখল, ও নিজেও বেশ অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। তবে ওর মুখে একরাশ হাসি। সুমাইয়া জানে না এই লোকটা কে? মনে কৌতূহল হলেও শুভকে কোনো প্রশ্ন করল না ও।
(চলবে...) আরো পড়ুন ‘অদ্ভুত নিয়তি’-এর ২৩তম পর্ব- ধারাবাহিক উপন্যাস : অদ্ভুত নিয়তি
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড