অনসূয়া চন্দ্র
গত তিনদিন ধরে আমুল ঘরে। ব্যালকনি, তার সব সময়ের বিচরণ স্থান; সেখানে উঁকি মেরেও দেখেনি। ঢোকার চেষ্টাও করেনি। এছাড়াও সে তার সব নিত্য কর্ম যেমন বিছানায় লাফা- ঝাঁপা, সোফায় গুটি মেরে শুয়ে আড়চোখে টিভি দেখা, উইন্ডচিম গুলোর নড়াচড়ায় ভ্যাবলা হয়ে থাকা ইত্যাদি থেকে স্ট্রাইক নিয়েছে। শুধু পেট টাকে কন্ট্রোল করার ট্রেনিং পায়নি বলে মা মুখের কাছে যা-ই দিয়েছে, নিমেষে খতম হয়ে গেছে। মুখের ভাবে বুঝিয়েছে দয়া করুণা বলেও পৃথিবীতে কিছু আছে তো না কি!
বাড়ির লোকজন এমন মুড পরিবর্তন আগেও দেখেছে। সেই তো সে বারই রিয়ারা যখন সাবেকি বাড়ি ছেড়ে ফ্ল্যাটে প্রথম এলো, তখনও আমুল এমনই ধর্নায় বসেছিল। সাবেকি বাড়ির বাগান ছেড়ে এই টু-বি-এইচকে এসে তার পুরো দমবন্ধ অবস্থা। ধীরে ধীরে ব্যালকনিকে ভালোলাগে তার।
এখন আবার সেই ব্যালকনি বেদখলে। রিয়ার বাবা এক প্রাসাদ তৈরি করে এনে রেখেছে সেখানে। আমুলের জন্যে। প্রাসাদের উপরটা চ্যাতলা পিঁড়ের মত। নিচে ইংরেজি জেড। পুরোটা একটা কাঠের দণ্ডের উপর দণ্ডায়মান। জেডের গা ঘেঁষে দুটো নাতি গভীর গর্ত। যা গেছো ইঁদুর ঢোকার পক্ষে যথেষ্ট হলেও আমুলের মত বিড়ালের পক্ষে নৈব নৈব চ। প্রত্যেকবারের মতোই নতুন জিনিস ঘরে এলে আমুল যেমন তার আগাপাশতলা পরখ করে; চেঁটে-চুঁটে, কামড়ে- কুমড়ে তাকে নিজের ছাঁচে ফেলতে চেষ্টা করে।এবারও তার ব্যতিক্রম হলনা। কিন্তু দিন দু’য়েকের মধ্যে সে সুবিধা করে উঠতে পারলো না। হাল ছেড়ে দিল।
বাবা তার কোঁতলা বপু তুলে যতবারই ওই প্রাসাদে বসাতে যায় ,ততবারই সে তরতর করে নেমে চলে আসে। যেন নিমেষেই সে তার রাজত্ব ছেড়ে সন্ন্যাস নিল বলে! বাবা আমুলের এ আচরণে খুবই ক্ষিপ্ত। পয়সা দিয়ে সখের বিড়ালের জন্যে রাজপ্রাসাদ।তার এত অপমান!
বাড়ির মধ্যে রিয়াই আমুলের প্রিয়জন। তাই স্কুল থেকে ফিরে রিয়া সঙ্গে সঙ্গে ব্যালকনির কাঁচের সার্টারটা খোলে। বাবা তখন অফিসে। রিয়া বাবার দেওয়া শাস্তির কথা জানে। তিনদিন ঘর থেকে ব্যালকনির দিকে যায়নি বলে আমুলকে আর ঘরে ঢুকতে দেওয়া হয়নি।
রিয়া আমুলকেও জানে।ব্যালকনির মেঝেতে শুয়ে দিন-রাত কাটালেও আর সে ঘরমুখো হবে না। রিয়া, রিয়ার মা অনেকবার আমুলকে তার প্রাসাদে উঠিয়ে অভ্যাস করাতে চায়। যাতে সে বাবার মন জয় করতে পারে। কিন্তু কিছুতেই আমুলের সাড়া পাওয়া যায়না। গর্ত গুলোতে মাথা ঢুকিয়ে সে আবার মাথা বার করে নেয়। তরতর করে নেমে আসে।
পরিবর্তন ই পৃথিবীর একমাত্র সত্য। আমুল বোধহয় একদিন তা বুঝতে পারে। অ্যানোয়াল পরীক্ষাগুলোর দিন রিয়া খুব ভোরে উঠে রিভাইস করে। সেকেন্ড ল্যাঙ্গয়েজ পরীক্ষার ভোরে রিয়া কবিতাটা রিভাইস করতে করতে হঠাৎ ব্যালকনিতে আসে। তখন ৬টা বা ৬:৩০টা হবে। পুবের আলো শীতের সকালে যেমন ধীরে ধীরে ছড়ায়, সেই শান্ত আলোতেই উজ্জ্বল হয়ে ওঠে আমুলের প্রাসাদের চতুর্দিক। রিয়া দেখে, প্রাসাদের পিঁড়িতে গা দিয়ে আমুল ঘুমোচ্ছে। তার মুখটা প্রাসাদ থেকে বেরিয়ে আকাশের ঘ্রাণ নিচ্ছে। আমুলকে কেমন যেন রাণী রাণী লাগে!
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড