• শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩০ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

গল্প : কদমফুল

  কমল উদ্দিন

২১ আগস্ট ২০১৯, ০৯:৫৬
গল্প
ছবি : প্রতীকী

বড় একটা রেইনট্রি গাছের গুড়ির উপর বসে আছে ইমরান। মুখাবয়বে হতাশার ছাপ। মাঝে মাঝে মাথা তুলে চারপাশে অবাক চোখে তাকাচ্ছে। পরক্ষণেই তার সামনে সগৌরবে মাথা তুলে দাঁড়িয়ে থাকা কদম গাছের দিকে তাকাচ্ছে। দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে আবার মাথা নিচু করে বসে রইল সে। আর মাত্র একদিন বাকি। একদিনও না, শুধু রাতটা পার হলেই সেই দিন। বহু প্রতীক্ষিত দিন।

প্রিয়ন্তীর নবীণবরণ অনুষ্ঠানে প্রথম দেখেছিল ইমরান। ইমরান তখন চতুর্থ বর্ষের ছাত্র। প্রথম দেখাতেই প্রিয়ন্তীকে ভাল লেগে যায় ইমরানের। শত চেষ্টা করেও বলতে পারে না। অনার্সের শেষ ক্লাসের দিন প্রিয়ন্তীকে আলাদা করে ডেকেও বলতে পারেনি সে। মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে ছিল শুধু। প্রিয়ন্তীও চুপচাপ চলে গিয়েছিল। সেদিন রাতে প্রিয়ন্তী নিজেই ইমরানকে মেসেজ করেছিল। লিখেছিল, ‘আজ সারাদিন বৃষ্টি হচ্ছে। বৃষ্টি আমার খুব পছন্দ। বৃষ্টি হলেই ভিজতে ইচ্ছা করে। এই দেখেন— আপনি বোধহয় ভাবছেন আমি বৃষ্টিতে ভিজে রোমান্টিকতা দেখায়। মোটেও না। আমার ভাল লাগে তাই। পাগলামিও মনে করতে পারেন। বড় হয়ে গেলে নাকি পাগলামি ধীরে ধীরে চলে যায়। আমার পাগলামি তো ধ্রুব হয়ে গেছে। কমেও না, বাড়েও না। আমি কি তাহলে বড় হইনি! আমার মেসেজ করাটাও পাগলামি হচ্ছে, না? পাগলামি হলেও কিছুই করার নেই। শোনেন, আমার একটা ইচ্ছা জেগেছে। কোন একদিন ঝুম বৃষ্টি হবে। খোলা আকাশের নিচে দাঁড়িয়ে ভিজব। তখন কেউ একজন এসে আমার পাশে দাঁড়িয়ে ভিজবে। তার হাতে একটা কদমফুল থাকবে। কিন্তু কদমফুল আমাকে দেখাবে না। লুকিয়ে রাখবে। হাতে কি আছে জানতে চাইলেও কিছুই নেই বলবে। আমি এটা জেনে গিয়ে মুচকি হাসব। সত্যটা জানার পর কারও মিথ্যা বলা দেখলে যেমন মজা লাগে তেমনি আমারও লাগবে। আমি হঠাৎ বলব যেটা আমার জন্য এনেছেন সেটা আমাকে দেন। সে বলবে, এমনি এমনি তো দেওয়া যাবে না। এই ফুলের সাথে কিছু কথার সম্পর্ক রয়েছে। তারপর আমার মুখোমুখি দাঁড়িয়ে ফুলটা হাতে দিয়ে বলবে, ‘ভালবাসি।’ হুম, এরপর থেকে আমি আর ভিজব না। সব পাগলামি দূর হয়ে যাবে আমার। আমার ইচ্ছাটা পূরণ করবেন? যদি পূরণ করতে চান তাহলে আগামী বছরের ঠিক এই দিনে একটা কদমফুল হাতে নিয়ে কলেজের আঙিনায় চলে আসবেন। আমি অপেক্ষা করব আপনার জন্য।’

শুধু কদমফুলই আনবেন। বৃষ্টির অপেক্ষা করবেন না। ঐটা তো আপনার হাতে নেই। এই এক বছরের মধ্যে আমার সাথে যোগাযোগ করবেন না। এমনকি এই মেসেজ এর রিপ্লাইও দেবেন না। ভাল থাকবেন।

ইমরান প্রিয়ন্তীর দেওয়া সেই মেসেজটা আবার পড়লো। দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে মৃদু স্বরে বলল, ‘শুধু বৃষ্টি না, আমার হাতে কদমফুলও নেই।’ তারপর উঠে বাড়ির দিকে রওনা দিলো।

কয়েকদিন ধরে ইমরান কদমফুল খুঁজেছে। কিন্তু কোথাও পায়নি। শেষমেশ এই গাছটাই একটি কদমফুল পাবে বলে আশা করেছিল। তাও পেল না। রাত পোহালেই তাকে প্রিয়ন্তীর সামনে যেতে হবে। কদম ফুল নেই। এবারের আবহাওয়া যেমন বৃষ্টি হবে বলেও মনে হয় না। কি করবে সে? সে কি যাবে না? হ্যাঁ, যাবে। অন্তত স্যরি বলার জন্য হলেও যাবে।

পরদিন খুব সকালে ঘুম ভাঙলো ইমরানের। ফোন হাতে নিয়ে প্রিয়ন্তীর মেসেজটা আরেকবার পড়ে নিলো। তারপর ছাদে গেল। ছাদে যেয়ে দেখা হলো রেণুর সাথে।

‘কি ব্যাপার, ভাইয়া? আজ এত সকাল করে ঘুম থেকে উঠলে কেন? অফিসে কাজের চাপ নাকি?’ রেণু বলল। ‘আজকে তো সেই দিন।’ ইমরান হতাশ হয়ে বলল। রেণু উচ্চস্বরে হেসে উঠলো। ইমরান অবাক হয়ে তাকালো রেণুর দিকে এবং বলল, ‘হাসছিস কেন?’ ‘তোমার চেহারা দেখে। শোনো, তোমার কপালে প্রিয়ন্তী নেই। তুমি যেয়ে দেখবা কি জানো, প্রিয়ন্তীকে অন্য কেউ এসে একটা না একশটা কদমফুল দিয়েছে। তুমি তখন ‘আমি চিরতরে দূরে চলে যাবো, তবু আমারে দেবোনা ভুলিতে.....’ গানটা গাইতে গাইতে চলে আসবা। তুমি শুধু এই গানটা একটু একটু পারো তো তাই। রেণু মৃদু হেসে বলল। ‘তুই এমন বলছিস কেন? কপালে থাকবে না কেন?’ আরও বেশি অবাক হয়ে বলল ইমরান। ‘মেয়েটা বেশি কিছু চায়নি তোমার কাছে। শুধু একটা কদমফুল চেয়েছে, সেটাও দিতে পারছো না।’ আফসোসের স্বরে রেণু বলল। ‘আমি স্যরি বলতে যাচ্ছি।’ ইমরান বলতে বলতে সিড়ির দিকে পা বাড়ালো। ‘রেডি হয়ে নাও, নাস্তা দিচ্ছি।’ রেণু উচ্চস্বরে বলল।

কলেজের গেটে পৌছে ইমরান দেখতে পেল কলেজ আঙিনার ফাঁকা জায়গাটাতে প্রিয়ন্তী একা একা দাঁড়িয়ে রয়েছে। ইমরান আর পা বাড়াতে পারলো না। খুব খারাপ লাগছে তার। আকাশের দিকে তাকালো সে। আকাশে ঘন কালো মেঘ। আকাশও কি মন খারাপ করেছে? জিজ্ঞেস করতে ইচ্ছা করছে। আকাশও কি মন খারাপ হলে কাঁদে? ইমরানের ভীষণ কান্না পাচ্ছে। হঠাৎ এক ফোঁটা বৃষ্টির পানি তার কপালের ঠিক মাঝখানে পড়লো। বৃষ্টি নামবে বোধহয়। দোটানায় পড়ে গেল সে। প্রিয়ন্তীর কাছে যাবে নাকি অন্য কোথাও দাঁড়াবে?

ঝিরিঝিরি বৃষ্টি পড়ছে। কিছুক্ষণের মধ্যেই জোরে বৃষ্টি শুরু হবে। ইমরান পাশের চায়ের দোকানে যাওয়ার জন্য পা বাঁড়ালো। পরক্ষণেই টের পেল তাকে কে যেন ডাকছে। পিছন ফিরে তাকিয়ে দেখলো একটা ছেলে তার দিকে দৌড়ে আসছে। কাছে এসে হাঁপাতে হাঁপাতে বলল, ‘স্যরি ভাই, আমি অনেক দেরি করে ফেলেছি। রেণু আমাকে আগে থেকেই জানিয়েছিল, আমি কাজে আটকে গিয়েছিলাম। এই নেন আপনার কদমফুল। আমি রেণুর ক্লাসমেট, তপু। শুভ কামনা আপনার জন্য।’ একটানা কথাগুলো বলল সে। ইমরানকে কোন কিছু বলার সুযোগ দিলো না। মুচকি হাসি দিয়ে চলে গেল। ইমরান মনে মনে রেণুকে ধন্যবাদ দিলো।

ঝুম বৃষ্টি শুরু হয়েছে। কদমফুলের দিকে পলকহীনভাবে তাকিয়ে আছে ইমরান। কাঙ্ক্ষিত কদমফুল। ইমরান কলেজ আঙিনার দিকে তাকালো। ইমরান দেখলো প্রিয়ন্তী খোলা আকাশের নিচে দাঁড়িয়ে নীরবে বৃষ্টিতে ভিজছে। অবশেষে যেটা হাতে ছিল সেটাও পেল আবার যেটা হাতে ছিল না সেটাও পেল। ইমরান ছোট ছোট পা ফেলে প্রিয়ন্তীর দিকে এগিয়ে গেল।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড