• বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩৯ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

ছোট গল্প : শঙ্খিনী

  লক্ষ্মী নন্দী

২৪ আগস্ট ২০১৯, ১১:২৭
কবিতা
ছবি : প্রতীকী

শঙ্খিনী, জমিদারের বড় ছেলে অরিন্দমের ঘরের পিছন দরজা দিয়ে, সকলের অলক্ষ্যে নিঃশব্দে বেরিয়ে যাচ্ছিল যখন, ঠিক তখনই মিষ্টি সুরে বেজে উঠলো অরিন্দমের ডিজিটাল ঘড়িটা। তবু কোনও দিকে না তাকিয়ে মন্থর গতিতে এগিয়ে গেলো ক্ষুধার্ত শঙ্খিনী।

এদিকে ধড়ফড় করে বিছানার থেকে নেমে হাতে ব্রাশ নিয়ে সোজা চলে গেলো অরিন্দম বাথরুম। স্নান খাওয়া হতেই বাড়ির সামনে গাড়ি এসে দাঁড়াল। অরিন্দম দত্ত ইসলামপুরে বিডিও হয়ে জয়েন করে এসেছে ছ-দিনে আগেই। কোয়াটারে সেটেল করার দিনটা ঠিক করে রেখে ছিলো এই রবিবারই। এদিকে প্রায় পঞ্চাশ মিনিট ধরে খেয়েও শঙ্খিনীর খাওয়া তখনও গলা দিয়ে নামেনি। তবুও সে রেল লাইনের ধার ঘেঁষে ঘেঁষে ধীর গতিতে জমিদারের বাড়ির দিকেই ফিরে আসছিলো। এমন সময় একটা মেল ট্রেন....

যাই হোক শঙ্খিনীর কোনও ক্ষতি হয়নি। সে সময় মতো এসে পৌঁছে গেল অরিন্দমের ঘরে। বই পাগল অরিন্দমের বইয়ের ব্যাগটা তখনও গাড়িতে ওঠানো হয়নি। ড্রাইভার চা খাচ্ছে বারান্দায়। আর অরিন্দম বিছানায় পা ঝুলিয়ে বসে আরও একবার তার দরকারি কাগজ পত্র দেখে নিচ্ছে। শঙ্খিনী দেখলো আর দেড়ি নয়। এবার তার লুকানোর পালা।

অরিন্দমের ঐ বিশাল ব্যাগে যেখানে অনায়াসে দুটো বড় মানুষ বই ছারা ঢুকে যেতে পারে। সেখানে শঙ্খিনীর জন্য যথেষ্ট। এভাবেই নিজেকে আড়াল করে গাড়িতে উঠে পরেছে শঙ্খিনী। জীবনে এই প্রথমবার সে গাড়িতে চরলো। অরিন্দমের গায়ের গন্ধ থেকে শঙ্খিনী কিছুতেই দূরে থাকতে চায়না। ছয়মাস ধরে একই ঘরে সে আর অরিন্দম রাত কাটিয়েছে।

বইয়ের নতুন পুরনো বিকট গন্ধে অস্থির শঙ্খিনী চলন্ত গাড়ীতেই সুযোগ বুঝে অরিন্দমের বেশ অনেকটা কাছে চলেও এসেছে। তৃপ্তির নিশ্বাস নিতে নিতে এক সময় নিজেকে বিছিয়ে দিয়েছে মোহিত শঙ্খিনী। এমন সময় অরিন্দম ড্রাইভার কে বলেন দাঁড়াও দাঁড়াও সামনে একটু চা খেয়েই কোয়াটারে যাই। মিনিট কুড়ির মধ্যে অরিন্দমরা ফিরেও আসে। হঠাৎ ড্রাইভারের চিৎকার স্যার গাড়িতে ঢুকবেন না। অরিন্দম ব্যাপারটা বোঝার চেষ্টা করতেই। বিভিন্ন সংলাপের দংশন শুরু হয়। কেউ কেউ মারতে উদ্যত হয় শঙ্খিনীকে।

শঙ্খিনীর জীবনে নেমে আসে নিষ্ঠুর এক অনুরাগহীন প্রতিকূলতা। ইসলামপুরের নতুন বিডিও অরিন্দম দত্ত -প্রাণচঞ্চল শহরে ভীরের মাঝে দাঁড়িয়ে বলে, ‘আপনারা প্লিজ ওকে মারবেন না। যোগ্য জায়গায় খবর দিন।’

অরিন্দম নিজেই ফোন তুলে নেয় কানে। যোগাযোগ করে বনদপ্তরের সঙ্গে। গাড়িতে তখনও দরজা জানালা বন্ধ করে নজরবন্দি রাখা হয়েছে শঙ্খিনীকে। হয়তো তখনও অবুঝ শঙ্খিনীর প্রাণ চঞ্চল হয়ে উঠেছিল অরিন্দমের পায়ের শব্দ কম্পনের অপেক্ষায়। ইতিমধ্যে বনবিভাগের লোক এসে শঙ্খিনীকে নিয়ে যায়। সন্ধ্যার মধ্যে নতুন কোয়াটারে ঢুকে যায় অরিন্দম। কিন্তু ভীষণ ক্লান্ত অরিন্দম তবুও সারা রাত চোখ বন্ধ করতে পারেনি। শুয়ে শুয়ে শঙ্খিনীর আতঙ্ক চর্চা করেছে। আর শঙ্খিনী? সে কি বন-বাদারে ঘুরে ঘুরে খুঁজেছে দীর্ঘ ছয়মাস একই ঘরে রাত কাটানো সেই চেনা পুরুষের গন্ধ। সার্থক অরিন্দমও সাপটিকে অতো লোকের মধ্যের থেকে বাঁচাতে পেরেছে সে। কারণ অরিন্দম জানে কিছু কিছু বিষাক্ত মানুষের থেকেও বেশি প্রয়োজন এই সরীসৃপ প্রাণী গুলোর বেঁচে থাকা।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড